‘শিশু বক্তা’ রফিকুল মাদানীর বিরুদ্ধে চার্জশিট

আগের সংবাদ

চমক থাকছে টাইগার স্কোয়াডে ; মিরপুরে পতাকা উড়িয়ে পাকিস্তানের অনুশীলন

পরের সংবাদ

সমুদ্র পর্যটনে রয়েছে অমিত সম্ভাবনা

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৫, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ১৫, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সমুদ্রের অসামান্য সৌন্দর্য, সাংস্কৃতিক সম্পদ ও পর্যটন সেবার বহুমুখিতা তার দিকে সারা পৃথিবীর মানুষকে টানে। আর প্রকৃতির সান্নিধ্য পেতে আমাদের কার না ভালো লাগে! সমুদ্র হলে তো সেখানে আর কথাই নেই। বলা হয়ে থাকে, পৃথিবী কতদিন টিকে থাকবে সে ধারণা পাওয়া যাবে সমুদ্রের দিকে তাকালে। তাই আমরা এখান থেকেই বুঝতে পারি সমুদ্রের গুরুত্ব আমাদের জীবনে ঠিক কতটা! আমাদের দেশ সমুদ্র নিকটবর্তী হওয়ায় সমুদ্র পর্যটনের রয়েছে বিপুল সম্ভাবনা। উন্নত রাষ্ট্রগুলো এই সমুদ্র পর্যটন খাতকে কাজে লাগিয়ে তাদের অর্থনীতির খাতকে করছে শক্তিশালী। জাতিসংঘের বিশ্ব পর্যটন সংস্থার এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ৪৮টি স্বল্পোন্নত দেশের মধ্যে ২০টিতেই পর্যটন হচ্ছে রপ্তানি আয়ের প্রধান বা দ্বিতীয় প্রধান উৎস। অনেক উন্নয়নশীল দেশে- বিশেষত ক্ষুদ্র দ্বীপ দেশগুলোতে মোট জাতীয় উৎপাদনের ২৫ শতাংশই পর্যটন থেকে আসছে। তাই টেকসই উন্নয়ন পরিকল্পনা (এসডিজি) বাস্তবায়নে পর্যটনের ভূমিকা বাড়াতে সামুদ্রিক পর্যটনে জোর দিতে হবে। সমুদ্র বিজয়ের পর থেকে এখন পর্যন্ত ১৯টি মন্ত্রণালয় সম্পৃক্ত হলেও সম্পদ আহরণের জন্য একটি স্বাধীন মন্ত্রণালয় গঠন করতে পারেনি গত ৯ বছরে, যা হতাশাজনকও বটে। আমরা বলি পর্যটনের যে বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে তা কাজে লাগাতে হবে এই নিয়ে আলোচনারও কমতি নেই। তবে তা শুধু আলোচনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়ে যাচ্ছে। এই সম্ভাবনাকে আর কাজে লাগানো হয়ে উঠছে না। বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প পিছিয়ে থাকার অন্যতম কারণ উদাসীনতা। এই উদাসীনতার অন্যতম কারণ হলো পর্যটনের উন্নতিকরণের সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তি মহোদয়গণ বলেন যে, সমুদ্র পর্যটনের সম্ভাবনা বিপুল যা বাস্তবিক অর্থেও সত্য। কিন্তু এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর উদ্যোগ সরকারি, বেসরকারি পর্যায়ে কেউই গ্রহণ করছে না। তার একটি অন্যতম উদাহরণ এবারের বাজেটে পর্যন্তও সমুদ্র অর্থনীতি নিয়ে আলদা বরাদ্দ রাখা হয়নি। ঠিক এভাবেই পর্যটন শিল্পের ক্ষেত্রগুলো বিকাশ না ঘটে ক্রমাগত পিছিয়ে পড়ছে। পর্যটন নিয়ে আমরা স্থলে যেমন ব্যর্থ হচ্ছি, সমুদ্রেও তার ব্যতিক্রম নয়। সমুদ্রকেন্দ্রিক পর্যটনের প্রডাক্টের অভাব নেই। তাই এই আকর্ষণগুলোকে পর্যটন পণ্যে রূপান্তর করার জন্য যেসব লজিস্টিক ও সাপোর্ট সার্ভিসের দরকার সেগুলোকেও তৈরি করতে হবে। আর এজন্য চাই সুষ্ঠু সম্পদ ব্যবস্থাপনা, যার মধ্যে থাকবে এসব পর্যটনসম্পদ চিহ্নিতকরণ, স্তরীকরণ, সংরক্ষণ এবং উন্নয়ন।
