কক্সবাজার : জহিরুল হত্যার ঘটনায় শিবির নেতা গ্রেপ্তার

আগের সংবাদ

‘ভয়কে জয়’ করেছেন এসএসসি পরীক্ষার্থীরা

পরের সংবাদ

তারকা হোটেলে ডিজে পার্টির নামে উদ্দাম নৃত্য উড়ছে টাকা : পুলিশের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষিত!

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৪, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ১৪, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কামরুজ্জামান খান : ঢাকার ৬টি তারকা হোটেলে কোনো ধরনের অনুমোদন ছাড়াই ডিজে পার্টির নামে ফ্রি স্টাইলে চলছে উদ্যম নৃত্য ও গান। সাতজন মিলে আয়োজন করে থাকেন এসব পার্টির। এসব বিষয় ওপেন সিক্রেট হলেও মাসোহারা চুক্তি থাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সবাই নীরব। আবার পুলিশের গুলশান জোন থেকে এসব বন্ধে চিঠি দেয়া হলেও তোয়াক্কা করছে না অনেক হোটেল কর্তৃপক্ষ। এসব হোটেল পরিচালনাকারীদের অনেকে মানিলন্ডারিং, মাদকদ্রব্যসহ একাধিক মামলার আসামি এবং অনেকের নামে আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকলেও দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছেন। রাতের জলসায় হচ্ছেন অতিথি। সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলা এসব আসরে উড়ছে লাখ লাখ টাকা। মদের নেশায় বিভোর হয়ে বেসামাল লোকজন তরুণীদের মোহে পড়ে হচ্ছেন নিঃস্ব। হিরো থেকে জিরো হওয়ার ঘটনা ঘটছে হরহামেশা। আলো-আঁধারির খেলায় অনেকে হচ্ছেন সর্বস্বান্ত। যাদের মধ্যে উঠতি রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, মাছ ব্যবসায়ী, কাঁচামাল ব্যবসায়ী ও জমি ব্যবসায়ী রয়েছে। এসব নিয়ে কেউ মুখ খুললে মামলা দিয়ে হয়রানির ঘটনাও কম নয়। এসবের সঙ্গে জড়িয়ে আছে অনেক রাঘববোয়ালের নাম।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর কমিশনার (ডিএমপি) মোহা. শফিকুল ইসলাম ভোরের কাগজকে বলেছেন, পুলিশ এসব বিষয়ে সোচ্চার রয়েছে। অভিযোগ পেলে বা নজরে এলে ব্যবস্থা নেয়া হয়ে থাকে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আব্দুস সবুর মণ্ডল বলেছেন, অভিযান চলমান প্রক্রিয়া। অধিদপ্তরের পুলিশ ও র‌্যাব অভিযান পরিচালনা করে থাকে। ডিজে পার্টি করার সুনির্দিষ্ট তথ্য পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জানা গেছে, খিলক্ষেতের ঢাকা রিজেন্সী, লা-মেরিডিয়ান, বিজয়নগরের ফারস, পাঁচ তারকা হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল ও সোনারগাঁও এবং রাজধানীর উপকণ্ঠ টঙ্গীতে জাভান হোটেল নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে চালাচ্ছে রাতের জলসা। ফারস হোটেলে নিশাত, ঢাকা রিজেন্সীতে শাহীন, লা-মেরিডিয়ানে জয়নাল, বিপুল ও বাশার এবং ইন্টারকন্টিনেন্টালে মিন্টুর নেতৃত্বে জমে উঠে রাতের ডিজে পার্টি। এসব পার্টিতে ১০-২০ লাখ টাকা উড়ানো হয়। যার মধ্যে ৫০০ ও ১০০০ হাজার নোট থাকে। অবশ্য হোটেল র‌্যাডিসনে জয়ের তদারকিতে শালীন নাচ-গান হয়ে থাকে বলে জানা গেছে। গুলশানের ফু-ওয়াং ক্লাবে অনেক বছর ধরে

