তিনজন গ্রেপ্তার : কৌশলে পানের ভেতর ইয়াবা পাচার

আগের সংবাদ

শূন্য থেকে মহাশূন্য জয় : ডিজিটাল বাংলাদেশ

পরের সংবাদ

ভাঙছে সিন্ডিকেট, খুলছে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার : কর্তৃত্ব ধরে রাখতে মরিয়া ১০ এজেন্সি

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৬, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ১৬, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : পাঁচ বছর পর ভাঙছে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারের রিক্রুটিং এজেন্সি সিন্ডিকেট। সবার জন্য উন্মুক্ত করে ফের চালু হচ্ছে কাক্সিক্ষত এ শ্রমবাজার। দ্রুত সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর হতে পারে। এজন্য দুই দেশের সংশ্লিষ্টদের মধ্যে একাধিক বৈঠক শেষে প্রক্রিয়া প্রায় চূড়ান্ত। ডিসেম্বর বা নতুন বছরের শুরুতে খুলতে পারে এই শ্রমবাজার। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) একাধিক কর্মকর্তা এমন তথ্য জানিয়েছেন। অবশ্য পুরনো সিন্ডিকেট তাদের কর্তৃত্ব ধরে রাখতে মরিয়া বলে জানা গেছে।
বিএমইটির তথ্যমতে, ২০১৮ সালে বাংলাদেশ থেকে ১ লাখ ৭৫ হাজার ৯২৭ জন, ২০১৯ সালে ৫৪৫ জন, ২০২০ সালে ১২৫ জন এবং চলতি বছর মাত্র ১৪ বাংলাদেশি মালয়েশিয়ায় কর্মী হিসেবে গেছেন। এখন পর্যন্ত দেশটিতে ১০ লাখ ৫৭ হাজার ২১৩ বাংলাদেশি কর্মী হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন।
বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খুলছে, এমন কথা কয়েক বছর ধরে শোনা গেলেও বাস্তবে কোনো অগ্রগতি হয়নি। সবকিছু চূড়ান্ত হওয়ার পরও নানা নাটকীয়তায় আটকে যায় মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার। কারণ হিসেবে বরাবরই সামনে আসছে রিক্রুটিং এজেন্সির ‘সিন্ডিকেট’ ইস্যু। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অনৈতিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হওয়ায় জট খুলছে না সবচেয়ে বড় এ শ্রমবাজারের। অবশ্য সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, দেশটিতে মানবসম্পদ পাঠাতে পারবে সব এজেন্সি। এখানে কোনো সিন্ডিকেট থাকবে না। সেই লক্ষ্যে কাজ চলছে। এ বিষয়ে মালয়েশিয়া সরকারের সঙ্গে শিগগিরই চূড়ান্ত চুক্তি করবে ঢাকা। চুক্তি হলে চলতি বছরের ডিসেম্বর অথবা আগামী বছরের শুরুর দিকে আবারো মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাতে পারবে বাংলাদেশ।
জানা গেছে, মালয়েশিয়ায় বিভিন্ন খাতে প্রায় আড়াই লাখের মতো কর্মীর চাহিদা রয়েছে। এ চাহিদা মেটাতে দেশটি কৃষিসহ বিভিন্ন খাতে বাংলাদেশ থেকে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক কর্মী নিতে চায়। এজন্য চুক্তি স্বাক্ষরের প্রক্রিয়াও দ্রুত শেষ করতে চায় ঢাকা।
প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা বলেছেন, অভিবাসীকর্মী-সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের প্রক্রিয়া প্রায় চূড়ান্ত। দ্রুত সময়ের মধ্যে এটি সম্পন্ন হবে। এবার আর সিন্ডিকেট নয়, ডাটাবেজ ভিত্তিতে কর্মী পাঠানো নিয়ে বাংলাদেশ মালয়েশিয়া সরকারের সঙ্গে চুক্তি করবে। এটি স্বাক্ষর হলেই কর্মী পাঠানো শুরু হবে। ডিসেম্বর না হলেও জানুয়ারির মধ্যে এটি চূড়ান্ত

