কক্সবাজার : জহিরুল হত্যার ঘটনায় শিবির নেতা গ্রেপ্তার

আগের সংবাদ

‘ভয়কে জয়’ করেছেন এসএসসি পরীক্ষার্থীরা

পরের সংবাদ

বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতি : ৪ মাস ধরে তদন্ত চলছে > কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দুই কর্মকর্তা সাময়িক বরখাস্ত

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৪, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ১৪, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : একজনের বদলে লিখিত পরীক্ষা দেন আরেক জন। এ জন্য দেয়া হয় ২ লাখ টাকা। মৌখিক পরীক্ষার জন্য একাধিক কর্মকর্তার কাছে সুপারিশও করা হয়। এমন জালিয়াতি ঘটনা ঘটেছে খোদ বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি নিয়োগ পরীক্ষায়। এ জালিয়াতির ঘটনায় সরাসরি সহযোগিতা করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকেরই দুই কর্মকর্তা। এ ঘটনায় এখন তদন্ত করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। জালিয়াতিতে সহযোগিতার জন্য ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দুই কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। সাময়িক বরখাস্ত হওয়া দুই কর্মকর্তা হলেন- যুগ্ম পরিচালক মো. আলমাছ আলী ও আবদুল্লাহ আল মাবুদ।
সম্প্রতি রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকের চাকরির নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা ঘটে। নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ও উত্তরপত্র ১০ লাখ টাকা থেকে ১৫ লাখ টাকা করে বিক্রি করেছিল সংঘবদ্ধ একটি চক্র। রাষ্ট্র মালিকানাধীন বিভিন্ন ব্যাংক কর্মকর্তাদের যোগসাজশে প্রশ্নপত্র প্রণয়নসহ পরীক্ষা আয়োজনের দায়িত্বপ্রাপ্ত আহছানউল্লাহ ইউনির্ভাসিটি অব সাইন্স এন্ড টেকনোলজির আইসিটি বিভাগ চাকরি প্রত্যাশীদের কাছ থেকে ৬০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এ ঘটনায় সমালোচনার মুখে পড়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটি। এই ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতির ঘটনা বেরিয়ে আসছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নথিপত্র অনুযায়ী, বাংলাদেশ ব্যাংকের সিসিটিভি অপারেটর পদের ২৬টি শূন্যপদের জন্য ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। ২০২০ সালের ২৭ মার্চ এই পদের জন্য লিখিত পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণ করা হয়, তবে করোনার কারণে পরীক্ষা স্থগিত হয়। এরপর গত বছরের ১৬ অক্টোবর বাংলাদেশ ব্যাংক স্কুল এন্ড কলেজে লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ৭০০ পরীক্ষার্থীর মধ্যে অংশ নেন ১৪২ জন। উত্তীর্ণ হয় ২১ শতাংশ। উত্তীর্ণদের মৌখিক পরীক্ষা নেয়া হয় চলতি বছরের ৬ জানুয়ারি। মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেয়া প্রার্থীদের তথ্য যাচাইকালে আবু বকর সিদ্দিক নামে একজন পরীক্ষার্থীর হাতে লেখার গরমিল ধরা পড়ে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদে আবু বকর সিদ্দিক স্বীকার করেন, তার পক্ষে অন্য কেউ পরীক্ষা দিয়েছেন।
এরপর ১৩ জানুয়ারি বিশেষ তদন্তের নির্দেশ দেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির। তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে আসে, আবু বকর সিদ্দিকের পরিবর্তে নেত্তানন্দ পাল নামে একজন পরীক্ষায় অংশ নেন। পরীক্ষায় এমন অনিয়মের পরিকল্পনা করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের যুগ্ম পরিচালক আবদুল্লাহ আল মাবুদ। আর আবু বকর সিদ্দিক ও আবদুল্লাহ আল মাবুদের সঙ্গে নেত্তানন্দ পালের যোগাযোগ করিয়ে দেন অপর যুগ্ম পরিচালক মো. আলমাছ আলী। এজন্য আলমাছ আলীর হিসাবে ২ লাখ টাকা জমা দেন আবু বকর সিদ্দিক। আর আলমাছ আলী তদন্ত কর্মকর্তাদের জানান, সেই দুই লাখ টাকা লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেয়া নেত্তানন্দ পালকে দেয়া হয়েছে। আর আবদুল্লাহ আল মাবুদ মৌখিক পরীক্ষার দিন আবু বকর সিদ্দিকের জন্য একাধিক কর্মকর্তার কাছে সুপারিশ করেন।
নিয়োগ পরীক্ষায় অনিয়মের সত্যতা পাওয়ার পর বাংলাদেশ ব্যাংকের যুগ্ম পরিচালক আবদুল্লাহ আল মাবুদ ও মো. আলমাছ আলীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করে তদন্ত কমিটি।
এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৩ জুন দুই যুগ্ম পরিচালক আবদুল্লাহ আল মাবুদ ও মো. আলমাছ আলীকে সাময়িক বরখাস্ত করে বাংলাদেশ ব্যাংক। চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র ও মানবসম্পদ বিভাগের দায়িত্বে থাকা নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম ভোরের কাগজকে বলেন, অভিযোগের প্রেক্ষিতে দুই কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। ওই নিয়োগ পরীক্ষাও বাতিল করা হয়েছে। তবে তদন্ত এখনো চলছে। পুরোপুরি তদন্ত শেষ না হলে কিছু বলা যাবে না। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা আশঙ্কা করছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অন্য পদের নিয়োগেও বিভিন্নভাবে জালিয়াতি হয়েছে। এ নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা আছে। তবে কোনো তদন্ত না হওয়ায় জড়িতরা ধরাছোঁয়ার বাইরেই রয়ে গেছেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়