‘শিশু বক্তা’ রফিকুল মাদানীর বিরুদ্ধে চার্জশিট

আগের সংবাদ

চমক থাকছে টাইগার স্কোয়াডে ; মিরপুরে পতাকা উড়িয়ে পাকিস্তানের অনুশীলন

পরের সংবাদ

নিজেদের উৎপাদিত ধানের বীজেই কৃষকের আস্থা

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৫, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ১৫, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সালেহ এলাহী কুটি, মৌলভীবাজার থেকে : কৃষক থেকে ব্যবসায়ী হয়ে ওঠার এ নজির সত্যিই অনন্য। প্রজনন বীজ বা মা বীজ থেকে মানসম্মত ধানের বীজ উৎপাদন ও সংরক্ষণ করে ফেলেছেন মৌলভীবাজারের গিয়াসনগর ইউনিয়নের শ্রীমঙ্গল গ্রামের উদ্যোক্তা মো. আফজল হোসেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্যোগে চাষি পর্যায়ে উন্নত জাতের ধান, গম ও পাট বীজ উৎপাদন, সংরক্ষণ ও সম্প্রসারণ প্রকল্প থেকে প্রশিক্ষণ ও প্রজনন বীজ সংগ্রহ করে তা দিয়ে নিজের ক্ষেত থেকেই এখন বীজ উৎপাদন করে আফজল সিড নামে প্যাকেটজাত বীজ বিক্রি করেন।
পাশাপাশি বাড়িতে নিজেই গড়ে তুলেছেন বীজ প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র। তাই এখন তার উৎপাদিত বীজ অন্য কোনো প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্রে নিতে হচ্ছে না। চলতি রোরো মৌসুমের জন্য উচ্চ ফলনশীল ব্রি ধান-৮৯ জাতের ৪ টন বীজ সংরক্ষণ করেছেন। তার এ সফলতা দেখে অন্য এলাকার কৃষকরাও ধানের মানসম্মত বীজ উৎপাদনে আগ্রহী হচ্ছেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, প্রতি বছর ধান চাষের উপযুক্ত সময়ে মানসম্মত বীজের অভাবে কৃষকদের বেশ বেগ পেতে হয়। এছাড়া অনেক বীজ কোম্পানির বিরুদ্ধে মেয়াদোত্তীর্ণ মানহীন ধানের বীজ প্যাকেটজাত করে কৃষকদের মধ্যে চড়া দামে সরবরাহ করার অভিযোগ রয়েছে। এতে কৃষক একদিকে যেমন আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন, তেমনি কাক্সিক্ষত খাদ্যশস্য উৎপাদনও ব্যাহত হয়। এই সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্যোগে আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে কৃষক পর্যায়ে প্রশিক্ষণ ও ভালো মানের বীজ উৎপাদনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। কোম্পানিগুলো বীজ বাছাইয়ে যেসব পদ্ধতি অনুসরণ করে, ঠিক তেমন পদ্ধতি অনুসরণ করছেন এখানকার কৃষকরা। সরেজমিন দেখা যায় মো. আফজল হোসেনের বীজ উৎপাদন কেন্দ্রে নিজেই ওজন করে প্যাকেট করছেন ব্রি-৮৯ জাতের ধান বীজ। এ সময় তিনি বলেন, কৃষি বিভাগের তত্ত্বাবধানে ২০১৯ সাল থেকে প্রজনন বীজ উৎপাদন শুরু করেন। বীজ উৎপাদন ও সংরক্ষণে শতভাগ স্ট্যান্ডার্ড বজায় রাখার কারণে আমার বীজ নিয়ে কৃষকরা ব্যাপক ফলন পেয়েছেন। এ বছর ৪ টন ধান বীজ সংরক্ষণ করেছেন। এগুলো প্যাকেট করে তা কৃষকের মধ্যে সরবরাহ করছেন। প্রতি ১০ কেজি প্যাকেটের ধান বীজ ৫০০ টাকার বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে বলেও তিনি জানান। বীজ কিনতে আসা উড়িকোনা গ্রামের হারিবুর রহমান ও শুনগড়ি গ্রামের সুয়েল মিয়া বলেন, বীজতলা তৈরির সময় কোম্পানিগুলো অকারণে বীজের দাম বাড়িয়ে দেয়। এছাড়া পুরনো বীজ নতুন প্যাকেটে ভরে বিক্রি করে। এতে কাক্সিক্ষত উৎপাদন হয় না। আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে হয়।
মৌলভীবাজারের শেরপুর এলাকার আরেক উদ্যোক্তা মো. সুয়েল আহমদ রহমান বীজঘর নামে প্যাকেটজাত করে ধানের বীজ বিক্রি করছেন। তিনি বলেন, ব্রি ধান-৮৮ জাতের বীজ উৎপাদনের জন্য ১৪ বিঘা জমি চাষ করেন। ফলন ভালো হওয়াতে ২৫০ মণ ধানের বীজ বিক্রির জন্য প্যাকেটজাত করেছেন। স্বাভাবিকভাবে ধান বিক্রি করলে যে লাভ হয় তার চেয়ে বেশি লাভ হয় বীজ বিক্রি করে। মৌলভীবাজার শহরের বীজ ডিলার মেসার্স তন্ময় ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী কালামুর রহমান রাসেল ভোরের কাগজকে বলেন, কোম্পানির বীজ কিনে অনেক সময় কৃষকরা প্রতারিত হয়। ফলন ভালো হয় বলে স্থানীয় পর্যায়ে উৎপাদিত বীজের চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইতোমধ্যে প্রায় ১ হাজার কেজি স্থানীয় উৎপাদিত বীজ বিক্রি করেছেন বলেন জানান তিনি।
মৌলভীবাজার সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুব্রত কান্তি দত্ত বলেন, প্রতি বছর ধান চাষের উপযুক্ত মৌসুমে কৃষকের মধ্যে বীজ নিয়ে এক ধরনের শঙ্কা থাকে। বিভিন্ন বীজ কোম্পানির কাছ থেকে চড়া মূল্যে ধান বীজ কিনলেও মান না থাকায় কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হন। এই সমস্যা নিরসনে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কৃষকদের মধ্যে ভিত্তি বীজ সরবরাহ করে তাদের নিজস্ব ক্ষেত থেকে উৎপাদন করে বিক্রি করছেন তারা।
এ বিষয়ে মৌলভীবাজার জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ কাজী লুৎফুল বারী বলেন, এক সময় ধান বীজের জন্য কৃষকের মধ্যে হাহাকার শুরু হলেও এখন তারা নিজেরাই ধান বীজ তৈরি করছেন। এটি কৃষি বিভাগের জন্য ইতিবাচক দিক। ধানের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে কৃষক পর্যায়ে মানসম্মত এ ধানের বীজ উৎপাদন ও সংরক্ষণ প্রক্রিয়া আগামীতে জেলার সব ইউনিয়নে ছড়িয়ে দেয়া হবে বলে জানান। তিনি আরো বলেন, চলতি রোরো মৌসুমে জেলায় ৫৬ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে ১ হাজার ৭০৫ টন বীজের চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে ১ হাজার ৪৫ টন বিআইডিসি ২৬০ টন প্রকল্প থেকে আসবে। অবশিষ্ট ৪০০ টন স্থানীয় উৎপাদিত কৃষকের বীজ দিয়ে চাহিদা পূরণ করা হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়