হয়ে যাবে আশা করছেন তারা।
এ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (পূর্ব) মাশফি বিনতে শামস জানিয়েছেন, কয়েকদিন আগে বৈঠকে সবকিছু প্রায় চূড়ান্ত হয়ে আছে। বাংলাদেশ মিশন দ্রুত এমওইউ (সমঝোতা স্মারক) সই করতে চাচ্ছে। এটা হয়ে যাবে। এমওইউ সই হলে নতুন করে কর্মী পাঠানো যাবে।
তিনি বলেন, এমওইউ হলে একটা দলিল থাকল। এরপর পরবর্তী পদক্ষেপগুলো নেয়া যাবে। এমওইউ না হলেও লোক যাবে। কিন্তু একটা পেপার থাকলে, দলিল থাকলে ভালো। এক কথায়, আইনি একটা বাধ্যবাধকতা থাকল। কবে নাগাদ এ চুক্তি স্বাক্ষর হতে পারে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখনো তারিখ চূড়ান্ত হয়নি। তবে বাংলাদেশ মিশন খুব দ্রুত এটা করতে চাচ্ছে।
একাধিক রিক্রুটিং এজেন্সি মালিক জানিয়েছেন, মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খোলার চেষ্টা বারবার ব্যাহত করেছে ১০টি রিক্রুটিং এজেন্সি। তাদের তৈরি সিন্ডিকেটের অবৈধভাবে এ বাজার দখলের চেষ্টায় ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর থেকে এটি বন্ধ হয়ে যায়। ওই সময় প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক বিশেষ কমিটির বৈঠকে ১ সেপ্টেম্বর থেকে বাংলাদেশের শ্রমিক নিয়োগ বন্ধ করে দেয় দেশটি। বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নিয়োগ বন্ধের যুক্তি হিসেবে সে সময় মাহাথির উল্লেখ করেন, জনশক্তি রপ্তানিতে একতরফা সিন্ডিকেট ভেঙে দেয়া এবং লোক পাঠানোর খরচ কমাতে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে আলোচনা চলছে। এখন শুধু ১০টি এজেন্সি বাংলাদেশের লোকজনকে মালয়েশিয়ায় পাঠাতে পারে। এটি এক ধরনের একচেটিয়া প্রক্রিয়া।
একচেটিয়া এ নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়া ভেঙে দেয়া প্রসঙ্গে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা এ ব্যবসাকে বাংলাদেশের সব এজেন্টের জন্য খুলে দিতে চাই। এতে ব্যবসায় প্রতিযোগিতা বাড়বে এবং জনশক্তি রপ্তানির খরচ কমবে। পরে অবশ্য ঢাকার কূটনৈতিক তৎপরতায় দেশটি বাংলাদেশিদের জন্য শ্রমবাজার খোলার আশ্বাস দেয়। এ নিয়ে ঢাকা-কুয়ালালামপুরের মধ্যে বেশ কয়েকবার মন্ত্রী ও সচিব পর্যায়ে সফর বিনিময় এবং জয়েন্ট ওয়ার্কিং কমিটিও গঠন করা হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এ পথ আর খোলেনি।
জানা গেছে, ২০১৯ সালের শেষের দিকে বাংলাদেশিদের জন্য দেশটির শ্রমবাজার খুলে দেয়া নিয়ে আশার আলো দেখা দেয়। তবে দেশটির ক্ষমতার পালাবদলে সে আলো হঠাৎ নিভে যায়। এরপর করোনা ভাইরাসের কারণে ভাটা পড়ে শ্রমবাজার খোলার ইস্যুটি। