জামালদের বিদায় করে ফাইনালে শ্রীলঙ্কা

আগের সংবাদ

বাস মালিক-শ্রমিকরা বেপরোয়া : এখনো অতিরিক্ত ভাড়া আদায় > গেটলক-সিটিং সার্ভিস বহাল > বিআরটিএর তৎপরতা লোক দেখানো

পরের সংবাদ

জনপ্রতিনিধিদের শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণ হোক

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৮, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ১৮, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

জনপ্রতিনিধি হয়ে জনগণের সেবা করার প্রাথমিক পর্যায় হচ্ছে ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য (মেম্বার) হওয়া, তদপর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। একজন মেম্বার মানেই তার নির্বাচনী এলাকার প্রধান বলে বিবেচিত হন। তিনি নিজ এলাকার জন্য ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় সরকার থেকে পাওয়া যাবতীয় সুবিধাদির সুষ্ঠু ব্যবহারের মাধ্যমে নিজ এলাকার অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং সরকারের কাছ থেকে নাগরিক প্রাপ্যাদি বুঝিয়ে দেয়া। এছাড়াও তিনি একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে নিজ উদ্যোগে কিংবা চেয়ারম্যানের নির্দেশনায় নানাবিধ কাজ করতে পারেন, যা নাগরিকদের জন্য মঙ্গলজনক হয়। পাশাপাশি গ্রাম আদালত আইন ২০০৬-এর অধীনে তিনি নিজ এলাকার নাগরিকদের মধ্যকার বিরোধ নিষ্পত্তির লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন। অপরদিকে ইউনিয়ন পরিষদের প্রধান ব্যক্তি হলেন চেয়ারম্যান, চেয়ারম্যানের অধীনে থাকে সব ওয়ার্ডের মেম্বার। মেম্বারদের মাধ্যমে এবং নিজে উপস্থিত থেকে সরকারি বরাদ্দ নাগরিকদের বুঝিয়ে দেয়া, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, গ্রাম আদালতের চেয়ারম্যান (বিচারক) হিসেবে গ্রাম আদালত আইন ২০০৬-এর অধীন সব বিরোধ নিষ্পত্তিকে মুখ্য ভূমিকা পালন করে থাকেন।
আমাদের দেশে বিদ্যমান গ্রামীণ সংস্কৃতিতে চেয়ারম্যান-মেম্বারদের ততটা সম্মানের চোখে দেখা হয় না। চেয়ারম্যান-মেম্বারের নিজস্ব লোক ব্যতীত অপর সাধারণ নাগরিকদের কাছে ভালো হতে পেরেছে, এমন কম চেয়ারম্যান-মেম্বারই আছে বাংলাদেশে। তুলনামূলকভাবে একজন চেয়ারম্যানকে যথেষ্ট সম্মানিত ব্যক্তি হিসেবে গণ্য করা হলেও মেম্বার (ইউপি সদস্য) যেন মূল্যহীন ব্যক্তি অর্থাৎ গ্রামের মানুষের ভাষ্য মতে, ‘শিক্ষিত-ভালো মানুষ কখনো মেম্বার নির্বাচন করে না’ এবং ‘মেম্বার মানেই সরকারি বরাদ্দ মেরে খাওয়ার হোতা’ হিসেবে মনে করা হয়। অবশ্যই এ ধরনের অভিযোগ যে একেবারেই মিথ্যে নয়, তা টিভি-পত্রিকার নিউজ দেখলেই বোঝা যায়। কোভিড-১৯ মহামারিকালীন যেমন বহু ভালো জনপ্রতিনিধি দেখেছি আমরা, তেমনি নাগরিকদের প্রাপ্য তাদের বুঝিয়ে না দিয়ে আত্মসাৎ করা বহু জনপ্রতিনিধির কুকর্মও সামনে এসেছে। বিগত এক দশকে শিক্ষা-দীক্ষায় ব্যাপক উন্নতি ঘটেছে