দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদ : চট্টগ্রামে বিএনপির বিক্ষোভ

আগের সংবাদ

ঢিমেতালের ফাঁদে সোনালি ব্যাগ : সিলিং মেশিনে আটকে আছে উৎপাদন, বাড়ানো হয়েছে প্রকল্পের মেয়াদ

পরের সংবাদ

শিল্পাঞ্চলসহ মেগা প্রকল্প ঘিরে তৎপর চোর চক্র

প্রকাশিত: নভেম্বর ১২, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ১২, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মোংলা (বাগেরহাট) প্রতিনিধি : মোংলা শিল্পাঞ্চলসহ সরকারি বিভিন্ন মেগা প্রকল্প ঘিরে তৎপর শক্তিশালী চোর চক্র। এ চক্রের সদস্য লোপাট করছে চলমান উন্নয়নমুখী প্রকল্পের গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ ও মালামাল। কোস্টগার্ডের অভিযানে লোপাট হওয়ায় প্রায় এক কোটি টাকার মালামাল দুদফায় উদ্ধার করা হয়েছে। কিন্তু কয়েক দফায় পাচার হয়েছে লাখ লাখ টাকা মূল্যের মালামাল। ফলে সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পে হানা ও দেদারছে লুটতরাজ করছে এ চক্রটি। এতে আর্থিক ক্ষতিসহ উন্নয়নমুখী প্রকল্পের কার্যক্রম বিঘিœত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, বর্তমান সরকারের আমলে এক সময়ের মৃত প্রায় মোংলা সমুদ্রবন্দর প্রাণচাঞ্চল্যতা ফিরে পায়। বৃদ্ধি পেতে থাকে পণ্য আমদানি-রপ্তানিসহ বিদেশি বাণিজ্যিক জাহাজের আগমন। আর বন্দরের গতিশীলতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গেই তৎপর হয়ে ওঠে বিভিন্ন চোরাকারবারি গ্রুপ। এ চোরা গ্রুপের একটি চক্র বাণিজ্যিক জাহাজের পাশাপাশি বন্দর এলাকায় অবস্থিত শিল্পপ্রতিষ্ঠান, রামপাল কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ সরকারি বিভিন্ন উন্নয়নমুখী প্রকল্পেও হানা দিচ্ছে। নিরাপত্তা কর্মীসহ বিভিন্ন মহলকে ম্যানেজ করে লুটে নিচ্ছে বিদেশ থেকে আমদানিকৃত ক্যাবল, মেশিনারিজ যন্ত্রাংশ, এসএস পাইপ, কাস্টিক, তামা, লোহ জেনারেটরসহ গুরুত্বপূর্ণ মালামাল। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসতে না আসতেই সিন্ডিকেট চক্রের সদস্যরা নেমে পড়ে চুরি ও লুটের কাজে। সাম্প্রতিক সময় এ চক্রের সদস্যরা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তাদের চোরাই ও লুণ্ঠিত মালামাল চিলা, জয়মনি ও কানাইনগরসহ মোংলা পৌর শহরের বিভিন্ন এলাকায় মজুত করে রাখা হয়ে থাকে। পরে তা ট্রাকে পাঠানো হয় খুলনা, যশোর, ঢাকা ও চট্টগ্রামে। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে কোস্টগার্ডের দুদফা অভিযানে প্রায় পৌনে এক কোটি টাকা মূল্যের চোরাই মালামালসহ দুটি ট্রলার আটক হয়।
কোস্ট গার্ড পশ্চিম জোনের কর্মকর্তা লে. কমান্ডার হাসানুজ্জামান (বিএন) জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে প্রথম দফায় কানাইনগর পশুর নদী এলাকায় বিশেষ অভিযান চালিয়ে ৩৫০ কেজি ওজনের ২৩টি (২০ ফিট) এসএস পাইপ নৌকাসহ রবিউল শেখ (২৫) নামের ১ জন চোরাকারবারিকে আটক করা হয়। একই এলাকায় দ্বিতীয় দফায় পরিত্যক্ত অবস্থায় চোরাইকৃত ৩৫০ কেজি ওজনের ০৯টি (২০ ফিট) এসএস পাইপ ও ৬০ কেজি ওজনের ৩৯টি (১৮ ফিট) এসএস পাইপ উদ্ধার করা হয়। পরবর্তীতে জব্দকৃত মালামালসহ আটককৃত চোরাই সিন্ডিকেট চক্রের সদস্যকে মোংলা থানায় সোপর্দ করা হয়।
এ বিষয়ে প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম মুঠোফোনে জানান, প্রকল্প কাজের জন্য উক্ত মালামাল ভারত থেকে আনা হয়েছিল। বিভিন্ন সময় আরো লাখ লাখ টাকার মালামাল লোপাট হয়েছে বলে জানান তিনি। আর এ ঘটনায় রামপাল থানায় একাধিক অভিযোগ ও মামলা রয়েছে। স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, রামপাল তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ স্থানীয় শিল্পাঞ্চলসহ সরকারি বিভিন্ন উন্নয়নমুখী প্রকল্পকে টার্গেট করে কানাইনগর এলাকায় শক্তিশালী একটি চোরাকারবারি সিন্ডিকেট চক্র তৎপর রয়েছে। ইতোমধ্যে এ চক্রের সদস্যরা ট্রাকে খুলনা, যশোর, ঢাকা ও চট্টগ্রামে লাখ লাখ টাকা মূল্যের চোরাই পণ্যের চালান পাচার করেছে। মোংলার কানাইনগর বাইদ্দাপাড়াকেন্দ্রিক এ চোরাই সিন্ডিকেট চক্রের সদস্যের মধ্যে রাজু মুন্সি, বাবলু, জুয়েল ব্যাপারী, মোস্তাকীন, বাপ্পা খাঁ, শাকিল ব্যাপারী, হাসান, এরামুল ব্যাপারী, রাজ্জাক ব্যাপারী, এনাম খাঁ, নেয়ামুল, কাশেম ব্যাপারী, ইস্রাফিল ব্যাপারী। গভীর সমুদ্র থেকে শুরু করে পশুর চ্যানেলে বন্দর কর্তৃপক্ষের স্থাপিত মাকিং বয়াও রক্ষা পায়নি। এ চক্রের অধীনে এখনো কানাইনগর খাল ও আশপাশের খালে মালামাল মজুত রয়েছে।
স্থানীয় প্রভাবশালী একটি মহল নিয়ন্ত্রণ করছে পুরো সিন্ডিকেট। বিভিন্ন সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে দু’একজন ধরা পড়লেও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে প্রভাবশালী মহলটি।
চোরা গ্রুপের তৎপরতা প্রসঙ্গে মোংলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মনিরুল ইসলাম জানান, কোস্টগার্ড অভিযানে উদ্ধার মালামাল ও এক চোরাকারবারি আটক হওয়ার ঘটনায় মোংলা থানায় একটি মামলা হয়েছে।
এ মামলার সূত্র ধরে পুলিশ তদন্ত করছে। একই সঙ্গে আটককৃত ব্যক্তিকে আদালতের মাধ্যমে রিমান্ড চাওয়া হয়েছে। এতে সিন্ডিকেট চক্রকে দ্রুত শনাক্ত ও আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে বলেও জানান তিনি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়