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশিদের জন্য মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খোলার বিষয়টি আবার সামনে আসে। এ নিয়ে ঢাকা-কুয়ালালামপুরের মধ্যে ভার্চুয়াল বৈঠক হয়। এর মধ্যে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাতে পারবে সব এজেন্সি- বাংলাদেশ সরকার এ নীতিতে বহাল থাকলেও বাধা হয়ে দাঁড়ায় ওই সিন্ডিকেট। তারা ভেতরে ভেতরে মালয়েশিয়া সরকারকে এ বিষয়ে নমনীয় করে ফেলে। সিন্ডিকেটটি চাচ্ছে, মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর দায়িত্ব তাদের হাতেই থাকুক। তবে বাংলাদেশ সরকার কোনোভাবেই সিন্ডিকেটের হাতে এ দায়িত্ব তুলে দিতে চায় না।
এ বিষয়ে জনশক্তি ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিসের (বায়রা) সাবেক মহাসচিব শামীম আহমেদ চৌধুরী নোমান বলেন, করোনার কারণে দুই বছর ধরে নিজেদের শ্রমবাজার বন্ধ রেখেছে মালয়েশিয়া। আমাদের বন্ধ ২০১৮ সাল থেকে। করোনা পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে। চলতি মাস থেকে ওদের ফ্লাইট চালু হওয়ার কথা। আশা করি, এবার শ্রমবাজারটি খুলবে।
তিনি বলেন, ফ্লাইট চালু হলে পুরনোদের পাশাপাশি নতুনদের যাওয়ার বিষয়টিও সামনে আসবে। ডিসেম্বর অথবা জানুয়ারিতে একটা সিদ্ধান্ত হতে পারে। দেশটির (মালয়েশিয়া) সরকার জানিয়েছে, তাদের আড়াই লাখের মতো কর্মী এ মুহূর্তে প্রয়োজন। বাংলাদেশ থেকেই এসব কর্মী নেয়ার টার্গেট তাদের।
শামীম আহমেদ চৌধুরী নোমান বলেন, সব মার্কেট যেভাবে খোলা থাকে, মালয়েশিয়ারটাও সেভাবে থাকুক। এ মার্কেট কেন আলাদা হবে? অন্য সব দেশ যেভাবে লোক পাঠায়, আমাদের দেশ থেকেও সেভাবে যাবে। বাংলাদেশের জন্য কেন বিশেষ ব্যবস্থার প্রয়োজন হবে।
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাতে নতুন নিয়ম চালু হয়। ওই সময় দেশটিতে অভিবাসন শ্রমিক পাঠাতে বাংলাদেশের ১০টি এজেন্সিকে নির্ধারণ করে দেয়া হয়। এর আগে বাংলাদেশ থেকে যে কোনো রিক্রুটিং এজেন্সি মালয়েশিয়ায় লোক পাঠাতে পারত। নতুন ওই প্রক্রিয়ায় দেড় বছরে বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়া গেছেন ১ লাখ ৭৯ হাজার ৩৩০ কর্মী। জনপ্রতি ৩ লাখ টাকা ধরলে তাদের কাছ থেকে নেয়া হয়েছে ৫ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা। সরকারি হিসাবে খরচ হওয়ার কথা সর্বোচ্চ ৬৭৩ কোটি টাকা। এ হিসাবে সিন্ডিকেটটি ৪ হাজার ৭০০ কোটি টাকার মতো হাতিয়ে নেয় দেড় বছরে। ওই সিন্ডিকেটের সঙ্গে বাংলাদেশের ১০টি জনশক্তি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান (রিক্রুটিং এজেন্সি) এবং মালয়েশিয়ার একটি প্রতিষ্ঠান জড়িত। বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- ইউনিক ইস্টার্ন, ক্যারিয়ার ওভারসিজ, ক্যাথারসিস ইন্টারন্যাশনাল, এইচএসএমটি হিউম্যান রিসোর্স, সানজারি ইন্টারন্যাশনাল, রাব্বি ইন্টারন্যাশনাল, প্যাসেজ অ্যাসোসিয়েটস, আমিন ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস, প্রান্তিক ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরিজম ও আল ইসলাম ওভারসিজ।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়