জামালদের বিদায় করে ফাইনালে শ্রীলঙ্কা

আগের সংবাদ

বাস মালিক-শ্রমিকরা বেপরোয়া : এখনো অতিরিক্ত ভাড়া আদায় > গেটলক-সিটিং সার্ভিস বহাল > বিআরটিএর তৎপরতা লোক দেখানো

পরের সংবাদ

দেশে ক্রমশ বাড়ছে বিদেশি বিনিয়োগ

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৮, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ১৮, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : দেশে আমদানি-রপ্তানির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বিদেশি বিনিয়োগও বাড়তে শুরু করেছে। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করায় বিনিয়োগের আবহ তৈরি হওয়ায় বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ছে বলে জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী নেতারা। তারা বলছেন, গত অর্থবছরের ধারাবাহিকতায় তৈরি পোশাক খাতে কোরিয়া, চীন ও হংকং থেকে উল্লেখযোগ্য বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে। এছাড়া বিদ্যুৎ, ব্যাংক, টেলিকমিউনিকেশন খাতেও কিছু বিনিয়োগ এসেছে। এ কারণেই এফডিআই প্রবাহে গতি এসেছে বলে জানান তারা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) ৮৪ কোটি ৭০ লাখ ডলারের সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) এসেছে বাংলাদেশে, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৯ শতাংশ বেশি। ২০২০-২১ অর্থবছরের এই তিন মাসে ৭৭ কোটি ৭০ লাখ ডলারের এফডিআই পেয়েছিল বাংলাদেশ। জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে নিট এফডিআই বেড়েছে আরো বেশি, প্রায় ৫০ শতাংশ। এই তিন মাসে নিট এফডিআইয়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৪ কোটি ডলার। গত বছরের এই তিন মাসে নিট বিনিয়োগের অঙ্ক ছিল ২২ কোটি ৭০ লাখ ডলার। মহামারি করোনার মধ্যেও গত ২০২০-২১ অর্থবছরের ৩৩৮ কোটি ৬৮ লাখ ৬০ হাজার ডলারের (৩ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন) ডলারের এফডিআই এসেছিল বাংলাদেশে। ওই অঙ্ক ছিল আগের অর্থবছরের চেয়ে ৪ দশমিক ৮ শতাংশ বেশি। নিট এফডিআইয়ের পরিমাণ ছিল ২৫০ কোটি ৭৩ লাখ (২ দশমিক ৫০ বিলিয়ন) ডলার; প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৫ দশমিক ৮ শতাংশ। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৩২৩ কোটি ৩০ লাখ (৩ দশমিক ২৩ বিলিয়ন) ডলারের বিদেশি বিনিয়োগ পেয়েছিল বাংলাদেশ। নিট বিনিয়োগের অঙ্ক ছিল ১২৭ কোটি ১০ লাখ ডলার। তার আগে ২০১৮-১৮ অর্থবছরে প্রায় ৫ বিলিয়ন (৫০০ কোটি) ডলার বিদেশি বিনিয়োগ এসেছিল দেশে। এর মধ্যে নিট এফডিআইয়ের পরিমাণ ছিল ২৬৩ কোটি ডলার।
বাংলাদেশের ইতিহাসে এক অর্থবছরে সবচেয়ে বেশি বিদেশি বিনিয়োগ আসে ওই বছর। এর মধ্যে বড় অঙ্কের বিনিয়োগ করে জাপানের কোম্পানি জাপান টোব্যাকো। আকিজ গ্রুপের তামাক ব্যবসা কেনা বাবদ প্রায় ১৫০ কোটি (১ দশমিক ৫ বিলিয়ন) ডলার বিনিয়োগ করেছিল তারা। বিভিন্ন খাতে মোট যে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ আসে, তা থেকে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান মুনাফার অর্থ দেশে নিয়ে যাওয়ার পর অবশিষ্ট অঙ্ককে নিট এফডিআই বলা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক ‘সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ ও বিদেশি ঋণ’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তাতে বলা হয়েছে, করোনা মহামারির কারণে বিশ্বব্যাপী বিদেশি বিনিয়োগে মন্দা ছিল। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসছে। এফডিআই প্রবাহও বাড়তে শুরু করেছে। বাংলাদেশেও তার প্রভাব পড়েছে। আগামী দিনগুলোতে বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ আরো বাড়বে বলে প্রতিবেদনে আশা প্রকাশ করা হয়েছে।
অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী নেতারা বলেছেন, গত অর্থবছরের ধারাবাহিকতায় তৈরি পোশাক খাতে কোরিয়া, চীন ও হংকং থেকে উল্লেখযোগ্য বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে। এছাড়া বিদ্যুৎ, ব্যাংক, টেলিকমিউনিকেশন খাতেও কিছু বিনিয়োগ এসেছে। এ কারণেই এফডিআই প্রবাহে গতি এসেছে বলে জানান তারা। আন্তর্জাতিক রীতি অনুযায়ী, বিদেশি কোম্পানিগুলো তিনভাবে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে পারে।
মূলধন হিসেবে নগদ বা শিল্পের যন্ত্রপাতি হিসেবে, বাংলাদেশে ব্যবসা করে অর্জিত মুনাফা বিদেশে না নিয়ে পুনর্বিনিয়োগ করে এবং এক কোম্পানি অন্য কোম্পানি থেকে ঋণ নিয়ে বিনিয়োগ করতে পারে। এ তিন পদ্ধতির যে কোনোভাবে দেশে বিনিয়োগ এলে তা এফডিআই হিসাবে গণ্য করা হয়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫-১৬ থেকে ২০২০-২১ এই পাঁচ অর্থবছরে দেশে মোট ২ হাজার ৩৯ কোটি ৫৯ লাখ ডলার (২০ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন) এফডিআই এসেছে। এর মধ্যে নিট এফডিআইর পরিমাণ ১৫ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলার। এই সময়ে বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তারা মোট বিনিয়োগের প্রায় ১৭ শতাংশ বিনিয়োগ করেছে। দ্বিতীয় অবস্থানে সিঙ্গাপুর। তারা মোট বিনিয়োগের সাড়ে ১৬ শতাংশের মতো বিনিয়োগ করেছে। তৃতীয় অবস্থানে নেদারল্যান্ডসের বিনিয়োগ ৮ শতাংশের মতো। এছাড়া সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, চীন, মিসর, যুক্তরাজ্য, হংকং এবং অন্যান্য দেশের বিনিয়োগকারীর বাংলাদেশে বিনিয়োগ রয়েছে। এই বিনিয়োগ বাংলাদেশের প্রযুক্তির অগ্রগতি, দক্ষতা বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, উন্নত অবকাঠামো এবং ব্যবস্থাপনায় সহায়তা করেছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, করোনার ধাক্কা সামলে বাংলাদেশের অর্থনীতি বেশ ভালোভাবেই ঘুরে দাঁড়িয়েছে। আমদানি-রপ্তানি বাড়ছে। অন্য সূচকগুলোও ভালো। রাজনীতিতে অস্থিরতা নেই দীর্ঘদিন। সব মিলিয়ে দেশি বিনিয়োগের পাশাপাশি বিদেশি বিনিয়োগেও একটি ভালো পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে বাংলাদেশে। এখন এটাকে ভালোভাবে কাজে লাগাতে পারলে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা দিলে দেশে এফডিআই আরো বাড়বে বলেও মনে করেন ব্যবসায়ী নেতারা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে ১ হাজার ৭৩২ কোটি ১০ লাখ (১৭ দশমিক ৩২ বিলিয়ন) ডলারের বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানি করেছে বাংলাদেশ। এই অঙ্ক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৪৭ দশমিক ৫৯ শতাংশ বেশি। ২০২০-২১ অর্থবছরের এই তিন মাসে ১ হাজার ১৭৫ কোটি ৬০ লাখ ডলারের পণ্য আমদানি হয়েছিল। অন্যদিকে ২০২১-২২ অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বরে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে ১ হাজার ৮১ কোটি ৮০ লাখ (১০ দশমিক ৮১ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ বেশি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়