‘শিশু বক্তা’ রফিকুল মাদানীর বিরুদ্ধে চার্জশিট

আগের সংবাদ

চমক থাকছে টাইগার স্কোয়াডে ; মিরপুরে পতাকা উড়িয়ে পাকিস্তানের অনুশীলন

পরের সংবাদ

নিউজিল্যান্ডের স্বপ্ন গুঁড়িয়ে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৫, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ১৫, ২০২১ , ৭:২৭ পূর্বাহ্ণ

কাগজ ডেস্ক : তিন তিনটি বিশ্বকাপের ফাইনালে ওঠেও শিরোপা না জেতার বেদনা নিউজিল্যান্ডকে পোড়াবে দীর্ঘদিন। ২০১৫ সাল থেকে ২০২১ এই ছয় বছরে ২টি ওয়ানডে এবং একটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে ওঠেও কাক্সিক্ষত শিরোপার নাগাল পেল না কিউইরা। গতকাল দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে অস্ট্রেলিযার বিপক্ষে ৮ উইকেটে হেরেছে নিউজিল্যান্ড। গতকাল ফাইনালে অজিদের সামনে পাত্তাই পায়নি নিউজিল্যান্ড। অনেকটা হেসে খেলে জিতেছে অ্যারন ফিঞ্চবাহিনী। দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে গতকাল টস হেরে আগে ব্যাট করা নিউজিল্যান্ডের সংগ্রহ ছিল ৪ উইকেটে ১৭২ রান। যা ছিল বিশ্বকাপ ফাইনালে সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহের রেকর্ড। শিরোপা জেতার পথে নতুন রেকর্ড গড়ে মাত্র ২ উইকেট হারিয়ে ১৮.৫ ওভারেই ম্যাচ জিতে নিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। অজিদের প্রথম টি- টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ে ব্যাট হাতে বড় অবদান রেখেছেন তিন নম্বরে নামা ডানহাতি ব্যাটার মিচেল মার্শ। তার ব্যাট থেকে আসে ৫০ বলে অপরাজিত ৭৭ রান। বাঁহাতি ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার খেলেছেন ৩৭ বলে ৫৩ রানের ইনিংস।
অপরাজিত ৭৭ রানের ইনিংস খেলায় ম্যাচসেরা হয়েছেন মিচেল মার্শ। অভিজ্ঞ ডেভিড ওয়ার্নার টুর্নামেন্ট সেরার পুরস্কার জিতেছেন। এবার বিশ^কাপে পাকিস্তানের অধিনায়ক বাবর আজম ৩০৩ রান করে সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারী এবং শ্রীলঙ্কার স্পিনার ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা ১৬ উইকেট নিয়ে সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রহকারী নির্বাচিত হয়েছেন।
দুবাইয়ে গতকাল টসে হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ৪ উইকেট হারিয়ে ১৭২ রান সংগ্রহ করে নিউজিল্যান্ড। জবাবে ব্যাট করতে নেমে ২ উইকেট হারিয়ে ১৭৩ রানে তোলে শিরোপা জিতেছে অস্ট্রেলিয়া। ডেভিড ওয়ার্নার ও মিচেল মার্শ ফিফটি হাঁকিয়ে অজিদের প্রথমবারের মতো টি- টোয়েন্টি শিরোপা জিততে সহায়তা করেন। ডেভিড ওয়ার্নার ৩৮ বলে ৫৩ রান করে সাজ ঘরে ফিরলেও অন্য প্রান্তে আগ্রাসী ব্যাটিং করতে থাকেন মিচেল মার্শ। তিনি ৫০ বলে ৭৭ রানে অপরাজিত থাকেন। অস্ট্রেলিয়ার যে ২টি উইকেটের পতন ঘটে তা তুলে নেন পেসার টেন্ট্র বোল্ট। তিনি ৪ ওভারে দিয়েছেন ১৮ রান।
