তিনজন গ্রেপ্তার : কৌশলে পানের ভেতর ইয়াবা পাচার

আগের সংবাদ

শূন্য থেকে মহাশূন্য জয় : ডিজিটাল বাংলাদেশ

পরের সংবাদ

তরুণদের জঙ্গিবাদে ভেড়ানো ছিল ত্রিরতœপ্রধানের টার্গেট : উত্তরা থেকে র‌্যাবের অভিযানে গ্রেপ্তার দুই রতœ

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৬, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ১৬, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : ২০১৬ সালে এসএসসি পাস করে রাজধানীর অক্সফোর্ড ইন্টারন্যাশনাল কলেজে ভর্তি হয়ে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হন হাসিবুর রহমান ওরফে আযযাম আল গালিব (২১)। এরপর নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলাম ও আল কায়েদার আদর্শ ও মতবাদ প্রচারকারী দুইটি ফেসবুক আইডির সঙ্গে যুক্ত হন তিনি। একপর্যায়ে বিভিন্ন বই ও অনলাইনের বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে উগ্রবাদী লেখা পড়ে নিজেই ফেসবুক আইডি খুলে উগ্রবাদী লেখালেখি শুরু করেন। অল্প সময়ে উগ্রবাদী লেখালেখিতে নিজেকে বিশেষজ্ঞ পর্যায়ে নিয়ে যান গালিব।
পরে তার বানানো কন্টেন্টই অনলাইনে প্রচার শুরু করে সংগঠনের আরো দুই শীর্ষ নেতা। এই ৩ জন অনলাইনের প্রচার প্রচারণায় মুখ্য ভূমিকা রাখায় গালিব বনে যান কথিত ত্রিরতœপ্রধান। তার টার্গেট ছিল, অনলাইনে উগ্রবাদী মতবাদ প্রচার করে তরুণদের জঙ্গিবাদে ভেড়ানো।
সম্প্রতি ত্রিরতেœর দুই সদস্য ‘জায়েদ ইবনে আলী’ ও ‘শাফায়েত মুসান্না ইসা’ আইডি পরিচালনাকারী আল আমিন সিদ্দিকী এবং নারী জঙ্গি জোবায়দা সিদ্দিকা নাবিলা গ্রেপ্তারের পর গালিবকেও গ্রেপ্তার করেছে ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট। গত রবিবার রাজধানীর উত্তরা পূর্ব থানা এলাকা থেকে গালিবকে গ্রেপ্তার করা হয়। সিটিটিসি বলছে, গালিব গ্রেপ্তারের ফলে অনলাইনে ৮০ শতাংশ উগ্রবাদী প্রচার প্রচারণা কমে যাবে। জানা গেছে, গালিবের গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালীর মহিপুর এলাকায়। বাবার নাম হাবিবুর রহমান। বর্তমানে তিনি রাজধানীর মানারাত বিশ্ববিদ্যালয়ের এলএলবির (আইন) শিক্ষার্থী।
গতকাল সোমবার দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সিটিটিসির প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, মেধাবী শিক্ষার্থী হাসিবুর রহমান নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের অনলাইন দাওয়াহ শাখার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। তবে, প্রথমে তিনি নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলাম ও আন্তর্জাতিক সহিংস উগ্রবাদী সংগঠন আল কায়েদার আদর্শ ও মতবাদ প্রচারকারী ফেসবুক আইডি জামিল হাসান ও জামশেদ হোসেইনের মঙ্গে যুক্ত হন। এই আইডি দুটিতে তালেবান ও আল কায়েদার বিভিন্ন লেখালেখি হতো। তাদের বিভিন্ন সংবাদ প্রচার করানো হতো। হাসিবুর রহমান তাদের লেখা ও মতাদর্শে আগ্রহী হয়।
তিনি বলেন, ‘২০১৯ সালের দিকে হাসিবুর রহমান আল কায়েদা ও আনসার আল ইসলামের মতাদর্শে বিশ্বাসী হয়ে নিজেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখালেখি শুরু করেন। এসব লেখালেখির জন্য তিনি ‘আযযাম আল গালিব’ নামে ফেসবুক আইডি খোলেন। এই নামে তিনি একটি টেলিগ্রাম চ্যানেল খুলে ফেসবুক ও টেলিগ্রামে আনসার আল ইসলাম ও আল কায়েদার সমর্থনে লেখালেখি শুরু করেন। পাশাপাশি ফেসবুকে মুয়াহিদ মুসলিম নামে আরো একটি পেজ ওপেন করেন। সেখানে তিনি দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করে সদস্য সংগ্রহ করতে থাকেন। উগ্র মতবাদ ছড়ানোর অভিযোগে তার পেজটি ফেসবুক কর্তৃপক্ষ বন্ধ করে দেয়।’
সিটিটিসিপ্রধান বলেন, সর্বশেষ তিনি আব্দুল্লাহ গালিব আযযাম নামে একটি ফেসবুক আইডি ব্যবহার করতেন। কারাগারে থাকা আনসার আল ইসলামের সদস্যদের জামিনের জন্য তিনি গোপনে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহেরও কাজ করতেন। হাসিবুর রহমানের সঙ্গে টেলিগ্রামে একই মতাদর্শ প্রচারকারী ‘জায়েদ ইবনে আলী’ ও ‘শাফায়েত মুসান্না ইসা’ নামে আইডি পরিচালনাকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ হয়। তারা একত্রে সংগঠনের প্রচার-প্রচারণা, সদস্য সংগ্রহ কার্যক্রম শুরু করেন। হাসিবুর রহমান ‘জায়েদ ইবনে আলী’ ও ‘শাফায়েত মুসান্না ইসার’ সঙ্গে আনসার আল ইসলামের মতাদর্শ প্রচারের তথাকথিত ‘ত্রিরতœ’র প্রধান হিসেবে অনলাইন র‌্যাডিক্যালাইজেশনের নেতৃত্ব দেন। তার কাছ থেকে জব্দকৃত মোবাইল পরীক্ষা করে প্রাথমিকভাবে ফেসবুক, ম্যাসেঞ্জার, টেলিগ্রাম অ্যাপসসহ বিভিন্ন উগ্রবাদী কন্টেন্ট পাওয়া গেছে।
এক প্রশ্নের জবাবে আসাদুজ্জামান বলেন, গ্রেপ্তারকৃত হাসিবুরের ফেসবুক আইডিতে জিহাদসহ সা¤প্রদায়িক স¤প্রীতি বিনষ্ট হয় এমন সব কন্টেন্ট ছিল, যার কারণে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ তার আইডিটি বন্ধ করে দেয়। এর আগেও গ্রেপ্তার হওয়া জঙ্গি সংগঠনের নেতাদের জামিনের চেষ্টা করেছেন হাসিব। বিভিন্ন জায়গা থেকে টাকা সংগ্রহ করে তিনি তাদের পরিবারকে সাহায্য করে জামিনের চেষ্টা চালিয়ে আসছিলেন।
হাসিবুরকে গ্রেপ্তারের পর আনসার আল ইসলামের দাওয়াহ শাখার নেতৃত্ব দেবেন কে? এ প্রসঙ্গে কোনো তথ্য পাওয়া সম্ভব হয়েছে কিনা? জানতে চাইলে আসাদুজ্জামান বলেন, গ্রেপ্তার হাসিবুর জঙ্গিবাদ বিষয়ে প্রচুর পড়াশোনা করে নিজেকে বিশেষজ্ঞ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। এ ধরনের বিশেষজ্ঞ আর কে কে রয়েছেন সে বিষয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়