যে কারণে টিকায় ব্যয়ের হিসাব দিতে নারাজ মন্ত্রী

আগের সংবাদ

কঠিন বার্তা দিল আওয়ামী লীগ : বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের প্রশ্নে আপস নয় > শেখ হাসিনা ছাড়া কেউ অপরিহার্য নয় > শৃঙ্খলা ভঙ্গকারীদের জন্য অশনি সংকেত

পরের সংবাদ

নোয়াখালী আঞ্চলিক পাসপোর্ট অধিদপ্তর : দালাল দৌরাত্ম্যে প্রতিদিন ৭ লক্ষাধিক টাকার ঘুষ বাণিজ্য

প্রকাশিত: নভেম্বর ২০, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ২০, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মোহাম্মদ সোহেল, নোয়াখালী থেকে : দালাল দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ হয়ে ওঠেছে সেবাপ্রত্যশীরা। দালাল ছাড়া কোনোভাবেই সহজ হয়ে ওঠে না নাগরিক পাসপোর্ট। এমন চিত্র নোয়াখালী আঞ্চলিক পাসপোর্ট অধিদপ্তরের নিত্যকার ঘটনা। প্রতিদিন গড়ে ৩৫০টি আবেদনের বিপরীতে ৩২৫-৩৩০টি আবেদনেই ব্যাংক জমার বাহিরে অতিরিক্ত ২ হাজার টাকা হারে ৭ লক্ষাধিক টাকার ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে এই দপ্তরের বিরুদ্ধে। সচেতন ব্যক্তিদের মধ্যে মাত্র ২০-২৫ জন দালাল ছাড়া নিজেদের আবেদন সরাসরি নিজেরাই জমা দেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, নোয়াখালী আঞ্চলিক পাসপোর্ট অধিদপ্তরের বাহিরে নোয়াখালী জেলা শহর মাইজদী এবং জেলার বাণিজ্যিক শহর চৌমুহনীতে গড়ে উঠেছে দালালদের অর্ধশতাধিক অফিস। দালালদের ওই সব অফিসকে স্থানীয় ভাষায় বলা হয় মিনি পাসপোর্ট অফিস। পাসপোর্ট প্রত্যাশীদের আবেদন ফরম পূরণের নামে প্রকাশ্যে ঘুষ বাণিজ্য করলেও অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বলছেন এসব মিনি পাসপোর্ট অফিসের বিষয়ে কিছুই জানেন না তিনি। তার ভাষ্যমতে, স্ব-শরীরে যে কোনো ব্যক্তি আবেদন নিয়ে আসলে কোনো রকম ঝামেলা ছাড়া ব্যাংক জমায় পাসপোর্ট পেয়ে যাবেন। এই সংক্রান্ত ব্যানার ও লিফলেট ঝুলিয়েও সতর্ক করা হয়েছে। প্রতিদিন গড়ে ৩৫০টি আবেদন পড়ে। এই ক্ষেত্রে সব আবেদনকারী স্ব-শরীরে অফিসে এসেই আবেদন জমা দেন। তবে পাসপোর্ট অধিদপ্তরের বাহিরের মিনি পাসপোর্ট অফিসের চিত্র ভিন্ন।
জেলা শহর মাইজদী এবং বাণিজ্যিক শহর চৌমুহনীর দালালদের মিনি পাসপোর্ট অফিসগুলো সরেজমিনে ঘুরে জানা গেছে, ৫ বছর মেয়াদি ৪৮ পৃষ্ঠার নিয়মিত পাসপোর্টের জন্য পাসপোর্ট প্রত্যাশীদের কাছ থেকে নেয়া হচ্ছে ৬ হাজার ৫০০ টাকা। একই মেয়াদের জরুরি পাসপোর্টের জন্য নেয়া হয় ৯ হাজার ৫০০ টাকা। অথচ ৫ বছর মেয়াদি ৪৮ পৃষ্ঠার নিয়মিত পাসপোর্টের সরকারি ব্যাংক জমা হচ্ছে ৪ হাজার ২৫ টাকা এবং ৫ বছর মেয়াদি ৪৮ পৃষ্ঠার জরুরি পাসপোর্টের ব্যাংক জমা হচ্ছে ৬ হাজার ৩২৫ টাকা। ১০ বছর মেয়াদি ৪৮ পৃষ্ঠার নিয়মিত পাসপোর্টের জন্য পাসপোর্ট প্রত্যাশীদের কাছ থেকে নেয়া হচ্ছে ৮ হাজার ১০০ টাকা। একই মেয়াদের জরুরি পাসপোর্টের জন্য নেয়া হয় ১১ হাজার ৫০০ টাকা। অথচ ১০ বছর মেয়াদি ৪৮ পৃষ্ঠার নিয়মিত পাসপোর্টের সরকারি ব্যাংক জমা হচ্ছে ৫ হাজার ৭৫০ টাকা এবং ১০ বছর মেয়াদি ৪৮ পৃষ্ঠার জরুরি পাসপোর্টের ব্যাংক জমা হচ্ছে ৮ হাজার ৫০ টাকা। জেলায় দালালদের অর্ধশতাধিক মিনি পাসপোর্ট অফিস থেকে নোয়াখালী আঞ্চলিক পাসপোর্ট অধিদপ্তরে প্রতিদিন গড়ে ৩৫০ থেকে ৪০০টি পাসপোর্টের আবেদন জমা হয়। প্রতিটি আবেদন থেকে ব্যাংক জমার বাহিরে ২ থেকে ৩ হাজার টাকা করে অতিরিক্ত নেয়া হচ্ছে। ই-পাসপোর্টের ক্ষেত্রেও দ্বিগুণ টাকা নিচ্ছেন দালালরা।
