টাইগ্রেসদের উড়ন্ত সূচনা পাকিস্তানকে হারিয়ে

আগের সংবাদ

খুনোখুনি নিয়ে দুশ্চিন্তায় পুলিশ : অবৈধ অস্ত্রের পাশাপশি বেড়েছে বৈধ অস্ত্রের অবৈধ ব্যবহার > চলছে পুলিশের বিশেষ অভিযান

পরের সংবাদ

তিন প্রকল্পে ২২ হাজার ৬১০ কোটি টাকা দেবে জাপান : চুক্তি স্বাক্ষর

প্রকাশিত: নভেম্বর ২৩, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ২৩, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : দুই বিনিয়োগ প্রকল্প এবং একটি বাজেট সহায়তা ঋণের জন্য জাপানের সঙ্গে ২৬৬ কোটি ডলারের বা (২৯২ দশমিক ২৭৯ বিলিয়ন জাপানিজ ইয়েন) ঋণচুক্তি করেছে সরকার, যার পরিমাণ ২২ হাজার ৬১০ কোটি টাকা।
জাপান সরকারের ৪২তম ওডিএ লোন প্যাকেজের (১ম ব্যাচ) আওতাধীন বিনিয়োগ প্রকল্প দুটির জন্য স্বাক্ষরিত ঋণের বার্ষিক সুদের হার নির্মাণকাজের জন্য দশমিক ৬০ শতাংশ, পরামর্শক সেবার জন্য দশমিক ১ শতাংশ, ফ্রন্ট এন্ড ফি (এককালীন) দশমিক ২ শতাংশ। এ ঋণ ১০ বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ৩০ বছরে পরিশোধযোগ্য। বাজেট সাপোর্ট ঋণের বার্ষিক সুদের হার দশমিক ৫৫ শতাংশ, ফ্রন্ট এন্ড ফি (এককালীন) দশমিক ২ শতাংশ। এ ঋণ ১০ বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ৩০ বছরে পরিশোধযোগ্য।
গতকাল বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে ঋণচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকির সঙ্গে বিনিময় নোট ও বাংলাদেশের জাইকা অফিসের চিফ রিপ্রেজেন্টেটিভ ইউহো হায়াকাওয়ার সঙ্গে এ ঋণচুক্তি স্বাক্ষর করেন। এ সময় ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এছাড়া অর্থ বিভাগ, বিদ্যুৎ বিভাগ, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ, সিপিজিসিবিএল, সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তর, পিজিসিবি, ডিএমটিসিএল, জাপান দূতাবাস এবং জাইকা বাংলাদেশ অফিসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
সভায় অর্থমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু সড়ক ও যমুনা নদীর ওপর রেলসেতু, ঢাকা শহরের মেট্রোরেল নেটওয়ার্ক, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর তৃতীয় টার্মিনাল, মাতারবাড়ী পাওয়ার প্লান্ট ও মাতারবাড়ী সমুদ্রবন্দরসহ চলমান বেশ কয়েকটি আইকনিক মেগা প্রকল্পে জাপান সরকারের সম্পৃক্ততার জন্য জাপান সরকারে কাছে আমরা কৃতজ্ঞ। তিনি বলেন, করোনা মহামারির শুরুতে জাপান বাজেট সহায়তার আহ্বানে খুবই দ্রুত ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। জাপান সরকার গত বছর বাংলাদেশকে প্রথমবারের মতো ৩২০ মিলিয়ন ডলারের বাজেট সহায়তা ঋণ দিয়েছে এবং সেই সামঞ্জস্যতায় আজকে ৩৬৫ মিলিয়ন ডলারের ‘কোভিড-১৯ ক্রাইসিস রেসপন্স ইমার্জেন্সি সাপোর্ট লোন ফেজ-২’ স্বাক্ষরিত হয়েছে। পাশাপাশি ৪২তম ইয়েন লোন প্যাকেজের ১ম ধাপের অধীনে ২ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলারের দুটি ঋণচুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে।
ঋণচুক্তির আওতায় বাস্তবায়িত প্রকল্প মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র : অব্যাহত বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে প্রকল্পের আওতায় কক্সবাজার জেলার মহেশখালী উপজেলায় ১২০০ মেগাওয়াট মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের কাজ চলছে। প্রকল্পের মোট ব্যয় ৩৫ হাজার ৯৮৪ দশমিক ৪৬ কোটি (জিওবি ৪৯২৬ দশমিক ৬৬ + জাইকা ২৮ হাজার ৯৩৯ দশমিক ০৩ + সিপিজিসিবিএল ২১১৮ দশমিক ৭৭ কোটি) টাকা। প্রকল্পের মেয়াদকাল জুলাই ২০১৪ থেকে জুন ২০২৩ পর্যন্ত। অক্টোবর ২০২১ পর্যন্ত প্রকল্পের বাস্তব অগ্রগতি ৪৯ শতাংশ এবং আর্থিক অগ্রগতি ৫১ শতাংশ। জাইকা কর্তৃক পর্যায়ক্রমে ঋণ সহায়তা দেয়া হচ্ছে। এর আগে ৫টি পর্যায়ে মোট ৩০০,৫০২ মিলিয়ন জাপানিজ ইয়েনের (২ দশমিক ৬৩ বিলিয়ন ডলার) ঋণচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। ৪২তম ওডিএ লোন প্যাকেজের (১ম ব্যাচ) আওতায় ৬ষ্ঠ পর্যায়ে ১৩৭,২৫২ মিলিয়ন জাপানিজ ইয়েন প্রদান (১.২০ বিলিয়ন ডলার) করা হবে।
