মাদকবিরোধী অভিযান : রাজধানীতে গ্রেপ্তার ১২৪

আগের সংবাদ

যোগ্যরা নৌকা পাননি যে কারণে : ‘বিদ্রোহী’ তকমায় মনোনয়ন পাচ্ছেন না জনপ্রিয়রা, আর্থিক কারণেও যোগ্যদের নাম আসছে না কেন্দ্রে

পরের সংবাদ

মাঠে পাকিস্তানের অসদাচরণ

প্রকাশিত: নভেম্বর ২১, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ২১, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : বাংলাদেশ-পাকিস্তান টি-টোয়েন্টি সিরিজের দুই ম্যাচের ফলাফল নিষ্পত্তি হয়েছে। বাবর আজমরা লাল-সবুজের প্রতিনিধিদের বিপক্ষে সিরিজ জিতে নিয়েছে। আগামীকাল তৃতীয় ম্যাচে মুখোমুখি হবে দুদল। গতকাল দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ইনিংসের তৃতীয় ওভারের প্রথম বলে দারুণ এক ফ্লিক শটে শাহিন আফ্রিদিকে ছক্কা হাঁকান আফিফ। পরের বল ডিফেন্স করে ক্রিজেই ছিলেন তিনি। কিন্তু বল ধরে অযথা জোরালো থ্রো করেন শাহিন। সেই বল সরাসরি আঘাত হানে আফিফের পায়ে। আফিফ সঙ্গে সঙ্গে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। অবশ্য পাকিস্তানি ক্রিকেটাররা ছুটে গিয়ে দুঃখ প্রকাশ করলেও ওই ছক্কা খেয়েই যে মেজাজ হারিয়েছেন, সেটি স্পষ্ট। বল পায়ে লাগলেও বড় কোনো ইনজুরিতে পড়েননি আফিফ। শাহিনের থ্রোতে পড়ে গিয়ে কিছুক্ষণ শুশ্রƒষার পর ব্যাটিং চালিয়ে যান তিনি। যদিও বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। ২১ বলে ২০ রান করে ফেরেন বাঁ-হাতি এই ব্যাটার। প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচে বাংলাদেশ ইনিংসের ১৭তম ওভারে বাংলাদেশের উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান নুরুল হাসানকে আউট করার পর ড্রেসিংরুমের পথ দেখানোর অঙ্গভঙ্গি করেন পাকিস্তানি পেসার হাসান আলি, যা আবার আইসিসির আচরণবিধি অনুযায়ী লেভেল-১ এর অপরাধ।
ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থার নীতিমালার ২.৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, মাঠে কোনো খেলোয়াড়ের আগ্রাসী মনোভাব দেখানো যাবে না। এ অপরাধের কারণে হাসানকে তিরস্কার করেছে আইসিসি এবং দিয়েছে একটি ডিমেরিট। গত ২৪ মাসের মধ্যে এটিই হাসানের প্রথম ডিমেরিট। ছয় বছর পর বাংলাদেশে পা দেয়ার পর থেকেই পাকিস্তানের খেলোযাড়রা অসদাচরণের পরিচয় দিয়ে যাচ্ছেন। টি-টোয়েন্টি সিরিজ শুরুর আগে মিরপুরে অনুশীলনের সময় মাঠে পতাকা টাঙিয়ে অনুশীলন করে শাহিন আফ্রিদি-হাসান আলিরা। গতকাল ভোরের কাগজের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় জাতীয় দলের দুই সাবেক তারকা আফতাব আহমেদ ও মারকুটে ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ জিয়াউর রহমান বলেন, পাকিস্তানিদের এমন আচরণ কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না।
জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটার আফতাব আহমেদ জানান, খেলার মাঠে আগ্রাসী মনোভাব থাকা অস্বাভাবিক কিছু নয়। যেহেতু সেদেশের প্রতিনিধিত্ব করছে তার মধ্যে দলকে জেতানোর মনোভাব থাকতে হবে। আমরা দেখেছি খেলার মাঠে যতই আগ্রাসী থাকুক না কেন মাঠের বাইরে কিন্তু তারা ভালো বন্ধু। শাহিন আফ্রিদি যে কাজটি করেছে না করলেও পারত। মনে হয় ইচ্ছে করে করেনি। খেলার মাঠে স্পোর্টিং মনোভাব বজায় রাখতে হবে। অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো না। সব কিছুরই একটা লিমিডেশন থাকা উচিত।
