কক্সবাজার : জহিরুল হত্যার ঘটনায় শিবির নেতা গ্রেপ্তার

আগের সংবাদ

‘ভয়কে জয়’ করেছেন এসএসসি পরীক্ষার্থীরা

পরের সংবাদ

পেটেন্ট স্বত্ব উন্মোচন ও করোনা টিকার সর্বজনীন অধিকার

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৪, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ১৪, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কোভিড ১৯-এর টিকার হার বিবেচনায় ধনী ও গরিব দেশের মধ্যে পার্থক্য সুস্পষ্টভাবে বিদ্যমান থাকলেও বাংলাদেশের অবস্থান এক্ষেত্রে কিছু প্রশংসনীয় বলা যায়। গরিব বা উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য এটা সুখবর যে এত দিন পর হলেও যুক্তরাষ্ট্রের বাইডেন প্রশাসন টিকার পেটেন্ট স্বত্ব এ ব্যাপারে ছাড় দিতে নীতিগতভাবে রাজি হয়েছে। যদিও জার্মানি তাদের টিকার পেটেন্ট ও মেধাস্বত্বের ছাড় দিতে নারাজ। এখানে জার্মানির উল্টো নীতি পোষণ করায় যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি ফাইজারের সঙ্গে জার্মানির কোম্পানির বায়োএনটেক যৌথ যে টিকা উৎপাদন প্রক্রিয়া সেটার ব্যাপারে পরবর্তী পদক্ষেপ কী হয় সেটা দেখার বিষয়। যে কয়েকটি আইনকে একত্রিতভাবে মেধাস্বত্ব আইন বলা হয় পেটেন্ট তার মধ্যে অন্যতম। কিছু কিছু অ্যাগ্রিমেন্ট তথা চুক্তির ওপর ভিত্তি করে এই আইনের ব্যবহার হলেও প্রত্যেক দেশেরই আলাদা পেটেন্ট আইন আছে আমাদের দেশে, যা পেটেন্ট ডিজাইন আইন, ১৯১১ নামে পরিচিত। যে কোনো পণ্যের পেটেন্ট স্বত্বের মাধ্যমে এই পণ্যের উদ্ভাবন, উদ্ভাবন প্রক্রিয়াকে ও বাজারজাতকরণকে সংরক্ষণ করা হয়। অর্থাৎ কোনো ব্যক্তি বিশেষ বা কোনো কোম্পানি যদি কোনো পণ্য বা প্রক্রিয়ার উদ্ভাবন প্রক্রিয়া সংরক্ষণ করতে চায়, তাহলে তাকে ওই নির্দিষ্ট দেশের বা ভৌগোলিক সীমার নির্ধারিত পেটেন্ট আইনের আশ্রয় নিতে হয় এবং পরবর্তীতে এই পেটেন্ট আইনের অধীনে ওই নির্দিষ্ট কোম্পানি তাদের পেটেন্টকৃত উদ্ভাবন প্রক্রিয়া বা কৌশল চড়া দামে বিক্রি করে বা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য অর্থের বিনিময়ে পেটেন্ট লাইসেন্সিং আকারে অন্য কোম্পানিকে দিতে পারে। কিন্তু বর্তমান সময়ে পৃথিবীর সব দেশই যেহেতু কোভিড-১৯ করোনা ভাইরাসে জর্জরিত, তাই কোভিড ১৯-এর টিকার পেটেন্ট ছাড় দিতে গরিব দেশগুলো টিকা উৎপাদনকারী দেশগুলোর দিকে তাকিয়ে আছে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী গত কয়েক দিন আগে জাতিসংঘের ভাষণে স্পষ্ট ভাষায় এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেয়ার কথা বলেছেন, অর্থাৎ যদি উন্নত দেশগুলো পেটেন্ট কৌশল উন্মুক্ত করে দেয় তাহলে স্থানীয় পর্যায়ে অনেক দেশ করোনার টিকা উৎপাদন করতে পারবে। করোনা টিকার এই পেটেন্ট স্বত্বই গরিব ও ধনী দেশগুলোর মধ্যে বৈষম্য প্রকট করে তুলেছে। সাধারণত ব্যবসায়িক প্রয়োজনে তথা অধিক মুনাফা অর্জনের জন্য কোনো প্রক্রিয়া বা কৌশলের পেটেন্ট নিবন্ধন করা হয়। এমনকি ওষুধ উৎপাদনকারী দেশ ও তাদের নির্দিষ্ট ওষুধ উৎপাদনের কৌশলের পেটেন্ট স্বত্ব নিয়ে রাখে। কিন্তু এই ক্ষেত্রে কোভিড ১৯-এর টিকার ধারণা ভিন্ন, কোভিড-১৯ করোনা ভাইরাস বিশ্বব্যাপী অতিমারি হিসেবে রূপ নিয়েছে। এখানে টিকা উৎপাদনকারী দেশগুলো তাদের নিজস্ব উৎপাদনী