তিনজন গ্রেপ্তার : কৌশলে পানের ভেতর ইয়াবা পাচার

আগের সংবাদ

শূন্য থেকে মহাশূন্য জয় : ডিজিটাল বাংলাদেশ

পরের সংবাদ

নিত্যপণ্যের বাজারে আগুন : লোক দেখানো অভিযান, সুফল পাচ্ছেন না ভোক্তা

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৬, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ১৬, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মরিয়ম সেঁজুতি : দুই ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে মোহাম্মদপুরের ভাঙা মসজিদ এলাকায় থাকেন গাড়িচালক মো. হেলাল উদ্দিন। টিসিবির ট্রাক থেকে তিনি দুই লিটার তেল এবং দুই কেজি করে চিনি ও ডাল কেনেন। এতে তার ব্যয় হয় ৪৫০ টাকা। তেল ও ডালের দাম বাড়ানোর কারণে তাকে বেশি দিতে হয় ৩০ টাকা। হেলাল উদ্দিন বলেন, টিসিবি দাম বাড়িয়েছে, পণ্যের পরিমাণও কমিয়েছে। তিনি আরো বলেন, দুই বছরে বেতন ১ টাকাও বাড়েনি। কিন্তু সব কিছুর দাম বেড়েছে। এ সময় জীবন চালানো যেন দায় হয়েছে বলেও আক্ষেপ করেন তিনি।
করোনার ধাক্কায় অধিকাংশ মানুষের আয় কমেছে। তবে বাজারে হু হু করে বাড়ছে সব ধরনের পণ্যের দাম। খাদ্যপণ্যের মধ্যে চাল-ডাল থেকে শুরু করে তেল, পেঁয়াজ, আদা-রসুন, মাছ-মাংস, শাকসবজি এমনকি অন্যান্য নিত্যব্যবহার্য সামগ্রীরও দাম বেড়েছে। বাজার তদারকিতেও এক ধরনের গাছাড়াভাব লক্ষণীয়। লোক দেখানো অভিযান পরিচালনায় ভোক্তা কোনো সুফল পাচ্ছেন না, বরং সাধারণ জনগণের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হচ্ছে। বাজারে নিত্যপণ্য কিনতে এসে সব শ্রেণির মানুষের মাথায় হাত পড়েছে। সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে নি¤œবিত্ত ও মধ্যবিত্ত আয়ের পরিবার।
এ অবস্থায় সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) বিক্রয় কেন্দ্রে দিন দিন সাধারণ মানুষের ভিড় বাড়ছে। বাজারদরের তুলনায় কম মূল্যে পণ্য পাওয়ার আশায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে পণ্য কিনছেন ক্রেতারা। তবে এখানেও হানা দিয়েছে বাড়তি দাম। এছাড়া অল্প কিছু মানুষই চাহিদামতো টিসিবির পণ্য পাচ্ছেন। পণ্যস্বল্পতার কারণে বেশির ভাগ ক্রেতাকে মন খারাপ করে চলে যেতে হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে টিসিবির ডিলাররাও এক প্রকার অপারগতা প্রকাশ করছেন। গুদাম থেকে যে পরিমাণ পণ্য সরবরাহ করার জন্য ছাড় করা হচ্ছে, তা স্পটে এলেই ১ ঘণ্টার মধ্যে বিক্রি শেষ হয়ে যাচ্ছে।
দাম বাড়ানো প্রসঙ্গে টিসিবির মুখপাত্র হুমায়ুন কবির বলেন, বাজারের তুলনায় টিসিবির পণ্যের দাম অনেক কম থাকায় তেল ও ডালের দাম সমন্বয় করা হয়েছে। কারণ খুব বেশি পার্থক্য থাকায় কালোবাজারি হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। তিনি বলেন, আগামী ২৮ নভেম্বর পর্যন্ত আমরা দেশব্যাপী টিসিবির পণ্য বিক্রি কার্যক্রম চালিয়ে যাব।
