জামালদের বিদায় করে ফাইনালে শ্রীলঙ্কা

আগের সংবাদ

বাস মালিক-শ্রমিকরা বেপরোয়া : এখনো অতিরিক্ত ভাড়া আদায় > গেটলক-সিটিং সার্ভিস বহাল > বিআরটিএর তৎপরতা লোক দেখানো

পরের সংবাদ

র‌্যাগডের নামে অশ্লীলতা

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৮, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ১৮, ২০২১ , ১২:২৯ পূর্বাহ্ণ

শিক্ষাজীবনের শেষ দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে সবাই সবার মতো অনুষ্ঠানের আয়োজন করে, আর এই দিনটিকেই বলা হয় র‌্যাগডে। এইতো কয়েক বছর আগেও বাংলাদেশের সব স্কুল-কলেজগুলোতে বিদায় অনুষ্ঠান বা দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হতো, অত্যন্ত সুন্দর ও মনোরম পরিবেশে বক্তৃতাদান এবং বিভিন্ন আয়োজনের মাধ্যমে সমাপ্তি হতো বিদায় অনুষ্ঠানের। শিক্ষকদের মূল্যবান বাণী আর দিকনির্দেশনা হৃদয়ে লালন করে, শিক্ষার্থীরা পরবর্তী জীবনে বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখত। ভুলভ্রান্তি করলে শিক্ষকদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিত। শিক্ষকরা খুশি হয়ে ক্ষমার সঙ্গে সঙ্গে শুভকামনাও করত। আহা! কতই না সুন্দর ছিল সেই দিনগুলো, মনে হলেই যেন এখনো অজান্তেই চোখের দুই ফোঁটা জল ঝরে পড়ে, আর পুরনো দিনে ফিরে যেতে ইচ্ছে করে। দীর্ঘদিনের সহপাঠী ও শিক্ষকদের সঙ্গে কখনোই একই শ্রেণিকক্ষে শিক্ষালাভ করা হবে না! এ কথা ভাবতেই যেন সবার হৃদয়ে রক্তক্ষরণ ঘটত। বন্ধুদের জড়িয়ে ধরে কান্নার মধ্য দিয়ে ফুটে উঠত বিদায়ের করুণ মুহূর্তগুলো। কখনো শিক্ষকরাও কান্নায় ভেঙে পড়তেন। ছাত্র-শিক্ষক, সমাজ-সংস্কৃতি সব পরিবেশের সঙ্গেই সামঞ্জস্য ছিল বিদায় অনুষ্ঠান। বেদনাময় এবং নিস্তব্ধ পরিবেশের করুণ চিত্র ফুটিয়ে উঠত বিদায়বেলায়। এভাবেই সমাপ্তি ঘটত স্কুল-কলেজ জীবনের শেষ দিনটির। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি, স্কুল-কলেজগুলোর পূর্বের বিদায় অনুষ্ঠান কিংবা দোয়া অনুষ্ঠান বর্তমান র‌্যাগডে নামেই সবচেয়ে বেশি পরিচিত। সাধারণত দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা, বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শেষ দিনটিকে স্মরণ রাখার জন্য র‌্যাগডের আয়োজন করে, এ নিয়েও যেন আলোচনা-সমালোচনার শেষ নেই। কিন্তু কালের বিবর্তনে স্কুল-কলেজের শাসনের সংকীর্ণ দরজা প্রশস্ত হওয়ায় খুব সহজেই প্রবেশ করতে পেরেছে র‌্যাগডে সংস্কৃতি। যাইহোক, যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে, তা না হলে আবার সাংস্কৃতিক ব্যবধান তৈরি হবে। আমরা সাংস্কতিকভাবে অনেক আপডেট হয়েছি, আমাদেরও আপডেট হয়ে চলতে হবে।
গতকাল ফেসবুক স্ক্রল করতে করতে একটি ভিডিও চোখের সামনে ভেসে এলো, দেখলাম কোন এক ডিজে পার্টিতে কতগুলো সাদা টি-শার্ট পরা ছেলেমেয়ে একসঙ্গে নাচানাচি করছে। যাদের টি-শার্টের পেছনে বিভিন্ন অশ্লীল শব্দ লেখা। সাদা রঙের টি-শার্টে কালো রঙের শব্দগুলো পড়তে খুব বেশি কষ্ট হয়নি। প্রথমে চিন্তা করলাম হয়তো বা দেশের বাইরের কোনো ইউনিভার্সিটির র‌্যাগডে হবে। কিন্তু! তৎক্ষণাৎ ধারণা পাল্টে গেল। ভালো করে লক্ষ্য করে আবিষ্কার করলাম, এরা বিদেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী নয়! এদেশের স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী। নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ডিজে পার্টি ভাড়া করে বন্ধু-বান্ধবীরাসহ একসঙ্গে নাচানাচি করছে। অশ্লীল পোশাকে কুরুচিপূর্ণ শব্দ লিখে স্কুল-কলেজ জীবনের শেষ দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করছে। নিজের কুরুচিপূর্ণ মনোভাব র‌্যাগডের সাদা টি-শার্টে লিখে প্রকাশ করাকে, আমরা পৃথিবীর কোন সংস্কৃতির সঙ্গে তুলনা করতে পারি কিংবা কী ধরনের আপডেটের সঙ্গে তুলনা করতে পারি?