বাংলাদেশে, কিন্তু সে হারে শিক্ষিত জনপ্রতিনিধির সংখ্যা বাড়েনি। এর কারণ হিসেবে ‘শিক্ষিত-ভালো মানুষ কখনো মেম্বার নির্বাচন করে না’ মর্মে প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাওয়া ভুল ধারণাই দায়ী। ফলে একজন শিক্ষিত ও ভালো মানুষ মেম্বার কিংবা চেয়ারম্যান হিসেবে প্রার্থী হতে গেলেই ‘গেল গেল’ রব উঠে এলাকায়। তাই দেশে শিক্ষিত নাগরিকের সংখ্যা প্রত্যাশিত মতে বাড়লেও বাড়েনি শিক্ষিত চেয়ারম্যান-মেম্বারের সংখ্যা।
একজন চেয়ারম্যান মানেই ইউনিয়ন পরিষদের প্রধান ব্যক্তি। একজন মেম্বার মানেই তার ওয়ার্ডের প্রধান ব্যক্তি। গ্রাম আদালত আইন ২০০৬ মতে গ্রাম আদালতের অধীনে নিষ্পত্তিযোগ্য সব মামলা বিচার করার জন্য এখতিয়ার সম্পন্ন ব্যক্তি হলেন চেয়ারম্যান। সেহেতু একজন চেয়ারম্যান মানে শুধু চেয়ারম্যানই নন, তিনি গ্রাম আদালত আইন ২০০৬ মতে একজন বিচারকও। মেম্বারও উক্ত বিচার কার্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হন। কাজেই একজন বিচারক শিক্ষিত, বিচারবুদ্ধিসম্পন্ন ব্যক্তি হবেন, এটাই প্রত্যাশিত। কিন্তু আমাদের দেশে উচ্চশিক্ষিত মেম্বার তো দূরের কথা, এইচএসসি পাস চেয়ারম্যানের সংখ্যাই হাতেগোনা। নিজের নাম কোনোমতে লিখতে পারেন, এমন মেম্বারের সংখ্যাই বাংলাদেশে বেশি। ফলে গ্রাম আদালত আইন ২০০৬-এর অধীনে চেয়ারম্যান একজন বিচারক হলেও তিনি গ্রাম আদালতের অধীনে নিষ্পত্তিযোগ্য বিরোধসমূহ নিষ্পত্তিতে ভালো ভূমিকা রাখতে পারেন না এবং নাগরিকদের গ্রাম আদালতের অধীনে নিষ্পত্তিযোগ্য বিরোধগুলো নিয়ে দেওয়ানি-ফৌজদারি আদালতে না গিয়ে গ্রাম আদালতের ধারস্থ হওয়ার জন্য উৎসাহিত করতে পারেন না। পাশাপাশি পর্যাপ্ত শিক্ষা না থাকায় তিনি এককভাবে সব কার্য করতে না পারায় সহকারী কিংবা পরিবারের সদস্য, নিকটাত্মীয়/শুভাকাক্সক্ষীদের সহযোগিতা নেন। চেয়ারম্যানের এসব কাছের মানুষের মধ্যে দুষ্টরা হয়ে যায় এলাকার ত্রাস। গ্রামাঞ্চলে কথিত আছে যে, ‘চেয়ারম্যান নয়, তার চেলা-চামচাদের তোপে টেকা দায়’। গ্রাম আদালতে নিষ্পত্তিযোগ্য বিরোধগুলো ইউনিয়ন পরিষদে নিষ্পত্তি না হয়ে জেলা জজ আদালতে যাওয়াও আদালতে মামলা জটের অন্যতম কারণ বলা যায়। মেম্বার-চেয়ারম্যান নির্বাচন করার শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণ করে দিতে হবে কিংবা শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণ না করলেও শিক্ষিত ব্যক্তিদের নির্বাচনে আসার জন্য আগ্রহী করতে হবে। গ্রামাঞ্চলের প্রভূত উন্নতি এবং সুস্থ গ্রামীণ রাজনীতির পরিবেশ তৈরি করতে শিক্ষিত তরুণরা এগিয়ে এলে এবং তাদের সুযোগ করে দিলে অবশ্যই সর্বক্ষেত্রে কাক্সিক্ষত পরিবর্তন আসবে এবং সত্যিকার অর্থেই এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ।

জুবায়ের আহমেদ : শিক্ষার্থী, ডিপ্লোমা ইন জার্নালিজম, বিজেম
কাঁটাবন, ঢাকা।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়