অনুশীলনে পাকিস্তানি খেলোয়াড়দের পতাকা টানানো প্রসঙ্গে জাতীয় দলের সাবেক এ ক্রিকেটার বলেন, এ বিষয়ে ব্যাখা দিয়েছেন পাকিস্তান দলের ম্যানেজার। খেলার মাঠে খেলোয়াড়রা আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে তা দেখার জন্য ম্যাচ রেফারি রয়েছে। হাসান আলিকে তার আচরণের জন্য শাস্তি পেতে হয়েছে। শাহিন আফ্রিদিও শাস্তি পেতে পারেন।
কোনো নিরপেক্ষ দেশে খেলা হলে ভিন্ন কথা কিন্তু দ্বিপক্ষীয় সিরিজে স্বাগতিক দেশের ভক্ত-সমর্থক আর দর্শকের হাতে সফরকারী দলের পতাকা এবং সেই পতাকা হাতে উল্লাস, উচ্ছ¡াস প্রকাশ দেশপ্রেমিক সমর্থকদের হতবাক করেছে।
পাকিস্তানের চলতি সিরিজে গ্যালারিতে বাংলাদেশের দর্শকদের হাতে পাকিস্তানের পতাকা আর বাবর আজমদের জয়ে উল্লাস এবং বাংলাদেশকে ‘দুয়োধ্বনি’ দিতেও দেখা গেছে। পাকিস্তানি দূতাবাসের লোকজন ওই পতাকা বহন করলে কোনো কথাই ছিল না। কিংবা ঢাকায় অবস্থানরত কোনো পাকিস্তানি তাদের জাতীয় পতাকা নিয়ে মাঠে এলেও কেউ হয়তো একটি কথাও বলত না।
গতকালও গ্যালারিতে পাকিস্তানের পতাকা হাতে উল্লাস করতেও দেখা গেছে অনেক দর্শককে। নিজ দেশের ক্রিকেট অনুরাগীদের পাকিস্তানের জাতীয় পতাকা হাতে নিয়ে উল্লাস করতে দেখে হতাশ বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি-বিন মুর্তজাও। নিজের ফেসবুক ওয়ালে তা নিয়ে নিজের হতাশার কথাও লিখেছেন মাশরাফি। নড়াইল এক্সপ্রেসের সেই পোস্টের পরও গতকাল পূর্ব দিকের গ্যালারিতে পতাকা নিয়ে সমর্থকদের উল্লাস করতে দেখা গেছে। ঢাকায় পাকিস্তানি খেলোয়াড়দের অসদাচরণ সম্পর্কে জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটার মোহাম্মদ জিয়াউর রহমান বলেন, খেলায় জয়-পরাজয় থাকবে তাই বলে ক্রেজী হওয়া উচিত নয়। শাহিন আফ্রিদি যে কাজটি করেছেন, মনে হয় সে ইচ্ছে করে করেনি। তারপরও বলব উইকেট লক্ষ্য করে বল না ছুড়লেও হতো। বলটি আফিফের পায়ে না লেগে মাথায় বা অন্য কোথায় লাগলে বড় বিপদ ঘটতে পারত। এ অপরাধের জন্য পাকিস্তানের বোলার হয়তো শাস্তি পেতে পারেন। মাঠের ভেতরের সব ঘটনা ম্যাচ রেফারি বেশ ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করেন।
গ্যালারিতে পাকিস্তানের পতাকা নিয়ে উল্লাস প্রকাশ করা সম্পর্কে জাতীয় দলের এ ক্রিকেটার বলেন, কাজটি অবশ্যই দৃষ্টিকটু। আমার মনে হয় এখানে পাকিস্তানকে নয় দলের খেলোয়াড়দের ভালোবাসে বলে হয়তো এ কাজ করেছে। এ দলে বেশ কয়েকজন বিশ্বমানের খেলোয়াড় রয়েছে। বাবর আজম, রিজওয়ান, শাহিন আফ্রিদির খেলা ভালোবাসেন বলে অনেকে তাদের সমর্থন করেছে। অনেকে খেলার মধ্যে রাজনীতি নিয়ে আসেন। এটা অবশ্যই পরিহার করা উচিত। খেলাকে রাজনীতির ঊর্ধ্বে রাখতে হবে।
দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে শোষক ও নির্যাতক পাকিস্তানকে হটিয়ে এদেশ স্বাধীন হয়েছে। সেই শোষকদের পতাকা নিয়ে গ্যালারিতে বাংলাদেশের নাগরিক হয়ে পতাকা নিয়ে খেলা দেখতে আসা এবং মাঠে পাকিস্তানকে সমর্থন করা, পাকিস্তানের সাফল্য-জয়ে উল্লাস করা যে রীতিমতো গøানির! দৈন্যের, তা এ সমর্থকদের বুঝাবে কে?

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়