গুলশানের ইউনিমার্ট ভবনের আগুন নিয়ন্ত্রণে

আগের সংবাদ

ধাক্কা কাটিয়ে চাঙ্গা অর্থনীতি

পরের সংবাদ

পলাতক তারেক দেশে ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছেন!

প্রকাশিত: নভেম্বর ২২, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ২২, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে যে কোনো মূল্যে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর দাবি আদায়ে এক দফা আন্দোলনে রাজপথে রয়েছে বিএনপি। তবে বাস্তবতা হলো- খালেদা জিয়ার শারীরিক যে অবস্থা, তাতে যে কোনো সময় যে কোনো কিছু ঘটতে পারে। এমন শঙ্কায় দলটির নেতারা। এমন পরিস্থিতিতে গুঞ্জন চলছে, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এবং খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান দেশে আসার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সাজাপ্রাপ্ত তারেক পলাতক অবস্থায় এখন লন্ডনে অবস্থান করছেন।
‘খালেদা জিয়াকে যে বাসায় থাকতে এবং চিকিৎসা করার সুযোগ দিয়েছি সেটাই কি বেশি নয়? খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে দেয়া হবে কিনা- তা আইনগতভাবেই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’ সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন বক্তব্যের পর আলোচনায় উঠে এসেছে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থাকা মাকে দেখতে লন্ডন প্রবাসী তারেক রহমান কি বাংলাদেশে ফিরছেন? দেশে ফিরতে হলে কি ধরনের আইনি বাধার মুখে পড়তে পারেন তিনি?
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তারেক রহমানের দেশে আসার প্রক্রিয়া সহজ নয়। তিনি ‘নো ভিসার’ জন্য আবেদন করেছেন কিনা, দেশে ফেরার জন্য বিমানের টিকিট কেটেছেন কিনা? এ নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। যদি তা না করেন তবে, হালনাগাদ বাংলাদেশি পাসপোর্ট না থাকায় তাকে লন্ডন থেকে দেশে ফিরতে দ্রুত ট্রাভেল ডকুমেন্ট অথবা ব্রিটিশ পাসপোর্টের ক্ষেত্রে লন্ডনস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনে ‘নো ভিসা রিকোয়ার্ড’ সিলমোহরের জন্য আবেদন করতে হবে। কিন্তু এ ব্যাপারে তারেক রহমানের পক্ষ থেকে লন্ডনের বাংলাদেশ হাইকমিশনে গতকাল পর্যন্ত আবেদন করা হয়নি।
ব্রিটিশ মানবাধিকারবিষয়ক আইনজীবী ব্যারিস্টার মনোয়ার হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, মাকে দেখা না দেখা পরের কথা। তিনি আসামি হলে অবশ্যই এয়ারপোর্টেই গ্রেপ্তার হবেন। এমন পরিস্থিতিতে এটা অত্যন্ত কঠিন প্রশ্ন, আদৌ তিনি দেশে যেতে পারবেন কিনা, বা যেতে চান কিনা। কারণ, এটা তার জন্য নিরাপদ না। তবে খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর নির্বাহী ক্ষমতার পাশাপাশি আদালতে সিদ্ধান্ত দেয়ার এখতিয়ার রয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম বলেছেন, ২০০৮ সালে তিনি ব্রিটিশ অফিসে তার পাসপোর্টসহ সব কাগজপত্র জমা দিয়েছেন। তাকে দেশে আসতে হলে নতুন করে

