‘শিশু বক্তা’ রফিকুল মাদানীর বিরুদ্ধে চার্জশিট

আগের সংবাদ

চমক থাকছে টাইগার স্কোয়াডে ; মিরপুরে পতাকা উড়িয়ে পাকিস্তানের অনুশীলন

পরের সংবাদ

চট্টগ্রামে সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী গণশুনানি : প্রশাসন ও পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৫, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ১৫, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম অফিস : চট্টগ্রামে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদী-সন্ত্রাস নিয়ে তদন্ত ও গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুনানিতে পুলিশ প্রশাসনসহ স্থানীয় প্রশাসনের গাফিলতির বিষয়টি উঠে এসেছে। গতকাল রবিবার সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত চট্টগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে ‘বাংলাদেশে মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস তদন্তে গণকমিশন’-এর এই গণশুনানি হয়। একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি এবং জাতীয় সংসদের আদিবাসী ও সংখ্যালঘুবিষয়ক ককাসের যৌথ উদ্যোগে গণকমিশন গঠিত হয়।
চট্টগ্রাম গণকমিশনের গণশুনানিতে ১৩ জন সাক্ষী স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে চট্টগ্রামে উগ্র সাম্প্রদায়িক সংগঠন হেফাজতে ইসলামীর নেতাকর্মীদের নারকীয় তাণ্ডব এবং পূজামণ্ডপে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসী হামলার মৌখিক সাক্ষ্য দেন। আর লিখিতভাবে সাক্ষ্য দেন ৪২ জন। তারা চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদী হামলা এবং পূজামণ্ডপে হামলার বিস্তারিত বিবরণ দেন। গণশুনানিতে অংশগ্রহণকারীরা অধিকাংশই হামলার সময় পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের গাফিলতির অভিযোগ করেন। সাম্প্রদায়িক হামলা ঘটনাগুলো পূর্বপরিকল্পিত এবং হামলাকারীরা ‘জয় বাংলা’ সেøাগান দিয়ে কৌশল অবলম্বন করেছিল বলে গনশুনানিতে উঠে এসেছে।
গণকমিশনের চেয়ারম্যান বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের নেতৃত্বে চট্টগ্রামে সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদী সন্ত্রাস সম্পর্কে তদন্ত ও গণশুনানিতে অংশগ্রহণ করেন আদিবাসী ও সংখ্যালঘুবিষয়ক সংসদীয় ককাসের আহ্বায়ক ফজলে হোসেন বাদশা এমপি, সাবেক আইজিপি নিরাপত্তা বিশ্লেষক মোহাম্মদ নুরুল আনোয়ার, গণকমিশনের সদস্য সচিব ব্যারিস্টার ড. তুরিন আফরোজ, গণকমিশনের সচিবালয়ের সমন্বয়কারী কাজী মুকুল, সচিবালয়ের সদস্য শওকত বাঙালিসহ অন্য সদস্যরা।
এছাড়া তদন্ত ও গণশুনানিতে উপস্থিত ছিলেন- মুক্তিযুদ্ধ গবেষণা কেন্দ্রের চেয়ারম্যান ডা. মাহফুজুর রহমান, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি চট্টগ্রামের সভাপতি প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদার এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞানের প্রফেসর ড. মো. আলাউদ্দিন, নির্মূল কমিটি চট্টগ্রামের সহসভাপতি দিপঙ্কর চৌধুরী কাজল, যুগ্ম সম্পাদক আবু সাদাত মো. সায়েম প্রমুখ। চট্টগ্রাম মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি আশীষ ভট্টাচার্য ও সাধারণ সম্পাদক হিল্লোল সেন নগরীর জেএম সেন হল পূজামণ্ডপে হামলার বিস্তারিত বিবরণ দেন।
গণশুনানি শেষে তুরিন আফরোজ সাংবাদিকদের বলেন, গণশুনানিতে যারা বক্তব্য দিয়েছেন, তাদের কথায় মনে হয়েছে এখানে (চট্টগ্রামে) সাম্প্রদায়িক আক্রমণ হয়েছে খুবই সুপরিকল্পিতভাবে এবং সংঘবদ্ধভাবে। পুলিশ প্রশাসনের শিথিলতার কথা এসেছে। এই অভিযোগ আমরা কুমিল্লা-ব্রাহ্মণবাড়িয়াতেও পেয়েছি। এটা কেন, কী কারণে সেটা আমরা এখনো উদ্ঘাটন করতে পারিনি। হামলার শিকার মানুষের মধ্যে এখনো আতঙ্ক আছে। অনেকে সরাসরি সাক্ষ্য না দিয়ে লিখিতভাবে দিয়েছেন। আমরা সারাদেশে তদন্ত শেষ করে দ্রুত প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হবে।
দুর্গাপূজা কমিটির সভাপতি সজল দাশ জানান, অষ্টমীর রাতে তাদের পূজামণ্ডপে হামলা ও প্রতিমা ভাঙচুর করা হয়। এ ঘটনায় তিনি মামলা করেন। মামলা দায়েরের পর থেকে হামলাকারী ও তাদের প্রতিবেশী এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা তাকে মামলা তুলে নেয়ার জন্য হুমকি দেয়। পরে প্রাণনাশের আশঙ্কায় সজল স্ত্রী-সন্তান নিয়ে পালিয়ে চট্টগ্রাম শহরে চলে এসেছেন। গ্রামে তার একটি গ্যাস সিলিন্ডারের দোকান আছে। সেটি গত এক মাস ধরে বন্ধ অবস্থায় আছে।
চট্টগ্রাম নগরীর ফিরিঙ্গিবাজারে শিববাড়ী পূজা উদযাপন কমিটির নেতা অমিত হোড় শুনানিতে বলেন, ১১ অক্টোবর রাতে মণ্ডপে প্রতিমা নেয়ার সময় স্থানীয় ফলের আড়ত থেকে ফল ছুড়ে প্রতিমার হাত ভেঙে দেয়া হয়। শিববাড়ী মন্দির যিনি ভাঙেন তিনি যুদ্ধাপরাধীদের তালিকায় রয়েছেন। তার নাম আবুল কাশেম ও তার ছেলে নাছির উদ্দীন বাহাদুর। তাদের নেতৃত্বে অতীতেও একবার মন্দির ভাঙচুর হয়।
নাপুড়া শেখের খীল কালীবাড়ী পূজা উদযাপন পরিষদের রাজিব কান্তি গুহ বলেন, ১৩ অক্টোবর-২০২১ রাত ৯টা বিভিন্ন জায়গায় থেকে একত্রিত হয়ে হাজারো লোক সেøাগান দিয়ে আমাদের মন্দিরে হামলা করতে এলে আমরা তাড়াতাড়ি পূজা শেষ করে মন্দিরের ভেতরে অবস্থান নেই।
মন্দিরের পাশে বাজার থেকে হামলাকারীদের প্রতিহত করতে গেলে তারা আমাদের ওপর ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। এ ঘটনার ভিডিও ফেসবুকে লাইভে আমাদের একজন ধারণ করেন। পরবর্তী সময়ে আমরা লাইভ ভিডিওতে দেখতে পাই পুলিশ আমাদের মন্দিরের পাশে দাঁড়িয়ে আছে এবং দুর্বৃত্তরা মন্দিরের গেট ভাঙছে। আমাদের লোকেরা আহত হচ্ছে, অথচ পুলিশ নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়