গুলশানের ইউনিমার্ট ভবনের আগুন নিয়ন্ত্রণে

আগের সংবাদ

ধাক্কা কাটিয়ে চাঙ্গা অর্থনীতি

পরের সংবাদ

হাফ ভাড়া নিতে বলায় ছাত্রীকে ধর্ষণের হুমকি : বিক্ষোভের মুখে বাসচালক-হেলপার গ্রেপ্তার

প্রকাশিত: নভেম্বর ২২, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ২২, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : হাফ পাসের ভাড়া নিতে বলায় রাজধানীর বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের এক শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের হুমকি দেয়ায় ঠিকানা পরিবহনের সেই বাসচালক ও হেলপারকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব-১১। তাদের ধরতে গতকাল রবিবার বিকালে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছিল প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীরা। র‌্যাব লিগ্যাল এন্ড মিডিয়া উইং পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানিয়েছেন, রবিবার সন্ধ্যার পর নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকা থেকে ওই বাসের চালক রুবেল ও হেলপার মেহেদী হাসানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এর আগে তাদের গ্রেপ্তারের দাবিতে গতকাল দুপুরে রাজধানীতে বিক্ষোভ করে আল্টিমেটাম দিয়ে সড়ক অবরোধ করেন বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। এ সময় শিক্ষার্থীরা বলেন, বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে ধর্ষণের হুমকিদাতাকে গ্রেপ্তার করা না হলে ফের সড়ক অবরোধ করা হবে। গতকাল বেলা ১১টা থেকে সোয়া ১২ পর্যন্ত এই প্রতিবাদ কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীদের জন্য গণপরিবহনে হাফ পাস (অর্ধেক ভাড়া) চালুসহ ৯ দফা দাবি জানান তারা। বাসে ‘হাফ ভাড়া’ দিতে চাওয়ায় এক কলেজছাত্রীকে ‘ধর্ষণের হুমকি দেয়ার’ অভিযোগে পুরান ঢাকার বকশীবাজার মোড়ে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন কয়েকশ শিক্ষার্থী। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ঘটনাস্থলে আসেন ঠিকানা পরিবহনের মালিকপক্ষের সদস্য কামরুজ্জামান। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা হাফ ভাড়াই দেবে, এতে

