গুলশানের ইউনিমার্ট ভবনের আগুন নিয়ন্ত্রণে

আগের সংবাদ

ধাক্কা কাটিয়ে চাঙ্গা অর্থনীতি

পরের সংবাদ

স্টেডিয়ামে পাকিস্তানি পতাকা ওড়ানো রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল : মুক্তিযুদ্ধ গবেষক ও বিশ্লেষকদের অভিমত

প্রকাশিত: নভেম্বর ২২, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ২২, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ঝর্ণা মনি : গায়ে পাকিস্তানি জার্সি। হাতে চাঁদ-তারা মার্কা পাকিস্তানি পতাকা। যে পতাকার রাহুগ্রাস থেকে মুক্ত হতে একাত্তরে গর্জে উঠেছিল তিরিশ লাখ বাঙালির রক্তে কেনা লাল-সবুজের পতাকা। বিজয়ের পঞ্চাশ বছরে দাঁড়িয়ে কিছু কুলাঙ্গার সন্তান একাত্তরের মতোই ফের অসম্মান করেছে বাংলা মাকে। একাত্তরে যেমন পাকিস্তানি বাহিনীর বিশেষ সহযোগী রাজাকার-আলবদর-আলশামস হিসেবে ঘরের শত্রæ বিভীষণ ছিল; তেমনি স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতেও পাকিস্তানি পতাকা উড়িয়ে, পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের চার-ছক্কায় উল্লাস করে ফের একাত্তরের মতোই রাষ্ট্রদ্রোহিতামূলক অপরাধ করেছে রাজাকার-সন্তানরা। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গবেষকদের মতে, এটি নিছকই পতাকাবিধি লঙ্ঘন নয়। এটি পঞ্চাশ বছরের গভীর ষড়যন্ত্র। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড, জাতীয় চার নেতা হত্যাকাণ্ড থেকে শুরু করে সাম্প্রতিক ষড়যন্ত্রের ধারাবাহিকতার বহিঃপ্রকাশ। এদের দ্রুত চিহ্নিত করে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধে বিচারের দাবি জানিয়েছেন কেউ কেউ। এক্ষেত্রে আইন, স্বরাষ্ট্র ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়কে যৌথ উদ্যোগ নেয়ার পরামর্শ তাদের। বিষয়টি দেখে আইনিব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।
প্রসঙ্গত, গত শনিবার বাংলাদেশ-পাকিস্তান সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি ম্যাচেও মিরপুরের গ্যালারিতে পাকিস্তানি দর্শকদের পাশাপাশি বাংলাদেশি দর্শকদের হাতে পাকিস্তানের পতাকা দেখা গেছে। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের আউট করলে বা পাকিস্তানের কোনো ক্রিকেটার চার-ছক্কা মারলে দর্শকদের উল্লাস দেখে বুঝার উপায় ছিল না এটা বাংলাদেশের মাঠ নাকি অন্যকোনো দেশের! এরপরই প্রশ্ন উঠেছে ঢাকার মাঠে পাকিস্তানি পতাকা হাতে ওরা কারা? দেশের খেলায় পাকিস্তানিদের সমর্থন দিয়ে পতাকা উড়ানো নিয়ে ইতোমধ্যে নানা আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। গতকাল রবিবার সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর কর্তৃপক্ষকে স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের জার্সি হস্তান্তর অনুষ্ঠানে বিষয়টি দেখে আইনিব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। মন্ত্রী বলেন, আমরা আবশ্যই পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখব। এটা দুর্ভাগ্যজনক, যদি কেউ করে থাকে। একটা টিমকে যে কেউ সাপোর্ট করতে পারে, কিন্তু বাংলাদেশের সঙ্গে খেলার দিন অন্য টিমকে সাপোর্ট করা, একটা

