‘শিশু বক্তা’ রফিকুল মাদানীর বিরুদ্ধে চার্জশিট

আগের সংবাদ

চমক থাকছে টাইগার স্কোয়াডে ; মিরপুরে পতাকা উড়িয়ে পাকিস্তানের অনুশীলন

পরের সংবাদ

গ্লাসগো জলবায়ু চুক্তি : কার্বন কমানোর বুলিটুকুই ভরসা

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৫, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ১৫, ২০২১ , ৭:৩০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ ডেস্ক : প্রবাদ আছে, ‘নেই মামার চেয়ে কানা মামাই ভালো,। স্কটল্যান্ডের গ্লাসগো শহরে সদ্যসমাপ্ত কপ-২৬ জলবায়ু সম্মেলনের প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির হিসাব করতে গিয়ে এ কথাটাই ঘুরেফিরে বলছেন পর্যবেক্ষকরা। ধরিত্রী বাঁচানোর লড়াইয়ে যে গভীর প্রত্যাশা নিয়ে বিশ্ব তাকিয়ে ছিল দুই সপ্তাহব্যাপী এ সম্মেলনের দিকে, শেষ পর্যন্ত তার সামান্যই পূরণ হয়েছে। বাংলাদেশসহ সর্বোচ্চ ঝুঁকির মুখে থাকা দেশগুলোর জন্য ১০ হাজার কোটি ডলার ক্ষতিপূরণের নিশ্চয়তার পাশাপাশি ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা হয়নি অনেক ক্ষেত্রেই। শুধু কয়লাসহ জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমিয়ে আনার প্রতিশ্রæতি সংবলিত একটি চুক্তি নিয়েই ফিরতে হলো আশাবাদী মানুষগুলোকে।
বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি প্রাক শিল্পায়ন যুগের তুলনায় ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে আটকে রাখতে কার্বন গ্যাসের নির্গমন যতটা কমানো দরকার, ততটা প্রতিশ্রæতি এবারের সম্মেলনে আসেনি। জলবায়ু তহবিলের প্রতিশ্রæত অর্থছাড় বা জলবায়ুর ক্ষতি পোষাতে অর্থায়নের দাবিতেও শিল্পোন্নত দেশগুলোর কোনো প্রতিশ্রæতি আদায় করা যায়নি। সম্মেলনের পূর্বনির্ধারিত সূচি পেরিয়ে আরো একদিন স্নায়ুক্ষয়ী দর কষাকষি শেষে যে চুক্তি হলো, তাকে ‘একেবারেই খালি হাতে ফেরার চেয়ে কিছুমিছু নিয়ে ফেরা ভালো’ বলে মনে করছে দেশগুলো। তাতে ধরিত্রীকে বাঁচানোর বাস্তবসম্মত সুযোগ তৈরির আশাটা অন্তত বাঁচিয়ে রাখা গেল।
গত শুক্রবার নির্ধারিত সময়ে খসড়া চুক্তি নিয়ে ঐকমত্য তৈরি না হওয়ায় বর্ধিত আলোচনা শেষে শনিবার সন্ধ্যার পর ‘গøাসগো জলবায়ু চুক্তি’ সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয়। খসড়া চুক্তি নিয়ে সবচেয়ে বড় বাধা ছিল ভারত। কয়লা ও জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমানোর প্রস্তাবে আপত্তি জানায় তারা; সঙ্গে সমর্থন দেয় চীন, দক্ষিণ আফ্রিকা, নাইজেরিয়া ও ইরান। যদিও শেষ মুহূর্তে ভারত খসড়া চুক্তিতে কয়লা শক্তি ‘পর্যায়ক্রমে শূন্যে নামিয়ে আনা’ শব্দগুচ্ছের বদলে ‘পর্যায়ক্রমে কমিয়ে আনা’ শব্দগুচ্ছ ব্যবহারের প্রস্তাব করে। এ নিয়ে সুইজারল্যান্ড ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন হতাশা প্রকাশ করলেও শেষ পর্যন্ত সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয় গøাসগো জলবায়ু চুক্তি। তবে এবারের সম্মেলনের এ চুক্তির সাফল্য যে প্রয়োজনের তুলনায় কিছুই না, সে কথা তীব্রভাবে মনে করিয়ে দিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস। তিনি বলেছেন, বিশ্ব বাঁচাতে এখন চাই জরুরি পদক্ষেপ।
