‘শিশু বক্তা’ রফিকুল মাদানীর বিরুদ্ধে চার্জশিট

আগের সংবাদ

চমক থাকছে টাইগার স্কোয়াডে ; মিরপুরে পতাকা উড়িয়ে পাকিস্তানের অনুশীলন

পরের সংবাদ

মোরেলগঞ্জের ৩০৯ প্রাথমিক বিদ্যালয় : বায়োমেট্রিক যন্ত্র কেনায় ৩০ লাখ টাকা আত্মসাতের পাঁয়তারা

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৫, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ১৫, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

এইচ এম জসিম উদ্দিন, মোরেলগঞ্জ (বাগেরহাট) থেকে : মোরেলগঞ্জ উপজেলার ৩০৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বায়োমেট্রিক হাজিরা কেনার নামে লাখ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের সিøপের বরাদ্দ থেকে ভুয়া বিল ভাউচারের মাধ্যমে প্রায় ৩০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার পাঁয়তারা করছে একটি চক্র।
উপজেলার স্বঘোষিত কতিপয় শিক্ষক নেতা ও শিক্ষা অফিসের অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশে বায়োমেট্রিক হাজিরা মেশিন না কিনেই ভুয়া বিল ভাউচারের মাধ্যমে এ টাকা হাতিয়ে নেন তারা। পরে বিভিন্ন দিক থেকে অভিযোগ উঠলে অবস্থা বেগতিক দেখে সম্প্রতি উপজেলার বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বায়োমেট্রিক হাজিরা মেশিন কেনার হিড়িক পড়ে।
নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে ইচ্ছামতো নিম্নমানের হাজিরা মেশিন কেনার উদ্যোগ নেয় ওই চক্র। আর এ মর্মে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বরাবর একটি অভিযোগ করেন স্থানীয় সংসদ সদস্য। তার এ অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অভিযোগের তদন্ত শেষে এর সত্যতা পেয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন।
জানা গেছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সিøপের বরাদ্দ থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ডিজিটাল হাজিরা নিশ্চিতের জন্য বায়োমেট্রিক হাজিরা মেশিন কেনার নিদের্শ দেয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। আর এ নির্দেশনা পেয়ে প্রধান শিক্ষকরা ওই অর্থ বছরের সিøপের বরাদ্দ থেকে হাজিরা মেশিন কিনে ভাউচার উপস্থাপন করেছেন। সিøপের বরাদ্দের কেনাকাটায় উপজেলা শিক্ষা অফিস সরাসরি জড়িত থাকে না। স্ব-স্ব বিদ্যালয়ে নিজেরাই সিøপের মালামাল ক্রয় করে থাকে এবং প্রতিটি বিদ্যালয়ে সিøপের ক্রয়সংক্রান্ত আলাদা আলাদা কমিটি রয়েছে। তবে এ কমিটি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই জিনিসপত্র ক্রয়ের ক্ষেত্রে অবহিত থাকে না।
এদিকে উপজেলার অন্তত ২০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ঘুরে কোথাও ডিজিটাল হাজিরা মেশিন বসানো দেখা যায়নি। অধিকাংশ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছাড়া অন্য শিক্ষকরা ডিজিটাল মেশিন কিনে বিল ভাউচারের মাধ্যমে টাকা উত্তোলন করা হয়েছে এ তথ্যই জানেন না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ও কয়েকজন শিক্ষক বলেন, ২০১৮-১৯ অর্থ বছরের পরেও তিনটি অর্থবছর পেরিয়ে গেছে। ডিজিটাল হাজিরা মেশিন কেনা হয়নি। এমনকি বরাদ্দ ফেরতও দেয়া হয়নি।
এ ব্যাপারে উপজেলা শিক্ষা অফিসার ‘চিঠি দিয়ে শিক্ষকদের জানানো হয়েছে’ বললেও প্রধান শিক্ষকরা ‘অবহিত নন’ বলে জানান।
এদিকে অধিকাংশ প্রধান শিক্ষকরা জানান, উপজেলা শিক্ষা অফিসে আধিপত্য বিস্তারকারী কতিপয় শিক্ষক নেতা তাদের কথিত ইউনিয়নভিত্তিক গুচ্ছ শিক্ষক নেতাদের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানে প্রতিষ্ঠানে মেশিন পৌঁছে দিয়ে টাকা গ্রহণ করে। তাদের সরবরাহকৃত মেশিন ৪ হাজার থেকে সাড়ে ৭ হাজার টাকা বাজারমূল্যের। সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান সলিড ওয়ার্কস কর্তৃক ১০৯নং সুতালড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মেমোতে উল্লেখ আছে ডিভাইস ‘আইক্লক ৯০০জি’-এর মূল্য ১০ হাজার ৫০০ টাকা। অথচ এর বাজার মূল্য ৭ হাজার ৫০০ টাকা।
প্যাকেট খুললে দেখা গেছে ‘জেডকে টেকো বায়োটাইম ৮.০’-এর মূল্য ৪ হাজার ২০০ টাকা। সফটওয়্যার, ইন্সটলেশন, ডাটাচার্জসহ আনুষঙ্গিক খরচ দেখিয়ে নেয়া হয়েছে ১৮ হাজার টাকা। নিম্নমানের বলে প্রধান শিক্ষকরা নিতে নারাজ হলেও কথিত নেতাদের চাপের মুখে অবশেষে নতি স্বীকার করেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা শিক্ষক নেতা হারুন অর রশিদ এক প্রশ্নের জবাবে সরবরাহকৃত মেশিনের এক-তৃতীয়াংশ টাকা উত্তোলন করা হয়েছে বলে জানান।
উল্লেখ্য, বাগেরহাট-৪ (মোরেলগঞ্জ-শরণখোলা) আসনের সংসদ সদস্য এডভোকেট আমিরুল আলম মিলন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ দেন। অভিযোগের ভিত্তিতে গত বৃহস্পতিবার প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শেখ মো. রায়হান উদ্দিন বাগেরহাট জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শাহ আলমকে সঙ্গে নিয়ে এ অভিযোগের তদন্তে আসেন। এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী শিক্ষক এবং সচেতন মহল সরকারি অর্থ আত্মসাতে চক্রান্তকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করার দাবি জানান।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়