ঢাকা মাস র‌্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (লাইন ১) : ৩১ দশমিক ২৪১ কিলোমিটার দীর্ঘ এমআরটি লাইন ১ দুটি অংশে বিভক্ত। অংশ দুটি হচ্ছে- বিমানবন্দর রুট (বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর) এবং পূর্বাচল রুট (নতুন বাজার থেকে পিতলগঞ্জ ডিপো)। বিমানবন্দর রুটের মোট দৈর্ঘ্য ১৯ দশমিক ৮৭২ কিলোমিটার এবং মোট পাতাল স্টেশনের সংখ্যা ১২টি। এ রুটেই বাংলাদেশে প্রথম পাতাল বা আন্ডারগ্রাউন্ড মেট্রোরেল নির্মিত হতে যাচ্ছে। পূর্বাচল রুটের মোট দৈর্ঘ্য ১১ দশমিক ৩৬৯ কিলোমিটার। সম্পূর্ণ অংশ উড়াল এবং মোট স্টেশন সংখ্যা ৯টি। নতুন বাজার স্টেশনে ইন্টারচেঞ্জ থাকবে। বর্তমানে ডিজাইনের কাজ চলমান আছে। প্রকল্পের মোট ব্যয় ৫২ হাজার ৫৬১ দশমিক ৪৩ কোটি টাকা (জিওবি ১৩,১১১.১১+ জাইকা ৩৯,৪৫০.৩২ কোটি)। প্রকল্পের মেয়াদকাল সেপ্টেম্বর ২০১৯ থেকে ডিসেম্বর ২০২৬ পর্যন্ত। জাইকা কর্তৃক পর্যায়ক্রমে ঋণ সহায়তা দেয়া হচ্ছে। এর আগে ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভিসের জন্য ৫,৫৯৩ মিলিয়ন জাপানিজ ইয়েন এবং নির্মাণকাজের জন্য ১ম পর্যায়ে ৫২,৫৭০ মিলিয়ন জাপানিজ ইয়েনের ঋণচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। ৪২তম ওডিএ লোন প্যাকেজের (১ম ব্যাচ) আওতায় ২য় পর্যায়ে ১১৫,০২৭ মিলিয়ন জাপানিজ ইয়েন (১ দশমিক ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) দেয়া হবে।
করোনা মোকাবিলায় জরুরি সহায়তা প্রকল্প ফেস২ : এই কর্মসূচির উদ্দেশ্য- কার্যকর স্বাস্থ্যব্যবস্থা বাস্তবায়ন, কোভিড-১৯ অতিমারি সংক্রান্ত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত এবং কোভিড-১৯ অতিমারির কারণে সম্ভাব্য অর্থনৈতিক মন্দা উত্তরণে বাংলাদেশ সরকার ঘোষিত আর্থিক প্রণোদনা কার্যক্রম বাস্তবায়নে বাজেট সাপোর্ট প্রদান করা। এর আওতায় জাপান সরকার ৪০ বিলিয়ন জাপানিজ ইয়েন (৩৬৫ মিলিয়ন ডলার) ঋণ সহায়তা দেবে। এ ঋণের বার্ষিক সুদের হার দশমিক ৫৫শতাংশ, ফ্রন্ট এন্ড ফি (এককালীন) দশমিক ২ শতাংশ। এ ঋণ ১০ বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ৩০ বছরে পরিশোধযোগ্য। এর আগে ২০২০ সালে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ঘোষিত আর্থিক প্রণোদনা কার্যক্রম বাস্তবায়নে বাজেট সাপোর্ট হিসেবে জাপান সরকার ১ম পর্যায়ে ৩৫ বিলিয়ন জাপানিজ ইয়েন (৩২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) ঋণ সহায়তা প্রদান করেছে।
জাপান বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উন্নয়ন সহযোগী দেশ। স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত জাপান সরকার বাংলাদেশের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়নে বিভিন্ন সেক্টরে উল্লেখযোগ্য সহায়তা দিয়েছে। অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনে বাংলাদেশ সরকারের অগ্রাধিকারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে জাপান সরকার অবকাঠামো উন্নয়ন, যোগাযোগ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ, পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন, পল্লী উন্নয়ন, পরিবেশ উন্নয়ন এবং মানবসম্পদ উন্নয়ন খাতের প্রকল্পে ঋণ ও বিভিন্ন প্রকার অনুদান সহায়তা হিসেবে জুন ২০২১ পর্যন্ত ২৭ বিলিয়ন ডলার দিয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়