১৭৩ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুটা খুব একটা ভালো হয়নি অস্ট্রেলিয়ার। তৃতীয় ওভারে অজিরা হারায় অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চকে। বোল্টের বল এগিয়ে এসে তুলে মারতে গিয়ে মিচেলের হাতে ক্যাচ দেন। ৭ বলে ৫ রান করেন ফিঞ্চ। এরপর অস্ট্রেলিয়ার হয়ে প্রতিরোধ গড়েন মিচেল মার্শ ও ডেভিড ওয়ার্নার। দুজনের প্রতি আক্রমণে পাওয়ার প্লে’তে লড়াই করেন তারা। চতুর্থ ও পঞ্চম ওভারে ২৫ রান তুলেছেন দুই ব্যাটসম্যান। সব মিলিয়ে ৬ ওভার শেষে তাদের রান সংগ্রহ ১ উইকেটে ৪৩। পাওয়ার প্লে ঠিকঠাক মতো কাজে লাগাতে না পারলেও পরের ৪ ওভারে দাপট দেখিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। ৬ ওভারে তাদের রান ছিল ৪৩। আর ১০ ওভারে গিয়ে সে রান দাঁড়ায় ৮২। ডেভিড ওয়ার্নার ও মিচেল মার্শের দৃঢ়তায় পাল্টা জবাব দিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। শেষ ১০ ওভারে অস্ট্রেলিয়ার জয়ের জন্য দরকার ৯১ রান। প্রথম ইনিংসে নিউজিল্যান্ড শেষ ১০ ওভারে ১১৫ রান তুলেছিল। ওয়ার্নার যেন গতকাল কেন উইলিয়ামসরে বিধ্বংসী ব্যাটের বিপক্ষে জবাব দিতে নেমেছিলেন। ওয়ার্নার আরো বেশি ভয়ংকর হওয়ার আগে তাকে সাজঘরে ফেরান কিউই ফাস্ট বোলার ট্রেন্ট বোল্ট। ওয়ার্নার ৩৮ বলে ৫৩ রানের ইনিংস খেলেন। তার ইনিংসে ৪টি চার ও ৩টি ছক্কার মার ছিল। অন্যপ্রান্তে দাঁড়িয়ে মিচেল মার্শ ঝড়ে অব্যাহত রাখেন। তিনি ৩১ বলে সমান ৩ বাউন্ডারি ও ওভার বাউন্ডারিতে ফিফটি তুলে নেন। দলের লক্ষ্য তখন অনেকটা ছোট হয়ে আসে।
প্রথমবার টি-টোয়েন্টি বিশ^কাপের ফাইনালে নিউজিল্যান্ড। পর পর দুইটি ওয়ানডে বিশ^কাপে শিরোপা হাতছাড়া করেছে তারা। তাই টি-টোয়েন্টি বিশ^কাপের ট্রফি নিতে নিজেদের সর্বোচ্চটা দিতে চেষ্টা করেছে কিউইরা। অন্যদিকে পাঁচবারের ওয়ানডে বিশ^কাপ জয়ী অস্ট্রেলিয়া দ্বিতীয়বার খেলছেন টি-টোয়েন্টি বিশ^কাপের ফাইনাল। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ২০১০ সালে ট্রফি হাত ছাড়া করলেও গতকাল তারা সুযোগ দিতে চাননি কিউইদের। দুই ওশেনীয়দের মধ্য প্রথমবার টি-টোয়েন্টি ট্রফি জেতার লড়াইয়ে জয়ী হয়েছে অজিরা।
এর আগে দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে সপ্তম বিশ^কাপের ফাইনালে টসে হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে কিছুটা মারমুখী ছিলেন দুই কিউই ব্যাটসম্যান মার্টিন গাপটিল ও ড্যারেল মিচেল। তবে নিউজিল্যান্ডের উদ্বোধনী জুটি বড় হতে দেননি জশ হ্যাজেলউড। দারুণ এক স্লোয়ারে ফিরিয়েছেন ব্ল্যাক ক্যাপসদের সেমিফাইনালের নায়ক ড্যারেল মিচেলকে। তার ক্রস সিম ডেলিভারিতে আলতো টোকা দিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন মিচেল। ৮ বলে ১১ রান করে ফিরেছেন তিনি। ২৮ রানে প্রথম উইকেট হারাল নিউজিল্যান্ড। এরপর কেন উইলিয়ামসন ও মার্টিন গাপটিল সতর্কতার সঙ্গে এগোতে থাকেন। অস্ট্রেলিয়ার নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে রান তোলা যেন ভুলেই গেছে নিউজিল্যান্ড। তবে তাদের জুটি ভয়ও দেখাচ্ছিল অস্ট্রেলিয়াকে। দুজনই থিতু হয়েছিলেন। খোলস থেকে ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসছিলেন। বিপজ্জনক এ জুটি ভাঙার দরকার ছিল। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে কাজটা করলেন অ্যাডাম জাম্পা। তার ঘূর্ণিতে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে মিড উইকেটে ক্যাচ দেন গাপটিল। ৩৫ বলে ২৮ রান করে ফেরেন নিউজিল্যান্ডের ওপেনার। ভাঙে দুই জনের ৪৮ রানের জুটি। তবে উইলিয়ামসন হঠাৎই যেন মারমুখী হয়ে ওঠেন। একের পর এক বাউন্ডারি হাঁকাতে থাকেন। তার সঙ্গে ব্যাট চালাতে থাকেন তৃতীয় উইকেটে নামা গ্লেন ফিলিপসও। দলীয় ১৪৪ রানে কিউইরা হারায় তাদের তৃতীয় উইকেট। ফিলিপস ওভার বাউন্ডার হাঁকাতে গিয়ে ম্যাক্সওয়েলের হাতে বন্দি হন। জশ হ্যাজেলউডের বলে ফিরে যাওয়ার আগে ফিলিপস ১ বাউন্ডারি ও ১ ওভার বাউন্ডারির সাহায্য ১৭ বলে ১৮ রান করেন। একই ওভারে দুবাইয়ে ঝড় তুলতে থাকা কিউই অধিনায়ককেও ফেরান হ্যাজেলউড। সীমানার ওপর দিয়ে তুলে মারতে গিয়ে স্টিভ স্মিথের হাতে ধরা পড়েন তিনি। সাজঘরের ফেরার আগে ৪৮ বলে ৮৫ রানের একটি বিধ্বংসী ইনিংস খেলেন তিনি। তার ইনিংসটি ১০ বাউন্ডারি ও ৩ ওভার বাউন্ডারিতে সাজানো ছিল। এরপর উইকেটে নেমে বাকি দায়িত্বটা সারেন জিমি নিশাম ও টিম সেইফার্ট। নিশাম ৬ বলে ১৩ রানে এবং সেইফার্ট ৫ বলে ৮ রানে অপরাজিত ছিলেন। নির্ধারিত ২০ ওভার শেষে ৪ উইকেট হারিয়ে ১৭২ রান তুলে নেয় নিউজিল্যান্ড। অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের মধ্য সবচেয়ে সফল জশ হ্যাজেলউড ৪ ওভারে মাত্র ১৬ রানের বিনিময়ে ৩ উইকেট তুলে নেন। ২৬ রানের বিনিময়ে ১টি উইকেট শিকার করেন স্পিনার অ্যাডাম জাম্পা।
টি-টোয়েন্টি বিশ^কাপের যাত্রাটা ২০০৭ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার মাঠে। প্রথম আসরে পাকিস্তানকে হারিয়ে শিরোপা ঘরে তুলেছিল চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারত। দ্বিতীয় আসরে ২০০৯ সালে আক্ষেপ ঘুচিয়ে শিরোপা ঘরে তুলে পাকিস্তানও। তৃতীয় আসরে ২০১০ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ফাইনালে হেরে শিরোপা হাতছাড়া করে অস্ট্রেলিয়া। চলতি আসরের আরেক ফাইনালিস্ট এর আগে গত আসরের সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নেয়। এরপর তিন আসরের দুইটি জেতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, একটি শ্রীলঙ্কা। এশিয়ার পরাশক্তির দলগুলোর মধ্য বাংলাদেশই শুধু জেতেনি টি-টোয়েন্টি বিশ^কাপের কোনো ট্রফি। ২০০৭ সালে প্রথম আসরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে একটি মাত্র জয় ছাড়া মূলপর্বে আর কখনো সফলতার মুখ দেখেনি বাংলাদেশ। টানা সাতটি টি-টোয়েন্টি বিশ^কাপ খেলতে আসা বাংলাদেশ চলতি আসরেও জেতেনি মূল পর্বের কোনো ম্যাচ।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়