করোনা মহামারির কারণে পর্যটন শিল্পের একেবারেই বেহাল দশা। তার ওপর এই উদাসীনতা দূর করতে না পারলে আরো বিপাকে পড়বে আমাদের দেশের সম্ভাবনাময় এই শিল্প। তাই পর্যটন শিল্পকে কাজে লাগাতে হলে, অর্থনীতির চাকাকে সচল করতে সমুদ্র পর্যটন হতে পারে অন্যতম হাতিয়ার। সমুদ্র পর্যটনকে দুভাগে ভাগ করা হয়েছে:
ক. কোস্টাল ট্যুরিজম : সমুদ্র তীরকে কেন্দ্র করে বিশ্রাম ও বিনোদনভিত্তিক যে পর্যটন ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে তাকে কোস্টাল ট্যুরিজম বা সৈকত পর্যটন বলে। সূর্যস্নান, সমুদ্রের পানিতে বিনোদনমূলক গোসল, সৈকতে হাঁটা, ঘুড়ি উড়ানো, প্যারাগøাইডিং, সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত উপভোগ করা এই ট্যুরিজমের আওতাধীন। খ. মেরিটাইম ট্যুরিজম : সমুদ্রকে কেন্দ্র করে যে পর্যটন তাকে মেরিটাইম ট্যুরিজম বলে। সাঁতার, সার্ফিং, উইন্ডসার্ফিং, ডাইভিং, সি-বার্ড ওয়াচিং, জলযানে চড়ে সমুদ্র ভ্রমণ ইত্যাদি মেরিটাইম ট্যুরিজমের আওতাধীন।
আমাদের আন্তর্জাতিক ক্রুজ শিপ পর্যটনেও অনেক সম্ভাবনা আছে। এক্ষেত্রে আঞ্চলিক যোগাযোগ বাড়াতে কাজ করতে হবে। এছাড়া প্রয়োজনীয় অবকাঠামো তৈরি এবং ভিসা ব্যবস্থা সহজীকরণ প্রয়োজন। এজন্য দ্রুত ই-ভিসা চালু করা এখন সময়ের দাবি। এতে শুধু পর্যটন নয়, ব্যবসায়িক ভ্রমণও বাড়বে বাংলাদেশে। সমুদ্র পর্যটনের খাতকে বর্ধিত করতে চাইলে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে কিছু পদক্ষেপ নেয়া অবশ্যই জরুরি। অবকাঠামোগত উন্নয়ন করতে হবে, পরিষেবাভিত্তিক সেবার উন্নয়ন, সক্ষমতা ও সচেতনতা বৃদ্ধি করা, সমন্বয়, কৌশল ও পরিকল্পনার প্রয়োজন এবং আইটিভিত্তিক সেবা গড়ে তোলা যেমন ভিডিও তথ্যচিত্র, সামুদ্রিক ভার্চুয়াল ভ্রমণ যেটা বর্তমান সময়ে খুবই প্রচলিত।
বাংলাদেশের সমুদ্রভিত্তিক পর্যটন দ্বারা মাইলফলক সৃষ্টি করা সম্ভব এবং সময়োপযোগী ও সমন্বিত পদক্ষেপের মাধ্যমে একদিকে যেমন দেশের অর্থনীতির প্রসার হবে, অন্তর্ভুক্তিকরণ উন্নয়ন হবে অপরদিকে বাংলাদেশকে আমরা এক অনন্য মাত্রায় দাঁড় করাতে পারব। সরকার যত দ্রুত ও সহজভাবে এ পর্যটন খাতকে বাস্তবায়নে উপযোগী হবে তত দ্রুত প্রমাণিত হবে যে, সমুদ্র পর্যটন দিয়ে বাংলাদেশের ভাগ্য বদলানো সম্ভব।
রিম্পা খাতুন
শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়