‘শিশু বক্তা’ রফিকুল মাদানীর বিরুদ্ধে চার্জশিট

আগের সংবাদ

চমক থাকছে টাইগার স্কোয়াডে ; মিরপুরে পতাকা উড়িয়ে পাকিস্তানের অনুশীলন

পরের সংবাদ

রাজবাড়ীতে অসহায়দের ভাগ্যে জুটছে না মাতৃত্বকালীন ভাতা!

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৫, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ১৫, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

রাজবাড়ী প্রতিনিধি : অসহায় দরিদ্র প্রসূতি মায়েদের জন্য সরকার চালু করেছে মাতৃত্বকালীন ভাতা। তবে ২০২০-২১ অর্থবছরে রাজবাড়ীর সদর উপজেলায় মাতৃত্বকালীন ভাতা ভোগ করছেন বিত্তবানরা। নিয়ম না থাকলেও তৃতীয় সন্তানের মাও পাচ্ছেন এ ভাতা। অনুসন্ধানে দেখা গিয়েছে প্রসূতি না হয়েও ভাতা নিচ্ছেন। তবে কর্তৃপক্ষ বলছেন অভিযোগ পেলে বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন।
জানা যায়, সরকার দরিদ্র ও স্বামী কাজ করতে অক্ষম এমন মায়েদের জন্য মাতৃত্বকালীন ভাতা দিয়ে আসছে। প্রতিমাসে আটশ করে তিন বছরে মোট ২৮ হাজার ৮০০ টাকা দেয় সন্তান ও মায়ের পুষ্টিকর খাবারের জন্য। সদর উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নে ৫০ জন করে মোট ৭০০ জন ২০২০-২১ অর্থবছরে এই ভাতা ভোগ করছেন। এজন্য প্রত্যেক ভাতাভোগীকে ব্যাংকে একটি হিসাব খুলতে হয়। সেই হিসাবে প্রতিমাসে টাকা দিয়ে থাকে সরকার।
সদর উপজেলার পাঁচুরিয়া ইউনিয়নে গিয়ে দেখা যায় ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেনের ছোট ভাই কাজী আলীমের স্ত্রী শিলা পারভীন মাতৃত্বকালীন ভাতা পাচ্ছেন। চেয়ারম্যানের ছোট ভাই কাজী আলীম আর্থিকভাবে যথেষ্ট সচ্ছল। এ বিষয়ে শিলা পারভীন বলেন, চেয়ারম্যানের ভায়ের স্ত্রী ভাতা পাবে না এমন কোনো আইন তো নেই। আইন অনুযায়ী আমি ভাতা পাচ্ছি।
চেয়ারম্যানের বাড়ির পাশেই পাঁচুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৬নং ওয়ার্ডের মেম্বর ইলিয়াস হোসেনের বাড়ি। তালিকায় তার স্ত্রী ফারজানা বেগমের নামও রয়েছে। ফারজানা বেগম বলেন, তার স্বামী মেম্বার হলেও তারা ধনী নন। তাই ভাতা নিতে সমস্যা নেই। তবে এ বিষয়ে মেম্বার ইলিয়াস হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো কথা বলতে রাজি হননি। পাঁচুরিয়া ইউনিয়নের কমপক্ষে ১০ জন ভাতাভোগীর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় সবাই আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী। কিন্তু স্থানীয় রাজনীতি ও চেয়ারম্যানের কাছের লোকজন এ ভাতা ভোগ করছেন।
পাঁচুরিয়া ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের কোনাইল গ্রামের শামীম মল্লিকের স্ত্রী রাজিয়া খাতুন ভাতা পাচ্ছেন। তার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় একতলা বাড়ি। স্থানীয় বাজারে শামীম মল্লিকের কাপড়ের দোকান। তবে শামীম মল্লিক আর রাজিয়া দম্পতির একটা মাত্র ছেলে সন্তান। সন্তানের বয়স আট বছর। এমন অবস্থায় মাতৃত্বকালীন ভাতা কীভাবে নিচ্ছেন প্রশ্ন করলে রাজিয়া খাতুন কোনো কথা বলে না।
তবে উল্টো চিত্র দেখা যায়, পাঁচুরিয়া ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডে খোলাবাড়িয়া উত্তর ঋষিপড়া গ্রামে। এই গ্রামে ঋষি (মুচি) সম্প্রদায়ের অর্ধশতাধিক পরিবারের বসবাস। দরিদ্র এ পরিবারের প্রসূতি মায়েরা মাতৃত্বকালীন ভাতার আবেদন করেও পান না। অনেকে অভিযোগ করে বলেন, চেয়ারম্যানের লোকজন টাকা নিয়েও তাদের কার্ড দেয়নি।
পাঁচুরিয়া ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডেই খোলাবাড়িয়া উত্তর ঋষিপাড়া গ্রামের শান্ত কুমার দাস বলেন, আমরা খুবই গরিব মানুষ। বেতের কাজ করে খাই। আমার স্ত্রীও অসুস্থ। সারা বছর ঠাণ্ডার সমস্যা লেগেই থাকে। ছোট সন্তানও অসুস্থ। এই মাতৃত্বকালীন ভাতা পেলে অনেক উপকার হয়। কিন্তু আমরা আবেদন করেছিলাম। এখন শুনি যারা বড় লোক তারাই পায়।
একই গ্রামের গৃহবধূ সীমা দাস বলেন, তার স্বামী মিন্টু দাস আর দুই সন্তান নিয়ে তাদের সংসার। বাড়ির পাঁচ শতক জমি ছাড়া কিছু নেই। তারা দিনমজুর। সীমা দাস বলেন, তার দ্বিতীয় সন্তান পেটে এলে স্থানীয়দের কাছ থেকে শুনে মাতৃত্বকালীন ভাতার আবেদন করেন। কিন্তু সেটা হয়নি।
এসব বিষয়ে পাঁচুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেন বলেন, অনেকে নানাভাবে ভাতার কার্ড করেছে। কেউ এমপিকে ধরে, আবার কেউ উপজেলা চেয়ারম্যানকে ধরে। তবে বর্তমানে আমরা সঠিক নিয়মে কার্ড দিচ্ছি।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, দাদশী, মিজানপুর, খানখানাপুর, বসন্তপুর, সুলতানপুরস ইউনিয়নের তালিকায় দেখা যায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের ফোন নম্বর দেয়া এবং ভাতাভোগীর ঠিকানা ও স্বামীর নাম দেয়া নেই।
মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর রাজবাড়ীর উপপরিচালক মো. আজমীর হোসেন বলেন, আমরা মাতৃত্বকালীন ভাতাভোগীদের বাছাইয়ের জন্য একটা কমিটি করে দিয়েছি। ইউনিয়ন পর্যায়ে সেই কমিটির প্রধান হলেন চেয়ারম্যান। তারা বাছাই করে উপজেলাতে পাঠান। সেখানে আরেকটি কমিটি রয়েছে যার প্রধান উপজেলা নির্বাহী অফিসার। চূড়ান্তভাবে বাছাই করে উপজেলা থেকে আমাদের কাছে পাঠায়। এখানে অনিয়ম চোখে পড়লে আমরা ব্যবস্থা নেই। সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফাহমি মো. সায়েফ বলেন, ইউনিয়ন থেকে একবার বাছাই করে আমাদের কাছে পাঠায়। আমরা বাছাইয়ের সময় অসঙ্গতি দেখলে সেগুলো বাদ দিয়ে। তবে এ রকম অভিযোগ এলে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়