অবৈধ ডিজে পার্টি চললেও র‌্যাবের অভিযানের পর থেকে তা বন্ধ রয়েছে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা জানান, এসব তারকা হোটেলে বারের অনুমোদন থাকলেও লাইসেন্সে নাচ-গানের কোনো কথা উল্লেখ নেই বা অনুমোদন নেই। তবে গানের আয়োজন বা পার্টি করার জন্য মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট দুই মেট্রো ও জোনের কর্মকর্তারা লেনদেনের মাধ্যমে মাসিক অলিখিত চুক্তিতে একটি অনুমতিপত্র দিয়েছে। যদিও এর আইনি কোনো বৈধতা নেই। আর কথিত ওই অনুমতিপত্রে গানের কথা বলা হলেও বলা নেই উদ্যম নৃত্যের কথা। বরং রয়েছে নিষেধাজ্ঞা।
সূত্র মতে, পুলিশের গুলশান জোনের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) সুদীপ কুমার চক্রবর্তী গত ১৮ ফেব্রুয়ারি এক পত্রে ঢাকা রিজেন্সী কর্তৃপক্ষকে ডিএমপি কমিশনারের অনুমতি ব্যতীত সেখানে সব ধরনের নাচ-গান ও পার্টি চালানো যাবে না বলে অবহিত করেন। ওই পত্রে রিজেন্সী ডিএমপি অর্ডিন্যান্সের ২৫ (খ), ২৭ (ঙ) এবং ৩১ ধারা লঙ্ঘন করছে বলেও উল্লেখ করে সতর্ক করা হয়। কিন্তু এরপরও তাদের নাচ-গান ও টাকা উড়ানো অনুষ্ঠান চলছে। এখনো সপ্তাহে ছয় দিনই মঞ্চের লাইট বন্ধ করে ৭টা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত ডিজে পার্টির নামে আলো-আঁধারির খেলা (এর ভিডিওচিত্র ভোরের কাগজের কাছে সংরক্ষিত আছে) চললেও পুলিশ-র‌্যাব ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা রহস্যজনক কারণে নীরব রয়েছেন। অবশ্য এ প্রসঙ্গে পুলিশের গুলশান জোনের বর্তমান উপকমিশনার (ডিসি) আসাদুজ্জামান বলেছেন, যেসব জিনিস নিষিদ্ধ- তার বিরুদ্ধে পুলিশের অভিযান চলমান। এমন কিছু ঘটে থাকলে খতিয়ে দেখে অভিযান পরিচালনা করা হবে। ঢাকা রিজেন্সী, লা-মেরিডিয়ানের ব্যাপারেও খোঁজ নেয়া হবে বলে জানান তিনি। অবশ্য প্রতিবেদক কথা বলার পর ১০ নভেম্বর বুধবার সন্ধ্যার পর পদস্থ কর্মকর্তাদের নির্দেশে খিলক্ষেত থানার ভারপ্রাপ্ত অফিসার মুন্সী সাব্বির আহমেদ ঢাকা রিজেন্সী হোটেলে গিয়ে ডিজে পার্টি না চালানোর নির্দেশনা দেন বলে পুলিশ সূত্র নিশ্চিত করেছে। তবে আয়োজকরা ফের পার্টি চালু করার সুযোগ খুঁজছেন বলে জানা গেছে। খিলক্ষেত থানার ভারপ্রাপ্ত অফিসার মুন্সী সাব্বির আহমেদ বলেছেন, আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকায় কবির রেজা নামে একজনকে তারা খুঁজছেন। যিনি ঢাকা রিজেন্সীর ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে আছেন। তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা থাকার কথা জানিয়েছেন পুলিশের গুলশান জোনের কর্মকর্তারা।
গোয়েন্দা পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, ঢাকা রিজেন্সীর ব্যবস্থাপনা পরিচালক কবির রেজার বিরুদ্ধে ৯ নভেম্বর সিআর ৩৫১/২১ নম্বর মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আদালত। ঢাকা মহানগর পুলিশ ও পুলিশের গুলশান জোনের পদস্থ কর্মকর্তা এবং খিলক্ষেত থানা পুলিশ এ ব্যাপারে জ্ঞাত হলেও রহস্যজনক কারণে তাকে ধরতে উদ্যোগ নেয়নি। বরং পরোয়ানা জারির পর পরই থানা থেকে খবর যায় কবির রেজার কাছে। উত্তরার বাসাতে অবস্থান নেন তিনি। একই হোটেলের মালিকানার অংশীদার অনেকেই একাধিক মামলার আসামি এবং কারাগারে গেছেন বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে। ওই হোটেলের গত ২০ সেপ্টেম্বর এক রশিদে খিলক্ষেত থানায় একজনের বিরুদ্ধে মামলা রুজুর জন্য দেড় লাখ টাকা দেয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয় (কপি ভোরের কাগজের কাছে সংরক্ষিত আছে)! যাতে কর্তৃপক্ষের চারজনের স্বাক্ষর রয়েছে। সাবেক সংসদ সদস্য একজন অংশীদারের সঙ্গে বিরোধের জের ধরে ওই মামলা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
ডিজে পার্টিতে অংশগ্রহণকারী একাধিক ব্যক্তি জানান, শুক্রবার ছাড়া সপ্তাহে ছয় দিন এসব হোটেলে চলে নাচ-গান। নাচ-গানের আসরে প্রতি রাতে উড়ে লাখ লাখ টাকা। এর মধ্যে নাচ এবং গানের শিল্পীরা সেখানে যাওয়া অতিথিদের আকৃষ্ট করে তাদের কাছে নামি দামি ব্র্যান্ডের বিদেশি মদ-বিয়ার বিক্রি করে থাকেন। পেগ ও বোতল ধরে বিক্রি করা হয় ব্র্যান্ডের মদ। এর সঙ্গে হোটেলের আয় বা ব্যবসার স্বার্থ জড়িত। বেশি মদ-বিয়ার বিক্রি করা তরুণীদের পুরস্কৃত হরা হয়। আবার মদপানে বিভোর লোকজন বনিবনা করে অনেক তরুণীকে সঙ্গে করে নিয়ে যান। মাঝ রাতে শিল্পী ও হোটেল কর্তৃপক্ষ মিলে পার্টিতে উড়ানো টাকা কুড়িয়ে ভাগবাটোয়ারা করেন। এভাবে রাতের পর রাত চলছে ডিজে পার্টি নামের অবৈধ কীর্তি।
অনুমোদনহীন ডিজে পার্টির ব্যাপারে কথা বলতে হোটেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও কেউ কোনো কথা বলতে চাননি। প্রসঙ্গ এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন তারা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়