এদিকে গত ৩ নভেম্বর থেকে আবার ন্যায্যমূল্যে বোতলজাত সয়াবিন তেল, চিনি ও মসুর ডাল বিক্রি শুরু করেছে টিসিবি। একজন ক্রেতা টিসিবির ট্রাক থেকে প্রতি লিটার ১১০ টাকা করে সর্বোচ্চ দুই লিটার সয়াবিন তেল, ৫৫ টাকা কেজি দরে দুই কেজি চিনি এবং ৬০ টাকা দরে দুই কেজি ডাল কিনতে পারেন। এ ছাড়া পেঁয়াজ কিনতে পারছেন দুই থেকে পাঁচ কেজি পর্যন্ত। প্রতি কেজির দাম ৩০ টাকা। টিসিবির তথ্যমতে, মহানগর, জেলা ও উপজেলায় ৪০০ থেকে ৪৫০টি ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে এই বিক্রি কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। প্রতি শুক্রবার ছাড়া তা চলবে আগামী ২৮ নভেম্বর পর্যন্ত। প্রতিটি ট্রাকে দিনে ৭০০ লিটার সয়াবিন তেল ও ৪০০ কেজি করে চিনি, ডাল ও পেঁয়াজ বিক্রি করা হচ্ছে।
এদিকে প্রতিদিন বাড়তে থাকা নিত্যপণ্যের দামে নাকাল নি¤œ ও মধ্যবিত্তরা। টিসিবির দৈনিক দ্রব্যমূল্য তালিকা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, গত বছর ঠিক একই সময়ের চেয়ে দেশে প্রায় সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে দেশি আদার দাম। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৬৯ দশমিক ২৩ শতাংশ বেড়েছে। গত বছর এ পণ্যটির দাম ছিল ৬০ থেকে ৭০ টাকায়। টিসিবির পণ্যতালিকায় গতকাল সোমবার এ পণ্যটির দাম ছিল ৮০-১৪০ টাকা। এছাড়া রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতি লিটার ভোজ্যতেলের দাম সর্বোচ্চ ৪৪ দশমিক ৬৭ শতাংশ বেড়েছে। প্রতি কেজি ডালে ১৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ, চাল ৮ দশমিক ৬২ শতাংশ, ময়দা ২৫ দশমিক ৭৬ শতাংশ, রসুন ৪৫ দশমিক ৪৫ শতাংশ, আদা ৬৯ দশমিক ২৩ শতাংশ, হলুদ ১৩ শতাংশ, ব্রয়লার মুরগি ২১ দশমিক ৫৭ শতাংশ, শিশু খাদ্যের মধ্যে গুঁড়ো দুধ ১২ শতাংশ, চিনি ২৪ শতাংশ ও লবণে ৮ দশমিক ৩৩ শতাংশ দাম বেড়েছে।
এ ব্যাপারে বাজার বিশ্লেষক কনজ্যুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, মূলত বেশ কয়েকটি কারণে দেশের বাজারে অসহনীয় হয়েছে নিত্যপণ্যের দাম। বিশ্ববাজারে দাম বেড়েছে। পাশাপাশি ডলারের দাম বাড়তি। পণ্য আমদানিতে বেশি টাকা খরচ হচ্ছে। আমদানি পণ্য দেশে আনতে পরিবহন খরচ বেড়েছে। মনে হচ্ছে জনসংখ্যার তুলনায় চাহিদা, উৎপাদন ও আমদানিতে গরমিল আছে।
তিনি বলেন, দেশে অসাধু ব্যবসায়ীদের তৎপরতাও আছে। তারা কোনো সুযোগ পেলেই অতি মুনাফা করতে মরিয়া হয়ে ওঠে। বিশ্ববাজারে কোনো পণ্যের দাম বাড়লেই তারা সঙ্গে সঙ্গে অভ্যন্তরীণ বাজারে দাম সমন্বয় করে ফেলে। অথচ তা করার কথা বেশি দরে কেনা পণ্য দেশের বাজারে এলে। সিন্ডিকেট করে বাজারে পণ্য সরবরাহ কমিয়ে দাম বাড়ানো হচ্ছে। দাম নিয়ন্ত্রণে কাজ করা সংস্থাগুলো সঠিকভাবে কাজ করছে না। লোক দেখানো অভিযান ও সরকারি কোষাগারে জরিমানার টাকা দেয়া ছাড়া কোনো ধরনের ভোক্তার স্বার্থে কাজ করছে না।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়