তিনজন গ্রেপ্তার : কৌশলে পানের ভেতর ইয়াবা পাচার

আগের সংবাদ

শূন্য থেকে মহাশূন্য জয় : ডিজিটাল বাংলাদেশ

পরের সংবাদ

মডেল তিন্নি হত্যা মামলায় নতুন মোড় : রায় ঘোষণার দিন আদালতে হাজির ‘নিখোঁজ’ বাবা-চাচা

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৬, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ১৬, ২০২১ , ১২:৪১ পূর্বাহ্ণ

রকি আহমেদ : ২০০২ সালের ১০ নভেম্বর রাতে কেরানীগঞ্জের বুড়িগঙ্গা নদীর ১ নম্বর চীন-মৈত্রী সেতুর ১১ নম্বর পিলারের পাশে এক সুন্দরী তরুণীর লাশ পাওয়া যায়। পরে ওই লাশের ছবি পত্রিকায় ছাপা হলে সে সময়ের আলোচিত মডেল সৈয়দা তানিয়া মাহবুব তিন্নির বাবা নিশ্চিত করেন এটি তার মেয়ের লাশ। এরপর দেশজুড়ে আলোড়ন তৈরি হয়, এ ঘটনায় দায়ের করা মামলাটিও ‘চাঞ্চল্যকর’ তকমা পায়। কিন্তু দীর্ঘ ১৯ বছর ধরে বিচারকাজ চলা ওই মামলার কোনো খোঁজই জানে না তিন্নির পরিবার! জানবে কিভাবে? মামলার পরই তো প্রাণভয়ে আত্মগোপনে যেতে হয়েছিল তিন্নির বাবা ও চাচাকে। কারণ মামলাটির একমাত্র আসামি ছিলেন জাতীয় পার্টির বরিশাল-২ আসনের তৎকালীন সাংসদ ও সাবেক ছাত্রনেতা গোলাম ফারুক অভি।
মামলা দায়েরের পর থেকে ১০-১২ বছরের বেশি সময় পালিয়ে ছিলেন তিন্নির বাবা সৈয়দ মাহবুব করিম ও চাচা সৈয়দ রেজাউল করিম। গতকাল সোমবার তিন্নি হত্যা মামলার রায় ঘোষণার দিন ধার্য থাকলেও আগে থেকে কিছুই জানতেন না তারা। সকালে পত্রিকা দেখে এ বিষয়ে জানতে পারেন এবং পত্রিকা হাতেই আদালতে হাজির হন সত্তরোর্ধ্ব দুই ভাই। কিন্তু দীর্ঘদিন যোগাযোগ করেও খোঁজ না পাওয়ার পর রাষ্ট্রপক্ষ তাদের আদালতে দেখে তিন্নির বাবার অসমাপ্ত সাক্ষ্য সম্পূর্ণ করতে ও চাচার সাক্ষ্য দিতে বলেন। এরপর তারা সাক্ষ্য প্রদানের আবেদন করলে ঢাকার সপ্তম অতিরিক্ত জেলা জজ কেশব রায় চৌধুরী বলেন, এর
আগে বিভিন্ন সময় আপনাদের যে নোটিস করা হয়েছে,

