মাদকবিরোধী অভিযান : রাজধানীতে গ্রেপ্তার ১২৪

আগের সংবাদ

যোগ্যরা নৌকা পাননি যে কারণে : ‘বিদ্রোহী’ তকমায় মনোনয়ন পাচ্ছেন না জনপ্রিয়রা, আর্থিক কারণেও যোগ্যদের নাম আসছে না কেন্দ্রে

পরের সংবাদ

হাফ ভাড়ার দাবিতে সড়কে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা, ভাঙচুর

প্রকাশিত: নভেম্বর ২১, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ২১, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : গণপরিবহনে হাফ ভাড়া নিশ্চিত করার দাবিতে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় বেশ কয়েকটি বাসেও ভাঙচুর চালানো হয়েছে। গতকাল শনিবার সকাল থেকেই সায়েন্সল্যাব, ফার্মগেট, রামপুরা, মিরপুর ও উত্তরা এলাকায় শত শত শিক্ষার্থী সড়ক অবরোধে অংশ নেন। বিক্ষোভের কারণে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো অচল হয়ে পড়ে। সৃষ্টি হয় জনদুর্ভোগ। একপর্যায়ে পুলিশের হস্তক্ষেপে সড়ক ছেড়ে দেন শিক্ষার্থীরা। তবে দাবি আদায় না হলে বিক্ষোভ সমাবেশ অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন তারা। একই সঙ্গে বিক্ষোভ থেকে হাফ ভাড়া নিশ্চিতের পাশাপাশি ওয়েবিল বন্ধ করে কাউন্টারভিত্তিক টিকেট সিস্টেম চালুর দাবি তোলা হয়েছে।
এদিকে হাফ পাস বাস্তবায়নে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, টাস্কফোর্সের মাধ্যমে বাসে শিক্ষার্থীদের জন্য অর্ধেক ভাড়া পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করা হবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালও গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর তেজগাঁও মহিলা কলেজে একটি অনুষ্ঠানের পর এ বিষয়ে আশ্বাস দিয়েছেন। তবে কবে তা বাস্তবায়ন করা হবে তা স্পষ্ট করা হচ্ছে না। ফলে আশ্বাসেই আটকে আছে হাফ ভাড়ার সিদ্ধান্ত। অন্যদিকে ডিজেলের দাম বৃদ্ধির পর শুরু হয়েছে নতুন নৈরাজ্য। কিছু বাস মালিক শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে হাফ ভাড়া নিতে রাজি হলেও বেশির ভাগ বাসে নেয়া হচ্ছে বাড়তি ভাড়া। অনেক বাসে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার ও নামিয়ে দেয়ার মতো ঘটনাও ঘটছে। ফলে রাজধানীর ১২৮টি রুটে চলাচলরত সব বাস-মিনিবাসে হাফ ভাড়ার দাবিতে প্রতিদিনই রাজধানীতে আন্দোলন কর্মসূচি পালন করছেন শিক্ষার্থীরা।
এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল সকালে সায়েন্সল্যাব, ফার্মগেট, রামপুরা, মিরপুর ও উত্তরা এলাকায় সড়ক অবরোধ করা হয়। দুপুর সাড়ে ১২টায় রাজধানীর সায়েন্সল্যাবে সড়ক অবরোধ করেন ঢাকা কলেজ, সিটি কলেজ ও আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা এলোপাতাড়িভাবে অন্তত ১০টি বাসে ভাঙচুর চালান। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সায়েন্সল্যাবের ল্যাবএইড হাসপাতালের সামনের কলেজে ড্রেস পরা শিক্ষার্থীরা হঠাৎ বাস ভাঙচুর

