কক্সবাজার : জহিরুল হত্যার ঘটনায় শিবির নেতা গ্রেপ্তার

আগের সংবাদ

‘ভয়কে জয়’ করেছেন এসএসসি পরীক্ষার্থীরা

পরের সংবাদ

চালক-হেলপার গ্রেপ্তার : চলন্ত বাস থেকে ফেলে শিশুকে হত্যা

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৪, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ১৪, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : চলন্ত বাস থেকে ১০ বছর বয়সি শিশু মরিয়ম আক্তারকে ফেলে হত্যার ঘটনায় চালক রাজু মিয়া ও তার সহযোগী ইমরান হোসেনকে গ্রেপ্তার করেছে র?্যাব। শিশুকে চলন্ত বাস থেকে ফেলে হত্যার ঘটনায় দুজনকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে গতকাল শনিবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের র?্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র?্যাব লিগ্যাল এন্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
এর আগে রাজধানীর আব্দুল্লাহপুর ও টঙ্গী এলাকায় গত শুক্রবার রাতে অভিযান চালিয়ে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। নিহত মেয়ে শিশুটি ভিক্ষাবৃত্তির সঙ্গে জড়িত ছিল। ঘটনার দিন সে সাহায্য চাইতে রাইদা বাসটিতে উঠেছিল। বাসের হেলপার এ সময় তাকে গেটলক বাস বলে দরজা খুলে চলন্ত বাস থেকে ফেলে দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। গত ৯ নভেম্বর মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর ভাটারা থানাধীন যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে এ মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। ক্লুলেস এ ঘটনায় ৫০টির বেশি সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে বাসটিকে শনাক্ত করা হয়।
র?্যাব মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, মরিয়ম তার পরিবারের সঙ্গে খিলক্ষেতের কুড়াতলী এলাকায় বসবাস করত। তার বাবা রনি একজন প্রাইভেট কারচালক। মরিয়ম ২০১৯ সালে স্থানীয় একটি স্কুলে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হয়। তবে অর্থের অভাবে তার পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায়। এরপর সে বিভিন্ন জায়গায় অর্থ সহায়তা পাওয়ার উদ্দেশ্যে কুড়িল ও আশপাশের এলাকায় ঘোরাঘুরি করত। ঘটনার দিন সকালে মরিয়ম বাসা থেকে বের হয়ে রাস্তায় পথচারী ও বাসযাত্রীদের কাছে ঘুরে ঘুরে সাহায্য চাচ্ছিল।
সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণে দেখা গেছে, মরিয়ম হেঁটে হেঁটে ফুটওভার ব্রিজ দিয়ে রাস্তা অতিক্রম করে যমুনা ফিউচার পার্কের বিপরীত পাশে আসে। এরপর সে রাইদা সিটিং সার্ভিসের একটি বাসে ওঠে। বাসটি সামনে যেতেই একজন পথচারীকে হাত দিয়ে ইশারা করতে থাকে। সিসিটিভি ক্যামেরার অবস্থান ও সময় বিবেচনা করে নিশ্চিত হওয়া যায়, এখানেই মৃত্যু হয় শিশু মরিয়মের। অর্থ সহায়তা চাওয়ার উদ্দেশ্যে বাসটিতে উঠেছিল মরিয়ম। কিন্তু ভিকটিমের বাসে ওঠা ও পড়ে যাওয়ার কোনো সিসিটিভি ফুটেজ না পাওয়ায় ঘাতক বাসের চালক ও হেলপারকে শনাক্ত করতে গোয়েন্দা কার্যক্রম ও নজরদারি আরো বাড়ানো হয়। এরপরই পৃথক অভিযান চালিয়ে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করা হয়। তারা দুজনই ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার কথা স্বীকার করেছেন।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা জানিয়েছে, চালক রাজু মিয়া ও হেলপার ইমরান হোসেন প্রতিদিনের মতোই রাইদা পরিবহনের বাস (ঢাকা মেট্রো ব-১৪-৯০২২) নিয়ে পোস্তগোলা থেকে দিয়াবাড়ীর উদ্দেশে রওনা করে। সকালে স্বল্পসংখ্যক যানবাহন ও যাত্রী কম থাকায় তারা দ্রুতবেগে গাড়ি চালাচ্ছিল। বাসটি প্রগতি সরণি যমুনা ফিউচার পার্কে পৌঁছলে মরিয়ম যাত্রীদের কাছে সাহায্য চাইতে বাসে ওঠে। হেলপার ইমরান হোসেন এ সময় যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া নিচ্ছিল।
একপর্যায়ে শিশুটিকে গাড়ি থেকে নামিয়ে দিতে চালক রাজুকে গাড়ির গতি কমাতে বলে ইমরান। এ সময় মরিয়মকে দরজার কাছে গিয়ে নেমে যেতে বলা হয়। চালক রাজু কিছুদূর না যেতেই আবার থামতে বলায় বিরক্ত হয়ে বাসের গতি হালকা কমিয়ে, মরিয়মকে তাড়াতাড়ি নামতে বলে। মরিয়ম তাড়াহুড়ো করে নামার সময় হঠাৎ বাসচালক আবার জোরে চালানো শুরু করে। এতে শিশুটি বাসের দরজার থেকে ছিঁটকে রাস্তায় পড়ে গুরুতর আহত হয়ে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়। অবস্থা বেগতিক দেখে চালক গাড়ি না থামিয়ে দ্রুতবেগে দিয়াবাড়ীর দিকে চলে যায়। এরপর পোস্তগোলায় হাসনাবাদের একটি বাস ডিপোতে গাড়িটি রেখে, দুর্ঘটনা ও মৃত্যুর বিষয়টি কাউকে না বলে আত্মগোপনে চলে যায়।
চালক রাজু মিয়া ৬ বছর রাইদা পরিবহনের গাড়ি চালাত। আর তার সহযোগী ইমরান হোসেন আগে পোশাক কারখানার শ্রমিক হিসেবে কাজ করত। ছয় মাস আগে ইমরান রাইদা পরিবহনে হেলপার হিসেবে কাজ শুরু করে।
বাসটির চালকের সঠিক কাগজপত্র ছিল কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানিয়েছে তাদের সব কাগজপত্র সঠিক ছিল। এছাড়া বিষয়টি নিয়ে পরবর্তী সময় আমরা তদন্ত করব। অপর এক প্রশ্নের জবাবে র‌্যাবের কর্মকর্তা বলেন, বাসটি গেটকল সার্ভিস ছিল। তাই মেয়েটিকে হেলপার প্রেসার করেছিল, যেন দ্রুত নেমে যায়। নিহত মরিয়ম বাস থেকে নামার সময় বাসের গতি ছিল প্রায় ৪০ কিলোমিটার। এতে সে বাস থেকে রাস্তায় পড়ে মারা যায়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়