আবেদন করতে হবে। তবে আমি যতটুকু জানি, আইনের দৃষ্টিতে তিনি একজন দণ্ডিত আসামি। তার নামে হুলিয়া জারি হয়েছে। তাই তাকে আইনি প্রক্রিয়াতেই দেশে ফিরতে হবে।
কি বলছে বিএনপি : গত এক যুগ ধরে যুক্তরাজ্যের লন্ডনে অবস্থানরত তারেক রহমান দেশে ফিরে রাজনীতি করতে চান বলে গত কয়েক বছর ধরেই জানিয়ে আসছেন বিএনপির সিনিয়র নেতারা। তবে তার দেশে ফেরার পথে প্রধান বাধা সরকার। লন্ডনে অবস্থানরত তারেক রহমান তার পাসপোর্ট নবায়ন করতে দিলেও বাংলাদেশ হাইকমিশন তার পাসপোর্ট নবায়ন করেনি।
দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশে ফিরতে চান জানিয়ে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান চান দেশে ফিরতে। কিন্তু দেশে আসতে চাইলে প্রথমেই দরকার পাসপোর্ট। পাসপোর্টের জন্য আবেদন করলেও সরকারের নির্দেশনা না থাকায় যুক্তরাজ্যের বাংলাদেশ হাইকমিশন তার পাসপোর্ট দিচ্ছে না। একটা দলের প্রধান পাসপোর্ট ছাড়া তো কোনোভাবেই দেশে ফিরতে পারবেন না।
অন্যদিকে, যে কোনো পরিস্থিতিতে তারেক রহমান দেশে ফিরতে প্রস্তত বলে জানিয়েছেন বিএনপির যুক্তরাজ্য শাখার সভাপতি এম এ মালেক। তিনি বলেন, তারেক রহমান যাওয়ার প্রস্তুতি তো নিচ্ছেনই। খুব শিগগিরই আমরা যাব। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাংলাদেশ হাইকমিশনে তার পাসপোর্টের আবেদন করার প্রশ্নই ওঠে না। পরিস্থিতি বুঝেই তিনি পাসপোর্ট নবায়ন করবেন। সেটা ছাড়া তো আর যাওয়া সম্ভব না।
দেশে ফিরতে বাধা নেই তারেকের পরিবার : আইনি জটিলতায় অসুস্থ মাকে দেখতে তারেক রহমানের দেশে আসা নিয়ে নানা জটিলতা থাকলেও তার স্ত্রী এবং কন্যার আসতে বাধা নেই বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা। কারণ, তারেকের স্ত্রী জোবায়দা রহমান গত দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে খালেদা জিয়ার মেডিকেল টিমের প্রধান হিসেবে লন্ডন থেকে চিকিৎসার ব্যাপারে মনিটরিং করছেন। সে হিসেবে অসুস্থ খালেদা জিয়ার সেবা করতে তিনি যদি দেশে আসতে চান সে ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে বাধা দেয়ার সুযোগ নেই। এ ব্যাপারেও ব্রিটিশ মানবাধিকারবিষয়ক আইনজীবী ব্যারিস্টার মনোয়ার হোসেন বলেছেন, তারেকের পরিবার অবশ্যই আসতে পারে, সেখানে কোনো বাধা থাকবে না। তবে এখন পর্যন্ত জোবায়দা রহমান এবং জায়মা রহমান খালেদা জিয়াকে দেখতে আসার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন এমন খবর পাওয়া যায়নি।
মায়ের প্রতি তারেকের ভালোবাসার পরীক্ষা : দীর্ঘ ১৪ বছর ধরে তারেক রহমান লন্ডনে অবস্থান করছেন। অনেক দিন ধরেই মা খালেদা জিয়া অসুস্থ। কিন্তু তারপরও এতদিন কেন তিনি মাকে দেখতে আসার ব্যাপারে আগ্রহ দেখাননি তা নিয়েও চলছে আলোচনা। বিশ্লেষকরা বলছেন, জিয়াউর রহমান যখন মারা যান তখন তারেক রহমান এবং আরাফাত রহমান কোকো খুব ছোট ছিলেন। খালেদা জিয়া একাই ¯েœহ মমতা দিয়ে দুই ছেলেকে বড় করেছেন। এখন তিনি যখন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে; তখন ছেলে হয়ে তারেক রহমান গ্রেপ্তার হয়ে জেলে যাওয়ার ভয়ে মাকে দেখতে আসেননি। এতেই বোঝা যায়, তারেক রহমান মায়ের প্রতি কতটা উদাসীন। তিনি রাজনীতি নাকি মাকে ভালোবাসেন এখন তা দেখার সময় এসেছে। এটা তার জন্য মায়ের প্রতি ভালোবাসার বড় পরীক্ষা।
