‘শিশু বক্তা’ রফিকুল মাদানীর বিরুদ্ধে চার্জশিট

আগের সংবাদ

চমক থাকছে টাইগার স্কোয়াডে ; মিরপুরে পতাকা উড়িয়ে পাকিস্তানের অনুশীলন

পরের সংবাদ

‘সিটিং’-‘গেটলক’ সার্ভিস বন্ধে অভিযান

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৫, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ১৫, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : রাজধানীর গণপরিবহনে ‘সিটিং সার্ভিস’ ও ‘গেটলক সার্ভিস’ বন্ধে বিআরটিএর মোবাইল কোর্ট এবং ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি একযোগে মাঠে নেমেছে। মালিক সমিতির ভিজিল্যান্স টিমের সদস্যরা মোবাইল কোর্টের উপস্থিতিতে স্প্রে দিয়ে বাসের বডিতে লেখা ‘সিটিং সার্ভিস’ মুছে দিয়েছেন। তবে বিআরটিএ ও মালিক সমিতির এই উদ্যোগ কতটা কার্যকর হবে তা নিয়ে যাত্রীরা শঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
এদিকে নির্ধারিত তালিকার বাইরে যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত বাস ভাড়া আদায় প্রতিরোধে বিআরটিএর মোবাইল কোর্টের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। গতকাল রবিবার সকাল থেকে এ অভিযান শুরু হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিটিং সার্ভিস, গেটলক এবং ওয়েবিলের কোনো বৈধতা বিআরটিএর আইনে নেই। পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা বিআরটিএ ও সড়ক আইনের তোয়াক্কা না করে নিজেদের সুবিধামতো ভাড়া আদায়ের জন্য এ ধরনের সাইনবোর্ড লিখে যাত্রীদের কাছ থেকে প্রায় ডাবল ভাড়া আদায় করে আসছেন। অবৈধ ভাড়া আদায়ের ব্যাপারে আগে থেকেই এসব বন্ধে দাবি উঠলেও জোরালো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। ব্যাপক সমালোচনার পর ২০১৭ সালের এপ্রিল মাসে বেসরকারি সড়ক পরিবহন সংগঠনের পক্ষ থেকে ঢাকায় সিটিং সার্ভিস বাস চলাচল বন্ধের প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল। এরপর বিআরটিএ কিছুদিন অভিযান চালায়। কিন্তু কার্যত তা মুখ থুবড়ে পড়ায় আবার সিটিং সার্ভিস চলতে শুরু করে।
বিআরটিএ তখন সিটিং সার্ভিস সংক্রান্ত একটি কমিটি গঠন করে। ওই কমিটি ২৬টি সুপারিশসহ একই বছরের সেপ্টেম্বর মাসে একটি প্রতিবেদন জমা দেয়। সুপারিশের

