‘শিশু বক্তা’ রফিকুল মাদানীর বিরুদ্ধে চার্জশিট

আগের সংবাদ

চমক থাকছে টাইগার স্কোয়াডে ; মিরপুরে পতাকা উড়িয়ে পাকিস্তানের অনুশীলন

পরের সংবাদ

মহানগর চলে কমিটি ছাড়া জেলা কমিটির মেয়াদ নেই

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৫, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ১৫, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

রুমানা জামান : আগামী ৩০ নভেম্বরের মধ্যে সব সাংগঠনিক জেলায় কাউন্সিলের মাধ্যমে কমিটি গঠনের লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে বিএনপি। এমন বার্তা পেয়ে দলটির কুমিল্লা বিভাগের নেতারাও কমিটি পুনর্গঠনে ব্যস্ত। এই সাংগঠনিক বিভাগে ১১ বছর আগে মেয়াদোত্তীর্ণ হয় মহানগর কমিটি। জেলায় পূর্ণাঙ্গ বা আহ্বায়ক কমিটি হয়নি আজো।
বিএনপির কেন্দ্রীয় হাইকমান্ডের কাছে দলের ৭৮টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে কুমিল্লা বিভিন্ন কারণে অনেক গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক জেলা। সংসদীয় আসনগুলোর মধ্যে ১১টি আসন রয়েছে এই জেলায়। এ বিভাগে বিএনপির ১টি মহানগর এবং ৪টি সাংগঠনিক জেলা রয়েছে। এর মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় রয়েছে

