টাইগ্রেসদের উড়ন্ত সূচনা পাকিস্তানকে হারিয়ে

আগের সংবাদ

খুনোখুনি নিয়ে দুশ্চিন্তায় পুলিশ : অবৈধ অস্ত্রের পাশাপশি বেড়েছে বৈধ অস্ত্রের অবৈধ ব্যবহার > চলছে পুলিশের বিশেষ অভিযান

পরের সংবাদ

শ্যালকের গুলিতে ভগ্নিপতি খুন : দারুস সালামে পুলিশ ও বাদীর মামলায় গরমিল

প্রকাশিত: নভেম্বর ২৩, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ২৩, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : রাজধানীর দারুস সালামে ভগ্নিপতিকে গুলি করে অস্ত্রসহ শ্যালকের থানায় আত্মসমর্পণের ঘটনায় দায়েরকৃত দুই মামলার বর্ণনায় গরমিল রয়েছে। শ্বশুরবাড়ির সম্পত্তি নিয়ে বিরোধে খুনের পরদিন ২১ নভেম্বর নিহতের মা আজমেরী বেগম এবং থানায় এসআই রিয়াজুল হাসান (৩৩ ও ৩৪ নম্বর মামলা) মামলা দুটি দায়ের করলেও এতে আসামি ও ঘটনার বিবরণে অসঙ্গতি রয়েছে।
একই কম্পিউটারে টাইপকৃত এজাহার মতে, আজমেরী বেগম অস্পষ্টভাবে কোনো মতে স্বাক্ষর করতে পারেন। এতে ৮ জনকে আসামি করা হয়েছে। আর ঘটনার বিবরণ উল্লেখ করে পুলিশের করা অস্ত্র মামলায় আসামি তিনজন। ঘটনার সময় নিহতের স্ত্রী উপস্থিত থাকলেও তাকে মামলার বাদী করা হয়নি। ঘাতক অস্ত্র হাতে থানায় আত্মসমর্পণ করলেও প্ররোচনার অভিযোগে তার মা-বোনসহ আরো পাঁচজনকে আসামি করা হয়েছে। কিন্তু নিহতের সঙ্গে ওই পাঁচজনের সম্পর্ক এবং কেন তারা প্ররোচনা দিবেন, তা উল্লেখ নেই।
আবার পুলিশের মামলায় ঘটনার যে বিবরণ উল্লেখ করা হয়েছে, তা তিনি কীভাবে জ্ঞাত হলেন তা অস্পষ্ট। একসঙ্গে রেকর্ডকৃত দুটি এজাহার একজনের নির্দেশনায় লেখা বলে স্পষ্ট। আড়াই কাঠা জমির ওপর নির্মিত পাঁচতলা বাড়ির মালিকানা নিয়ে বিরোধে হত্যাকাণ্ডের পর ঘাতক আত্মসমর্পণ করে স্বীকারোক্তি দিলেও দায়েরকৃত ওই সম্পত্তি দখলে নিতে আসামি তালিকায় এজাহারে কৌশল করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
এ প্রসঙ্গে কথা বলতে দারুস সালাম থানার অফিসার ইনচার্জ তোফায়েল আহমেদের সঙ্গে গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় একাধিকবার চেষ্টা করেও সাড়া পাওয়া যায়নি। থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মইনুল কবীর বলেছেন, দুটো মামলা আলাদা। পুলিশ যা

