মানিলন্ডারিং মামলা : হাইকোর্টে জামিন পাননি এসপিসি ওয়ার্ল্ডের শারমিন

আগের সংবাদ

জাহাঙ্গীর আজীবন বহিষ্কার : আ.লীগের সভায় সিদ্ধান্ত, মেয়র পদ হারাতে পারেন জাহাঙ্গীর > খালেদার টার্গেট আমি : প্রধানমন্ত্রী

পরের সংবাদ

জাতিসংঘে সর্বসম্মতিক্রমে রোহিঙ্গা নিয়ে প্রস্তাব পাস > খুবই খুশির খবর : পররাষ্ট্রমন্ত্রী

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৯, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ১৯, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : রাশিয়া ও চীন আগে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে অসহযোগিতা করলেও এখন তারা এর শান্তিপূর্ণ সমাধান চায় বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন। জাতিসংঘে প্রথমবারের মতো সর্বসম্মতিক্রমে রোহিঙ্গা প্রস্তাব (রেজুলেশন) পাস হওয়ার সময় এই দুই দেশের প্রতিনিধিদের নীরবতা এটা প্রমাণ করেছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, এটা আমাদের জন্য খুবই খুশির খবর। এর আগে বুধবার জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের থার্ড কমিটিতে (সোশ্যাল, হিউম্যানিটারিয়ান এন্ড কালচারাল) সর্বসম্মতিক্রমে এ প্রস্তাব পাস হয়। যৌথভাবে প্রস্তাবটি উত্থাপন করে ওআইসি ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল এন্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) আয়োজিত এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে মন্ত্রী বলেন, আমাদের কূটনীতির ধারাবাহিক চেষ্টায় এটা সফল হয়েছে। এটা আমাদের জন্য আনন্দের ও খুশির। তিনি বলেন, জাতিসংঘে এই প্রথমবারের মতো

