গুলশানের ইউনিমার্ট ভবনের আগুন নিয়ন্ত্রণে

আগের সংবাদ

ধাক্কা কাটিয়ে চাঙ্গা অর্থনীতি

পরের সংবাদ

সচিবালয়ে সুখ

প্রকাশিত: নভেম্বর ২২, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ২২, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

অতিরিক্ত সচিব হলাম! আজ গেজেট প্রকাশিত হয়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনের কপিটিতে কালো কালিতে লেখা অক্ষরগুলো স্পর্শ করলাম। স্পর্শ আমাকে আবেগপ্রবণ করে দিল! আহা! বুকের মধ্যে থেকে ধীরে ধীরে স্বস্তির নিঃশ্বাস বের হয়ে আসছে। মনে হচ্ছে এবার একটু সুযোগ আসবে জীবনটাকে উপভোগ করার। জীবনের সত্যিকারের সুখের সন্ধান বুঝি পেয়ে গেলাম। প্রজ্ঞাপনটাকে আবার দেখলাম, উহু! খুশিতে মন চঞ্চল হয়ে উঠলো যেন!
হবে না কেন? এখানে আসার জন্য কী না করেছি? জীবনের কত চড়াই-উতরাই পেরিয়ে আজ এখানে এসেছি! জীবনকে আমি কি কখনো একবিন্দু অবসর দিয়েছি? পড়ার টেবিল থেকে খেলার মাঠ! সেখান থেকে দেশের প্রান্তে প্রান্তে দায়িত্ব পালনের এলাকাগুলো, সবখানেই ছিল নিজেকে প্রমাণ করার লড়াই। সবখানেই আমি রেখে এসেছি সফলতার স্বাক্ষর! জীবন আমার বলতে গেলে দারুণভাবে সফল। এ হাত যেন সফল হবে বলেই সৃষ্টি! যেখানেই হাত রেখেছি সফলতা এসে ধরা দিয়েছে। ছাত্র ছিলাম যখন, তুখোড় মেধাবী। খেলার সময় মাঠ কাঁপানো কিম্বা দর্শকের ভালোবাসায় সিক্ত হওয়া।
কিন্তু এ সবকিছুর জন্য নিজেকে তো আমি কম কষ্ট দেইনি। যখন ছাত্র ছিলাম, জোর করে পড়ার টেবিলে নিজেকে বেঁধে রেখেছি। মন চাইত সবার মতো আড্ডা দিতে, নিজের মতো করে কিছু একান্ত সময় কাটাতে কিন্তু আমি চেয়েছি নিজেকে প্রমাণ করতে। কাজের সময় নিয়মের কঠিন ফ্রেমে বেঁধে ছুটে গেছি অক্লান্তভাবে। আমি চেয়েছি এমন কোথাও পৌঁছে যেতে যেখানে গেলেই আমি জীবনের প্রকৃত সফলতার স্বাদ পাব। যেখানে গেলে আমার এই প্রতিযোগিতার অধ্যায় শেষ হবে। আমি খুব নিবিড়ভাবে সুখ, শান্তি উপভোগ করব। যখন প্রাণভরে শ্বাস নিয়ে আমি স্বস্তির সাথে তা ত্যাগ করব। জীবনকে সকালের নরম আলোর মতো অনুভব করব। একবিন্দু অপ্রাপ্তিও সেখানে থাকবে না! তাইতো ছুটতে ছুটতে আমি ব্যস্ততা আর অবসরের সবটুকু সময় বিনিয়োগ করেছি এদিনের জন্য, যেখানে থাকবে অনাবিল সুখ। আহ! অবশেষে আমি পেয়েছি তাহারে!
আমি সুখ, শান্তি আর স্বস্তির এই দারুণ সময় উপভোগ করছিলাম। তখনই কাঁচের জানালা দিয়ে দৃষ্টিটা বাইরে গিয়ে পড়ল। বাইরে তখন দুপুরের তপ্ত রোদ। আমার মনে হলো, একজন রিকশাওয়ালা সচিবালয়ের পাশের রাস্তার বিপরীতে যেখানে একটি ঝাঁকড়া পাতার কাঁঠাল গাছ রয়েছে তার নিচে, ছায়ায় গামছা বিছিয়ে আধশোয়া হয়ে চোখ দুটো বন্ধ করে যেন স্বস্তির নিঃশ্বাস নিচ্ছে আর ছাড়ছে! আমি চেয়ার ছেড়ে উঠলাম, আরো তীক্ষè দৃষ্টিতে খেয়াল করলাম, গাছের পাতাগুলো দুলছে, তার মানে মৃদুমন্দ বাতাস বইছে সেখানে।
তার চেহারা এতো সজীব, স্নিগ্ধ দেখায় কেন? আহ! মৃদুমন্দ বাতাসে গাছের ছায়ায় এমন একটি বিশ্রামই যেন জীবনের সবচেয়ে বড় সুখ! এক ছুটে সেখানে যেতে ইচ্ছা করছে…। কিন্তু তা সম্ভব নয়, সিকিউরিটি আর প্রটোকল রয়েছে! সচিবেরা কী চাইলেই সবকিছু করতে পারেন? মনটা বিষিয়ে উঠলো! মনে হচ্ছে, জানালার শক্ত গ্রিলগুলো যেন জেলখানার গরাদ আর এই সচিবালয়টা যেন একটি জেলখানা! সুখ কী তাহলে অন্যকিছু?
:: শিক্ষার্থী, ইংরেজি বিভাগ, শাবিপ্রবি

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়