শুনেছে, এজাহারে তা উল্লেখ করেছে। দুটি এজাহার একসঙ্গে লেখা প্রসঙ্গে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।
নিহতের মা আজমেরী বেগমের (৬৩) হত্যা মামলার এজাহার মতে, নামাপাড়া কোটবাড়ির মো. জাসফিকুর রহমান অশ্রæ (২৬) তার মা জাহানারা বেগম (৬১), বোন জয় জাহান মীম (২১), আনন্দনগরের আবু রায়হান (৫৫), মো. রাব্বি (৩০), মো. ফরিদ আহমেদ (৫৪), মিনহাজ উদ্দিন (৬৩) ও তার স্ত্রী শামীমা বেগম (৪৫) বিবাদী। তাদের প্ররোচনায় অশ্রæ তার মায়ের নামে লাইসেন্সকৃত শর্টগান দিয়ে তাদের নামাপাড়া কোটবাড়ীর ১৪২/১ নম্বর হোল্ডিংয়ের বাসার নিচতলায় ভগ্নিপতি ফারুক আহমেদকে গুলি করে হত্যা করেছে। নিহত ফারুকের পৈতৃক বাড়ি কোটবাড়ির ৬ নম্বর হোল্ডিংয়ে। ১৯ বছর আগে অশ্রæর বোন সাকিলা জাহান অপুর সঙ্গে বিয়ের পর থেকে ফারুক তার শ্বশুরবাড়ির নিচতলায় থাকতেন। তাদের সংসারে আহানাফ মিকাইল অজু (১২) নামের এক সস্তান রয়েছে।
বাদীর অভিযোগ, ফারুকের শ্বশুর লুৎফর রহমান তিন বছর আগে মারা যাওয়ার পর তার (ফারুকের) শ্যালক অশ্রæ, শাশুড়ি জাহানারা বেগম ও শ্যালিকা মীম ফারুককে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বাড়ি ছাড়তে চাপ দিয়ে গালমন্দ করে আসছিলেন। অন্য বিবাদীরা ফারুককে হত্যার জন্য প্ররোচনা দিয়ে আসছিলেন।
প্রশ্ন উঠেছে, ৫ জন বিবাদীর সঙ্গে ফারুকের কী শত্রæতা এবং কেন তারা তাকে হত্যার প্ররোচনা দিয়ে আসছিলেন, তা এজাহারে উল্লেখ নেই। আবার নিহতের স্ত্রী সাকিলা জাহান অপু ঘটনার সময় স্বামীর সঙ্গে ছিলেন এবং গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর তাকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। এজাহারের বর্ণনায় উল্লেখ থাকলেও অপু কেন মামলার বাদী হলেন না, এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ঘটনা শুনে ফারুকের বৃদ্ধা মা কেন মামলার বাদী হলেন, এ নিয়েও প্রশ্নের কমতি নেই।
এদিকে দারুস সালাম থানার এসআই মো. রিয়াজুল হাসান এক রাউন্ড গুলিসহ অশ্রæর আত্মসমর্পণের ঘটনার বর্ণনা করে অন্য এজাহারে উল্লেখ করেছেন, ‘১২ বোরের একনালা শটগান ও এক রাউন্ড তাজা গুলি নিয়ে তার রুমে প্রবেশ করে কিছু জিজ্ঞাসা করার আগেই উত্তেজিত স্বরে আমাকে বলে এই ১২ বোরের একনালা শর্টগান দিয়ে খুন করে এসেছি। সঙ্গে সঙ্গে অস্ত্রসহ তাকে হেফাজতে নেয়া হয়।’ এই এজাহারে মা জাহানারা ও বোন মীমের প্ররোচনায় অশ্রæ ভগ্নিপতি ফারুককে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি করে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এসব তথ্য পুলিশ কীভাবে পেয়েছে, তা উল্লেখ নেই এজাহারে।
প্রসঙ্গত, গত ২০ নভেম্বর শনিবার দুপুরে জাসফিকুর রহমান অশ্রæ তার ভগ্নিপতি ফারুক হোসেনকে (৪৮) গুলি করে হত্যা করে। এরপর শর্টগান হাতে ঘাতক থানায় গেলে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার মা জাহানারা বেগম ও ছোট বোন মীমকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। শর্টগানটি জাহানারা বেগমের নামে লাইসেন্স করা। আনুমানিক ২০ বছর আগে এটি তার নামে নেয়া। তার স্বামী যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও ব্যবসায়ী লুৎফর রহমানের নামেও লাইসেন্সকৃত দুটি আগ্নেয়াস্ত্র ছিল। ২০১৮ সালে তিনি মারা যাওয়ার পর সেগুলো জমা দেয়া হয়েছে। জাহানারা বেগমের নামে লাইসেন্স করা শর্টগানটি তার শোয়ার ঘরে থাকত। অশ্রæ মাদকাসক্ত বলে জানা গেছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়