গুলশানের ইউনিমার্ট ভবনের আগুন নিয়ন্ত্রণে

আগের সংবাদ

ধাক্কা কাটিয়ে চাঙ্গা অর্থনীতি

পরের সংবাদ

ঘন বৃষ্টি ভেজা দিনে

প্রকাশিত: নভেম্বর ২২, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ২২, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

বারোটার পর থেকে ঝুম বৃষ্টি শুরু হয়েছে। রাতে ইনার ভালো ঘুম হয়নি। খোলা জানালা দিয়ে তার গায়ে বৃষ্টি পড়ছিল। তবে ব্যাপারটা তার কাছে মজার ছিল। বৃষ্টির শীতল হাল্কা ছোট ছোট স্পর্শ তার দারুণ লাগছিল। শুয়ে শুয়ে বৃষ্টিতে ভেজা। দারুণ ব্যাপার!
কিছু দিন ধরে সে ব্যায়াম করার অভ্যাস করছে। খুব দ্রুত তা মানিয়েও গেছে। তার এখন প্রতি ভোর আর ভোরের মিষ্টি হাওয়া বেশ ভালো লাগে। জীবনের বিস্বাদ কেটে গেছে। দিন দিন শরীর কেমন জড় বস্তু হয়ে গিয়েছিল। এখন দুনিয়াটা বেশ সুন্দর লাগতে শুরু করেছে।
আজো নিত্য অভ্যাস অনুযায়ী হাঁটতে হাঁটতে সে ব্রিজের ওপর গিয়ে বসলো। কিন্তু মনটা খারাপ হয়ে গেল। ঝুম বৃষ্টি ও মেঘলা আকাশ ধূসর রঙের চাঁদরে এমনভাবে জড়িয়ে আছে যে সূর্য ওঠার অপরূপ দৃশ্য দেখা যাচ্ছে না। মেঘ আজ একাই এ দৃশ্য দেখবে বলে বুঝি এতো আয়োজন করেছে।
ঝুম বৃষ্টিতে চারদিকে শুনশান নীরবতা। এতো ভোরে আর এমন বৃষ্টিতে কারো ঘর থেকে বের হবার কথাও নয়। এই নীরবতা তার কাছে আরো বেশি ভালো লাগছে। তার গা চুঁইয়ে হিমেল হাওয়া আর বৃষ্টির ফোঁটা ছুটে চলছে। তার গা স্পর্শ করছে না। কি আনন্দ। রেইনকোট গায়ে দিয়ে বৃষ্টি ভেজার এক অন্যরকম অনুভূতি আছে।
ব্রিজের পাশে একটি ফুলের নার্সারি হয়েছে। সেখানে গিয়ে বৃষ্টির ফোঁটার গানে মাতাল ফুলেদের নাচ তার সাথে ঘোর লাগা ঘ্রাণ কিছুটা গায়ে মাখিয়ে ফিরছিল। এমন সময় চোখ পড়ল ব্রিজের ওপর। ব্রিজের কোণে সরু রেলিংয়ের ওপর কে যেন উঠে দাঁড়াল।
আশ্চর্য! এই বৃষ্টির মধ্যে ওখানে কে? নির্ঘাত আত্মহত্যা করবে!
লোকটি এক নজরে নিচে বৃষ্টির আনন্দে উদ্বেলিত নদীর পানির ছলছলানির দিকে তাকিয়ে আছে।
লোকটিকে বাঁচাতে হবে। ইনা দৌড়ে গিয়ে হাত চেপে ধরলো। আর তখনই লোকটি বিড়বিড় করে বললো- আমার খুব ভয় করছে। সুন্দর পৃথিবী ছেড়ে আমি যেতে চাই না। আমাকে বাঁচান।
হঠাৎ বিষম আকারে আগুন রাঙা সাপ এঁকেবেঁকে আকাশের বুক চিরে গর্জে উঠলো। তার হুংকারে আতংকিত হয়ে ইনা লোকটির হাত ছেড়ে দিল। লোকটি আকাশ থেকেও উচ্চ স্বরের চিৎকারে আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে নদীর শীতল জলে পৃথিবী এঁকে নিলো।
তার পুরো পৃথিবী জলের নিচে অসহায় হয়ে নিভে গেল।
ইনা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। লোকটার মুখ খুব চেনা। এক বছর আগের এই দিনেই কি সেই ঘটনা ঘটেছিল? বান্ধবী লিনার ভাই নৌকা ভ্রমণে গিয়ে ডুবে মারা গিয়েছিল। যে সাঁতার জানতো না। ওই নৌকাতে ইনা?ও ছিল।
হঠাৎ আঁতকে উঠে এদিক ওদিক তাকালো সে। তারপর মূর্তির মতো কিছু সময় উথাল-পাথাল পানির দিকে তাকিয়ে রইল। আবারো মেঘ গর্জে উঠলো। সেই সাথে ইনার উচ্চ হাসির শব্দ। হয়তো আবারো এভাবেই কোনো ঘন বৃষ্টি ভেজা সুন্দর দিনে কালিমা একে যাবে নদীর পানি আর উতলা নদী হাত বাড়িয়ে ডাকবে।
:: জেলা সদর, মাগুরা

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়