তিনজন গ্রেপ্তার : কৌশলে পানের ভেতর ইয়াবা পাচার

আগের সংবাদ

শূন্য থেকে মহাশূন্য জয় : ডিজিটাল বাংলাদেশ

পরের সংবাদ

‘বিচারহীনতা’ এবং ‘ভণ্ডামি’

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৬, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ১৬, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

‘বিচারহীনতার সংস্কৃতি’ বলে একটা আহাজারি-কান্নাকাটি-ক্রোধ এবং বিবেকবাজির ভোজবাজি আমাদের দেশে চলছে। বেশি কথার প্রয়োজন নেই। যদি বলি, মানবজাতির ইতিহাস, বিচারহীনতার ইতিহাস, হাত তুলুন, কে কে আপত্তি করবেন! চলুন এখনো দুনিয়ার এক নম্বর সেয়ানা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যাই, ইউরোপ থেকে এসে মার্কিনি প্রান্তর দখলকারীরা কত কোটি আদিবাসী মার্কিনিদের রক্তে ইতিহাসের বর্বর-হিংস্র-জঘন্য গণতান্ত্রিক আল্পনা এঁকেছে। সেই আদিবাসী আমেরিকানদের অবশেষ সেদেশে কিংবা কানাডায় এখন কী অবস্থায় আছেন। হাসি পায় মার্কিনি শ্বেতাঙ্গদের সংবিধান, বিচারব্যবস্থা, গণ নামের ঘনতন্ত্র, বিবেকের ব্যাঙভাজি লম্ফ। দখলদারদের উত্তরসূরিদের দূতাবাসে গিয়ে যদি ওদের মুল্লুক তাল্লুকের একখান সামান্য ভিসা চাই, তখন আমার মাতামহ-পিতামহ-তাদের বাপের বাপের ঠিকুজি নিয়ে অবশেষে লা জবাব। একবার একটি সেমিনারের দাওয়াত পেয়ে আবেদন করেছিলাম, সেমিনার হয়ে যাবার তিন মাস পর বার্তা এলো, আপনি দূতাবাসে খোঁজ নিন! কোনোদিনই মার্কিন দেশে না যাবার প্রস্তুতি নিয়ে চিঠি লিখলাম ওদের, টাইম মেশিন দিয়ে উল্টা করে সেমিনারের দিনটি ফিরিয়ে দিন, তাহলে দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করি!
পৃথিবীতে ভয়ংকরতম এহেন গণহত্যা মার্কিন দেশেই নয়, অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডেও চলেছে। সেসব দেশেও ভিসা চাইলে যেন মিলেনিয়ামের জঘন্যতম অন্যায় করছি এমন ভাব দেখানো হয়।
আফ্রিকা থেকে কৃষ্ণাঙ্গদের কী অমানুষিকভাবে দাসে পরিণত করা হয়েছে, এখন ‘ফ্লয়েড’ হত্যাকাণ্ড চলছে এবং চলবে, সেসব তো জানা কথা। স্ক্যান্ডিনেভিয়ার জলদস্যু এবং ইউরোপের নানা উপনিবেশ আফ্রিকা-ভারতসহ নানা দেশে নানাবিধ সম্পদ কীভাবে লুট করেছে এসব অল্পস্বল্প সবারই জানা। জালিয়ানওয়ালাবাগসহ কত যে গণহত্যা। বঙ্গবন্ধু, আলেন্দে, প্যাট্রিস লুমুম্বাসহ কত মানবপ্রেমী মহানায়কদের বধ করা হয়েছে।
এই বিশ্ব লুটেরাদের দেশগুলো বছর বছর একটা ‘মানবাধিকার’ রিপোর্ট প্রকাশ করে আমাদের মতো দেশগুলোর মানবাধিকার ‘হালচাল’ তুলে ধরে। আর সঙ্গে সঙ্গে এদেশে… চিহ্নিত কিছু সুশীলমার্কা ‘শ্রীগাল’ বলে ওঠে, হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ, কেয়া হুয়া, ক্যায়সা হুয়া, ‘বিচারহীনতার সংস্কৃতি’ নেহি চলেগা, নেহি চলেগা।
ঠিক আছে, শুরু হোক বিচার। বঙ্গবন্ধু হত্যার এক নম্বর পাপিষ্ঠ হেনরি কিসিঞ্জারের বিচার শুরু হোক অন্তত তার জীবদ্দশায়। ওহে সুশীল ভণ্ড বাচক-বাচিকারা…? আদিবাসী কোটি কোটি আমেরিকানদের গণহত্যাকারীরা জীবিত নেই। বাংলাদেশে রোমহষর্ক গণহত্যা, ১৯৭১-এর প্রধানতম পান্ডাদের জীবিত একজন, হেনরি কিসিঞ্জারকে দিয়ে ‘বিচারহীনতার সংস্কৃতিকে’ জ্বলজ্বল সমুজ্জ্বল করে তুলুন। বিচারপূর্ণতা অতএব শুরু হোক। হে সুশীল মানবাধিকার সুধন্য-সুধন্যাবৃন্দ শুরু হোক, বাংলাদেশে নব সমারোহে বিচার। আওয়াজ তুলুন… পণ্ডিত-গবেষক-টাইকুন সম্পাদকবৃন্দ, সংশ্লিষ্ট দূতাবাসে সুধাময় নিবিষ্ট আলোচনায় বলুন না, বিচার হোক বিচার হোক, বিচার পাক পূর্ণতা, বিচারহীনতা দূরে যা, হেনরিকে হাতে-পায়ে শেকল বাইন্ধা কারাগারের মেঝেতে ফালাইয়া রাখ! পারবেন মেরুদণ্ডী ইংরেজি কচকচি সুশীল মহানেরা!
