দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদ : চট্টগ্রামে বিএনপির বিক্ষোভ

আগের সংবাদ

ঢিমেতালের ফাঁদে সোনালি ব্যাগ : সিলিং মেশিনে আটকে আছে উৎপাদন, বাড়ানো হয়েছে প্রকল্পের মেয়াদ

পরের সংবাদ

সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড দৃশ্যমান হলেও কোন্দলে ব্যস্ত নেতারা

প্রকাশিত: নভেম্বর ১২, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ১২, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

রুমানা জামান : মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি দিয়ে দলীয় কার্যক্রম পরিচালনা হওয়ায় সাংগঠনিক অবস্থান শক্তিশালী করতে পারছে না প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপি। তবে দল পুনর্গঠনে এবার শক্ত অবস্থানে রয়েছেন দায়িত্বশীল নেতারা। আগামী ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে সব কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার তাগিদ নিয়ে মাঠে নেমেছেন তারা। সেই মোতাবেক ঘর গোছানো শুরু করেছেন ময়মনসিংহ বিএনপির নেতারা। তবে এ বিভাগে নতুন কমিটিতেও স্বস্তি নেই। অর্থের বিনিময়ে গুরুত্বপূর্ণ পদ দেয়ার অভিযোগে নেতাকর্মীদের ক্ষোভ-বিক্ষোভের মুখে পড়ে খাবি খাচ্ছেন সংশ্লিষ্ট নেতারা।
বিএনপির সিনিয়র নেতারা বলছেন, বৈশ্বিক করোনা পরিস্থিতিতে দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম কয়েক দফা স্থগিত রাখা হয়েছিল। অন্যদিকে সরকারের রোষানলেও দল পুনর্গঠনে গতি আসছে না। এর মধ্যে যদি তৃণমূল নেতাকর্মীরা পুনর্গঠনের কাজে যতœশীল না হন- তাহলে সরকারবিরোধী আন্দোলনের পরিকল্পনা সফল হবে না। আর তৃণমূল নেতারা বলছেন, কমিটি

