গুলশানের ইউনিমার্ট ভবনের আগুন নিয়ন্ত্রণে

আগের সংবাদ

ধাক্কা কাটিয়ে চাঙ্গা অর্থনীতি

পরের সংবাদ

কর্তৃপক্ষ নীরব : বাসে হাফ ভাড়ার আন্দোলন জোরালো হচ্ছে

প্রকাশিত: নভেম্বর ২২, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ২২, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

দেব দুলাল মিত্র : গণপরিবহনে শিক্ষার্থীদের ‘হাফ ভাড়া’ নিয়ে পরিস্থিতি জটিল হচ্ছে। ইতোমধ্যেই ঢাকা ও চট্টগ্রামে শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমেছে। তারা বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে আল্টিমেটাম পর্যন্ত দিয়েছে। নতুন সড়ক পরিবহন আইন প্রণয়নের আগে সারাদেশের শিক্ষার্থীরা যেভাবে একযোগে রাস্তায় নেমেছিল, সেই একই রকম বিস্ফোরক পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। কিন্তু এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সরকারের তরফ থেকে এখনো কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। এদিকে গণপরিবহনে শিক্ষার্থীদের ওপর চালক ও কন্ডাক্টরদের বেপরোয়া আচরণ আরো বেড়েছে। তারা বেশি ভাড়া আদায় নিয়ে সাধারণ নাগরিকদের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদেরও নানাভাবে হয়রানি ও নাজেহাল করছে। সংঘবদ্ধভাবে শিক্ষার্থীদের মারধর করছে এবং নারী শিক্ষার্থীদের ধর্ষণের হুমকি দিচ্ছে। কিন্তু নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের কেউ এ নিয়ে মুখ খুলছেন না।
জানা গেছে, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে হাফ ভাড়া নেয়ার দাবিটি নতুন কিছু না। বিষয়টি আগেও অনেকবার আলোচনায় এসেছে। ২০১৮ সালে শিক্ষার্থীদের নয় দিনের লাগাতার আন্দোলনের পর নতুন সড়ক পরিবহন আইন প্রণয়ন হয়। ওই আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের নয় দফার একটি ছিল ‘হাফ ভাড়া’ নেয়ার দাবি। কিন্তু এই দাবিটি শেষ পর্যন্ত উপেক্ষিত হয়। এর আগে ২০১৫ সালের অক্টোবর মাসে বিআরটিসি কার্যালয়ে বাস ডিপো ব্যবস্থাপকদের সঙ্গে বৈঠকে সড়ক যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, আমি এই মুহূর্ত থেকে নির্দেশ দিচ্ছি, রাজধানীতে চলাচলরত বিআরটিসির পাশাপাশি অন্যান্য পরিবহনেও শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে হাফ ভাড়া নেয়া হবে। না নিলে দায়ী পরিবহনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। কিন্তু পরবর্তীতে ওবায়দুল কাদেরের এই নির্দেশনা নিয়ে পরিবহন মালিকদের সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়নি। হাফ ভাড়াও কার্যকর হয়নি। গত ৭ নভেম্বর বাসভাড়া নির্ধারণে বিআরটিএর সঙ্গে পরিবহন মালিকদের বৈঠকেও শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়া নেয়ার বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।
জানা গেছে, আইনে না থাকলেও সরকারি-বেসরকারি সব গণপরিবহনেই হাফ ভাড়া নেয়ার বিষয়টি প্রচলিত আছে। কিন্তু কয়েক বছর আগে পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা ‘গেটলক সার্ভিস’ ‘সিটিং সার্ভিস’ ও ‘ওয়েবিল’ সিস্টেম নামে বেআইনি ও অবৈধ সার্ভিস চালু করে যাত্রীদের কাছ থেকে বেশি ভাড়া আদায় করে আসছে। এসব বিষয়ে বিআরটিএ এবং মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কখনো কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। নতুন বাসভাড়া নির্ধারণ করার আগেও হাফ ভাড়া নিতে পরিবহন কর্মীরা অনেকটাই অনীহা দেখাত। কিন্তু বাস ভাড়া নতুন করে বাড়ানোর পরে তারা হাফ ভাড়া নিতে পুরোপুরি অনীহা দেখাচ্ছে। তারা শিক্ষার্থীদের নাজেহাল ও মারধর করছে। নারী শিক্ষার্থীদের ধর্ষণের হুমকিও দিচ্ছে। অন্যদিকে শিক্ষার্থীরাও ঢাকা ও চট্টগ্রামে প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছে। এই অবস্থায় হাফ ভাড়া দেয়া নিয়ে পরিস্থিতি আরো জটিল হচ্ছে।