আহ্বায়ক কমিটি। চাঁদপুরে ৫ বছর আগে আহ্বায়ক কমিটি করা হয়েছিল, যার মেয়াদ শেষ। কমিটি ভেঙে দিয়ে নতুন করে কাউন্সিলের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। উত্তর জেলার পূর্ণাঙ্গ কমিটি রয়েছে, তবে তার মেয়াদ শেষ অনেক আগেই। এখানে আহ্বায়ক কমিটি করার প্রস্তুতি চলছে। দক্ষিণের কমিটির মেয়াদ শেষ ১০ বছর আগে। এরপর নানা জটিলতায় পূর্ণাঙ্গ কিংবা আহ্বায়ক কমিটি করতে পারেননি স্থানীয় নেতারা। আর মহানগরে এখন পর্যন্ত কমিটিই গঠন করা হয়নি। দুটি পৌর কমিটি দিয়েই চলছে মহানগরের সাংগঠনিক কাজ।
জানতে চাইলে বিএনপির কুমিল্লা বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক হাজী মোস্তাক মিয়া বলেন, আমার বিভাগে ৪টি জেলা এবং ১টি মহানগর পুনর্গঠনের কাজ এগিয়ে চলেছে। জেলার উত্তরে পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়েছে। চাঁদপুরে থানা কমিটিগুলোর কাজ শেষ। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নতুন আহ্বায়ক কমিটি দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা সাংগঠনিক টিমে যারা আছি কেন্দ্রের নির্দেশ পাওয়ার আগেই সবাই মিলে বৈঠক করে পরিকল্পনা মাফিক দল পুনর্গঠনে নেমেছি। উপজেলা, থানা ও পৌর নেতাদের সবার মতামত নিয়েই সমন্বয় করে আন্দোলনমুখী নতুন নেতৃত্ব গঠন করছি।
৯ বছর ধরে মেয়াদোত্তীর্ণ দক্ষিণ জেলা কমিটি : ৯ বছর ধরে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি দিয়ে চলছে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপি। ২০০৯ সালের ২৪ নভেম্বর দক্ষিণ জেলা বিএনপির ত্রিবার্ষিক সম্মেলন হয়। ওই সম্মেলনে সভাপতি পদে বেগম রাবেয়া চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক পদে আমিন উর রশিদ ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে মোস্তাক মিয়ার নাম ঘোষণা করা হয়। ওই কমিটির শীর্ষ তিনটি পদে মনিরুল হক সাক্কু ও তার অনুসারী কেউ স্থান পাননি। এতে আমিন উর রশিদপন্থিরাই স্থান পেয়েছেন। এরপর থেকে দলটি দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে আলাদা কর্মসূচি পালন করছে। ওই সম্মেলনের ৫ দিন পর ২০০৯ সালের ২৯ নভেম্বর ১৫১ সদস্যবিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ জেলা কমিটি কেন্দ্র থেকে অনুমোদন দেয়া হয়। এরপর থেকেই দুটি পক্ষ আলাদা করে দলীয় কর্মসূচি পালন করতে থাকে। অন্যদিকে উত্তর জেলার আহ্বায়ক কমিটি থাকলেও নেতাকর্মীরা সক্রিয় নন।
কমিটি ছাড়াই চলছে মহানগর! : কুমিল্লা সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠার ১১ বছর পরও মহানগর বিএনপির কোনো কমিটি হয়নি। নেতাকর্মীরা বলেন, অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জন্য দলে আছে দুটি পক্ষ। ফলে কমিটি করা যাচ্ছে না। কর্মসূচি পালনেও গতি নেই এখানে। কমিটি না থাকায় কয়েকটি পক্ষ যে যার মতো করে দলীয় কর্মসূচি পালন করে। মহানগরে শক্তিশালী দুটি পক্ষ বর্তমানে মুখোমুখি।
স্থানীয় নেতারা জানান, মহানগর বিএনপির একপক্ষের নেতৃত্ব দিচ্ছেন কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. মনিরুল হক সাক্কু। আরেক পক্ষে আছেন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সাংসদ আমিন উর রশিদ। জেলার এ দুই নেতাই মহানগর বিএনপির সভাপতি হতে চান। যে কারণে বছরের পর বছর কমিটি হচ্ছে না।
২০১১ সালের ১০ জুলাই কুমিল্লা সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠা হয়। এরপর গত এক দশকেও মহানগর বিএনপির কোনো কমিটি হয়নি। এরই মধ্যে ২০১২ সালের ৫ জানুয়ারি ও ২০১৭ সালের ৩০ মার্চ অনুষ্ঠিত কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফা মো. মনিরুল হক মেয়র পদে জয়ী হন। ২০১৮ সালের ৪ আগস্ট বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ে চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক কমিটির সভা হয়। ওই সভায় কমিটি গঠন করার দাবি জানান সিটি মেয়র। মেয়র মনিরুল হক নিজেকে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলমকে সদস্যসচিব করে ৬১ সদস্যের একটি প্রস্তাবিত আহ্বায়ক কমিটি জমা দেন। এতে সাবেক ছাত্রদল নেতাদের প্রাধান্য দেয়া হয়। নানা ক্ষোভ-বিক্ষোভে কমিটি আর আলোর মুখ দেখেনি।
দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. মনিরুল হক সাক্কু বলেন, ১১ বছরে এখনো মহানগর কমিটি হয়নি। জেলা কমিটিও ৯ বছর ধরে মেয়াদোত্তীর্ণ। আমরা দ্রুত কমিটি চাই। তিনি বলেন, অতীতে আমাকে এবং আমার অনুসারীদের বাদ দিয়ে কমিটি করা হয়েছে। এবার সেটা মানব না। ত্যাগী নেতাদের দিয়ে কমিটি করা হোক। আমরা কেন্দ্রের দিকে তাকিয়ে আছি।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও কুমিল্লায় বিএনপির কমিটি গঠনের অন্যতম সমন্বয়ক আবুল খায়ের ভূঁইয়া বলেন, নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য কুমিল্লা মহানগর ও জেলার জন্য সীমিত আকারের আহ্বায়ক কমিটি দেয়া হবে। ওই কমিটি উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কমিটি গঠন করবে। এরপর সম্মেলনের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ কমিটি হবে। যাদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক মামলা আছে এবং সাবেক ছাত্রদল নেতারা দলের কমিটিতে স্থান পাবেন। বয়োজ্যেষ্ঠ নেতা ও নবীনদের সমন্বয় করে কমিটি দেয়া হবে। এ নিয়ে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, মহাসচিবসহ শীর্ষ নেতারা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।
কর্মসূচি পালনে নিষ্ক্রিয় নেতাকর্মীরা : বছরের পর বছর ধরে কমিটি পুনর্গঠন না হওয়ায় কুমিল্লায় সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড স্থবির হয়ে পড়েছে। জেলা ও মহানগর কমিটি পুনর্গঠন না হওয়ায় তৃণমূলে বেড়েছে অসন্তোষ। দলের সহযোগী এবং অঙ্গ সংগঠনগুলোর কার্যক্রমও নেই বললেই চলে। সরকারবিরোধী ‘ব্যর্থ আন্দোলন’ ঘিরে বেশির ভাগ নেতাকর্মীর ভাগ্যে জুটে মামলার খড়গ। হাজার হাজার নেতাকর্মী শত শত মামলা আর গ্রেপ্তার আতঙ্কে থাকেন আত্মগোপনে। দলীয় কিংবা দিবসকেন্দ্রিক বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হয় ঢিলেঢালাভাবে। উচ্ছ¡াস-উদ্দীপনা চোখে পড়ে না কমিটি গঠন নিয়েও। সবশেষ লাকসাম, মনোহরগঞ্জ উপজেলা ও লাকসাম পৌরসভা শাখার কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে নীরবে। এর আগে বুড়িচং ও ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলায় সম্মেলন হলেও মানা হয়নি বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নির্দেশনা। এ দুটি উপজেলার কমিটিতে স্থান পাননি দলের কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদের অনুসারীরা। এছাড়া জেলা সদরসহ অন্য উপজেলাগুলোতেও রয়েছে গ্রুপিং, কোন্দল। অনেকটাই প্রেস রিলিজ নির্ভর কর্মসূচি নিয়েও হতাশা আর মতবিরোধ দেখা দিয়েছে দলটির নেতাকর্মীদের মধ্যে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়