কক্সবাজার : জহিরুল হত্যার ঘটনায় শিবির নেতা গ্রেপ্তার

আগের সংবাদ

‘ভয়কে জয়’ করেছেন এসএসসি পরীক্ষার্থীরা

পরের সংবাদ

বঙ্গবন্ধু হাই-টেক সিটি ঘিরে ডানা মেলছে সমৃদ্ধির স্বপ্ন

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৪, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ১৪, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ইমরান রহমান, কালিয়াকৈর (গাজীপুর) থেকে ফিরে : তথ্য প্রযুক্তিনির্ভর শিল্প বিকাশের মাধ্যমে আর্থ-সামাজিক সমৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যে দেশের প্রথম হাই-টেক পার্ক হিসেবে শূন্য থেকে যাত্রা শুরু করে বঙ্গবন্ধু হাই-টেক সিটি। মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে স্বপ্ন তার ডানা মেলতে শুরু করেছে গাজীপুরের কালিয়াকৈরের এই হাই-টেক সিটিতে। এরই মধ্যে ৭০টি কোম্পানি ১২০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে। উৎপাদন করা হচ্ছে কিডনি ডায়ালাইসিস মেশিন, ফিচার ফোন, অপটিক্যাল ফাইবার, লিথিয়াম ব্যাটারিসহ অত্যাধুনিক ডিজিটাল ডিভাইস। এখান থেকেই ডেভেলপ করা হচ্ছে বিভিন্ন অপারেটরের নেটওয়ার্ক। বিভিন্ন কোম্পানি তৈরি করছে ডাটা সেন্টার। অদূর ভবিষ্যতে এখান থেকেই ল্যাপটপ, রেফ্রিজারেটর, ব্লাড থেকে প্লাজমা তৈরিসহ বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে অত্যাধুনিক যন্ত্রাংশ উৎপাদন করা হবে। এতে রপ্তানি আয় বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে কর্মসংস্থান হবে ১ লাখেরও বেশি মানুষের।
সরজমিনে দেখা যায়, কালিয়াকৈরে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের পাশেই ৩৫৫ একর জায়গা নিয়ে বঙ্গবন্ধু হাই-টেক সিটির অবস্থান। বাইরে থেকে দেখে বোঝার উপায় নেই ভেতরে বনাঞ্চল আর জলাশয়ের মাঝে গড়ে উঠছে অত্যাধুনিক সব ভবন। কোথাও চলছে রাস্তা-ড্রেন নির্মাণ ও জলাশয় বা লেকের সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ, আবার কোথাও বিশাল জায়গাজুড়ে চলছে ভবনের পাইলিংয়ের কাজ। কর্তৃপক্ষ জানায়, ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ বিনিয়োগ বোর্ডের সভায় কালিয়াকৈরে হাই-টেক পার্ক স্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়। ১৯৯৯ সালে কাজ শুরু করলেও সরকার বদলের সঙ্গে সঙ্গে অন্ধকারে ডুবে যায় সম্ভাবনাময় হাই-টেক পার্কটি। ২০০৮ সালে শেখ হাসিনার সরকার ফের ক্ষমতায় এলে ফের শুরু হয় পথচলা। ইতোমধ্যে ৭০টি প্রতিষ্ঠানকে ১২৭ একর জমি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ২০২৫ সালের মধ্যে এখানে বিনিয়োগ হবে প্রায় ১৩০০ মিলিয়ন ডলার। তখন ৪১ হাজার

২৬৯ জনের কর্মসংস্থান হবে এতে। আর কাজ শেষ হলে ১ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হবে। সিলিক্যান ভ্যালির আদলে পিপিপি প্রকল্পের মাধ্যমে গড়ে তোলা হচ্ছে এই টেক সিটি। পার্কে উচ্চগতির ইন্টারনেট, সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ সরবরাহ, যোগাযোগের জন্য শাটল ট্রেনের ব্যবস্থা থাকছে। ঢাকার সঙ্গে রয়েছে একাধিক বিকল্প সড়ক। গাজীপুর সিটি হয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের সঙ্গেও রয়েছে উন্নত যোগাযোগ। পদ্মা সেতু চালু হলে নদীবন্দর মোংলার সঙ্গে সড়কপথে যোগসূত্র স্থাপন করবে। এখানকার ৯০ শতাংশ কোম্পানি ডিজিটাল ডিভাইস উৎপাদন করবে বলে জানানো হয়েছে।
নোকিয়ার মতো মোবাইল খাতের জায়ান্টরা এখানে আস্থা রেখেছে। হাই-টেক সিটির ৫ নম্বর ব্লকে পাঁচ একর জমি বরাদ্দ নিয়ে তারা কারখানা গড়ে তুলেছে। নোকিয়ার হেড অব বিজনেস ফারহান রশীদ বলেন, নোকিয়ার বিক্রি বাড়লে সব মিলিয়ে সহস্রাধিক মানুষের কর্মসংস্থান হবে এখানে। দেড় একর জায়গা বরাদ্দ পেয়েছে রবি। সেখানে ২ দশমিক ৬ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করা হচ্ছে। ফেয়ার ইলেক্ট্রনিক্স বরাদ্দ পেয়েছে তিন একর জমি। প্রতিষ্ঠানটি বিনিয়োগ করবে ১০ মিলিয়ন ডলার। অরিক্স বায়ো-টেক লিমিটেড ব্লাড থেকে প্লাজমা উৎপাদন করবে। পার্কটিতে তৈরি হচ্ছে বিশ্বমানের কিডনি ডায়ালাইসিস মেশিন। উদ্যোক্তারা আশা করছেন, এতে কিডনি রোগীদের ডায়ালাইসিস খরচ অনেকাংশে কমে আসবে। জায়গা বরাদ্দ নিয়েছে ওয়ালটন ও স্যামসাং।
বঙ্গবন্ধু হাই-টেক সিটির পরিচালক (অর্থ ও প্রশাসন) এএনএম শফিকুল ইসলাম ভোরের কাগজকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী এলাকার পরিবেশকে অক্ষুণ্ন রেখে শিল্পায়ন করা হচ্ছে। থাকছে ২০ শতাংশ সবুজায়ন, জলাশয়গুলো উন্নত করা হচ্ছে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক ভোরের কাগজকে বলেন, ২০০৮ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মানের ঘোষণা দেন। সেই রূপকল্প বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে বঙ্গবন্ধু হাই-টেক সিটিসহ সারাদেশে ৩৯টি হাইটেক পার্ক তৈরির কাজ শুরু হয়। আমরা ডিজিটাল ডিভাইস ম্যানুফ্যাকচারিং হাবে পরিণত হতে চাই। বঙ্গবন্ধু হাই-টেক সিটি সেই যাত্রায় অনেকদূর এগিয়ে নিবে আমাদের। প্রতিমন্ত্রী বলেন, হাই-টেক সিটিতে বিভিন্ন কোম্পানি সফটওয়্যার, হার্ডওয়্যার, ল্যাপটপসহ বিভিন্ন যন্ত্রপাতি তৈরি করবে। কারখানা স্থাপন করবে দেশীয় ব্রান্ড ওয়ালটনসহ অন্যতম মোবাইল কোম্পানি স্যামসাং। আমরা আশা করছি, হাই-টেক সিটিতে বিনিয়োগ করা এসব কোম্পানির ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ লেখা পণ্য ছড়িয়ে যাবে সারা পৃথিবীতে। সেই সঙ্গে এসব পণ্য রপ্তানি করে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার উপার্জন করে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে উন্নত রাষ্ট্র হওয়ার দিকে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়