জামালদের বিদায় করে ফাইনালে শ্রীলঙ্কা

আগের সংবাদ

বাস মালিক-শ্রমিকরা বেপরোয়া : এখনো অতিরিক্ত ভাড়া আদায় > গেটলক-সিটিং সার্ভিস বহাল > বিআরটিএর তৎপরতা লোক দেখানো

পরের সংবাদ

নির্বাচনী সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্ত সুষ্ঠু ভোটের সংস্কৃতি

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৮, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ১৮, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ইউপি নির্বাচন ঘিরে সহিংসতা বৃদ্ধি উদ্বেগজনক। নির্বাচনী সহিংসতা ও মৃত্যুর ঘটনা বাড়ছে। চলতি বছরের জুনে শুরু হওয়া এই নির্বাচনকেন্দ্রিক সহিংসতায় ২৭টি প্রাণ ঝরেছে বলে পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়েছে। এক সময় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সহিংসতা কল্পনা করা যেত না। ইউনিয়নের সৎ এবং যোগ্য প্রার্থীকে ভোটাররা শান্তিপূর্ণ উপায়ে বেছে নিত। কিন্তু ইদানীং ইউপি নির্বাচনে সহিংসতা যেন স্বাভাবিক একটি ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্থানীয় বা জাতীয় যে কোনো নির্বাচনই হোক সেটা শান্তিপূর্ণভাবে এগিয়ে নেয়া নির্বাচন কমিশনের মৌলিক এবং অপরিহার্য দায়িত্ব। কিন্তু কোনোমতেই যেন থামছে না এই হানাহানি। তাহলে এর দায় কে নেবে? যেহেতু কমিশন নির্বাচন পরিচালনা করে সেহেতু এর দায় সরাসরি নির্বাচন কমিশনের ওপর বর্তায়। সিইসি প্রার্থীদের আচরণবিধি মেনে চলার অনুরোধ করেছেন। প্রার্থী যদি আচরণবিধি লঙ্ঘন করে তবে কমিশন সেটার বিরুদ্ধে সব ধরনের আইনি পদক্ষেপ নিতে পারে। কিন্তু প্রার্থীদের আচরণবিধি নিয়ন্ত্রণে কমিশনের ভূমিকা কি সঠিক পথে আছে। এই প্রশ্নটি সাধারণ মানুষের মনে জন্ম নিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন সুষ্ঠু নির্বাচন করার দায়িত্ব কমিশনের আর সেটা যদি না হয় তবে সে দায় কমিশনকে নিতে হবে। সহিংস ঘটনা রোধে কমিশনের হাতে একাধিক বিকল্প আছে। একটি বিকল্প কাজ না করলে অন্যগুলো প্রয়োগ করা যেতে পারে।
নির্বাচনী সহিংসতার কারণে নির্বাচন কমিশনের প্রতি সাধারণ জনগণের আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে। ভোটাররা ভোট কেন্দ্র বিমুখ হয়ে পড়ছেন দিন দিন। সাধারণ জনগণ শান্তিপূর্ণ উপায়ে তাদের ভোটটি দিতে চান, কিন্তু তারা যখন সহিংসতার শিকার হন তখন আর ভোট কেন্দ্রে যেতে সাহস করেন না বা ভোটের আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। এর ফলে নির্বাচন কমিশনসহ পুরো নির্বাচনী ব্যবস্থার ভাবমূর্তি প্রশ্নের সম্মুখীন হয়। নির্বাচনী সহিংসতার বিচার প্রক্রিয়া নিয়েও জনমনে আস্থার জায়গাটি তৈরি হয়নি। বাংলাদেশে ২০০১ সালের নির্বাচনের পরের সহিংসতা কথা মানুষ ভুলে যায়নি। বিশেষ করে সংখ্যালঘুদের নির্যাতনের মাত্রা ছিল ভয়াবহ। নির্বাচনী সহিংসতার সঠিক তথ্য ও উপাত্ত অনেক সময় পাওয়া যায় না। ফলে অনেক সহিংস ঘটনা বিচারের বাইরে থেকে যায়। নির্বাচনী সহিংসতার প্রধান টার্গেট থাকে সংখ্যালঘু ও দুর্বল জনগোষ্ঠী। ২০১৪ সালেও নির্বাচনী সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। নির্বাচনের আগে ও পরে বাসে আগুন দেয়াসহ পেট্রোল বোমা ছোড়ার ঘটনা ঘটেছে।
নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তির আচরণবিধি মানাতে বাধ্য করতে পারে কমিশন। নির্বাচনের সময় স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা মেনে চলার কথা। তাই নির্বাচন কমিশন ইচ্ছা করলেই দায় এড়াতে পারে না। সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে কমিশনকে যে ক্ষমতা দেয়া হয়েছে সেটা প্রয়োগে কমিশনের দৃঢ়তা, সাহস এবং নিরপেক্ষতা প্রয়োজন। নির্বাচন কমিশন একটি স্বাধীন ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। ২০০৮-২০১৩ সাল পর্যন্ত স্থানীয় সরকার পর্যায়ে বহু নির্বাচনসহ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু এসব নির্বাচনে সহিংস ঘটনা বা প্রাণহানি ঘটেনি। অবাধ ও নিরপেক্ষ হিসেবেই এই নির্বাচনগুলো স্বীকৃতি পেয়েছে। নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষ ও দৃঢ় পদক্ষেপের কারণেই তা সম্ভব হয়েছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। অতীতে যদি এমনটা করা সম্ভব হয় তবে এখন কেন করা যাচ্ছে না। সহিংসতা ঠেকাতে এবং শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন নিশ্চিত করতে নির্বাচন কমিশন পুলিশ, বিডিআর, অন্যান্য বাহিনী এমনকি বিশেষ প্রয়োজনে সেনাবাহিনীও কাজে লাগাতে পারে। নির্বাচন কমিশনের যে শক্তি ও ক্ষমতা আছে তাতে সহিংসতা বন্ধ করা কঠিন কিছু নয়। সুষ্ঠু নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কমিশনকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা দিতে বাধ্য।
স্থানীয় বা তৃণমূলের নির্বাচন রাষ্ট্র ও সমাজে গণতন্ত্র চর্চার গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। নির্বাচনে কম বেশি অনিয়ম, কারচুপি ও সহিংসতা হয়ে থাকে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে। কিন্তু সম্প্রতি বাংলাদেশে এটা যেন এক ভিন্ন রূপ লাভ করেছে। স্থানীয় সরকারের নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে অনেক ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়। এই নির্বাচনে স্থানীয় প্রভাব বিস্তারের কারণে সহিংসতার আশঙ্কা থেকেই যায়। স্থানীয় এই নির্বাচনগুলো ধাপে ধাপে করা হচ্ছে যেন সেটা শান্তিপূর্ণ হয়। কিন্তু পরিস্থিতি দিনে দিনে অবনতি হচ্ছে। নির্বাচনে ভোট কেন্দ্র দখল, ব্যালট বাক্স ছিনিয়ে নেয়া, ভোটারদের কেন্দ্রে উপস্থিত হতে বাধা দেয়াসহ রক্তারক্তির ঘটনা ঘটছে। সংঘাতহীনভাবে নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনের শক্ত অবস্থান এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সহনশীল মনোভাবের ঘাটতি দৃশ্যমান। এ ধরনের সহিংসতা গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রাকে চরমভাবে ব্যাহত করে। নির্বাচন উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হবে এটাই নাগরিকদের চাওয়া। নির্বাচনকে যদি শান্তিপূর্ণ না করা যায় তবে আগামীর পথ আরো বেশি অমসৃণ হয়ে উঠবে। রাজনৈতিক অঙ্গীকার ও সদিচ্ছা থাকলে এবং কমিশনের দৃঢ় অবস্থান থাকলে নির্বাচনী সংস্কৃতিতে যে সহিংসতার প্রবণতা শুরু হয়েছে সেটা থেকে বের হয়ে আসা সম্ভব। নির্বাচন কমিশনকে অনেক ক্ষমতা দেয়া হয়েছে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য। কিন্তু মনে রাখতে হবে যে কমিশনের একার পক্ষে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন করা সম্ভব নয়। যেসব অর্গানগুলোর ওপর নির্বাচন কমিশন নির্ভরশীল সেগুলোকেও সাহসী ও নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে হবে। সহিংসতার পাশাপাশি ভোটে প্রভাব বিস্তারের ঘটনাও দৃশ্যমান। ভোট ছাড়াই বা বিনা প্রতিযোগিতায় জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হওয়ার এক মানসিকতা তৈরি হচ্ছে প্রার্থীদের মধ্যে। একটি গণতান্ত্রিক দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে হলে সুষ্ঠু নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই। নির্বাচনী সহিংসতা বন্ধে রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকা একটি বিরাট বিষয়।

মাজহার মান্নান : শিক্ষক, ঢাকা।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়