যে কারণে টিকায় ব্যয়ের হিসাব দিতে নারাজ মন্ত্রী

আগের সংবাদ

কঠিন বার্তা দিল আওয়ামী লীগ : বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের প্রশ্নে আপস নয় > শেখ হাসিনা ছাড়া কেউ অপরিহার্য নয় > শৃঙ্খলা ভঙ্গকারীদের জন্য অশনি সংকেত

পরের সংবাদ

জাহাঙ্গীর আজীবন বহিষ্কার : আ.লীগের সভায় সিদ্ধান্ত, মেয়র পদ হারাতে পারেন জাহাঙ্গীর > খালেদার টার্গেট আমি : প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: নভেম্বর ২০, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ২০, ২০২১ , ১:২১ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের নিয়ে একটি মন্তব্যের অডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ার ঘটনায় গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সিটি মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে দল থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হয়েছে। তার প্রাথমিক সদস্যপদও বাতিল করা হয়েছে। পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশও দেয়া হয়েছে। গতকাল শুক্রবার আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের সংখ্যা নিয়ে কটূক্তি করে দেয়া মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলমের বক্তব্যসংবলিত একটি ভিডিও গত অক্টোবরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হলে এ নিয়ে ব্যাপক তোলপাড় হয়। মেয়রের পদত্যাগ ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে জাহাঙ্গীরকে বহিষ্কারের দাবিতে গাজীপুর মহানগরের কয়েকটি স্থানে বিক্ষোভ করেন দলীয় নেতাকর্মীরা। তবে মেয়র জাহাঙ্গীর আলম অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ অতি উৎসাহী হয়ে তার বক্তব্যের ভিডিও এডিটিংয়ের মাধ্যমে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে ভাইরাল করেছে। তিনি গভীর ষড়যন্ত্রের শিকার।
পরে গত ৩ অক্টোবর দলের স্বার্থপরিপন্থি কর্মকাণ্ড ও সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙের অভিযোগে জাহাঙ্গীর আলমকে কারণ দর্শানোর নোটিস দেয় আওয়ামী লীগ। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সই করা কারণ দর্শানোর নোটিসে ১৫ দিনের মধ্যে জাহাঙ্গীরকে এর জবাব দিতে বলা হয়। তবে নির্ধারিত সময়ের আগেই তিনি জবাব দিয়ে নিঃশর্ত ক্ষমা চান। মেয়রের দায়িত্বে গত তিন বছরে আরো অন্তত দুটি ঘটনায় আলোচনার জন্ম দেন জাহাঙ্গীর। করোনা ভাইরাস মহামারি শুরুর পর ২০২০ সালে তিনি চীন থেকে ৫০ হাজার র‌্যাপিড টেস্ট কিট নিয়ে আসেন, যদিও দেশে তখনো র‌্যাপিড টেস্টের অনুমোদন ছিল না। আর নিয়ম অনুযায়ী ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের কোনো অনুমতিও তিনি নেননি। ওই সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে বেশ আলোচনা হয়। এর জবাবে তিনি বলেছিলেন, মানুষ মরে গেলে আইন দিয়ে কী করব! কিন্তু আমার এখানে ৪০ লাখ মানুষ আমাকে ভোট দিয়েছে। যে কোনোভাবে হোক, আগে তাদের বাঁচানোর চেষ্টা করা আমার দায়িত্ব। মানবিক কারণে আমি আনছি, বাঁইচা থাকলে তখন আইন-আদালত।
করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে গত বছরের এপ্রিলে দেশের সব মসজিদে বাইরে থেকে মুসল্লি ঢোকার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল সরকার। সরকারের ওই নিষেধাজ্ঞা ওঠার আগেই এপ্রিলের শেষে মসজিদ খুলে দেয়ার ঘোষণা দেন মেয়র জাহাঙ্গীর আলম। তার ওই ঘোষণায় সে সময় বিস্ময় প্রকাশ করেছিলেন স্থানীয় প্রশাসন ও ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। একজন জনপ্রতিনিধির এ ধরনের ‘কাণ্ডজ্ঞানহীন’ পদক্ষেপের সমালোচনায় মুখর হয়েছিলেন অনেকেই। শেষ পর্যন্ত ওই ঘোষণা থেকে সরে এসে মেয়র জাহাঙ্গীর বলেছিলেন, সরকারের পক্ষ থেকে যে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে, সবাই যেন তা মেনে চলেন।
এই প্রেক্ষাপটেই গতকাল গাজীপুরের এই প্রভাবশালী নেতাকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিল দল। এখন সব মহলে আলোচনা হচ্ছে, মেয়র পদও হারাতে পারেন জাহাঙ্গীর আলম। স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, সংশ্লিষ্ট আইনে এমন অনেক ফাঁকফোকর রয়েছে, যাতে জাহাঙ্গীর আলমকে মেয়র পদ থেকে বাদ দেয়া সম্ভব।