সেগুলো পাননি? উত্তরে তারা বলেন, না। আমরা বিচারকাজ সম্পর্কে কিছুই জানি না। পত্রিকা দেখে মেয়ের রায় শুনতে আসলাম। এসময় বিচারক এ মাসের মধ্যে সাক্ষ্য দিতে পারবেন কিনা জানতে চাইলে তারা আরো সময় চান। এরপর তাদের আবেদনটি গ্রহণ করে রায় পিছিয়ে আগামী ৫ জানুয়ারি তাদের সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য দিন ধার্য করেন বিচারক।
শুনানি শেষে তিন্নির বাবা মাহবুব করিম ভোরের কাগজকে বলেন, মামলার পর ২০০৩ সাল থেকে তৎকালীন সরকার থেকে আমাদের আনেক চাপ দেয়া হয়। তাই আমরা আত্মগোপনে চলে যাই। পরে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এলে চাপ কেটে যায়। বছরের পর বছর ধরে চলা মামলা কখন কি হয়েছে তা জানতে পারিনি। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে মামলাটি চালিয়েছে। পত্রিকা দেখে আমরা জানতে পারি, আজ মেয়ের মামলার রায় হবে। এসময় তিনি কেঁদে বলেন, আমার আদুরে মেয়েটি চলে গেছে। এখন আর পাব না। এই বৃদ্ধ বয়সে মেয়ের হত্যাকারীর সাজা দেখে যেতে পারলে শান্তি পাব।
তিন্নির চাচা বলেন, আমিই ছোটবেলা থেকে তিন্নিকে লালনপালন করেছি। আমাকে সে বাবা বলে ডাকত। হত্যার পর পত্রিকায় যদি তার ছবি ছাপা না হতো তাহলে আমাদের মেয়ের কোনো খবরই পেতাম না। এবারো যদি পত্রিকায় খবর না দেখতাম তাহলে রায়ের বিষয়ে জানতে পারতাম না।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ভোলানাথ দত্ত বলেন, এই মামলার যেহেতু সাক্ষী আছে। সাক্ষী থাকা অবস্থায় তার সাক্ষ্য গ্রহণ না করে মামলার রায় দেয়ার আইন নেই। তাই দীর্ঘদিন পর তিন্নির বাবা-চাচা আদালতে হাজির হওয়ায় তাদের সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য আমরা আদালতে আবেদন করি। বিচারক তা মঞ্জুর করেছেন। তবে খুব শিগগিরই সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ করার তাগিদ দিয়েছেন আদালত।
মামলা সূত্রে জানা যায়, লাশ পাওয়ার পরদিন অজ্ঞাতদের আসামি করে প্রথম মামলা করেন কেরানীগঞ্জ থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মো. সফি উদ্দিন। পরে তিন্নির বিষয়ে জানাজানি হলে সেই বছরের ২৪ নভেম্বর তদন্তভার সিআইডিতে ন্যস্ত হয়। এরপর তদন্ত কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক ২০০৮ সালের ৮ নভেম্বর সাবেক ছাত্রনেতা ও সাংসদ গোলাম ফারুক অভিকে একমাত্র আসামি করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। মামলার শুরু থেকেই তিনি পলাতক আছেন (সম্ভবত কানাডার স্থায়ী বাসিন্দা হয়ে গেছেন)। ২০১০ সালের ১৪ জুলাই ঢাকার সপ্তম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত তিন্নি হত্যা মামলায় আসামি অভির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন। এরপর মামলার ৪১ জন সাক্ষীর মধ্যে ১৮ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়। এই মামলায় ২২টি আলামত জব্দ করা হয়েছে। এরপর মামলাটির রায় ঘোষণার জন্য গত ২৬ অক্টোবর দিন ধার্য করা হয়। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষ মামলাটি পুনরায় শুনানি করার জন্য আবেদন করলে বিচারক রায়ের জন্য গতকালের দিনটি ধার্য করেন।
জানা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র গোলাম ফারুক অভির উত্থান ঘটে সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের শাসনামলে। নব্বইয়ের গণআন্দোলন ঠেকাতে বিপুল অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে অভি ও তার ক্যাডার বাহিনীকে মাঠে নামায় স্বৈরশাসক এরশাদ। এরপর অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায় এবং চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্মে জড়িয়ে যায় অভি ও ক্যাডার বাহিনী। এরশাদ পতনের ১০ বছর পর ২০০১ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টির টিকিটে সাংসদও নির্বাচিত হন। তার আগে থেকেই মডেল তারকা তিন্নির সঙ্গে পরকীয়ায় জড়ান তিনি। ২০০২ সালের ৬ নভেম্বর তিন্নিকে তার স্বামী সাক্কাত হোসেন পিয়ালের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করাতে বাধ্য করেন অভি। তিন্নি তাকে তালাক দিলে ওই দিনই তার দেড় বছর বয়সি কন্যাসহ তাকে রাজধানীর বাড়ি থেকে বের করে দেন স্বামী পিয়াল। এরপর বিয়ে করার জন্য অভিকে চাপ দিতে থাকেন তিন্নি। একপর্যায়ে তিন্নি বিষয়টি সাংবাদিকদের কাছে ফাঁস করে দেয়ার হুমকি দেন। এরপর ১০ নভেম্বর রাতে মাথায় আঘাত করে তিন্নিকে হত্যা করে বুড়িগঙ্গার ১ নম্বর চীন-মৈত্রী সেতুর ওপর থেকে নদীতে ফেলে দেয়া হয় মরদেহ।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়