কক্সবাজার : জহিরুল হত্যার ঘটনায় শিবির নেতা গ্রেপ্তার

আগের সংবাদ

‘ভয়কে জয়’ করেছেন এসএসসি পরীক্ষার্থীরা

পরের সংবাদ

চীনে উইঘুর গণহত্যা নিয়ে নীরব পাকিস্তান

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৪, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ১৪, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

চীন তাদের প্রচুর সাহায্য করে। তাই তিনি চীনে উইঘুর মুসলিমদের ওপর অত্যাচারের কথা জেনেও নীরব রয়েছেন। আমেরিকার ফরেন পলিসি ম্যাগাজিনের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে এ কথা স্বীকার করলেন পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। পাশাপাশি ইমরানের সাফাই, কাশ্মিরের সঙ্গে নাকি উইঘুর সমস্যার তুলনা চলে না। তাই কাশ্মির নিয়ে ইসলামাবাদ সরব হলেও এখন চুপ উইঘুর মুসলিমদের বিষয়ে। অথচ চীনের জিনজিয়াং প্রদেশে উইঘুরদের ওপর চলছে গণহত্যা। আর কাশ্মিরে ভারত সরকারের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে শান্তি। কাশ্মির উপত্যকার মানুষ আজ উন্নয়নের অন্যতম অংশীদার। তবু ইমরান ব্যস্ত কাশ্মির নিয়ে ভারতের সমালোচনায়। অন্যদিকে চীনে ১০ লাখেরও বেশি মুসলিম আজ বন্দি। চলছে গণহত্যা। নারীরা শিকার হচ্ছেন গণধর্ষণের। ক্রীতদাসের মতো আচরণ করা হচ্ছে উইঘুর পুরুষদের সঙ্গে। নারীদের সন্তান জন্ম দেয়ার অধিকারটুকুও লুণ্ঠিত। তবু নীরব পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী।
উইঘুররা আসলে তুর্কি মুসলিম। মঙ্গোলিয়া ও তুর্কমেনিস্তান থেকে তারা এসে জিনজিয়াং প্রদেশে বসবাস করছেন। ১ কোটি ১০ লাখেরও বেশি এই উইঘুর মুসলিমদের ওপর অমানবিক অত্যাচার চালাচ্ছে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির সরকার। বিভিন্ন সরকারি নির্দেশনামার উল্লেখ করে নিউইয়র্ক টাইমস তুলে ধরেছে উইঘুরদের প্রতি চীনা মনোভাব। জিনজিয়াং ঘুরে আসার পর বিভিন্ন সময়ে শি জিনপিং উইঘুর দমনে সরকারি আধিকারিকদের কড়া নির্দেশ দিয়েছেন। উইঘুরদের হাতে ছুরিকাঘাতের ঘটনার পর অত্যাচারের মাত্রা বেড়ে যায়। শুরু হয় আরো অত্যাচার। শি নির্দেশ দেন, ‘সন্ত্রাস, বিচ্ছিন্নতাবাদ ও অনুপ্রবেশের বিরুদ্ধে সার্বিক সংগ্রামের।’ এরপরই বৃদ্ধি পায় সন্ত্রাসী তকমা লাগিয়ে উইঘুরদের মানবাধিকার হরণের। একনায়কতন্ত্রের মোড়কে উইঘুরদের প্রতি কোনো দয়ামায়া না দেখিয়ে পুরোমাত্রায় দমন-পীড়ন চালানোর নির্দেশ আসে খোদ রাষ্ট্রপ্রধানের কাছ থেকে। বিভিন্ন সরকারি তথ্য থেকে এমনই প্রতিবেদন উঠে এসেছে নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে।
ইহুদি গণনিধন যজ্ঞের সঙ্গে অনেকেই তুলনা করছেন উইঘুর গণহত্যার। নাৎসি বাহিনীর সেই বর্বর আক্রমণের প্রতিবাদে ২৭ জানুয়ারি যুক্তরাজ্যের ইহুদিরা সমবেত হয়েছিলেন হলোকাস্ট স্মরণ দিবসে। ইহুদি আইনজ্ঞ থেকে শুরু করে ইহুদিদের বড় অংশ উইঘুরদের ওপর চীনা অত্যাচারের বিরুদ্ধে গর্জে ওঠেন। তাদের দাবি, উইঘুরদের ওপর চীনের ঘৃণ্য ও বর্বরোচিত অত্যাচারের প্রতিবাদে কড়া অবস্থান নিতে হবে যুক্তরাজ্যকে। তাদের সাফ কথা, গত শতাব্দীর তিন ও চারের দশকের নাৎসি অত্যাচারের মতোই নৃশংস চীনের উইঘুর দমন নীতি।
জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞ ও বিশ্লেষকরাই বলছেন, ১০ লাখেরও বেশি উইঘুর ও অন্যান্য মুসলিম সংখ্যালঘুদের স্পেশাল ক্যাম্পে বন্দি করে রাখা হয়েছে। উইঘুরদের এই বিশেষ শিবিরে বন্দি রেখে চালানো হচ্ছে দমন-পীড়ন। ক্যাম্পের বাইরেও রয়েছে কড়া নজরদারি। গোটা জিনজিয়াং প্রদেশই হয়ে উঠেছে একটা বড় বন্দিশালা। উইঘুরদের ধর্মবিশ্বাসটুকুও কেড়ে নেয়া হচ্ছে। মুসলিম হলে চলবে না, তাদের বেঁচে থাকতে হলে হতে হবে চায়নিজ। ধর্মান্তকরণে রাজি না হলেই পাঠানো হচ্ছে স্পেশাল ক্যাম্পে। নামে অন্তঃকরণ ছাউনি হলেও আসলে এগুলো হচ্ছে মগজধোলাইয়ের কারখানা। অত্যাচারের সবরকম বন্দোবস্তই রয়েছে এই ছাউনিগুলোতে। চীনের এই অমানবিক আচরণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ শুরু হয়েছে আন্তর্জাতিক স্তরে। উইঘুর ও অন্যান্য মুসলিমের ওপর বর্বরোচিত আচরণের প্রতিবাদ করছে অনেক দেশই। জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের সময় আমেরিকাসহ অন্তত ৩০টি দেশ চীনে ‘নিপীড়নের ভয়ংকর অভিযান’-এর বিরুদ্ধে গর্জে ওঠে। তাদের দাবি, চীনকে অবিলম্বে উইঘুর নির্যাতন বন্ধ করতে হবে। গণহত্যার নিন্দায় সরব হয় বিভিন্ন দেশ। জঙ্গি তকমা দিয়ে সংখ্যালঘুদের মানবাধিকার হরণের তীব্র প্রতিবাদ শুরু হয়েছে গোটা বিশ্বে। তবু থামার কোনো লক্ষণ নেই। মুসলিম নারীর গর্ভধারণের অধিকার হরণ করে তাকে পণ্যে পরিণত করেছে চীনের কমিউনিস্ট সরকার। অথচ নীরব মুসলিম দেশ পাকিস্তান।
মুসলিমদের দুর্দশার কথা শুনেও নীরব পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী। অথচ ভারতের সমালোচনায় কোনো খামতি নেই তার। ফরেন পলিসি ম্যাগাজিনের সঙ্গে সাক্ষাৎকারেও শোনা গেছে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সমালোচনায় সরব তিনি। সেনাবাহিনীর হাতের পুতুল ইমরানের অভিযোগ, মোদি কিছুতেই আলোচনায় বসতে রাজি হচ্ছে না। ঘরোয়া সমস্যা থেকে দৃষ্টি ঘোরাতে ভারত পাক-সীমান্তে বোমা ফেলতে পারে এমন আজগুবি আশঙ্কার কথা শোনালেও পাক-ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক একটি বারের জন্যও উইঘুরদের নিয়ে কোনো কথা বলতে চাননি। চীনে মুসলিমদের দুর্দশা নিয়ে তার ধারাবাহিক নীরবতাই বুঝিয়ে দেয়, চীনের কাছে মাথা বিক্রি করে বসে রয়েছে পাকিস্তান। মুসলিমদের শত দুর্দশাতেও তাই নীরব ইমরান।
আমেরিকাও পাকিস্তানকে উইঘুর নিয়ে মুখ খুলতে বলেছে। অন্তত কাশ্মিরের মতোই উইঘুরদের নিয়েও ইসলামাবাদ উদ্বেগ প্রকাশ করুক, চাইছে মার্কিন প্রশাসন। কিন্তু তবু নীরব পাকিস্তান। ১০ লাখেরও বেশি মুসলিম সেখানে বন্দি, তাতেও কোনো প্রতিক্রিয়া নেই প্রতিবেশী মুসলিম রাষ্ট্রের। সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও বা বর্তমানে বাইডেন প্রশাসনের অ্যান্থনি ব্লিনকেন নিশ্চিত, উইঘুর ও অন্যান্য মুসলিমের ওপর গণহত্যা চালাচ্ছে চীন। নেমে আসছে অনাহার, যৌন সন্ত্রাস। ক্রীতদাস প্রথার মতোই অনিচ্ছাতেও শ্রম দিতে বাধ্য করা হচ্ছে উইঘুরদের। অঙ্গ প্রতিস্থাপনেও বাধ্য হচ্ছেন তারা। মগজধোলাই শিবিরগুলোতে চলছে বেঁচে থাকার যাবতীয় মৌলিক অধিকারহরণ। এই শিবির থেকে যারা বেঁচে ফিরতে পেরেছেন তারা জানিয়েছেন, গর্ভধারণের ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে নারীদের ভোগ্য পণ্য হিসেবে বাজারে ছাড়া হচ্ছে। আর এই অত্যাচার থেকে দুনিয়ার দৃষ্টি ঘোরাতে চীন পাল্টা প্রচারে বলে চলেছে, এই নিরীহ উইঘুররা নাকি স্বাধীনতার জন্য গৃহযুদ্ধ বাধাতে চাইছে। তারা নাকি চীনে অশান্তি সৃষ্টিতে মত্ত। তাই চলছে অত্যাচার। লুণ্ঠিত হচ্ছে উইঘুরদের বেঁচে থাকার অধিকার। সব দেখে, সব শুনেও নীরব দর্শক পাকিস্তান। কারণ চীন তাদের টাকা দেয়। টাকা দিয়ে ইমরানের মুখ বন্ধ করে রেখেছে। মুসলিমদের দুর্দশাতেও ইমরানের বিবেক আজো দংশনমুক্ত।
সৈয়দ ইউসুফ শাহ : কলাম লেখক।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়