তিনজন গ্রেপ্তার : কৌশলে পানের ভেতর ইয়াবা পাচার

আগের সংবাদ

শূন্য থেকে মহাশূন্য জয় : ডিজিটাল বাংলাদেশ

পরের সংবাদ

১৫ বছর ধরে শিকলে বাঁধা হাফেজ আবদুল খালেক

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৬, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ১৬, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

আমান উল্যা আমান, ফরিদগঞ্জ (চাঁদপুর) থেকে : মৃত্যুর পর হাফেজ সন্তানের ইমামতিতে জানাজার নামাজ পড়ানো হবে। আবার হাফেজ হয়ে পবিত্র কুরআনের আলোয় নিজ পরিবারের পাশাপাশি এলাকাকে আলোকিত করবেন- এমন চিন্তায় সন্তানকে হাফেজ বানায় পরিবার। কিন্তু তাতে বাদ সেজেছেন সৃষ্টিকর্তা।
হাফেজ হওয়ার কয়েক মাসের মধ্যেই মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে শিকলে বাঁধা জীবন কাটাচ্ছেন সেই হাফেজ আবদুল খালেক। প্রায় ১৫ বছর ধরে শিকল বাঁধা অবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন তিনি।
হাফেজ আব্দুল খালেক (৩৫) চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার ৫নং গুপ্টি পূর্ব ইউনিয়নের ভোটাল গ্রামের মৃত আবদুল কুদ্দুসের ছেলে।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, মৃত্যুর পর হাফেজ সন্তানের ইমামতিতে জানাজার নামাজ পড়াবেন- এমন চিন্তায় ভোটাল গ্রামের আবদুল কুদ্দুসের ইচ্ছায় উপজেলার পাইকপাড়া উত্তর ইউনিয়নের জয়শ্রী রাহমানিয়া আরাবিয়া হাফিজিয়া মাদ্রাসায় হাফেজি পড়া শুরু করেন আব্দুল খালেক। পড়াশোনায় সে খুব মনোযোগী ছিলেন। কিন্তু হাফেজি পড়া শেষ করার পর কয়েক মাসের মধ্যে তিনি হঠাৎ করেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। হারিয়ে ফেলেন মানসিক ভারসাম্য। পরিবারের সামর্থ্য অনুযায়ী তাকে চিকিৎসা করানো হলেও বর্তমানে বসতঘরের সঙ্গে তাকে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে। আবুদল খালেকের মা শামছুন্নাহার জানান, মৃত্যুর পর হাফেজ সন্তানের ইমামতিতে জানাজার নামাজ পড়ানো হবে। আবার হাফেজ হয়ে পবিত্র কুরআনের আলোয় নিজ পরিবারের পাশাপাশি এলাকাকে আলোকিত করবে- এমন চিন্তায় ছেলে আব্দুল খালেককে হাফেজি পড়তে দেন তার বাবা। কিন্তু হাফেজ হলেও সে গত ১৫ বছর ধরে মানসিক রোগে আক্রান্ত। বিভিন্ন সময় ঘরের আসবাবপত্র ভেঙে ফেলে। বিভিন্ন সময় এদিক-সেদিক চলে যায়। পরিবারের পক্ষে সারাক্ষণ তাকে দেখে রাখা সম্ভব হচ্ছিল না। এজন্য তাকে ঘরে বেঁধে রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
তিনি বলেন, রাতে ছেলের পায়ে শিকল বাঁধা অবস্থায় ঘরে ঘুমানোর ব্যবস্থা করি। কিন্তু ছেলের এমন অবস্থায় মা হয়ে আমি নিজেও সারা রাত ঘুমাতে পারি না। কারণ কখন সে কী করে বসে এই দুশ্চিন্তায় থাকতে হয়। আমি গরিব মানুষ। আমার স্বামী শ্রমিকের কাজ করতেন। ছেলে অসুস্থ হওয়ার পর সম্পত্তি বিক্রি করেও তার চিকিৎসা করা হয়েছে। তার বাবাও কয়েক বছর আগে মারা যান। বর্তমানে ঠিকমতো সংসার চালানো আমাদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। ছেলের চিকিৎসা করব কীভাবে? এ সময় কান্নাজড়িত কণ্ঠে মা শামসুন নাহার ছেলের চিকিৎসায় বিত্তবানদের সহযোগিতা কামনা করেন।
জয়শ্রী রাহমানিয়া আরাবিয়া হাফেজিয়া মাদ্রাসার মুহতামিম হাফেজ মহসিন মিয়া জানান, আবদুল খালেক খুব মেধাবী ছাত্র ছিল। বর্তমানে সে শিকল বাঁধা অবস্থায় আছে।
বিষয়টি অনেক দুঃখজনক। তার চিকিৎসায় সরকার ও সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসা প্রয়োজন।
গুপ্টি পূর্ব ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুল গনি বাবুল পাটওয়ারী বলেন, বিষয়টি আমি অবগত ছিলাম না। আপনার মাধ্যমে জানতে পেরেছি।
তবে মানসিক ভারসাম্যহীন আবুদল খালেকের চিকিৎসায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার চেষ্টা করব।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়