আন্দোলন কতদূর টানতে পারবে বিএনপি : একদিকে তারেক রহমান মাকে দেখতে দেশে আসার প্রস্ততি নিচ্ছেন এমন খবর পাওয়া যাচ্ছে। অন্যদিকে আন্দোলনের মাধ্যমে খালেদা জিয়াকে বিদেশ নেয়ার দাবি আদায়ে মাঠে নেমেছে বিএনপি। আজ সারাদেশে বিক্ষোভ করবে দলটি। সেখান থেকে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
অন্যদিকে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সামনে বিক্ষোভ করবে লন্ডন বিএনপি। বিক্ষোভ শেষে স্মারকলিপি দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করবেন নেতারা। এছাড়া বিভিন্ন দেশের দূতাবাসে চিঠি দেয়া হবে, যাতে খালেদা জিয়াকে লন্ডনে নিয়ে আসা যায়। তবে বিএনপি যে মিশন নিয়ে মাঠে নেমেছে সেই দাবি আদায়ে তাদের কতদিন রাজপথে থাকতে হবে, সরকারের প্রতি কতটা চাপ প্রয়োগ করতে পারবে, সেই পর্যন্ত যার জন্য আন্দোলন সেই ‘ক্রিটিক্যাল’ রোগীর সময় থাকবে কিনা সেই বিষয়ে উঠেছে নানা প্রশ্ন।
তারেকের ফেরা নিয়ে লাভ-ক্ষতির হিসাব কষছে বিএনপি : বিএনপি নেতাদের ধারণা, এটি তারেক জিয়ার দেশে ফেরার উপযুক্ত সময়। এই রকম সময় যদি তারেক রহমান দেশে ফিরে আসে তাহলে লাভবান হবে বিএনপি। এর ফলে জনগণের মধ্যে একটি ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া হবে। এছাড়া খালেদা জিয়ার যদি কিছু হয় এবং সে সময় যদি তারেক দেশে ফেরেন তাহলে খালেদা জিয়ার শেষ পরিণতি নিয়ে যে আবেগ সেই আবেগের সঙ্গে তারেকের দেশে ফেরা যুক্ত হলে একটি বড় ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হবে এবং এটিতে সরকার চাপের মধ্যে পড়বে।
অন্যদিকে ক্ষতির বিষয়টিও বিবেচনায় রয়েছে বিএনপি নেতাদের। কারণ, দুটি মামলায় তারেক রহমান দণ্ডিত আছেন। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়ছে। অন্য একটি মামলায় তার সাত বছরের দণ্ড দিয়েছেন আদালত। এই দুটি মামলাতেই তার আপিল করার নির্দিষ্ট সময়সীমা শেষ। তিনি যদি দেশে ফিরে গ্রেপ্তার হন তাহলে বিএনপির নিঃশেষ হওয়ার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হবে। আর এ বিবেচনা থেকেই বিএনপি নেতাদের ওই অংশ তারেক রহমানের দেশে ফেরার বিপক্ষে।
প্রসঙ্গত, ২০০৮ সালে ব্রিটেনে যাওয়ার পর দেশটির কাছে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করেন তারেক রহমান। তার সে সময়কার শারীরিক, রাজনৈতিক অবস্থা বি বেচনা করে ব্রিটেনের ইমিগ্রেশন বিভাগ তাকে সে দেশে বসবাসের অনুমোদন দেয়। ওই প্রক্রিয়া শেষে ব্রিটেনের বিদ্যমান ইমিগ্রেশন আইন অনুযায়ী, ২০১৩ সালে দেশটিতে স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমোদন পান তারেক রহমান। ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা মামলার রায়ে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি তারেক রহমান। এছাড়া ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় তাকে ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন আদালত।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়