রয়টার্স বলছে, ২০১৫ সালের প্যারিস চুক্তির লক্ষ্য অর্জনের পথে সম্মেলনের আয়োজক ব্রিটেনের তোলা প্রস্তাব ন্যূনতম কার্যকর ছিল না। খোদ চুক্তিতেই গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন হ্রাসে দেয়া প্রতিশ্রæতি ‘প্রয়োজনের তুলনায় নিতান্ত কম’ বলে স্বীকার করা হয়। শেষ পর্যন্ত সম্পাদিত এ চুক্তিকে ‘রাজনৈতিক আপস’ আখ্যায়িত করেন জাতিসংঘ মহাসচিব। পাঁচ বছরের জন্য অপেক্ষা না করে সামনের বছরই আরো ‘কঠোর’ জলবায়ু প্রতিশ্রæতি নিয়ে আসার জন্য দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানানো হয় চুক্তিতে।
বিশ্বে সবচেয়ে বেশি কার্বন নির্গমনকারী দেশ চীন কার্বন নিঃসরণ শূন্যে নামিয়ে আনার জন্য ২০৬০ সালকে লক্ষ্যমাত্রা ধরেছে, যেখানে প্যারিস চুক্তির দাবি ছিল, ২০৫০ সালের মধ্যে সেই লক্ষ্য পূরণ। গøাসগোতে চীন নতুন কোনো প্রতিশ্রæতি দেয়নি বরং জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার নিয়ে প্রস্তাবে আপত্তি জানায়। বিশ্বে ব্যবহৃত মোট কয়লার অর্ধেকের বেশি চীনেই ব্যবহৃত হয়। অধিবেশনে জি-৭৭ জোট এবং চীনের পাশে অবস্থান নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা বলে, সবার জন্য এক নীতি কোনো ভালো প্রস্তাব হতে পারে না। পরে সেই তালিকায় যোগ দেয় ইরান।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, ধরিত্রী বাঁচাতে হলে তাপমাত্রা বৃদ্ধির গতি কমিয়ে আনতে হবে। এ লক্ষ্যে বিশ্বের তাপমাত্রা প্রাক-শিল্পায়ন যুগের চেয়ে বাড়তি দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে হবে। সেজন্য কমাতে হবে কার্বন গ্যাস নির্গমন। কিন্তু গøাসগো সম্মেলনে যত প্রতিশ্রæতি এসেছে, তাতে বৈশ্বিক তাপমাত্রা প্রাক-শিল্পায়ন যুগের চেয়ে ২ দশমিক ৪ ডিগ্রির বেশি হওয়ার পথে এগোবে বলে আশঙ্কা করছে ক্লাইমেট অ্যাকশন ট্র্যাকার নামে একটি তদারকি সংস্থা। উন্নয়নশীল দেশগুলো বলছে, ধনী দেশগুলোর কার্বন নিঃসরণের ফলে তাদেরই ভুগতে হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। তাদের দাবি ছিল, ধনী দেশগুলোকে শুধু কার্বন নির্গমন কমালে হবে না, সঙ্গে সঙ্গে ক্ষতির শিকার দেশগুলোকে আর্থিক সহায়তাও দেয়া উচিত। সে কারণে গøাসগোতে কম সম্পদশালী ও ছোট দেশগুলোর চাহিদা পূরণই বেশি গুরুত্ব পাওয়ার আশা করা হলেও শেষমেষ সে আশার গুড়ে বালি।
সম্মেলনে অংশ নেয়া ছোট দ্বীপরাষ্ট্রগুলোর প্রধান দাবি মেনে ২০১৯ সালের পর্যায় থেকে জলবায়ু অভিযোজনের জন্য অর্থায়ন ২০২৫ সালের মধ্যে বাড়িয়ে দ্বিগুণ করতে ধনী দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে চুক্তিতে। যুক্তরাজ্য জানায়, ধনী দেশগুলো ২০২০ সালের মধ্যে ১০০ বিলিয়ন ডলারের বার্ষিক জলবায়ু তহবিল দেয়ার প্রশ্রিæতি পূরণ করতে পারেনি। আগামী বছর জাতিসংঘ কমিটির এ অগ্রগতি নিয়ে প্রতিবেদন দেয়া উচিত। একই সঙ্গে জলবায়ু অর্থায়ন নিয়ে ২০২২, ২০২৪ ও ২০২৬ সালে সরকারগুলো মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠানের ওপর জোর দেয় যুক্তরাজ্য।
জাতিসংঘ বলছে, বছরে ওই ১০০ কোটি ডলারও গরিব দেশগুলোর প্রকৃত চাহিদার চেয়ে অনেক কম। কারণ শুধু অভিযোজনের ব্যয় হিসাব করলেই ২০৩০ সাল নাগাদ ৩০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে ক্ষতির পরিমাণ।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়