যে কারণে টিকায় ব্যয়ের হিসাব দিতে নারাজ মন্ত্রী

আগের সংবাদ

কঠিন বার্তা দিল আওয়ামী লীগ : বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের প্রশ্নে আপস নয় > শেখ হাসিনা ছাড়া কেউ অপরিহার্য নয় > শৃঙ্খলা ভঙ্গকারীদের জন্য অশনি সংকেত

পরের সংবাদ

পুণ্যস্নানের মধ্য দিয়ে রাস উৎসব সম্পন্ন

প্রকাশিত: নভেম্বর ২০, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ২০, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

আনোয়ার হোসেন আনু, কুয়াকাটা (পটুয়াখালী) থেকে : আকাশে চাঁদের হাসি। হালকা কুয়াশায় ভেজা জোছনার আলো। শীতে ক্লান্ত সমুদ্রের ঢেউ। একের পর এক ঢেউ ভাঙছে তীরে। কুয়াকাটার সৈকতেজুড়ে দর্শনার্থীদের কোলাহল। সৈকতে উড়ছে বাহারি রঙের বেলুন। সারা রাত কেউ ঘুমায়নি। পূর্ব আকাশে ভোরের পূর্ণিমা তিথির নতুন সূর্য ওঠার অপেক্ষা। উষালগ্নে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের হাজার হাজার নর-নারী মিলিত হয়েছে। পুণ্যার্থী ও দর্শনার্থীদের মিলন মেলায় পরিণত হয়েছে।
বঙ্গোপসাগরের লোনা জলে নেমেছে হিন্দু সম্প্রদায়ের হাজারো নারী-পুরুষ। মানতকারীরা মাথার কেশ ন্যাড়াসহ প্রায়শ্চিত্ত ও পিণ্ড দান করেন। পুণ্যের আশায় বেলপাতা, ফুল, ধান, দূর্বা, হরীতকী, ডাব, কলা, তেল, সিঁদুর সমুদ্রের জলে অর্পণ করেন। পুণ্যার্থীরা পূর্ণিমার মধ্যে উলুধ্বনি ও মন্ত্রপাঠ করে গঙ্গাস্নানের মধ্য দিয়ে শেষ করেছেন এ বছরের রাস পূজা। আগত পুণ্যার্থী ও দর্শনার্থীরা গতকাল শুক্রবার সকালে থেকে নিজ গন্তব্যে ফিরে গেছেন।
জানা গেছে, জাগতিক পাপ মুছে যাবে। এই মনোষকামনায় পূর্ণিমাতিথিতে সনাতন ধর্মাবলম্বী নারী-পুরুষ কুয়াকাটায় সমুদ্রে পুণ্যস্নান করেন। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে বঙ্গোপসাগরের নীল জলে পুণ্যস্নান করেন পুণ্যার্থীরা। পঞ্জিকা মতে বৃহস্পতিবার ভোর ৫টায় পূর্ণিমাতিথি শুরু হয়েছে। এ তিথিতেই পুণ্যার্থীদের গঙ্গাস্নানের সময় নির্ধারণ করা হয়। পুণ্যের আশায় এ বছরও সৈকতে সমাগম হয়েছে দূর-দূরান্ত থেকে পুণ্যার্থী, দর্শনার্থী ও সাধু সন্ন্যাসী। এদের নিরাপত্তায় মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ। এদিকে পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় বৃহস্পতিবার রাতে শ্রীশ্রী মদন-মোহন সেবাশ্রমে অধিবাসের মধ্য দিয়ে পাঁচদিনব্যাপী শুরু হয়েছে শ্রীশ্রী কৃষ্ণের রাস উৎসব। মন্দির প্রাঙ্গণে স্থাপন ১৭ জোড়া রাধা কৃষ্ণের যুগল প্রতিমা। এসময় ভাগবত পাঠ, আরতি, উলু ও শঙ্খধ্বনি এবং নাম কীর্তনে মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো মন্দির প্রাঙ্গণ। কুয়াকাটায় গঙ্গা¯œান শেষে পুর্ণ্যার্থীরা রাধা কৃষ্ণের যুগল প্রতিমা দর্শন করবে। তবে এ বছর করোনা ভাইরাসের কারণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে এ রাস উদ্যাপন করা হয়েছে বলে আয়োজকরা জানিয়েছেন। পিরোজপুর থেকে আগত মৃণাল কান্তি বলেন, জাগতিক যত পাপ আছে তা এ সমুদ্র ¯œানের মাধ্যমে দূর করার বাসনা নিয়ে আসছি। দেশের মহামারি করোনা যাতে চলে যায় সেজন্য ঠাকুরের কাছে প্রার্থনা করছি।

উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, কুয়াকাটা পৌরসভার উদ্যোগে মন্দির ও সৈকত এলাকায় পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। নিরাপত্তায় ছিলেন কোস্টগার্ড, পুলিশ, র‌্যাব, মেডিকেল টিমসহ ফায়ার সার্ভিসের একটি দল। এছাড়া কুয়াকাটা সিসি ক্যামেরার আওতায় ছিল। মূলত হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় উৎসব হলেও এতে অংশ নেয় সর্বস্তরের মানুষ। কুয়াকাটার সৈকত পরিণত হয় সার্বজনীন উৎসবে। রূপ নেয় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উৎসবে এমনটাই জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
অপরদিকে কুয়াকাটা হোটেল মোটেল সূত্রে জানা গেছে, এ বছর রাসমেলা ও গঙ্গাস্নান উৎসবে আবাসিক হোটেলগুলোতে তেমন একটি বুকিং হয়নি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে রাস পূজায় আগত পুণ্যার্থীদের নিরাপত্তা দিতে আনসার ভিডিপি, পুলিশ, র‌্যাব, গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলে পর্যটন নগরী কুয়াকাটাকে। বিভিন্ন পয়েন্টে সিসি ক্যামেরা ও চেক পোস্টের মাধ্যমে পুণ্যার্থীদের নজর রাখা হয়েছে।
কুয়াকাটা রাধাকৃষ্ণ মন্দিরের পুরোহিত শিশির মহারাজ বলেন, প্রায় দুইশ বছর পূর্ণিমাতিথিতে এ রাসলীলা উৎসব ও মেলা চলে আসছে। দ্বাপর যুগে মানুষের দুঃখ-দুর্দশা, হিংসা, হানাহানি দেখে দুষ্টের দমন ও সৃষ্টের লালনের জন্য স্বয়ং ভগবান শ্রীকৃষ্ণ নাম ধারণ করে পৃথিবীতে অবতীর্ণ হন।
কুয়াকাটা পৌর আওয়ামী লীগ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাবু অনন্ত কুমার মুখার্জি জানান, ব্যাপক নিরাপত্তা, উৎসাহ-উদ্দীপনা, ধর্মীয় ভাব গাম্ভীর্য, রাতভর শ্রী কৃষ্ণের নাম যজ্ঞ ও উলুধ্বনীর মধ্য দিয়ে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ঐতিহ্যবাহী ধর্মীয় অনুষ্ঠান গঙ্গাস্নান ও শ্রী কৃষ্ণের রাস পূজা সীমিত আকারে সম্পন্ন হয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়