কাগজ প্রতিবেদক : রাজধানীর আগারগাঁওয়ের ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরে তানিয়া নূর (৩৮) নামের এক নারীকে হেনস্তার অভিযোগের ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠন করা হয়েছে। এরই মধ্যে কমিটি তানিয়া নূরসহ চারজনের সাক্ষ্য নিয়েছে। গত মঙ্গলবার এ কমিটি গঠন করা হয়। পাসপোর্ট অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. আজিজুল ইসলাম একমাত্র সদস্য হিসেবে এই তদন্ত কমিটি পরিচালনা করছেন।
তানিয়া নূর অভিযোগ করেছেন, ১১ নভেম্বর পাসপোর্ট অধিদপ্তরে ই-পাসপোর্টের জন্য চোখের রেটিনা স্ক্যান করার সময় তার এক চোখের দৃষ্টিহীনতা নিয়ে তিনি রীতিমতো হেনস্তার শিকার হয়েছেন। শেষ পর্যন্ত তাকে চিকিৎসকের কাছ থেকে ‘দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী’ হিসেবে প্রমাণপত্র আনতে হয়েছে। কারণ অধিদপ্তরের কর্মীরা তাকে জানিয়েছিলেন, এই সনদ ছাড়া তার ই-পাসপোর্ট আবেদনপত্র নেয়া হবে না। কিন্তু ই-পাসপোর্টের ফরমে কোথাও উল্লেখ নেই যে প্রতিবন্ধিতা থাকলে তা প্রমাণের সনদ দিতে হবে।
তানিয়া জানান, তিনি ডান চোখে দেখেন না। ১০ ও ১৪ মাস বয়সে তার চোখে দুটি অস্ত্রোপচার হয়। অস্ত্রোপচারে চোখ অবিকৃত থাকলেও দৃষ্টি হারান। তিনি ইতিবাচক ভাবনা নিয়ে বড় হয়েছেন। তবে পাসপোর্ট অধিদপ্তরের অসংবেদনশীল আচরণে তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন।
তিনি বলেন, অন্তত চারজন কর্মকর্তা-কর্মচারী তাকে নানা প্রশ্ন করেন। এসব প্রশ্নের মধ্যে ছিল- আপনি অন্ধ, তার সার্টিফিকেট কই? আপনি যে দেখেন না, তো চোখ এমন স্বাভাবিক কেন? অন্ধ চোখ নরমাল দেখায় কেন? আপনি অন্ধ, তার প্রমাণ কী? আপনার এটা কি নকল চোখ? আপনি অন্ধ, তার ডিক্লারেশন ও সার্টিফিকেট আনবেন, তারপর কাগজ সাবমিট হবে। আপনি চোখে কাজল দিয়ে এসেছেন বলেই স্ক্যান করা যাচ্ছে না।
গত বুধবার সাক্ষ্য দেয়ার কথা জানিয়ে তানিয়া বলেন, তিনি প্রতিবাদ করেছেন যাতে অন্য কেউ হেনস্তার শিকার না হয়। তার ঘটনার মধ্য দিয়ে হলেও পাসপোর্ট ফরমে যেন পরিবর্তন আসে। ফরমে প্রতিবন্ধিতার বিষয়গুলো আগে থেকে যেন উল্লেখ থাকে। এতে করে প্রতিবন্ধিতা আছে, এমন ব্যক্তিদের মানসিক প্রস্তুতি থাকবে। তারা লোকজনের সামনে অসংবেদনশীল আচরণের শিকার হয়ে মনঃকষ্টে ভুগবেন না।
তিনি বলেন, ‘আমি পরিবর্তন চাইছি। আমার অসম্মানের বিনিময়ে হলেও এ ধরনের মানসিকতার যেন পরিবর্তন আসে। অধিদপ্তর আমাকে জানিয়েছে, ফরমে পরিবর্তন আনার বিষয়ে তারা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানাবে। অধিদপ্তরের যে কর্মীরা অসংবেদনশীল আচরণ করেছিলেন, তাদের তিনজনের বক্তব্যও নিতে দেখেছি।’ তারা কী বলেছেন জানতে চাইলে বলেন, তারা দাবি করেছেন, কক্ষে অনেক লোক ছিল। কিছু মন্তব্য বাইরের লোকও করেছে।
কমিটির বিষয়ে জানতে চাইলে পাসপোর্ট অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. আজিজুল ইসলাম বলেন, কমিটিকে প্রথমে তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছিল। তিনি আরো পাঁচ কার্যদিবস সময় বাড়িয়ে নিয়েছেন। গত বুধবার তানিয়া নূরের সাক্ষ্য নেয়া হয়েছে। অধিদপ্তরের তিনজনের সাক্ষ্য নেয়া হয়েছে। তদন্তে কী পেয়েছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত মন্তব্য করতে চাই না।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।