কিছুদিন আগেও বাংলাদেশসহ ভারতের কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের র‌্যাগডের সাদা টি-শার্টে বিভিন্ন কুরুচিপূর্ণ বাক্য লেখা নিয়ে বেশ আলোচনা-সমালোচনার জন্ম হয়েছিল। কিন্তু কে শোনে কার কথা। আজকাল সবাই নিজের মতো চলতে ভালোবাসে। আমার বন্ধুর টি-শার্টে আমি যে কোনো ভাষা লিখতে পারি, এতে আমার আর তার সমস্যা না হলেই হলো। আপনার নাক গলানোর কী প্রয়োজন? ব্যাপারটা এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে। সময় পরিবর্তন হয়েছে, স্কুল-কলেজে র‌্যাগডে পালন অস্বাভাবিক কিছু নয়। এখানে আমাদেরও কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু যখন সাদা টি-শার্টের পেছনে অশ্লীল শব্দ বা বাক্য লিখে সেই ছবি কিংবা ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোড দেয়া হয়। তখন অবশ্যই আমাদের আপত্তি থাকে। দেশের সাধারণ জনগণ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ভিডিওতে শিক্ষার্থীদের গায়ে লেখা এমন কুরুচিপূর্ণ শব্দ বা বাক্য দেখে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিবেশ সম্বন্ধে কী ধরনের ধারণা অর্জন করতে পারে? বাংলাদেশে এখনো পিতা-মাতারা নারীশিক্ষায় অনীহা প্রকাশ করেন। একজন গ্রামীণ সহজ-সরল অভিভাবক যদি ভিডিওগুলো দেখেন, তাহলে কি মেয়েকে শহরে পড়াশোনার জন্য পাঠাতে চাইবেন? সংরক্ষণশীল পিতা-মাতারা কি চাইবেন তাদের মেয়েটিকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করতে? র‌্যাগডে যদি পালন করতেই হয় তাহলে সব দায়িত্ব স্কুল-কলেজ কর্তৃপক্ষকে নিতে হবে, লক্ষ্য রাখতে হবে শিক্ষার্থীরা যেন র‌্যাগডের নামে কোনোভাবেই অশ্লীলতাকে প্রমোট করার সাহস না পায়। এতে শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সম্মান নষ্ট হয় না, সঙ্গে দেশের সব শিক্ষার্থীর সম্মান নষ্ট হয় এবং সাধারণ জনগণের মনে স্কুল-কলেজের পরিবেশ সম্বন্ধে নেতিবাচক ধারণার জন্ম নেয়। সবশেষে আমাদের বাঙালি সংস্কৃতির বারোটা বেজে যায়।
মাথায় রাখতে হবে, আমরা বাঙালি জাতি। সবার উপরে আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতি। আমরা নিজেকে আড়ালে রাখতে ভালোবাসি। আজকের শিক্ষার্থীরা আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। একসময় তারা দেশকে বিশ্বের বুকে রিপ্রেজেন্ট করবে। তাই প্রতিটি শিক্ষার্থীকে বোঝা উচিত মজা কিংবা সমসাময়িক আনন্দের জন্য অশ্লীল কিছু করা যাবে না। একটা কথা মাথায় রাখতে হবে, তোমাদের কাছ থেকে তোমার ছোট ভাইয়া-আপুরা শিক্ষাগ্রহণ করবে। তুমি যদি ভালো কিছু শিক্ষা দাও, তারাও তাদের পরবর্তী প্রজন্মকে ভালো কিছু শিক্ষা দেবে। ভালো আর মন্দের মধ্যে পার্থক্য করতে না পারলে বিদ্যা অর্জনের কোনো সার্থকতা থাকে না। নিজেকে সমাজের কাছে দর্পণের ন্যায় স্বচ্ছভাবে ফুটিয়ে তুলতে হবে। ভালো কিছু করতে না পারলে অবশ্যই খারাপ কিছু করা যাবে না। স্কুল-কলেজে অশ্লীল নৃত্য এবং টি-শার্টের পেছনে অশ্লীল বাক্য বা শব্দ লেখা যাবে না। এক্ষেত্রে স্কুল-কলেজ প্রশাসনকে সচেতন থাকতে হবে। কারণ অশ্লীল কিছু হলে স্কুল-কলেজের সম্মান সবার আগেই নষ্ট হয়। অভিভাবক এবং শিক্ষার্থীদের সচেতন হতে হবে। প্রতিটি শিক্ষার্থীর বোঝা উচিত কুরুচিপূর্ণ শব্দ এবং বাক্য যুক্ত ছবি এবং ভিডিওগুলো সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোডের ফলে মা-বাবা ভাই-বোনসহ পৃথিবীর সবাই দেখতে পাচ্ছে। ফলে নিজের সম্বন্ধে একটা খারাপ মনোভাব অটোমেটিক্যালি তৈরি হচ্ছে। সেজন্য নিজেকে সচেতন রাখতে হবে এবং বন্ধুদের বোঝাতে হবে। আর যদি নিজের সম্মান রক্ষার ইচ্ছা না থাকে, তবুও বাঙালি জাতির মানসম্মান রক্ষার জন্য হলেও র‌্যাগডের নামে অশ্লীলতা বন্ধ করতে হবে।

ইমরান হোসাইন ইমন : শিক্ষার্থী, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, দিনাজপুর।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়