টাইগ্রেসদের উড়ন্ত সূচনা পাকিস্তানকে হারিয়ে

আগের সংবাদ

খুনোখুনি নিয়ে দুশ্চিন্তায় পুলিশ : অবৈধ অস্ত্রের পাশাপশি বেড়েছে বৈধ অস্ত্রের অবৈধ ব্যবহার > চলছে পুলিশের বিশেষ অভিযান

পরের সংবাদ

সিলেট বিভাগে পরিবহন ধর্মঘট : দিনভর ভোগান্তির পর রাতে প্রত্যাহার

প্রকাশিত: নভেম্বর ২৩, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ২৩, ২০২১ , ১:০৬ পূর্বাহ্ণ

সিলেট ব্যুরো : দাবি পূরণের আশ্বাসে সিলেট বিভাগে ডাকা অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হয়েছে। গতকাল সোমবার রাতে শ্রমিক ফেডারেশনের নেতাদের সঙ্গে সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার মো. খলিলুর রহমানের বৈঠকের পর ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন শ্রমিক নেতারা। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সিলেট বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক সজীব আলী জানান, প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকে শ্রমিকদের ‘দাবি পূরণের আশ্বাস’ দেয়া হয়েছে। তাই মানুষের দুর্ভোগ ও সার্বিক দিক বিবেচনায় ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হয়েছে।
পরিবহন শ্রমিকদের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহার এবং সড়কে পুলিশের ‘হয়রানি’ বন্ধসহ পাঁচ দফা দাবিতে সিলেট বিভাগে গতকাল ভোর থেকে অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট শুরু হয়। ফলে দিনভর দূরপাল্লা ও স্বল্পপাল্লার কোনো বাস চলাচল করেনি। পণ্যবাহী গাড়িও বন্ধ ছিল। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েন সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে এসএসসি পরীক্ষার্থী, কর্মজীবী মানুষ ও সিলেটে বেড়াতে আসা পর্যটকদের পোহাতে হয়েছে সীমাহীন বিড়ম্বনা।
এদিন সকালে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সিলেট বিভাগীয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবু সরকার গণমাধ্যমকে বলেন, পরিবহন শ্রমিকদের পাঁচ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে সিলেটে সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীসহ প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে ২১ নভেম্বর পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়ে স্মারকলিপি দিয়েছিলেন তারা। সেই সময় শেষ হলেও কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় বিভাগজুড়ে ধর্মঘট আহ্বান করা হয়েছে। পাঁচ দফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত সিলেট বিভাগে কোনো ধরনের পরিবহন চলবে না বলেও জানান তিনি।
পরিবহন শ্রমিকদের দাবিগুলো হচ্ছে সিলেট জেলা অটোটেম্পো, অটোরিকশা চালক শ্রমিক জোটের ত্রিবার্ষিক নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা এবং ‘প্রহসনের নির্বাচন’ ও ‘বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়’ ঘোষিত কমিটি বাতিল করা ও মনোনয়ন ফি বাবদ আদায়কৃত সব টাকা ফেরত দেয়া; সিলেটের আঞ্চলিক শ্রম দপ্তরের উপপরিচালককে প্রত্যাহার করা। এছাড়া সিলেট জেলা বাস মিনিবাস কোচ মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়ন নেতাদের ওপর দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার; ট্রাফিক পুলিশ ও হাইওয়ে পুলিশের সব ধরনের হয়রানি বন্ধ করা; শেরপুর, শেওলা, লামাকাজী, শাহপরাণ ও ফেঞ্চুগঞ্জ সেতু থেকে টোল আদায় বন্ধ এবং চৌহাট্টাসহ নগরীর বিভিন্ন স্থানে কার, মাইক্রোবাস, লেগুনা, অটোরিকশাসহ সব ধরনের গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করা।