সর্বসম্মতিক্রমে রোহিঙ্গা প্রস্তাব পাস হয়েছে। রাশিয়া-চীন আগে রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাধা দিত। তবে তারা এবার চুপ ছিল। তারাও এই সমস্যা দূর করতে চায়। রাশিয়ার সঙ্গে আমার আলাপ হয়েছে, চীনের সঙ্গেও আলাপ হয়েছে। সব দেশই রোহিঙ্গা ইস্যুর শান্তিপূর্ণ সমাধান চায়। জাতিসংঘে গুরুত্বপূর্ণ এই প্রস্তাব পাস হওয়ার ফলে রোহিঙ্গাদের ফেরাতে মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি হবে। এটা আমাদের জন্য একটি বিরাট সুখবর। এটি জাতিসংঘের একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। নিরাপত্তা কাউন্সিলে এ বিষয়ে আগে আমরা সিদ্ধান্ত নিতে পারিনি। আশা করি আগামীতে আমরা নিরাপত্তা কাউন্সিলে সিদ্ধান্ত নিতে পারব। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানবিক বিবেচনায় ২০১৭ সালে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের জন্য বাংলাদেশের সীমান্ত খুলে দেন। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় এই, রোহিঙ্গাদের স্বপ্রণোদিত, নিরাপদ ও টেকসই প্রত্যাবর্তনের উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি করতে মিয়ানমার ব্যর্থ হওয়ায় বাংলাদেশে দীর্ঘমেয়াদি সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।
জাতিসংঘে পাস হওয়া প্রস্তাবে যা বলা হয়েছে : জাতিসংঘে প্রথমবারের মতো সর্বসম্মতিক্রমে রোহিঙ্গা প্রস্তাব পাস হয়েছে। আর এটাকে এই সংকট সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃঢ় প্রতিশ্রæতির প্রতিফলন হিসেবে দেখছে বাংলাদেশ। জাতিসংঘ সদর দপ্তরে বাংলাদেশ মিশন থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়।
জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাবাব ফাতিমাকে উদ্ধৃত করে বিবৃতিতে বলা হয়, জাতিসংঘে ‘মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিমসহ অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানবাধিকার পরিস্থিতি’ শীর্ষক প্রস্তাবটি পাস হয়। রাবাব ফাতিমা জানান, প্রস্তাবটি যৌথভাবে উত্থাপন করে ওআইসি ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন। বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় ও মানবিক সহায়তা প্রদান এবং জাতীয় কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন কর্মসূচিতে তাদের অন্তর্ভুক্ত করার মাধ্যমে বাংলাদেশ যে উদারতা ও মানবিকতা প্রদর্শন করেছে প্রস্তাবটিতে তার ভূয়সী প্রশংসা করা হয়েছে। কক্সবাজারের অত্যন্ত জনাকীর্ণ আশ্রয় ক্যাম্প থেকে রোহিঙ্গাদের একটি অংশকে ভাসানচরে স্থানান্তর এবং এ লক্ষ্যে এখানে অবকাঠামোসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা তৈরি করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারের যে প্রচেষ্টা এবং বিনিয়োগ, তারও স্বীকৃতি দেয়া হয় প্রস্তাবে। রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশ ও জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের মধ্যকার যে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে প্রস্তাবে সে বিষয়টিকেও স্বাগত জানানো হয়। প্রস্তাবটিতে প্রাথমিকভাবে দৃষ্টি দেয়া হয়েছে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিম ও অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানবাধিকার পরিস্থিতি এবং ১ ফেব্রুয়ারি ২০২১-এ জরুরি অবস্থা জারির প্রেক্ষাপটের মতো বিষয়গুলোর ওপরও। রোহিঙ্গা সমস্যার মূল কারণ খুঁজে বের করা, বাংলাদেশের সঙ্গে স্বাক্ষরিত দ্বিপক্ষীয় চুক্তির বাধ্যবাধকতাগুলো পূরণ করা এবং মিয়ানমারে নিযুক্ত জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ দূতসহ জাতিসংঘের সব মানবাধিকার ব্যবস্থাপনাকে পূর্ণ সহযোগিতা দিতে প্রস্তাবে নেপিডোর প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। চলমান বিচার ও দায়বদ্ধতা নিরূপণ প্রক্রিয়ার ওপর সজাগ দৃষ্টি বজায় রাখার কথাও বলা হয়েছে প্রস্তাবে। এতে মিয়ানমারে নবনিযুক্ত জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ দূতকে স্বাগত জানানো হয়েছে এবং মিয়ানমারকে সম্পৃক্ত করে তার জন্য একটি কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণের কথা বলা হয়েছে।
রাখাইন রাজ্যে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি করার ক্ষেত্রে মিয়ানমার, ইউএনএইচসিআর এবং ইউএনডিপির মধ্যে স্বাক্ষরিত ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারকটি নবায়ন এবং তা কার্যকর বাস্তবায়নের কথা উল্লেখ করা হয়েছে প্রস্তাবটিতে। রাষ্ট্রদূত ফাতিমা বলেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানবিক বিবেচনায় ২০১৭ সালে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের জন্য বাংলাদেশের সীমান্ত খুলে দেন। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় এই, রোহিঙ্গাদের স্বতঃপ্রণোদিত, নিরাপদ ও টেকসই প্রত্যাবর্তনের উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি করতে মিয়ানমার ব্যর্থ হওয়ায় বাংলাদেশে দীর্ঘমেয়াদি সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। প্রত্যাবাসনের কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় রোহিঙ্গাদের হতাশা ক্রমেই তীব্র হচ্ছে, যা এ অঞ্চলে নানা ধরনের নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগ ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে বলে উল্লেখ করেন বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি।
রাষ্ট্রদূত ফাতিমা আরো বলেন, আশা করা যায় এবারের প্রস্তাবটি নিজভূমি মিয়ানমারে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে বাস্তবভিত্তিক পদক্ষেপ গ্রহণে প্রেরণা হিসেবে কাজ করবে। এই সমস্যার দীর্ঘস্থায়ী, টেকসই সমাধানে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এবারের প্রস্তাবটিতে ১০৭টি দেশ সহপৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করেছে, যে সংখ্যা ২০১৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ। ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ওআইসি ছাড়াও প্রস্তাবটিতে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, মেক্সিকো, আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়াসহ বিভিন্ন ভৌগোলিক অঞ্চলের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক দেশ সমর্থন জুগিয়েছে এবং সহপৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করে। সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত এবারের রোহিঙ্গা প্রস্তাবের বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করে রাষ্ট্রদূত ফাতিমা বলেন, একটি শক্তিশালী ম্যান্ডেট নিয়ে এবারের প্রস্তাব গৃহীত হলো, যা রোহিঙ্গাদের মনে নতুন আশার সঞ্চার করবে, যে জন্য তারা পথ চেয়ে বসে আছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়