দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদ : চট্টগ্রামে বিএনপির বিক্ষোভ

আগের সংবাদ

ঢিমেতালের ফাঁদে সোনালি ব্যাগ : সিলিং মেশিনে আটকে আছে উৎপাদন, বাড়ানো হয়েছে প্রকল্পের মেয়াদ

পরের সংবাদ

সহিংস ইউপি ভোটে প্রাণক্ষয় : নরসিংদী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে পৃথক সংঘর্ষে নিহত ৭, আহত শতাধিক > গুলি-বোমাবাজি ও ব্যালট ছিনতাই

প্রকাশিত: নভেম্বর ১২, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ১২, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : বোমাবাজি, গোলাগুলি, দেশি অস্ত্রের ঝনঝনানি, বুথ দখল, ব্যালট ছিনতাই, হতাহতসহ ব্যাপক সহিংসতার মধ্য দিয়ে শেষ হলো দ্বিতীয় দফার ৮৩৪টি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ভোটগ্রহণ। গতকাল বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় ধাপের এ নির্বাচনী সহিংসতায় অন্তত সাতজন নিহত হয়। আহত হয় শতাধিক। নিহতদের মধ্যে নরসিংদীতে তিনজন, কক্সবাজারে একজন, চট্টগ্রামে একজন ও কুমিল্লায় দুজন আছেন। সকাল ৮টায় শুরু হয়ে বিকাল ৪টায় ভোটগ্রহণ শেষ হয়।
এছাড়া খুলনা, সাতক্ষীরা, চট্টগ্রাম, ঝিনাইদহ, মানিকগঞ্জ, যশোর, কুমিল্লা, ল²ীপুর, কালকিনিসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ইউপি নির্বাচনকে ঘিরে সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে। গত বুধবার রাত থেকে ককটেল ফাটানো, দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে বুথ ও এলাকা দখলের চেষ্টা করেছে প্রতিপক্ষরা। গতকাল দিনব্যাপী সহিংসতা ছড়িয়েছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। যদিও এ নির্বাচনকে ঘিরে ৬৭০ জন ম্যাজিস্ট্র্রেটসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রচুর সদস্য নিয়োজিত ছিল।
তৃণমূলের এ নির্বাচন এখন আর উৎসব নেই, ক্ষমতা দখলের লড়াই হয়ে উঠেছে, সহিংসতায় প্রাণ হারাচ্ছেন প্রার্থী ও সমর্থকরা। ভোট দিতে আগ্রহ হারাচ্ছেন ভোটাররা। দ্বিতীয় ধাপে বেশ কয়েকটি কেন্দ্রে ভোট স্থগিত করেছে ইসি। সারাদেশ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রথম ও দ্বিতীয় দফা মিলে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রায় ১২ শতাধিক ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গতকাল পর্যন্ত ২৭ জন মারা গেছেন। প্রথম ধাপে পাঁচজন, দ্বিতীয় ধাপের প্রচার প্রচারণা ঘিরে সংঘর্ষে ১৩ জন এবং গতকাল বৃহস্পতিবারেই মারা গেছে সাতজন। আহত শতাধিক।
দ্বিতীয় দফায় ৮৩৪টি ইউপি নির্বাচনকে ঘিরে গতকাল নরসিংদীর রায়পুরার বাঁশগাড়ি ইউনিয়নে দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে নির্বাচনী সহিংসতার গুলিতে তিনজন নিহত হন। আহত হয় প্রায় ১০ জন। গতকাল ভোরে বাঁশগাড়ি ইউনিয়নের টিরাবিল ঈদগা ও চান্দেরকান্দি গ্রামে নৌকা ও বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষে এই হতাহতের ঘটনা ঘটে। এ তথ্য নিশ্চিৎ করে রায়পুরা সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার সত্যজিৎ কুমার ঘোষ বলেন, নির্বাচনী সহিংসতায় এখন পর্যন্ত গুলিবিদ্ধ হয়ে তিনজন মারা গেছেন। নরসিংদী জেলা হাসপাতালে একজনের লাশ, সদর হাসপাতালে আরো একজন এবং অন্যজনের লাশ তার নিজ