মিনি পাসপোর্ট অফিসগুলোতে পাসপোর্টের প্রতিটি আবেদনে ২ থেকে ৩ হাজার টাকা অতিরিক্ত গ্রহণের বিষয়টি স্বীকার করে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক দালাল জানান, উপর্যুপরি খাটুনির পর প্রতিটি বই হতে তারা পান নামমাত্র ২শ’ থেকে ৩শ’ টাকা। প্রতিটি নিয়মিত পাসপোর্টের জন্য পাসপোর্ট অধিদপ্তরে দিতে হয় ১ হাজার ২০০ টাকা এবং পুলিশ প্রতিবেদনের জন্য দিতে হয় ৮০০ টাকা। বাকি ২-৩শ’ টাকা দিয়ে তাদের অফিস, কম্পিউটার খরচ এবং নিজেদের চলতে হয়। অথচ সব বদনাম তাদের সইতে হয়।
পাসপোর্ট প্রত্যাশীদের দালালদের মাধ্যম ছাড়া এই দপ্তরে গেলে তাদের ভাগ্যে জোটে শুধুই দুর্ভোগ, হয়রানি আর ভোগান্তি। পাসপোর্ট প্রত্যাশীদের তাই মিনি পাসপোর্ট অফিসের শরণাপন্ন না হয়ে কোনো উপায় থাকে না।
জানা গেছে, সেবাগ্রহীতা এবং দপ্তরের লোকজনের কাছে দালালদের মাধ্যমটি ‘চেইন’ নামে পরিচিত। পাসপোর্ট সেবা প্রত্যাশি জিলানী, জহির, বেলাল, শাহাদাৎ জানান, দালালের মাধ্যম ছাড়া আবেদন জমা দিলে ১৫ দিনের পাসপোর্ট অনেক সময় ৫ মাসেও পাওয়া যায় না। এতে অনেকের সঠিক সময়ে বিদেশ যাওয়া বাতিল হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। অথচ দালালের ‘চেইনে’ গেলে সঠিক সময়ের আগেও মিলছে পাসপোর্ট।
ইতোপূর্বে এ দপ্তরে বিভিন্ন স্থানে কয়েক দফা অভিযান চালিয়ে কয়েকজন দালালকে আটক করেছিল ডিবি পুলিশ। এসব অভিযানে তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় অনেকগুলো পাসপোর্ট, বিভিন্ন সিল, ভুয়া সনদ, ভুয়া সার্টিফিকেটসহ অনেক কাগজপত্র। সে সময় আটককৃতরা অবৈধপথে পাসপোর্ট তৈরির সঙ্গে নোয়াখালী আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের কতেক কর্মকর্তা ও কর্মচারী জড়িত থাকার কথা জানিয়েছে। কিন্তু এখনো কমেনি দালালের দৌরাত্ম্য।
জেলার হাতিয়ার উপজেলার মোস্তফা বলেন, আমি অনলাইনে ই-পাসপোর্টের আবেদন করে জমা দিতে গেলে তারা আমার আবেদন জমা নিতে চায়নি। এটা-ওটা ভুল হয়েছে বলে আমাকে সারাদিন ঘুরিয়েছে। পরে অফিসের এক লোক বলল ‘চেইনে’ আসলে এই সমস্যা হতো না।
তবে অনেক সময় আবেদনকারীরা সমস্যাজনিত কারণে উপ-পরিচালকের সঙ্গে দেখা করতে গেলেও প্রশাসনিক কর্মকর্তা নামের এক ব্যক্তি দরজায় দাঁড়িয়ে বাধা হয়ে দাঁড়ান। এ সময় ওই ব্যক্তিকে আর্থিক সুবিধা ধরিয়ে দিলেই তিনিই সমস্যা সমাধানের দায়িত্ব বুঝে নেন।
নোয়াখালী আঞ্চলিক পাসপোর্ট অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মহের উদ্দিন সেখ তার কার্যালয়ে সব ধরনের অনিয়ম ও ঘুষ বাণিজ্যের কথা অস্বীকার করে বলেন, এখানে যে কোনো ব্যক্তি স্ব-শরীরে আবেদন নিয়ে আসলে আবেদনে তথ্যগুলো সঠিক থাকলে কোনো রকম ঝামেলা ছাড়াই ব্যাংক জমায় সেবা পেয়ে থাকেন। দালাল বা মিনি পাসপোর্ট অফিসের বিষয়ে তিনি বলেন, এ ধরনের তথ্য আমার জানা নেই। খোঁজখবর নিয়ে দালালদের ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার কথাও জানান তিনি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়