পুনর্গঠন নিয়ে দলের শীর্ষ নেতারা যত আন্তরিক কিংবা কঠোরই হন না কেন, প্রভাবশালী নেতাদের হস্তক্ষেপে সময়মতো কমিটি গঠন সম্ভব নাও হতে পারে। দ্রুত কমিটি করতে গেলে যোগ্য ও ত্যাগীদের বাদ পড়ার আশঙ্কাও রয়েছে।
ময়মনসিংহে বিএনপির ১টি মহানগর এবং ৬ সাংগঠনিক জেলা রয়েছে। এর মধ্যে জামালপুর, শেরপুর ও কিশোরগঞ্জ জেলায় সফল সম্মেলনের মধ্য দিয়ে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়। সম্প্রতি নেত্রকোনা জেলা বিএনপির কমিটিও অনুমোদন পেয়েছে। ময়মনসিংহ জেলা দক্ষিণ-উত্তর ও মহানগর বিএনপির কমিটি অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। এছাড়া বিভিন্ন জেলার বেশির ভাগ থানা ও পৌর ইউনিটগুলো পুনর্গঠন শেষের দিকে।
জানতে চাইলে বিএনপির ময়মনসিংহ বিভাগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স ভোরের কাগজকে বলেন, ২০১৭ সাল থেকেই সম্মেলনের লক্ষ্যে আমরা জেলা কমিটি পুনর্গঠনের কাজ করছি। ওয়ার্ড কমিটিগুলো গোছানো শেষ। এবার জেলা কমিটি নিয়ে কাজ করছি। শেরপুরে আহ্বায়ক কমিটি, জামালপুর, কিশোরগঞ্জ ও নেত্রকোনায় পূর্ণাঙ্গ কমিটি করা হয়েছে।
তৃণমূলে দ্ব›দ্ব-সংঘাতের বিষয়ে তিনি বলেন, মামলা-হামলার কারণে নেতাকর্মীরা বাড়িতে থাকতে না পেরে আত্মগোপনে থাকেন। সময়মতো কর্মিসভা করতে পারছি না। ফলে তাদের প্রত্যাশার কথা জানতে পারছি না। তাদের ভেতর চাপা ক্ষোভ জমা হচ্ছে। প্রিন্স বলেন, একজন নেতার নামে ৮ থেকে ১০টি করে মামলা, তাই সবাই মনে করেন আমিই ত্যাগী, আমি যোগ্য। সবাই পদ চায়। কিন্তু একটা নির্ভরযোগ্য পদের বিপরীতে প্রতিযোগিতার জন্য শুধু মামলা দিয়ে বিচার করা যায় না। এক্ষেত্রে নেতৃত্বের গুণ, গ্রহণযোগ্যতা, বয়সসহ অনেক বিষয় বিবেচনা করতে হয়। সব মিলে নতুন কমিটিতে ত্যাগী নেতাদের তুলে আনা সহজ নয়।
শান্তি নেই মহানগরে : ২০১৯ সালের ৫ ডিসেম্বর ময়মনসিংহ জেলা দক্ষিণ ও মহানগর বিএনপির নতুন আহ্বায়ক কমিটি গঠিত হয়। দীর্ঘ সময় পর বহুল প্রতীক্ষিত এ কমিটি অনুমোদন হওয়ায় দলে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়। বিএনপির নির্বাহী সদস্য ডা. মাহাবুবুর রহমান লিটনকে আহ্বায়ক এবং জাকির হোসেন বাবলু ও আলমগীর মাহমুদ আলমসহ ১১ জনকে যুগ্ম আহ্বায়ক করে জেলা দক্ষিণ বিএনপির কমিটি গঠিত হয়। তবে উত্তর বিএনপির শীর্ষ নেতাদের সমন্বয়হীনতার কারণে আটকে যায় জেলা উত্তর বিএনপির নতুন কমিটি। এ নিয়ে উত্তর জেলা বিএনপির শীর্ষ নেতাকর্মীদের মধ্যে সৃষ্টি হয় উত্তেজনা। নেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বিএনপিতে বড় বড় পদধারী নেতা বেশি। কিন্তু দলের কাজ হয় খুব কম। তাই কমিটি গঠনেও ঝামেলা বেশি। এখনো উত্তরের কমিটি পুনর্গঠন করতে পারেনি সংশ্লিষ্টরা।
মুক্তাগাছায় কমিটি বাতিলের দাবিতে বিদ্রোহ : ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলা বিএনপির সদ্য ঘোষিত আহ্বায়ক কমিটিকে পকেট কমিটি উল্লেখ করে তা বাতিলের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে বিএনপির একটি অংশ। গত ৭ সেপ্টেম্বর ত্যাগী নেতাদের বাদ দিয়ে এবং চরম অবমূল্যায়ন করে ব্যক্তিস্বার্থে সুবিধাবাদী, অযোগ্য ও বিতর্কিত নেতাদের দিয়ে আহ্বায়ক কমিটি করা হয়েছে বলে মুক্তাগাছা শহরের বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়। এজন্য ময়মনসিংহ (দক্ষিণ) জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আলহাজ জাকির হোসেন বাবলুকে দায়ী করেন তারা।
লিখিত বক্তব্যে উপজেলা বিএনপির সদ্য বিলুপ্ত কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. জাকারিয়া হারুন অভিযোগ করেন, গত ১৩ জুন ময়মনসিংহ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক জাকির হোসেন বাবলু ব্যক্তিস্বার্থে দলের ত্যাগী নেতাদের বাদ দিয়ে তার নিজস্ব লোকজন দিয়ে মুক্তাগাছা উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি দেন। কমিটিতে অতীতে যারা মাঠে সক্রিয় রাজনীতি করেছেন এবং সদ্য বিলুপ্ত নির্বাচিত কমিটির সিনিয়র নেতাদের বাদ দেয়া ও চরম অবমূল্যায়ন করা হয়েছে। বরাবরই সুবিধাবাদী, আওয়ামী লীগের সঙ্গে লিয়াজোঁ করে চলা এবং সরকারবিরোধী আন্দোলনের সময় সংবাদ সম্মেলন করে খালেদা জিয়াকে আগুন সন্ত্রাসের নেত্রী ঘোষণা দিয়ে বিএনপি থেকে পদত্যাগী হাবিবুর রহমানকে (রতন) আহ্বায়ক এবং আওয়ামী লীগে যোগদানের ঘোষণা দিয়ে সরকারি দলের সঙ্গে যোগসাজশ করে ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে দলের ক্ষতি করা কামরুজ্জামান লেবুকে প্রথম যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়েছে।
জানতে চাইলে নেত্রকোনা জেলা বিএনপির সভাপতি আনোয়ার হোসেন বলেন, কমিটি পুনর্গঠনে সাংগঠনিক টিমের নেতারা আমাদের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়েছেন। সেই মোতাবেক কাজ এগিয়ে যাচ্ছে। ওয়ার্ড এবং থানা পর্যায়ে কর্মিসভা হচ্ছে। সেখান থেকে মাঠের তরুণ নেতাদের তথ্যগুলো টিমের নেতাদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছি। তবে প্রভাবশালী স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে সমন্বয় করতে গিয়ে মাঝে-মধ্যে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, নেত্রকোনা জেলার ৪টি ইউনিটে পুনর্গঠন প্রক্রিয়াধীন অবস্থায় রয়েছে। নেত্রকোনা পৌরসভায় ও কেন্দুয়া উপজেলায় সম্মেলন হয়েছে। এছাড়া মোহনগঞ্জ পৌরসভায় কমিটি গঠন হলেও সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ হয়নি। আগামী ৩০ নভেম্বরের মধ্যে সব ইউনিট গোছানোর কাজ শেষ করতে পারবেন বলে জানান আনোয়ার হোসেন।
পদত্যাগের হিড়িক : কমিটি পুনর্গঠনে নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলে পদত্যাগের হিড়িক পড়েছে ময়মনসিংহ বিএনপিতে। সম্প্রতি নান্দাইলে হামলা-মামলায় জর্জরিত ত্যাগী নেতাদের বাদ দিয়ে স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটি ঘোষণা করা হয়। এরপর নবগঠিত কমিটির ১৮ নেতা পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। এর মধ্যে উপজেলা কমিটির ১০ জন এবং পৌর কমিটির আটজন রয়েছেন। সাত সেপ্টেম্বর তারা পদত্যাগ করেন। এর আগে একই অভিযোগে হালুয়াঘাট ও গৌরীপুর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের ২৩ নেতা নতুন কমিটি থেকে পদত্যাগ করেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়