মধ্যে প্রারম্ভিক ও শেষ স্টপেজের মধ্যে পুরো দূরত্বের ভাড়া আদায় করা যাবে না, সিটিং সার্ভিসের জন্য পৃথক ভাড়া নির্ধারণ করার মাধ্যমে সীমিত আকারে সিটিং সার্ভিস বাস রাখতে হবে। কিন্তু গত চার বছরে তা বাস্তবায়ন হয়নি বরং তা জনগণের ওপর বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। এই অবস্থার মধ্যেই গতকাল রবিবার থেকে সিটিং সার্ভিস বন্ধে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি আবারো তৎপরতা শুরু করে। গত বুধবার মালিক সমিতি সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা দেয়ার পরও সিটিং সার্ভিস বন্ধ হয়নি। গতকালও বিভিন্ন রুটে সিটিং সার্ভিস ও গেটলক সার্ভিস চলতে দেখা গেছে। সড়কে সবচেয়ে বেশি সচল দেখা গেছে ভিআইপি পরিবহনের বাস। প্রতিটি বাসের গায়ে সিটিং সার্ভিস লেখা ছিল। ভিআইপি পরিবহনের বেশ কিছু বাসকে জরিমানাও করে বিআরটিএর মোবাইল কোর্ট।
রাজধানীর কলাবাগান ক্লাবের সামনে গতকাল দুপুরে বিআরটিএর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফিরোজা পারভীনের নেতৃত্বে চলা মোবাইল কোর্ট ২১টি বাসের বিরুদ্ধে অভিযান চালায়। অনিয়মের প্রমাণ পাওয়ায় ৭টি বাসের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়েছে। ১টি বাসকে ডাম্পিংয়ে পাঠানো হয়েছে। অনিয়ম শনাক্তের ভিত্তিতে এসব বাসকে ৬ হাজার থেকে ৮ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা করা হয়েছে। বিআরটিএর মোবাইল কোর্টকে সহযোগিতার জন্য ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি খন্দকার এনায়েত উল্লাহসহ অন্য নেতাদের সমন্বয়ে ভিজিল্যান্স টিমকেও কাজ করতে দেখা যায়। পরিবহন মালিক সমিতির নেতারা রাস্তায় বাস থামিয়ে যাত্রীদের কাছ থেকে বেশি ভাড়া নেয়া হচ্ছে কিনা তা জানতে চান। তাদের সঙ্গে বিআরটিএর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফিরোজা পারভীনও ছিলেন। যেসব বাসের যাত্রীরা অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ করেন সেসব বাসকে জরিমানা করা হয়। বাসটি কী জ¦ালানিতে চলছে তাও খতিয়ে দেখে ডিজেলচালিত ও সিএনজিচালিত লেখা স্টিকার লাগিয়ে দেয় পরিবহন মালিক সমিতি। বাসের গায়ে সিটিং সার্ভিস, গেটলক লেখা থাকলেই স্প্রে দিয়ে সিটিং সার্ভিস লেখাটি মুছে দেয়া হয়। সিটিং সার্ভিস লেখা বাসের স্টিকার তুলে ফেলা হয়। সিটিং সার্ভিস লেখা থাকায় ভিআইপি পরিবহনের সবচেয়ে বেশি বাসকে জরিমানা করা হয়েছে। বেশি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেলেই মোবাইল কোর্ট ওই বাস থেকে ৬ থেকে ৮ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা করে।
ঢাকা-নবীনগর রুটের ঠিকানা পরিবহনের একটি বাসের ফিটনেস সনদ ঠিক না থাকা, রুট পারমিটের মেয়াদ শেষ হওয়া, বাসে ভাড়ার তালিকা না রাখা, ট্যাস্ক টোকেনের মেয়াদ শেষ হওয়ায় ডাম্পিংয়ে পাঠানোর নির্দেশ দেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফিরোজা পারভীন। বেশি ভাড়া নেয়া এবং বাসের ভেতরে ভাড়ার তালিকা না থাকায় মৌমিতা পরিবহনের একটি বাসকে ৮ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। নুসরাত জাহান তাজিন নামে এক কলেজছাত্রী জানান, সাইনবোর্ড থেকে শুক্রাবাদের ভাড়া ৪০ টাকা। বাসের লোকজন স্টুডেন্ট ভাড়া নিচ্ছে না, উপরন্তু ৫০ টাকা করে ভাড়া নিয়েছে। সাইনবোর্ড থেকে সাভার পর্যন্ত বিআরটিএ ৭০ টাকা ভাড়া নির্ধারণ করলেও বাসে নেয়া হচ্ছে ৮০ টাকা।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফিরোজা পারভীন জানান, মূলত যেসব বাস যাত্রীদের কাছ থেকে বিআরটিএ নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে জরিমানা আদায় করা হচ্ছে। এছাড়া রুট পারমিট, ডাবিং লাইসেন্স, গাড়ির ফিটনেস আছে কিনা তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। সিটিং সার্ভিস ও গেটলকের বিরুদ্ধেও আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি।
মোবাইল কোর্টের সহযোগিতার জন্য উপস্থিত থাকা ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বলেন, আমরা চাই সড়কের অনিয়ম দূর হোক। বাস মালিকরা যেন অতিরিক্ত ভাড়া আদায় না করে তা বন্ধে আমরা মালিকরাও গত ৫ দিন ধরে রাস্তায় নেমেছি। নিয়মে আনার জন্য কাজ করছি। সঠিক ভাড়া না নেয়া পর্যন্ত আমাদের অভিযান চলবে। দূরপাল্লার বাসে ভাড়া নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। ৬ হাজার বাস ঢাকায় চলে। এই বাসগুলোতে ভাড়া নিয়ে সমস্যা হচ্ছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়