গতকাল সকালে সিলেট নগরীর কুমারগাঁও বাসস্ট্যান্ড, বন্দর বাজার, মদীনা মার্কেট, কদমতলিসহ বেশ কয়েকটি মোড় ঘুরে দেখা যায়, গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছেন শত শত যাত্রী। কোনো রকম যানবাহন না থাকায় সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়েছেন তারা। রিকশা ও মোটরসাইকেল চলাচল করলেও হাঁকাচ্ছে লাগামহীন ভাড়া। স্বল্প দূরত্বে হেঁটে গন্তব্যে পৌঁছা গেলেও বিপাকে পড়েন কর্মজীবীরা। যারা শহর থেকে বিভিন্ন উপজেলায় গিয়ে অফিস করেন, তাদেরকে পড়তে হয়েছে চরম ভোগান্তিতে।
সেই সঙ্গে এসএসসি পরীক্ষার্থীদেরকেও পোহাতে হয়েছে ঝামেলা। ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে পরীক্ষা দিতে এলেও মোড়ে মোড়ে পরিবহন শ্রমিকদের জেরার মুখে পড়তে হয়েছে তাদের। আর ব্যক্তিগত গাড়ি নেই যাদের, রিকশা বা মোটরসাইকেলে তিনগুণ ভাড়া দিয়ে কেন্দ্রে যেতে হয়েছে তাদের। এছাড়া পর্যটকদেরও দুর্ভোগের শেষ ছিল না। ভ্রমণ শেষ করে যারা ফিরে আসার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, তাদের বাধ্য হয়ে বাড়তি ব্যয়ে হোটেলে থাকতে হয়েছে। আর যারা সদ্য এসেছেন, ঘোরাঘুরির বদলে তারা ছিলেন হোটেলবন্দি।
গতকাল সকালে হুমায়ুন রশিদ চত্বর এলাকায় অপেক্ষমাণ সরকারি চাকরিজীবী আব্দুল হামিদ বলেন, আমাকে গোলাপগঞ্জ যেতে হবে অফিস করতে। কিন্তু পরিবহন ধর্মঘট থাকায় কোনো গাড়ি পাচ্ছি না। এদিকে মোটরসাইকেলচালকরা অ্যাপে না গিয়ে ২০০ টাকা ভাড়া হাঁকছেন। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, যে যেভাবে পারছেন সাধারণ জনগণকে জিম্মি করে রাখছেন। পরিবহন শ্রমিকরা দুদিন পর পর আমাদের জিম্মি করেন নিজেদের দাবির জন্য। এখন আমাকে অফিস ধরতে হলে ৩০ টাকার ভাড়া ২০০ টাকা দিতে হবে।
ওসমানীনগরের এক এসএসসি পরীক্ষার্থীর অভিভাবক আজহারুল ইসলাম এ পরিস্থিতির জন্য প্রশাসন-শ্রমিক দুই পক্ষকেই দুষলেন। তিনি বলেন, কথায় কথায় পরিবহন ধর্মঘটের নামে নৈরাজ্য চালাচ্ছেন শ্রমিকরা। প্রশাসনেরও দায় আছে। সমস্যাগুলো আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করলে সাধারণ মানুষের এত ভোগান্তিতে পড়তে হয় না
হঠাৎ গাড়ি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পর্যটন নগরী সিলেটে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বেড়াতে আসা পর্যটকরা হোটেলে আটকা পড়েছেন। ঢাকা থেকে সপরিবারে বেড়াতে আসা সজীব আহমেদ আক্ষেপ করে বলেন, আগের দিন পৌঁছে শুধু শাহজালালের মাজার জিয়ারত করতে পেরেছিলাম। আজ লালাখাল ও জাফলং যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু পরিবহন ধর্মঘট সব পরিকল্পনা ও উচ্ছ্বাস ভেস্তে দিয়েছে। উল্টো হোটেলে বন্দি থেকে বাড়তি ভাড়া গুনতে হচ্ছে।
এদিকে ধর্মঘট চলাকালে এসএসসি এবং অনার্স প্রথম বর্ষের পরীক্ষার্থীদের হলে পৌঁছে দিতে মোটরসাইকেল সেবা চালু করে সিলেট জেলা ছাত্রলীগ। জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নাজমুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক রাহেল সিরাজের উদ্যোগে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষাকেন্দ্রে যাতায়াতের সুবিধার্থে নগরের বিভিন্ন পয়েন্টে ফ্রি বাইক সার্ভিস চালু করা হয়।

 

 

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়