কাগজ প্রতিবেদক : রাজধানীর গণপরিবহনের সিটিং সার্ভিসের নামে নৈরাজ্য ও ভাড়া ডাকাতি বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরাতে সরকারের কাছে ১৩ দফা বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছে এ সংগঠনটি। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী লিখিত বক্তব্যে এ ১৩ দফা দাবি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, পরিবহন মালিক-শ্রমিক ও সরকার মিলেমিশে ভাড়া বাড়িয়ে ইচ্ছেমতো ভাড়া আদায় করছে। সিটিং সার্ভিসের নামে নৈরাজ্য ও ভাড়া ডাকাতি বন্ধ করতে হবে। শতভাগ বাসে এখনো তালিকা টানানো হয়নি। মালিকরা ওয়েবিল অনুযায়ী ভাড়া আদায় করছে। নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে ৩ থেকে ৪ গুণ বেশি ভাড়া আদায় করছে। পরিবহন মালিক সমিতির নেতারা বারবার ঘোষণা দিয়েও কথিত সিটিং সার্ভিস নিয়ে ইঁদুর-বিড়াল খেলা খেলছে। এতে যাত্রীরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। অবিলম্বে একচেটিয়াভাবে বাড়ানো ভাড়া বাতিল করে যাত্রী প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি ন্যায় ও গ্রহণযোগ্য ভাড়া নির্ধারণ করতে হবে। পরিবহন সেক্টরে নৈরাজ্য দূর করতে যাত্রী কল্যাণ সমিতির ১৩ দফা দাবি বাস্তবায়ন করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।
১৩ দফা দাবির মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হলো- অযৌক্তিক অজুহাত দেখিয়ে গণপরিবহন চলাচল বন্ধ করে যাত্রীদের জিম্মি করার মতো আইনবিরোধী কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে সরকারের কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে, গণপরিবহনে চাঁদাবাজি ও পুলিশের হয়রানি বন্ধ করতে হবে, গণপরিবহনে কোনো যাত্রীকে পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের হাতে যাতে অপমান অপদস্থ হতে না হয় সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করতে হবে, সিটিং সার্ভিস বাসে গড়ে ৭০ শতাংশ যাত্রী তোলা হচ্ছে, এদের ভাড়া সরকার নির্ধারিত হারে নিতে হবে, ছাত্রছাত্রীদের হাফ ভাড়া নিতে হবে এবং দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রীদের কাছ থেকেও হাফ ভাড়া নিতে হবে, বাস মিনিবাসের ভাড়া নৈরাজ্যের পাশাপাশি হিউম্যান হলার, লেগুনা, টেম্পো ও অটোরিকশার ভাড়া নৈরাজ্য বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। এছাড়া ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরের জন্য আলাদা ভাড়া পুনঃনির্ধারণ করতে হবে। সিটিং সার্ভিসের দুই কিলোমিটারের জন্য ৫ টাকা ভাড়া নির্ধারণ করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, সরকারের নীতিনির্ধারকদের মধ্য থেকেই জ্বালানি ও পরিবহন সেক্টরে নৈরাজ্য শুরু হয়েছে। শুধু ডিজেলের শুল্ক প্রত্যাহার করা হলেই তেলের দাম বাড়ানোর কোনো প্রয়োজন হতো না। আমি সরকারকে বলব ডিজেলের দাম প্রত্যাহার করুন এবং নৈরাজ্য থেকে জনগণকে বাঁচান। দেশের পাবলিক ট্রান্সপোর্ট সেক্টরকে পুনর্বিন্যাস করতে হবে। এজন্য সবার সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করতে হবে। এ দেশের যে উন্নয়ন হচ্ছে তার চিহ্ন রাস্তায় দামি দামি গাড়ি দেখলেই পাওয়া যায়। কিন্তু পাবলিক বাসের কোনো উন্নয়ন নেই। সরকার এখানেও মালিকদের স্বার্থটাই বেশি প্রাধান্য দেয়।
বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মী নূর খান লিটন বলেন, জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি করে সরকার জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। কারো সঙ্গে আলোচনা না করেই মধ্যরাতে জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়ে দেয়া জনগণের সঙ্গে বড় ধরনের প্রতারণা।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।