কোনো আপত্তি নেই। আর শিক্ষার্থীদের যাতে কোনো হয়রানি করা না হয় সেটি স্টাফ, ড্রাইভার এবং কাউন্টারে যারা থাকেন তাদের বলে দেয়া হবে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের লালবাগ বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার কুদরাত ই খুদা দুপুরে বলেছেন, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজসহ ঢাকার কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা এই বিক্ষোভে অংশ নেয়। হাফ ভাড়া নেয়া, অভিযুক্তের গ্রেপ্তারসহ বিভিন্ন দাবিতে তারা সড়ক অবরোধ করেন। পরে তাদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষার্থীদের পক্ষে তাসনুম তাবাসসুম বলেন, আমরা আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত অপেক্ষা করব। এর মধ্যে সেই হেলপারকে গ্রেপ্তার করা না হলে আমার বোনের সঙ্গে সংগঠিত অপরাধের বিচার নিশ্চিতে আমরা আবারো সড়ক অবরোধ করে আন্দোলনে নামব। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, শনিবার ঠিকানা পরিবহনের একটি বাসে বদরুন্নেসা কলেজের উচ্চমাধ্যমিকের এক ছাত্রী অর্ধেক ভাড়া দিতে চাইলে তাকে ‘ধর্ষণের হুমকি দেন’ বাস চালকের সহকারী। বিক্ষোভে অংশ নেয়া শিক্ষার্থীরা বলেন, অনেক বাস ছাত্রী দেখলে দরজা বন্ধ করে রাখে। হাফ ভাড়া দিতে চাইলে বাস থেকে নামিয়ে দেয়। এর প্রতিবাদে বদরুন্নেসার শিক্ষার্থীরা রবিবার সকালে কলেজ থেকে মিছিল করে বকশীবাজার মোড়ে গিয়ে রাস্তায় অবস্থান নেয়। আরো কয়েকটি কলেজের শিক্ষার্থীরা তাদের সঙ্গে যোগ দেয়। অবরোধের কারণে চাঁনখারপুল থেকে বকশীবাজার এবং বকশীবাজার, ঢাকা শিক্ষা বোর্ড ও বুয়েট অভিমুখী সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। শিক্ষার্থীরা ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ বলে সেøাগান দেয়। এ সময় তাদের হাতে ‘হাফ ভাড়া দেয়ায় ধর্ষণের হুমকি, লজ্জিত বাংলা’, ‘আমরা নারী, আমরা শক্তি, আমরাই প্রতিবাদী’, ‘স্টপ ভায়োলেন্স’, ‘হাফ পাস আমাদের অধিকার’ লেখা প্ল্যাকার্ড দেখা যায়। অবরোধ তুলে নেয়ার আগে তারা ৯টি দাবি উত্থাপন করেন। দাবি আদায় না হলে সোমবারও সড়ক অবরোধ করার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবিগুলো হচ্ছে- শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়া নিশ্চিত করতে হবে, বাসে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে হয়রানিমূলক আচরণ করা যাবে না, কলেজের সামনে সব বাস থামতে হবে, মহিলা সিট নিশ্চিত করতে হবে, সম্মানের সঙ্গে বাসে ওঠার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে, মেয়েদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে, ধর্ষণের হুমকি দেয়া বাস কর্মচারীর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে, রায়েরবাগ, শনির আখড়া, কাজলা, সাইনবোর্ডসহ প্রত্যেক বাস স্টপে সব ধরনের বাস থামিয়ে শিক্ষার্থীদের তুলতে হবে এবং শিক্ষার্থীদের সঙ্গে উগ্র ব্যবহার করা যাবে না।
ফেসবুকে ছাত্রীর বর্ণনা : শনিবারের ঘটনা তুলে ধরে ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন বদরুন্নেসা কলেজের সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থী। তিনি লেখেন, ‘আমার বাসা শনির আখড়া। এখান থেকে কলেজের (বকশীবাজার এলাকা) ভাড়া ১০ টাকা, প্রতিদিন ১০ টাকা দিয়েই যাচ্ছি। আজ কলেজে যাওয়ার সময় ঠিকানা বাসে করে গিয়েছিলাম। হেলপারকে ২০ টাকার নোট দিলে সে ভাড়া রাখে ১৫ টাকা। আমি তাকে ভালো করেই বলছিলাম আমার ১০ টাকা ফেরত দিতে, বাট সে দেয় তো নাই উল্টো বলে ‘দিমু না কী করবি কর’। এরপর চিল্লানোর পর সে বলে ‘গলা বড় করবি না, পাঁচ টাকা নে, না হয় নাইমা যা’। বাসের একটা মানুষও তাকে একটা কথা বলে নাই। কেউ কিচ্ছু বলে নাই। ইভেন একটা পুলিশও ছিল, সেও কিছু বলে নাই। এরপর নামার সময় পাঁচ টাকা হাতে ধরায় দিয়ে বলে, ‘নে তোর টাকা, প্রতিদিনই তো আসবি, একদিন ধইরা …. কোথাকার’। এই কথা যখন বলছে তখন বাস অলরেডি রানিংয়ে, আমি তাকে কিছু বলার সুযোগও পাইনি আর বাসের নম্বর নোট করারও সুযোগ পাইনি। জোরে বাস টেনে চলে গেছে। এখন আমার কথা হচ্ছে প্রতিদিন বাসের এমন ভোগান্তিতে পড়া লাগে। আমাদের ওঠায় না। আমাদের এখান থেকে প্রতিদিন অনেক মেয়ে যায় কলেজে। আমরা যদি এখন কিছু না বলি সামনে আরো প্রব্লেমে পড়তে হবে। ঠিকানা, মৌমিতা আমাদের কলেজের সামনে দিয়েই যায়। আমরা সবাই মিলে যদি একদিন রাস্তাটা ঠিকানা আর মৌমিতার জন্য বন্ধ করে দিই আমার মনে হয় এদের তেজ কমবে। আমি আশা করছি, এই কলেজের স্টুডেন্ট হয়ে আমার প্রতি এই আচরণের প্রতিবাদ তোমরা করবে।’

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়