দেশপ্রেমিক নাগরিকের জন্য শোভনীয় নয়। নিঃসন্দেহে কারো কাছেই এটি শোভনীয় মনে হবে না। কবি আবদুল হাকিমের ‘বঙ্গবাণী’ কবিতা থেকে উদ্ধৃত করে মন্ত্রী বলেন, ‘যে সবে বঙ্গেত জন্মি হিংসে বঙ্গবাণী, সেসব কাহার জন্ম নির্ণয় ন জানি’। কী ধরনের আইনিব্যবস্থা নেয়া হতে পারে, এ নিয়ে কোনো আইন রয়েছে কিনা- জানতে চাইলে মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক ভোরের কাগজকে বলেন, রক্তে কেনা স্বাধীন দেশের নাগরিক নিজ দেশের খেলায় একাত্তরের পরাজিত শক্তির পতাকা বহন করে উল্লাস করবে, এটি কখনো ভাবা যায়! অকল্পনীয়। এটি বিবেকের প্রশ্ন। আমরা এখন বিষয়টি নিয়ে ভাববো। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বসে করণীয় ঠিক করব এবং ব্যবস্থা নেব।
শিক্ষাবিদ ও গবেষকদের মতে, খেলার মাঠে নব্য রাজাকারদের আচরণ পঞ্চাশ বছরে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ওপর আঘাত। দেশপ্রেম, নৈতিকতা ও আদর্শকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক ভোরের কাগজকে বলেন, যে পাকিস্তানের বর্বর আক্রমণের কারণে ৩০ লাখ শহীদ হয়েছেন, সেই পাকিস্তানের সঙ্গে অনেক কূটনৈতিক সিদ্ধান্তই মীমাংসা হয়নি। এখনো মাটি খুঁড়লেই রক্তের দাগ। পাকিস্তান এখনো ক্ষমা চায়নি। তাই তাদের সঙ্গে সম্পর্ক গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এজন্য পাকিস্তানের সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন করেছে। ঢাবিতে পাকিস্তানি কেউ ভর্তি হতে পারে না। এখান থেকে সব ক্ষেত্রে শিক্ষা নেয়া যায়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ইতিহাস চর্চায় বিমুখতাই এ ধরনের নৈতিক স্খলনের জন্য দায়ী। সেইসঙ্গে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সরকারের সখ্যকেও দায়ী করেছেন কেউ কেউ। এ ব্যাপারে বঙ্গবন্ধু চেয়ার, ইতিহাসবিদ অধ্যাপক ড. মুনতাসীর মামুন ভোরের কাগজকে বলেন, যেভাবে ধর্মাশ্রিতদের সঙ্গে সরকার মিশছে, এটা ঠিক নয়। এরা প্রো-পাকিস্তানি। এটি আমরা বারবার সরকারকে বলছি। সরকার যদি মনে করে অন্যায় হচ্ছে তাহলে প্রতিরোধ করবে। তিনি বলেন, আমরা ইতিহাসকে চর্চায় রাখিনি। শিক্ষা মন্ত্রণালয়, সংস্কৃতি ও মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের যৌথ সেল দরকার। আমাদের দাবি বাস্তবায়িত হয়নি। পাকিস্তানিদের পাশে উল্লাস দেখেও আমরা চুপ। ভারতীয় টিমের পক্ষে উল্লাস হলে কি হতো? উল্টো চিত্র হতো। মিডিয়া ও সুশীল সমাজ চুপ থাকত না।
গবেষকদের মতে, যে কোনো দেশেই অন্য দেশের পতাকা উত্তোলনের কিছু নিয়ম রয়েছে। দূতাবাস পতাকা উত্তোলন করতে পারে। খেলার মাঠে নিয়ম রয়েছে। তবে পতাকা বিধি রয়েছে। পঞ্চাশ বছরে দেশে পাকিস্তানি পতাকা উত্তোলন শুধুই উল্লাস নয়, ষড়যন্ত্রের রাজনীতির বহিঃপ্রকাশ। জানতে চাইলে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গবেষক, লেখক, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির ভোরের কাগজকে বলেন, এটি রাষ্ট্রদ্রোহিতামূলক অপরাধ। এই অপরাধের শাস্তি হওয়া উচিত। সর্বত্র পাকিস্তানের প্রেতাত্মা। স্বরাষ্ট্র, আইন ও মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের যৌথ উদ্যোগ প্রয়োজন। তিনি বলেন, পঞ্চাশ বছরের ষড়যন্ত্র। বঙ্গবন্ধু হত্যা একই ষড়যন্ত্র। নরেন্দ্র মোদির আগমন নিয়েও তারা তাণ্ডব করেছিল। সেই রাজনীতির উত্তরসূরিরা চাঁদ-তারা পতাকা নিয়ে উল্লাস করেছে। পাকিস্তানি জার্সি গায়ে দিয়ে স্পষ্ট বাংলায় বলেছে, আমি পাকিস্তানকে সমর্থন করি! বাংলাদেশের জারজ সন্তান এরা। বাংলাদেশে জামায়াতের রাজনীতি যতদিন থাকবে, ততদিন সুবর্ণজয়ন্তীসহ সব উন্নয়ন ব্যাহত করার ষড়যন্ত্র অব্যাহত থাকবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়