জামালদের বিদায় করে ফাইনালে শ্রীলঙ্কা

আগের সংবাদ

বাস মালিক-শ্রমিকরা বেপরোয়া : এখনো অতিরিক্ত ভাড়া আদায় > গেটলক-সিটিং সার্ভিস বহাল > বিআরটিএর তৎপরতা লোক দেখানো

পরের সংবাদ

আপত্তিকর অবস্থায় দেখাই কাল হয় শিশু ফাহিমার : ঘাতক বাবাসহ গ্রেপ্তার ৫ খুনি

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৮, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ১৮, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : প্রতিবেশী লাইলি আক্তারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল ট্রাক্টরচালক আমির হোসেনের। যদিও তাদের ছিল আলাদা আলাদা সংসার। কিন্তু সবকিছু ছেড়েছুড়ে তারা শুরু করেন পরকীয়া। এক বছর ধরে চলা এ অবৈধ সম্পর্কে বাধা হয়ে দাঁড়ায় আমিরের পাঁচ বছর বয়সি শিশুকন্যা ফাহিমা। বাবাকে অন্য নারীর (লাইলি) সঙ্গে আপত্তিকর অবস্থায় দেখে মায়ের কাছে বলে দেয়ার কথা জানায় সে। আর এটিই কাল হয়ে দাঁড়ায় নিষ্পাপ এ শিশুর। পরকীয়ায় পথের কাঁটা সরাতে প্রেমিকা লাইলি ও আরো তিন সহযোগীকে নিয়ে নিজের মেয়েকেই হত্যা করে লাশ গুম করেন আমির হোসেন।
কুমিল্লার দেবিদ্বারের চাঞ্চল্যকর শিশু ফাহিমা হত্যাকাণ্ডে ঘাতক বাবা ও তার পরকীয়া প্রেমিকাসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তারের পর এসব তথ্য জানিয়েছে র‌্যাব। গ্রেপ্তাররা হলেন- নিহত শিশুর বাবা আমির হোসেন (২৫), রবিউল আউয়াল (১৯), রেজাউল ইসলাম ইমন (২২), মোসা. লাইলি আক্তার (৩০) ও সোহেল রানা (২৭)। কুমিল্লার দেবিদ্বার ও রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। র‌্যাব বলছে, ফাহিমার লাশ গুমে ব্যবহৃত গরুর খাবার ফিডের বস্তার সূত্র ধরে এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তাররা এ নির্মম হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি স্বীকার করেছেন।
গতকাল বুধবার রাজধানীর

কারওয়ানবাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন বলেন, গত ৭ নভেম্বর বিকালে কুমিল্লার দেবিদ্বারে পাঁচ বছরের শিশু ফাহিমা আক্তার নিখোঁজ হয়। এরপর ফাহিমার বাবা আমির হোসেন দেবিদ্বার থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় মাইকিং করেন। এমনকি গত ৮ নভেম্বর ঝাড়ফুঁক দিয়ে মেয়েকে খোঁজার জন্য একজন কবিরাজকেও খবর দেন তিনি। পরে ১৪ নভেম্বর পুলিশ দেবিদ্বারের কাচিসাইর গ্রামের একটি ডোবা থেকে ওই শিশুর বস্তাবন্দি মরদেহ উদ্ধার করে। পরিচয় নিশ্চিত করে নিহতের পরিবার। ওই ঘটনায় ঘাতক বাবা আমির হোসেন বাদী হয়ে দেবিদ্বার থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। নির্মম এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় র‌্যাব-১১ ছায়াতদন্ত শুরু করে এবং ঘাতক বাবাসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে।
র‌্যাব কর্মকর্তা জানান, পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ৬ নভেম্বর রাতে রেজাউল ইসলাম ইমনের ফার্নিচার দোকানে নিহত শিশুর বাবা আমির হোসেন টাকার বিনিময়ে রবিউল আউয়াল, রেজাউল ইসলাম ইমন ও সোহেল রানাকে সঙ্গে নিয়ে ফাহিমাকে হত্যা করার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী হত্যার জন্য ধারাল ছুরি ও হত্যার পর মরদেহ লুকানোর জন্য দুটি প্লাস্টিকের বস্তা সংগ্রহ করে। গত ৭ নভেম্বর বিকালে কৌশলে চকলেট কিনে দেয়া ও বেড়াতে যাওয়ার কথা বলে চাঁপানগর রাস্তার মোড়ে সোহেল রানার সিএনজিতে করে দেবিদ্বার পুরান বাজারের দক্ষিণে নদীরপাড়ে নির্জন স্থানে নিয়ে যায় ফাহিমাকে। সেখানে ছুরিকাঘাত ও শ্বাসরোধে ফাহিমাকে হত্যা করা হয়। হত্যার ফাহিমার মরদেহ প্লাস্টিকের বস্তায় ভরে সিএনজিতে করে ইমনের গরুর গোয়ালে ড্রামে লুকিয়ে রাখে। ৯ নভেম্বর রাতে সোহেল রানার সিএনজিতে করে আমির হোসেন, রবিউল, ইমন বস্তাবন্দি ফাহিমার মরদেহ কাচিসাইরে কালভার্টের নিচে ডোবায় ফেলে দেয়।
হত্যাকারীদের শনাক্ত করার বিষয়ে কমান্ডার মঈন বলেন, ‘শিশু ফাহিমাকে হত্যার পর গরুর খাবারের ২৫ কেজির একটি বস্তায় মরদেহ ভরে ডোবায় ফেলে দেয়া হয়েছিল। সেটিই প্রথম আমলে নেয় র‌্যাবের গোয়েন্দা বিভাগের সদস্যরা। বস্তার খোঁজে পার্শ্ববর্তী দুটি গরুর খামারে অভিযানে যাওয়া হয়। সেখানে ইমনের বাবার খামারে গিয়ে ২৫ কেজি গরুর খাবারের বস্তা দেখে র‌্যাব সদস্যরা। এরপর ইমনকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে হত্যার মূল রহস্য। একে একে গ্রেপ্তার করা হয় বাবা আমির হোসেনসহ অন্য আসামিদের।
তিনি আরো বলেন, গ্রেপ্তারের পর আমরা আমির হোসেনকে প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। তবে তার নিজ সন্তানকে হত্যা নিয়ে অনুশোচনা নেই। পরকীয়ায় আসক্ত হয়ে পড়েছিল আমির। কারণ লাইলি আক্তারকে বিয়ে করতে চেয়েছিলেন তিনি। তাদের চিন্তা ছিল ফাহিমাকে মেরে ফেললে পথ পরিষ্কার হয়ে যাবে। অনৈতিক সম্পর্ক কেউ জানবে না। পরে স্ত্রীকে খুন করে বা ডিভোর্স দিয়ে লাইলিকে নিয়ে সংসার শুরু করবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়