বিচার একপ্রকার হয়ে গেছে ইয়াহিয়া-ভুট্টোর। তা জেনারেল নিয়াজিসহ আরো কিছু বাকি আছে তো! ওদের বিচার শুরু হোক।
বিচার শুরু হোক মরণোত্তর মাও সেতুং-চৌ এন লাই ভাই বেরাদারদের। ওদের প্রেরিত বুলেটে আমরা হারিয়েছি বেতিয়ারার ৯ জনসহ লাখ লাখ বাঙালিকে। পারবেন? বিচারহীনতার ভুবনে কান্দে পরাণ পাখি।
‘বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার হোক’- এই দাবি কজন তুলেছেন? চার জাতীয় নেতা হত্যার বিচার হোক- কজন চেয়েছেন? খালেদ মোশাররফ-কর্নেল রব-মেজর হায়দার হত্যার বিচার? জিয়া আমলে শত শত সৈন্য হত্যার ভয়ংকর বর্বরতার বিচার কোনোদিন হবে না? এমনকি স্বয়ং জিয়া হত্যার বিচারের দাবি তার দলবল পরিবার এখনো তুলছে না কেন হে সুশীল-ক্রিয়াশীল ক্ষমতা ধর-ধর মহানেরা? ক্ষমতায় এসেই এরশাদশাহী যে কজন সামরিক কর্মকর্তাকে তড়িঘড়ি হত্যা করল, তাও প্রশ্নবিহীন থাকবে? ওসব সুশীলবর্গ মানুষ বধ-মানবাধিকার মহানেরা কত যে পণ্ডিতি গণতন্ত্রের কথা বলেন, কই হংকংয়ের গণতন্ত্রের পক্ষে একটি কথা বলেছেন কখনো। গণচীনের ‘মেগা প্রজেক্ট-মেগা দুর্নীতি-গণতন্ত্রহীনতা’ নিয়ে ঠাকুরগাঁওয়ের মীর্জা জনাব কিছু বলবেন কী? নাকি গোপনে দূতাবাস সন্দর্শনে গিয়ে চৈনিক পদসৌন্দর্য অবলোকন করবেন! আমাদের বাম লেবাসধারী অনেকের ওই মীর্জা মার্কা ভণ্ডামি শিল্পকলা দেখে জগতের ক্ষুধার্ত বান্দরগুলো আনন্দে টগবগ।
আসল কথা একাত্তর আজো চলছে। বাংলাদেশ ধ্বংস করার পাকি শয়তানী চলছেই। অতএব এমনতরো যুদ্ধে আমরা স্বাভাবিক গণতন্ত্র চাইলেই পাব না। ওরা ক্ষমতায় এলে ২১সহ নানা আগস্টের খেলা চালাবেই। ‘পালাবার পথ পাবে না’ বলে তো ‘গণতান্ত্রিক হুমকি-ধমকি’ চলছেই। একাত্তরপন্থিরা ক্ষমতায় এলে পাকিওয়ালাদের দমিয়ে রাখতে নানা প্রকার ছল এবং বল চালাবেই। কেননা যুদ্ধ চলমান। মাঠে আলবদর-রাজাকার। তাদের পাশে বিরোধী অধিরাজ। বিচারহীনতার অনেক কিছুই তাই চাইলেও দূর করা যায় না। এবার বিচারহীনতার আরেক পর্বের কথা বলি। স্বাধীন বিধ্বস্ত নিয়মশৃঙ্খলা নড়েবড়ো দেশে একটি সংবিধানসম্মত বৈধ সরকারকে উৎখাত করতে অস্ত্র হাতে নিয়েছিল কারা? কোথায় তাদের অস্ত্র? সেইসব গণবাহিনী আর বিভিন্ন প্রকার বাহিনী কি রাষ্ট্রীয় ক্ষমা পেয়েছে? তারা যাদের হত্যা করেছে, সেই অপরাধ কে মুছবে? ১৯৭৫-এর নভেম্বরের সেনাকর্তা হত্যাকারী গণবাহিনী মার্কারা বিচারহীনতার ছুরিতে মাখন জেলি নাশতা সারছে পরমানন্দে। সেই সব অস্ত্রধারী বাহিনীর অনেকেই বেঁচে আছে। অনেকেই তৎপর। বঙ্গবন্ধুর বৈধ সরকারের বিরুদ্ধে অস্ত্রযুদ্ধ চালাবার হাজার জন, এমনকি শাসকদলে, মন্ত্রিসভায়ও ছিল এবং আছে।
বিচার হোক। বিচারহীনতা দূর হোক। অবৈধ অস্ত্র, অবৈধ শাস্তি, অবৈধ হত্যাকাণ্ড ইত্যাদির সঙ্গে যুক্ত সবাইকে তালিকাবদ্ধ করে দেশে ভণ্ডামি নয়, প্রকৃত বিচারের পরিবেশ তৈরি করা হোক।
আমরা একাত্তরপন্থিরা দেশে সর্বপ্রকার ন্যায়বিচার চাই। একাত্তর বিরোধীদের পরাভূত করে প্রকৃত সাম্য, শান্তি, অসাম্প্রদায়িক এবং সুবিচারের স্বদেশ চাই। ছদ্ম একাত্তরপন্থিদের ঝাড়াই-বাছাই চাই। চেঁচিয়ে বলতে চাই, দেশে বিরাজমান সর্বপ্রকার ভণ্ডামি, তুই চিরতরে দূর হ!

হিলাল ফয়েজী : মুক্তিযোদ্ধা ও রম্যলেখক।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়