বাড়িতে রয়েছে।
তিনি জানান, এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ও ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাঁশগাড়ি ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান আশরাফুল হক ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী টেলিফোন প্রতীকের জাকির হোসেনের মধ্যে দ্ব›দ্ব চলে আসছিল। এর ধারাবাহিকতায় ভোরে টিরাবিল ঈদগা ও চান্দেরকান্দি গ্রামে দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান দুলাল মিয়া (৩৭), জাহাঙ্গীর (২৫) ও সালাহ উদ্দিন (৩৭)।
কক্সবাজার প্রতিনিধি জানান, সদর উপজেলায় কুরুশকুল ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে গতকাল সকালে ইউনিয়নের তেতৈয়ায় এলাকায় দুই মেম্বার প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ আখতারুজ্জামান (৩০) নামে একজন মারা গেছেন। আখতারুজ্জামান কুরুশকুল ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার প্রার্থী (বর্তমান মেম্বার) শেখ কামালের ছোটভাই। ঘটনার পর থেকে ওই কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ আধাঘণ্টা বন্ধ ছিল।
কুমিল্লা প্রতিনিধি জানান, গতকাল দুপুর ১২টার দিকে মেঘনা উপজেলার মানিকাচর ইউনিয়নের আমিরাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে হামলায় শাওনসহ দুজন নিহত হয়। আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হারুন অর রশীদের লোকজন হামলা চালায় বলে অভিযোগ উঠেছে। ঘটনার পর ভোটগ্রহণ বন্ধ করে দেয়া হয়। এরপর নৌকা ও বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ ঘটে। এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ফাঁকা গুলি ছোড়ে। সংঘর্ষে শাওনসহ ৮-১০ জন আহত হন। মেঘনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ড. বর্ষা লরেন জানান, হাসপাতালে নেয়ার আগেই শাওনের মৃত্যু হয়, হাসপাতালে আরো একজন মারা যান।
নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের আলাইয়াপুর ইউনিয়নে দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীসহ পাঁচজন গুলিবিদ্ধ হয়। এ ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে দুজন সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গুলিবিদ্ধরা হলেন- ওই ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান ও বিদ্রোহী প্রার্থী আনিসুর রহমান (৪০), সাইফুল ইসলাম (২৬), আবদুস সবুর (৩৩), মামুনুর রশিদ (২৯) ও কামাল হোসেন (৪২)।
এদিকে খুলনা জেলার ২৫টি ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে একমাত্র নারী চেয়ারম্যান প্রার্থী খর্নিয়া ইউপির নৌকা প্রতীকের আফরোজা আক্তার মিতাকে ছুরিকাঘাত করেছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল দুপুর ২টার দিকে খর্নিয়া বাজার থেকে এক কিলোমিটার দূরে কেন্দ্র পরিদর্শনে গেলে মোটরসাইকেলে দুজন লোক কিছু বুঝে ওঠার আগেই মিতাকে লাথি মেরে ফেলে দেয়। এরপর ছুরি দিয়ে মাথায় আঘাত করে পালিয়ে যায়। স্থানীয়রা মিতাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে তার মাথায় ৬টি সেলাই দেন চিকিৎসকরা।
গতকাল সকাল ৯টার দিকে সাতক্ষীরার সদর উপজেলার বৈকারী ইউনিয়নের খলিলনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের পাশে নৌকা প্রতীক ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর মোটরসাইকেল প্রতীকের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে নৌকার প্রার্থী আসাদুজ্জামানসহ পাঁচজন আহত হন।
মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার সাহেবরামপুর ইউপি নির্বাচনে ৩নং ওয়ার্ডের আন্ডারচর উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয়পক্ষের মধ্যে শতাধিক বোমা বিস্ফোরণ, গোলাগুলি ও কেন্দ্র দখলের ঘটনা ঘটে। পরে সাময়িকভাবে ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়। পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, সকাল ১০টার দিকে সাহেবরামপুর ইউনিয়নের আন্ডারচর উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে স্বতন্ত্র প্রার্থী মুরাদ সর্দার এবং আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী কামরুল আহসান সেলিম এলে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে দুপক্ষের লোকজন অন্তত শতাধিক বোমা বিস্ফোরণ করে ভোটারদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পরে পুলিশ ও স্ট্রাইকিং ফোর্স, র‌্যাব ও বিজিবি এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় সকাল ১০টা থেকে ভোটগ্রহণ সাময়িক স্থগিত করা হয়। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অন্তত ২০ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে। এ ঘটনায় অন্তত ১০ জন আহত হয়।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার রাধানগর ইউনিয়ন পরিষদের ৩ নং ওয়ার্ডের দমইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে দুপুর ১টার দিক কয়েকজন যুবক লাঠিসোঁটা নিয়ে কেন্দ্রে প্রবেশ করে ভোট দেয়ার জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা নারী ও পুরুষদের হুমকি দিয়ে জোরপূর্বক বাইরে বের করে দেয়। এরপর চলে ২০-৩০ মিনিটের তাণ্ডব, ইচ্ছেমতো ব্যালটে সিল মারা হয়। এ সময় আরেক পক্ষ এসে বাধা দিলে দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। পরে অতিরিক্ত পুলিশ ও বিজিবি ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে তারা পালিয়ে যান। পালিয়ে যাওয়ার সময় ব্যালট পেপার নিয়ে চলে যাওয়ায় দুপুর ১টার পর আর ভোটগ্রহণ হয়নি।
এদিকে জামালপুর সদর উপজেলার মেষ্টা ইউনিয়নে ব্যালট পেপার, ব্যালট বাক্স ছিনতাই ও মারধরের অভিযোগ এনে ভোট বর্জন করেন আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী বদরুল হাসান বিদ্যুৎ। তিনি প্রশাসনকে পক্ষপাতমূলক আচরণ করে বিদ্রোহী প্রার্থীকে সহযোগিতার অভিযোগ করেন।
যশোরের চৌগাছা উপজেলার জগদীশপুর ইউপি নির্বাচনে মাড়ুয়া স্কুলকেন্দ্রে গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সংঘর্ষে পুলিশের একটি গাড়ি ভাঙচুর এবং অন্তত পাঁচজন পুলিশ সদস্য আহত হয়। এ সময় কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ বন্ধ হয়ে যায়।
কুষ্টিয়ার মিরপুরে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে কেন্দ্রে থাকা অবস্থায় প্রিসাইডিং অফিসার জয়নাল আবেদিনের মৃত্যু হয়েছে। গত বুধবার দিবাগত রাত ১২টা ২০ মিনিটে মিরপুর উপজেলার কুর্শা ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড রামনগর তিতুতলা কেন্দ্রে তিনি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে মারা যান। জয়নাল আবেদিন মিরপুর উপজেলার আমলা ইউনিয়নের নিমতলা কলেজের শিক্ষক ছিলেন।
দ্বিতীয় দফায় নির্বাচন নিয়ে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের নামে খুনোখুনি চলছে। নির্বাচনের নামে প্রহসন এবং তামাশা চলছে। নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে সম্পূর্ণ ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে।
ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে ‘একটু ঝগড়াঝাঁটি হয়েই থাকে’ মন্তব্য করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন বলেন, আমাদের বিশাল এলাকা নিয়ে নির্বাচন হচ্ছে। এই ইউপি নির্বাচন সব সময় আপনারা দেখে আসছেন, এটা গোষ্ঠী-গোষ্ঠীর নির্বাচন, আধিপত্যের নির্বাচন, এখানে সব সময়ই একটু ঝগড়াঝাঁটি হয়েই থাকে। তবে এবার বেশ কয়েকটি জায়গায় হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ যথার্থভাবে চিহ্নিত করেছে, দোষীদের ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার করেছে। যারা এই চক্রান্তের সঙ্গে জড়িত তাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
এখন পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন চার ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে। প্রায় সাড়ে চার হাজার ইউনিয়ন পরিষদের ভোট শেষ করতে আরো দুই ধাপে তফসিল ঘোষণা হতে পারে। দুই ধাপে মোট এক হাজার ২১৬টি ইউপির ভোট শেষ হয়েছে। সামনে আর চার ধাপের ভোট বাকি আছে। সহিংসতার মাত্রাও বেড়ে চলেছে। যদিও গত পাঁচ বছর আগে ইউপি নির্বাচনে মারা যান ১২৭ জন ব্যক্তি। আর আহত হয়েছিলেন সহস্রাধিক।
দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে ৮১টি ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী বিনাপ্রতিদ্ব›িদ্বতায় বিজয়ী হয়েছেন। ৫টি ইউপিতে কোনো পদেই ভোট হয়নি। প্রথম ধাপের নির্বাচনেও ৬৪টি ইউপিতে বিনা ভোটে জয় পেয়েছেন চেয়ারম্যান প্রার্থীরা। তৃণমূলের এ নির্বাচনে এবার বিএনপি অংশ নেয়নি। যার ফলে অনেক ইউপিতে বিনাপ্রতিদ্ব›িদ্বতায় নৌকার প্রার্থীরা জিতেছেন। আবার অনেক স্থানে আওয়ামী লীগকে তার দলীয় বিক্ষুব্ধ প্রার্থীদের সঙ্গে লড়াই করতে গিয়ে নিজেদের মধ্যে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়