কৌশলে পেটেন্ট স্বত্ব নিয়ে রাখলে গরিব দেশের সামগ্রিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে এবং অতিমারি চূড়ান্ত রূপ নেবে। বিশ্বের সব দেশ যে টিকা উৎপাদনে সক্ষম নয়, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। আবার পৃথিবীর সব দেশ যে অতিমাত্রায় ধনী তাও নয় যে, চড়া মূল্যে তাদের দেশের মানুষকে টিকার দুটি ডোজ প্রদান করতে পারবে। তাই টিকা প্রাপ্তি পৃথিবীর সব মানুষের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দিতে মেধাস্বত্ব শিথিলের বিকল্প নেই। পেটেন্ট স্বত্ব সবসময়ই পেটেন্টকৃত পণ্যের অবাধ সরবরাহ, বাজারজাতকরণ ও মুনাফার ওপর ওই নির্দিষ্ট কোম্পানির একচেটিয়া অধিকার সংরক্ষণ করে থাকে। এই অধিকার দেশভেদে ২০ বছর পর্যন্ত হয়। আমাদের দেশে পেটেন্ট ও ডিজাইন আইন ১৯১১ অনুযায়ী নতুন কোনো উদ্ভাবনের জন্য স্বত্বাধিকারকে ১৬ বছর মেয়াদের জন্য একচেটিয়া বা নিরঙ্কুশ অধিকার প্রদান করা হয়। ১৬ বছর পরে যে কেউ ওই উদ্ভাবিত পণ্য স্বত্বাধিকারীর বিনা অনুমতিতে ব্যবহার করতে পারেন। প্রস্তাবিত নতুন পেটেন্ট আইনে ট্রিপস (ঞজওচঝ-ঞৎধফব জবষধঃবফ অংঢ়বপঃং ড়ভ ওহঃবষষবপঃঁধষ চৎড়ঢ়বৎঃু জরমযঃং) চুক্তির সঙ্গে সম্মতি রেখে ও বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে মিল রেখে ২০ বছর করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এই নির্দিষ্ট মেয়াদে শুধু পেটেন্ট স্বত্বের অধিকারী কোম্পানি বা ব্যক্তি তাদের কৌশল ও উদ্ভাবন প্রক্রিয়ার একচ্ছত্র অধিকার এবং উৎপাদন ও উৎপাদিত পণ্যের বাজারজাতকরণের নিরঙ্কুশ অধিকারী হয়।
অর্থাৎ করোনা ভাইরাসের টিকা প্রাপ্তির জন্য পৃথিবীর বেশিরভাগ দেশ বা গরিব দেশ ওই পেটেন্ট স্বত্বাধিকার দেশের দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে নতুবা ব্যাপক হারে করোনায় আক্রান্ত হতে হবে। তাইতো বিশ্বজুড়ে টিকার পেটেন্ট স্বত্ব উন্মুক্ত করার দাবি সময়োপযোগী ও সর্বজনীন। যদিও ইতোমধ্যে ভারত, বাংলাদেশ, দক্ষিণ আফ্রিকাসহ ১০০টিরও বেশি দেশ এই পেটেন্ট স্বত্ব তুলে দেয়ার দাবি জানাচ্ছে। এটা ঠিক যে, করোনার টিকা প্রস্তুত করতে বহু কোম্পানির গবেষণা তথা পরীক্ষামূলক প্রয়োগের জন্য বা কাঁচামালসহ প্রতিটি ধাপে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করতে হয়েছে, তাই যদি টিকার পেটেন্ট স্বত্ব প্রত্যাহার হয়ে যায় তখন ওই কোম্পানিতে সেই ব্যয়কৃত অর্থ ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে সংগ্রহের পথ বন্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু যেখানে মানবতা বিপন্ন সেখানে পেটেন্ট স্বত্ব প্রত্যাহারের ব্যাপারে জরুরি নীতিগত সমন্বিত সিদ্ধান্ত নিতেই হবে। ট্রিপস (ঞজওচঝ-ঞৎধফব জবষধঃবফ অংঢ়বপঃং ড়ভ ওহঃবষষবপঃঁধষ চৎড়ঢ়বৎঃু জরমযঃং)-এর দোহা ডিক্লারেশনে ট্রিপস স্বাক্ষরিত দেশগুলোর জন্য অপরিহার্য ওষুধের পেটেন্ট স্বত্ব শিথিল করা হয়। তাই এই সূত্র ধরে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানে পেটেন্ট টিকার ভৌগোলিক সমতাভিত্তিক দ্বার উন্মোচনের জন্য কোভিড-১৯ টিকার স্বত্ব নির্দিষ্ট সময়ের জন্য হলেও উন্মুক্ত করা সময়ের দাবি।
নবেন্দু ভট্টাচার্য্য
আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়