যে কারণে টিকায় ব্যয়ের হিসাব দিতে নারাজ মন্ত্রী

আগের সংবাদ

কঠিন বার্তা দিল আওয়ামী লীগ : বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের প্রশ্নে আপস নয় > শেখ হাসিনা ছাড়া কেউ অপরিহার্য নয় > শৃঙ্খলা ভঙ্গকারীদের জন্য অশনি সংকেত

পরের সংবাদ

ক্যানভাসে শিল্পী ও ভাস্কর হামিদুজ্জামানের বিমূর্ত ভাষা

প্রকাশিত: নভেম্বর ২০, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ২০, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : যে হাতে রং তোলপাড় করে, সেই একই হাতে আবার বশ মানে ধাতব ও পাথর- এমন এক অনন্য শিল্পী ও ভাস্কর হামিদুজ্জামান খান। বরেণ্য এই শিল্পীর শতাধিক ছবি ও ভাস্কর্য নিয়ে রাজধানীর ধানমন্ডির গ্যালারি চিত্রকে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় শুরু হয়েছে পক্ষকালব্যাপী ‘সৃষ্টির অন্বেষণ’- শীর্ষক ৪৩তম একক শিল্প প্রদর্শনী।
গ্যালারিতে ঢুকেই দেখা গেল দেয়ালে ঝুলছে একের পর এক ল্যান্ডস্কেপ কিংবা কম্পোজিশন- যেখানে ছড়িয়ে আছে সময়ের যন্ত্রণা; আছে বিষাদ-বেদনা। তাপ-চাপে পাণ্ডুর হয়ে আসা মুখের, ঠিক পরেই জলের মধ্য থেকে পাখা ঝাপটে উড়ে ওঠা পানকৌড়ি দর্শককে স্পেস তৈরি করে দেয়ার বিহ্বলতা। ১৪ ফুট দীর্ঘ ও সাড়ে চার ফুট প্রস্থের বিশাল ক্যানভাসে শিল্পী মুক্তিযুদ্ধকে ধারণ করেছেন মুষল বৃষ্টিঝরা রাতে। যেখানে চিৎ হয়ে পড়ে আছে শহীদের লাশ। ভাব ও আবেদনের মধ্যে ঐক্য থাকায় মনে হয় যেন পুরো দেয়ালে একটিই ছবি। জল রঙের এসব ছবিতে প্রতিফলিত হয়েছে শিল্পীর চেতনার খেলা, রঙের মধ্যে আছে গতি, ধ্যান ও পূর্ণতার আবহ। রঙের অর্থ ধরে জ্ঞান, পুনর্জন্ম, মহত্ত্ব, সত্য, একাত্মতা, শোক, তারুণ্য, আশা, ভালোবাসা- এমন অনেক কিছুরই কথা বলছে এসব ছবি থেকে। প্রতিটি ছবিতেই তৈরি হয়েছে রং ও ফর্মের শরীরী ভাষা, আছে রেখার নানা চলন, ব্রাশের টানটোনের বৈচিত্র্য এবং এলিয়ে পড়া, গড়িয়ে যাওয়া রঙের বিস্তরণ। বড় ক্যানভাসে উঠে এসেছে ভাস্কর্যসুলভ অবয়বের নানা ফর্ম। কোথাও একঘেয়েমি নেই। বরং ছবিগুলো মন ও চোখকে প্রশান্তি দিল। ফর্ম ও কম্পোজিশনের সরলীকরণ একধরনের আধ্যাত্মিক আবেগকেও জাগ্রত করে। সব মিলিয়ে মনে হয়, তার চিত্রকলা ও ভাস্কর্যের ফর্মগুলো যেন ধ্যান করছে!
প্রধান অতিথি হিসেবে প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বীরবিক্রম। অতিথি ছিলেন বরেণ্য শিল্পী রফিকুন নবী এবং সাবেক স্থপতি শাহ আলম জহির উদ্দিন। স্বাগত বক্তব্য দেন গ্যালারি চিত্রকের পরিচালক ও শিল্পী মুনীরুজ্জামান।

প্রদর্শনীতে এক বসায় আঁকা ছবি যেমন রয়েছে- আবার দুই-তিন বছর নিয়ে এঁকেছেন এমন ছবির সংখ্যাও কম নয়। কালি-কলমে কাগজের ছোট ক্যানভাসের পাশাপাশি ২০ ফুট বা ১৪ ফুট দীর্ঘ ক্যানভাসেও মূর্ত হয়েছে তার বিমূর্ত ভাষা।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেন, হামিদুজ্জামান খান প্রকৃত অর্থে একজন দূরদর্শী এবং সৃজনশীল শিল্পী। তিনি শিল্পকর্মকে রুচির ছোঁয়ায় সাধারণ মানুষের কাছে উপস্থাপন করেছেন।
রফিকুন নবী বলেন, একজন শিল্পীর পক্ষে এতগুলো মাধ্যমে কাজ করা কঠিন। পেইন্টিং, জল রং, ছাপচিত্র, ভাস্কর্যসহ প্রত্যেকটিতে সামঞ্জস্য রেখে একটা জায়গায় পৌঁছানো এবং সাফল্যের কাছে যাওয়া অসাধারণ ব্যাপার। হামিদুজ্জামান তা পেরেছেন।
শিল্পী হামিদুজ্জামান খান ‘সৃষ্টির অন্বেষণে’ সম্পর্কে বলেন, আমি মনে করি, পেইন্টিংয়ে অনেক দূর যাওয়া যায়। সবার ওপরে পেইন্টিং, তারপর ভাস্কর্য। ভাস্কর্যের উপাদানগত একটা বিষয় থাকে, সেই উপাদানকে বুঝতে হয়। পেইন্টিং ও ভাস্কর্য দুটি বিষয়ই কিন্তু কঠিন। তবে পেইন্টিং অনেকভাবে করা যায়। সেই জায়গা থেকেই আমি শেষ বয়সে এসে একটা এক্সপেরিমেন্টাল পেইন্টিং করার চেষ্টা করেছি। পেইন্টিংয়ে কতদূর যাওয়া যায়, কতভাবে যাওয়া যায়, সেটার একটা চেষ্টা করেছি। এটা একটা গবেষণার মতো। এ কাজগুলো করছি তিন-চার বছর ধরে। কোনো কোনো কাজ আমি তিন বছর ধরে লেয়ারের পর লেয়ার দিয়েছি। একটা ছোট্ট কাজ, কিন্তু বারবার করেছি। সেটা থেকে আমার এই ডেভেলপমেন্ট। এভাবেই পেইন্টিংয়ে একটা পরিবর্তন আনার চেষ্টা করেছি। এই প্রদর্শনীতে তারই প্রকাশ ঘটেছে। প্রদর্শনীটি চলবে আগামী ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত দর্শকের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়