শুরু করেন। তারা হাফ ভাড়ার দাবি জানিয়ে স্লোগান দিতে থাকেন। মিরপুর মেট্রো সার্ভিসের চালক রহমত মিয়া বলেন, গাড়ি নিয়ে ল্যাবএইডের সামনে যেতেই দেখি গাড়ি ভাঙতে ভাঙতে আসছে ছাত্ররা। পরে আমি গাড়ি রেখে পালিয়ে গিয়েছিলাম। তারা চলে যাওয়ার পর এসে দেখলাম গাড়ি ভাঙা।
ধানমন্ডি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, হাফ ভাড়ার দাবিতে শিক্ষার্থীরা মিছিল করছিল। একপর্যায়ে তারা গাড়ি ভাঙচুর শুরু করে। পুলিশ সেখানে উপস্থিত হয়ে ধাওয়া দিলে তারা পালিয়ে যায়। বৃহস্পতিবারও এই সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছিল শিক্ষার্থীরা। তাদের অভিযোগ, প্রতিদিন অনেক শিক্ষার্থী বাসে চলাচল করলেও তাদের থেকে হাফ ভাড়া নেয়া হচ্ছে না। উল্টো বাসচালক ও হেলপাররা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন।
দুপুর ১২টার দিকে ফার্মগেটে সড়ক অবরোধ করেন সরকারি বিজ্ঞান কলেজের শিক্ষার্থীরা। সরজমিন দেখা যায়, শিক্ষার্থীদের গায়ে হাত তোলায় ফার্মগেটে স্বাধীন পরিবহনের একটি বাসের (ঢাকা মেট্রো-ব, ১৯-৯০০৭) গøাস ভাঙচুর করেন শিক্ষার্থীরা। পাশাপাশি অন্য পরিবহনের বাস থামিয়ে হাফ ভাড়াসহ ন্যায্য ভাড়া নেয়া হচ্ছে কিনা, যাচাই করেন তারা। বাসের বেশির ভাগ যাত্রী ন্যায্য ভাড়া নিচ্ছেন জানালে বাস ছাড়া হচ্ছে। এভাবে প্রায় ৪০ মিনিট রাস্তা বন্ধ থাকার পর পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
পরিবহন শ্রমিকদের হামলার শিকার এক শিক্ষার্থী জানান, স্বাধীন পরিবহন ফুল ভাড়া আদায় করছে। ৩০ টাকার ভাড়া ২০ টাকা দিতে চাইলেও তারা নেয় না। হাফ ভাড়া দেয়ার কথা বলায় বাসের হেলপার তাদের গায়ে হাত তোলে। তেজগাঁও জোনের সহকারী উপপুলিশ কমিশনার (এসি) কাজী মিজানুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, হাফ ভাড়া নিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পরিবহন শ্রমিকদের হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। একটি বাস ভাঙচুর করেছে শিক্ষার্থীরা।
দুপুর ১টার দিকে রামপুরার ব্রিজ সংলগ্ন বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থী বিক্ষোভে অংশ নেন। এ সময় বাড্ডা-রামপুরা রোডে চলাচলকারী রাইদা, আকাশ, স্বাধীন, তরঙ্গ, রমজান বাস থামিয়ে বাসচালকদের জেরা করেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা পুলিশের কাছে ছয়টি দাবি তুলে ধরেন। দাবিগুলো হলো- সব গণপরিবহনে (সড়ক, নৌ, রেলপথ) শিক্ষার্থীদের হাফ পাস নিশ্চিত করতে হবে। সিটিং সার্ভিস বাতিল করার পরও ওয়েবিল কার্যক্রম চলছে। ওয়েবিল বন্ধ করে কাউন্টারভিত্তিক টিকেট সিস্টেম চালু করতে হবে। নারী যাত্রীদের জন্য প্রতিটি গণপরিবহনে ৯টি আসন বরাদ্দ রাখতে হবে। গণপরিবহনে যাত্রী হয়রানি বন্ধ করতে হবে ও ট্রাফিক ব্যবস্থার মান উন্নয়ন করতে হবে। বাস সম্পূর্ণ থামিয়ে শিক্ষার্থীদের নিরাপদে বাসে উঠাতে হবে এবং নামাতে হবে। বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো কঠোর আইনের আওতায় আনতে হবে।
এর আগে বেলা ১১টার দিকে উত্তরা আজমপুর বাসস্টান্ডে সড়ক অবরোধ করেন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা হাফ ভাড়ার দাবিসহ ৪টি দাবি তুলে ধরেন। আজমপুরে আধ ঘণ্টা বিক্ষোভ পালন করে হাউস বিল্ডিংয়ের দিকে অগ্রসর হন শিক্ষার্থীরা। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তারা আব্দুল্লাহপুরে বিক্ষোভ করেন। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে সড়ক ছেড়ে দেন বিক্ষোভকারীরা।
প্রসঙ্গত, ডিজেলের দাম বৃদ্ধির পর লোকসানের অজুহাত দেখিয়ে হাফ ভাড়া নিতে চাইছে না বাসগুলো। রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থীদের হেনস্তার শিকার হতে হচ্ছে। এর মধ্যে গত বৃহস্পতিবার ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা বাসে হাফ ভাড়ার দাবিতে সড়ক অবরোধ করেছেন। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে হেনস্তা করা হয়েছে। এছাড়া সরকারি তিতুমীর কলেজের চার শিক্ষার্থীর ওপর হামলা করা হয়েছে। গত ১৫ নভেম্বর রাজধানীর দিয়াবাড়ী-জুরাইন রুটের রাইদা পরিবহনের বাসে হাফ ভাড়া দিতে চাইলে বাস শ্রমিকদের রোষানলে পড়েন এক শিক্ষার্থী। ফলে হাফ ভাড়া নিশ্চিতের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেছেন রাজধানীর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। কিন্তু সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। এ বিষয়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী বলেন, এ সমস্যার সমাধান করা জরুরি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়