নরসিংদীতে আটক নবনির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যান

আগের সংবাদ

‘তোরে আমি কি জন্য একা যাইতে দিলাম’

পরের সংবাদ

খেলাপি ঋণ ছাড়িয়েছে ১ লাখ কোটি টাকা

প্রকাশিত: নভেম্বর ২৪, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ২৪, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : খেলাপি কমাতে ঋণ পরিশোধের জন্য নানা রকম সুবিধা দিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তারপরও কমছে না খেলাপি ঋণ। উল্টো বেড়েই চলছে খেলাপির পরিমাণ। চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিক শেষে ব্যাংকিং খাতের খেলাপি ঋণ ১ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সেপ্টেম্বর প্রান্তিকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। গতকাল মঙ্গলবার এই প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য বলছে, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকিং খাতের মোট ঋণ স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১২ লাখ ৪৫ হাজার ৩৯১ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে খেলাপিতে পরিণত হয়েছে ১ লাখ ১ হাজার ১৫০ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৮ দশমিক ১২ শতাংশ। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে খেলাপি ঋণ ছিল ৮৮ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৭ দশমিক ৬৬ শতাংশ। সে হিসেবে চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১২ হাজার ৪১৬ কোটি টাকা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনা ভাইরাসের প্রভাব মোকাবিলায় গত বছর কেউ কোনো টাকা পরিশোধ না করলেও তাকে খেলাপি দেখাতে পারেনি ব্যাংক। এ বছর নতুন করে আগের মতো সব সুযোগ দেয়া হয়নি। তবে অনেক ক্ষেত্রে ঢালাও সুবিধা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বিভিন্ন শিথিলতার আওতায় চলতি বছর একজন গ্রাহকের যে পরিমাণ ঋণ পরিশোধ করার কথা, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে তার ২৫ শতাংশ পরিশোধ করলেও তাকে আর খেলাপি করা যাবে না। এরপরও খেলাপি ঋণ বাড়ছে।
খেলাপি হলে কোনো শাস্তি নেই বরং পুরস্কৃত হয়, যার কারণে খেলাপি ঋণ বাড়ছে বলে মন্তব্য করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা এ বি মিজ্জ্র্া মো. আজিজুল ইসলাম বলেন, খেলাপিরা বারবার ঋণ পরিশোধের সময় পান, পুনঃতফসিলের সুযোগ পান। মামলা করে ঝুলিয়ে রাখেন। বেশি সমস্যা হলে হাইকোর্টে গিয়ে রিট করেন। এভাবেই বছরের পর বছর ঋণ পরিশোধ না করে পার পেয়ে যাচ্ছেন তারা। এসব দীর্ঘসূত্রতার কারণে খেলাপি হওয়া আমাদের সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে, যে কারণে মন্দ ঋণ বাড়ছে।
হালনাগাদ প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর শেষে রাষ্ট্রীয় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মোট বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ১৯ হাজার ২৯২ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ৪৪ হাজার ১৬ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ২০ দশমিক ০৭ শতাংশ। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে খেলাপি ছিল ৪২ হাজার ২৭৩ কোটি টাকা। ওই সময় বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ছিল ২ লাখ ২ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা। বেসরকারি ব্যাংকগুলো সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ঋণ বিতরণ করেছে ৯ লাখ ২৮ হাজার ৪৯৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণ ৫০ হাজার ৭৪৩ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ।
গত ডিসেম্বরে যা ছিল ৪০ হাজার ৩৬১ কোটি টাকা বা মোট ঋণের ৪ দশমিক ৬৬ শতাংশ। আলোচিত সময়ে বিদেশি ব্যাংকের খেলাপি হয়েছে ২ হাজার ৬৯২ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণ করা ঋণের ৪ দশমিক ১২ শতাংশ। বিদেশি ব্যাংকের বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ৬৫ হাজার ২৬২ কোটি টাকা। অন্যদিকে বিশেষায়িত তিনটি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৬৯৯ কোটি টাকা। এ অঙ্ক তাদের বিতরণ করা ঋণের ১১ দশমিক ৪৪ শতাংশ। তারা ঋণ বিতরণ করেছে মোট ৩২ হাজার ৩৪২ কোটি টাকা।
বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ আবাসিক মিশনের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, কোভিডের কারণে ইচ্ছাকৃত ও অনিচ্ছাকৃত খেলাপি একাকার হয়ে গেছে। এখন তাদের আলাদা করে চিহ্নিত করার সময় এসেছে। এখন যে পরিমাণ দেখা যাচ্ছে, এটা খেলাপির প্রকৃত চিত্র নয়। ছাড় ও সুবিধা তুলে নিলে খেলাপির অঙ্ক আরো বেড়ে যাবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়