গতকাল রবিবার ঢাকায় বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষার্থীরা বকশীবাজার এলাকায় প্রায় চার ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশ ও সরকারের প্রতি ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ব্যবস্থা নেয়া না হলে আবারো সড়ক অবরোধ কর্মসূচি দেয়া হবে বলেও জানিয়েছে। সমাবেশ থেকে তারা নয় দফা দাবিও উত্থাপন করেছে।
বদরুন্নেসা কলেজের শিক্ষার্থীরা জানিয়েছে, তারা অন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের সঙ্গেও কথা বলা শুরু করেছেন। হাফ ভাড়া নেয়া এবং ধর্ষণের হুমকিদাতাদের গ্রেপ্তার না করলে সম্মিলিতভাবে সব শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে যোগ দেবে।
গত শনিবার রাজধানীর সায়েন্সল্যাবরেটরি মোড়ে হাফ ভাড়ার দাবিতে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেছে। ঢাকা কলেজ, সিটি কলেজ ও আইডিয়াল কলেজের বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা সড়কে ১০টির বেশি বাস ভাঙচুর করে। এ সময় মিরপুর রোডে আধা ঘণ্টার বেশি সময় বাস চলাচল বন্ধ ছিল।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার হাফ ভাড়া নেয়ার দাবিতে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করে। ১৫টির মতো বাস আটকালেও ঘণ্টাখানেক পর তা আবার ছেড়ে দেয়। পুলিশ ও কলেজের শিক্ষকদের আশ্বাসের পর সেদিন আন্দোলন স্থগিত করে শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ফিরে যায়।
মিরপুর রুটের মেট্রো পরিবহনের চালক রহমত মিয়া বলেন, ভাড়া বাড়ানোর পর হাফ ভাড়া নিলে লোকসান গুনতে হয়। মালিককে দিনশেষে জমা বুঝিয়ে দিতে হয়। তখন আমাদের পকেটে যা থাকে তা দিয়ে সংসার চালানো যায় না।
বিকাশ পরিবহনের হেলপার সালাম জানান, একটা গাড়িতে অর্ধেক ছাত্র ওঠে। তারা হাফ ভাড়া দেয়। কিন্তু মালিক ওয়েবিল দেখে সিট ভাড়া পুরোটাই বুঝে নেয়। হাফ ভাড়া না নিলে ছাত্ররা গাড়ি ভাঙচুর করে।
গণপরিবহনে শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়ার দাবিতে গত শনিবার চট্টগ্রামেও শিক্ষাথীরা বিক্ষোভ করেছে। চট্টগ্রামের সরকারি হাজী মুহম্মদ মহসীন কলেজের শিক্ষার্থীরা শনিবার দুপুরে কলেজ ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করে। কলেজ শাখা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক কাজী নাঈমের সভাপতিত্বে এই সমাবেশ থেকেও হাফ ভাড়া না নেয়া হলে ছাত্রলীগ চট্টগ্রাম মহানগরীতে আন্দোলন গড়ে তোলার ?হুঁশিয়ারি দিয়েছে।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েতউল্ল্যাহ বলেন, হাফ ভাড়ার বিষয়টি কখনোই ছিল না, এখনো নেই। বিআরটিএর সঙ্গে বহুবার ভাড়া নিয়ে আমাদের বৈঠক হয়েছে। কিন্তু হাফ ভাড়া নেয়ার ব্যাপারে কোনো আলোচনা হয়নি। যেহেতু নির্দেশনা নেই, তাই এ নিয়ে কথা বলার কিছুই নেই।
নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) আন্দোলনের কর্ণধার ও চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, উন্নত বিশ্বের অনেক দেশেই ডিজিটাল কার্ডে শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়ার ব্যবস্থা আছে। এটা নিয়ে এখন চিন্তা করার সময় এসেছে। শিক্ষার্থীদের এই সুবিধা দেয়ার ব্যাপারে আলোচনা হতে পারে। সরকার চাইলে দেয়া যেতে পারে। একটা সিস্টেমে আনতে হবে।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, শিক্ষার্থীদের জন্য গণপরিবহনে হাফ ভাড়া নেয়ার বিষয়টি অবশ্যই সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে। সরকার এখনই এই বিষয়ে ব্যবস্থা না নিলে পরিস্থিতি আরো খারাপ হতে পারে।
এদিকে শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়া প্রসঙ্গে বিআরটিএ ম্যাজিস্ট্রেট ও কর্মকর্তারা জানান, সড়ক পরিবহন আইনে হাফ ভাড়ার কোনো নির্দেশনা নেই। তাই এই বিষয়ে আমরা কারো পক্ষে কিছু বলতে পারি না। অনেক অভিযোগ পাই, কিন্তু আমাদের কিছুই করার নেই।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়