এদিকে জাহাঙ্গীরের বহিষ্কারের খবরে গাজীপুরে আনন্দ মিছিল করেছেন তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ। যদিও বহিষ্কারের খবরে জাহাঙ্গীর বলেছেন, একটি মহল তার বিষয়ে এমন সিদ্ধান্ত নিতে দলীয়প্রধানকে ভুল বুঝিয়েছে। তিনি বলেন, সত্যটা জানলে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বিষয়ে এমন সিদ্ধান্ত নিতেন না।
এছাড়া বৈঠকে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য, সাবেকমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া (বীরবিক্রম), সাবেক মন্ত্রী এডভোকেট কামরুল ইসলাম এবং রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র ও রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনকে।
খালেদা জিয়ার টার্গেট সব সময় আমি : গরিবের টাকা লুট করে বিদেশে পাচার করা বিএনপিকে কোন আশায় মানুষ ভোট দেবেÑ এমন মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ এখন বিশে^ মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে পৌঁছে গেছে। আমরা জনগণের কল্যাণে কাজ করছি। উন্নয়নের ছোঁয়া গ্রাম পর্যন্ত নিশ্চিত হয়েছে। সব শ্রেণিপেশার মানুষ উন্নয়নের ছোঁয়া পেয়েছে। এত উন্নয়নের পরও কিছু মানুষ বিদেশে-দেশে বসে অপপ্রচার করছে। এদের বিরুদ্ধে সচেতন হতে হবে, অপপ্রচারের জবাব দিতে হবে। গতকাল গণভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকের শুরুতে দলের নেতাকর্মীদের সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, কিছু মানুষ মিটিং করছে কী করে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে সরানো যায়। কিন্তু জনগণের শক্তিই আওয়ামী লীগের শক্তি। আমরা জনগণের সেবায় কাজ করে যাচ্ছি। পলাতক আসামি যে দল চালায় জনগণ তাদের কী আশায় ভোট দেবে? এরা দেশের গরিবের টাকা লুট করে বিদেশে পাচার করেছে। বিদেশে আরাম-আয়েশে আছে। তাদের এই আয়ের উৎস কী?
দেশের সুবিধাভোগী স্বার্থান্বেষী মহলের সমালোচনা করে সরকারপ্রধান বলেন, কিছু মানুষ আছে, যারা হাজার অপরাধকারীকেও অপরাধী হিসেবে দেখে না। দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বললেও তারা দুর্নীতির জন্য সাজাপ্রাপ্তদের পক্ষ নেয়। যারা হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে, এতিমের টাকা আত্মসাৎ করে সাজাপ্রাপ্ত হয়েছে তাদের জন্যই তারা মায়াকান্না করছে।
ইউপি নির্বাচনে বিদ্রোহীদের
মদতদাতাদেরও শাস্তি হবে : আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, দলের সাংগঠনিক সম্পাদকরা ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে বিদ্রোহী এবং এদের মদতদাতাদের সম্পর্কেও রিপোর্ট দিয়েছেন। এতে অনেকের নাম এসেছে। বিদ্রোহীদের ব্যাপারে আমাদের আগে যে সিদ্ধান্ত ছিল সেটাই থাকবে। মদতদাতাদেরও শাস্তি পেতে হবে। এমপি হোক, মন্ত্রী হোক প্রত্যেকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
গণভবনে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক শেষে গতকাল শুক্রবার রাতে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান তিনি। ইউপি নির্বাচনে দলীয় প্রতীক উন্মুক্ত করা নিয়ে সভায় কোনো আলোচনা হয়নি বলেও জানান ওবায়দুল কাদের।
গাজীপুরের মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে বহিষ্কারের বিষয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক বলেন, যেহেতু জাহাঙ্গীরের বক্তব্য বঙ্গবন্ধু ও আমাদের ইতিহাসকে কটাক্ষ করে। তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হয়েছে। সিটি করপোরেশনের স্থানীয় সরকারের একটি শাখা। ফলে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত এই মন্ত্রণালয়ই নিয়ে থাকে। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা সবার মতামত নিয়ে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন জানিয়ে কাদের বলেন, ‘সবাই এক বাক্যে তার বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানায় এবং সে পরিপ্রেক্ষিতে জাহাঙ্গীর আলমকে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তো বটেই, তাকে দলের প্রাথমিক সদস্য পদে বহিষ্কার করা হয়েছে। গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটি থাকছে কিনা জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, একজনের জন্য পুরো কমিটি ভেঙে যাবে নাকি?
সভাপতিমণ্ডলীর নতুন সদস্য প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, দলীয় সভাপতির নির্দেশে চিঠি না দেয়া পর্যন্ত আমি কাউকে নতুন সদস্য বলতে পারব না। সভানেত্রীর নির্দেশে আগে দলীয় সাধারণ সম্পাদকের চিঠি যাবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়