চকবাজারে প্লাস্টিক গোডাউনে আগুন

আগের সংবাদ

তথ্যপ্রযুক্তি সম্মেলনে রাষ্ট্রপতি : বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তর ফ্রিল্যান্সার দেশ

পরের সংবাদ

তৃণমূলের রাজনীতি : বিএনপি (বরিশাল বিভাগ) > কর্তৃত্ববাদী রাজনীতির অবসান

প্রকাশিত: নভেম্বর ১১, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ১১, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

রুমানা জামান : বিগত দিনে দলীয় কর্মকাণ্ডে নিষ্ক্রিয় ও সুবিধাভোগীদের বাদ দিয়ে নতুন করে ঘর গোছাতে চায় বিএনপি। আগামী দিনে দলকে সুসংগঠিত রাখার পাশাপাশি আন্দোলন ও নির্বাচন পরিচালনায় যোগ্য নেতাদের হাতে দায়িত্ব তুলে দিতে চান দলের নীতিনির্ধারকরা। সেই মোতাবেক তৃণমূলে নতুন যোগ্য নেতৃত্বের খোঁজে এখন পুরোদমে মাঠে বরিশাল বিএনপির নেতারা। সম্প্রতি ৩টি ইউনিটে হয়েছে নতুন কমিটি। মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি, ক্ষমতার দাপট ও পকেট কমিটি থেকে বেরিয়ে স্বস্তি ফিরছে বরিশাল বিএনপিতে।
বরিশাল বিভাগে একটি মহানগর এবং ৭টি সাংগঠনিক জেলা রয়েছে। এর মধ্যে পটুয়াখালী ও ঝালকাঠিতে আহ্বায়ক কমিটি দেয়া হয়েছে। গত ৩ নভেম্বর বরিশাল মহানগরসহ চার জেলা ও মহানগরে নতুন কমিটি দিয়েছে বিএনপি। এসব জেলা শাখায় আহ্বায়ক কমিটির অনুমোদন দিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এছাড়া বরগুনা, পিরোজপুর এবং ভোলায় মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি রয়েছে। খুব শিগগিরই এই ৩ জেলার কমিটি ভেঙে দিয়ে নতুন কমিটি নিয়ে কাজ শুরু করা হবে বলে জানিয়েছেন বরিশাল বিভাগের সাংগঠনিক টিমের

নেতারা। সবগুলো জেলা কমিটি পুনর্গঠনের পরে ধারাবাহিকভাবে সম্মেলন করা হবে।
জানতে চাইলে বরিশাল বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরিন ভোরের কাগজকে বলেন, আমার বিভাগে ৭টি জেলা ও একটি মহানগর। এর মধ্যে পাঁচটি সাংগঠনিক জেলা কমিটির মেয়াদ শেষ। এর মধ্যে পটুয়াখালী, ঝালকাটি জেলার আহ্বায়ক কমিটি হয়েছে। বাকিগুলোর কমিটি ভেঙে দেয়া হবে। থানা কমিটিগুলো গোছানোর কাজ শেষ। তিনি বলেন, কমিটি পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে প্রতিটি সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে তাদের সঙ্গে বসে আমরা পরামর্শ করেই কমিটি ঘোষণা করি। তাই নতুন কমিটি নিয়ে ক্ষোভ-বিক্ষোভ আমলে নেয়ার প্রশ্নই আসে না।
মেয়াদোত্তীর্ণ ৩ জেলা নিয়ে সংকট : রবিশালে বিএনপির সহসাংগঠনিক টিমের নেতারা জানান, মেয়াদোত্তীর্ণ ৩টি জেলা কমিটি বহু বছরের পুরনো। নানা সংকট এবং রাজনৈতিক জটিলতার কারণে বারবার উদ্যোগ নেয়ার পরেও এই কমিটিগুলো পুনর্গঠন করা যায়নি। তারা জানান, ভোলা জেলায় ৩-৪ বছর আগে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নিজে গিয়ে কাউন্সিল ছাড়াই ভোটের মাধ্যমে আংশিক কমিটি গঠন করেন। সেই কমিটি কেন্দ্রে জমা দেয়া হলেও এখনো অনুমোদন পায়নি। কেন, কি কারণে এ কমিটি আলোর মুখ দেখল না এ ব্যাপারে কেন্দ্র থেকে কিছু জানানো হয়নি বা কমিটি ছাড়া জেলার কার্যক্রম কীভাবে চলবে সে ব্যাপারেও কোনো দিক-নির্দেশনা দেয়া হয়নি।
পিরোজপুর জেলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান জেলা সভাপতি সাধারণ সম্পাদকসহ সংশ্লিষ্ট নেতাদের সঙ্গে ভার্র্চুয়ালি বৈঠক করে দ্রুত কমিটি গঠনের তাগিদ দিয়েছিলেন ১ বছর আগে। এক্ষেত্রে যেসব পদ প্রত্যাশী নেতারা ঢাকায় থাকেন তাদের বাদ দিয়ে কমিটি গঠনের কথা বলেন তিনি। তবে ৮-১০ বছরের মেয়াদোত্তীর্ণ এই কমিটিতে প্রভাবশালী নেতারা সংখ্যায় এত বেশি যে সংগঠনের কাজে নিষ্ক্রিয় এবং যারা ঢাকায় থেকে এলাকার রাজনীতি করতে চান সেসব নেতাদের কাকে বাদ দিয়ে কাকে নেয়া হবে? এমন সংকটে পুনর্গঠনের কাজ থমকে আছে।
এছাড়াও বরগুনা জেলা বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এবং খালেদা জিয়ার আইনজীবী খন্দকার মাহবুবের নির্বাচনী এলাকা হওয়ায় সেখানে রয়েছে তার অবিচ্ছেদ্য প্রভাব। নেতারা জানান, ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসে খন্দকার মাহবুব নিজের পছন্দ মাফিক একটি কমিটির খসড়া তৈরি করে নিজের সই-স্বাক্ষর দিয়ে সেই খসড়া কপি নিয়ে বরিশালের দুজন সিনিয়র নেতাকে পাঠান বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কাছে। কিন্তু খালেদা জিয়া সেই কমিটিতে সই করেনি। ওই দুজন নেতাকে তিনি সাফ জানিয়ে দেন শুধু একজন ব্যক্তি নিজের পছন্দের ব্যক্তিদের দিয়ে কমিটি সাজাবেন সেই কমিটি অনুমোদন হবে না। এরপরে ২০১৮ সালের ৮ ফ্রেব্রুয়ারি খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার ৭ দিন আগে ওই একই কমিটি খালেদা জিয়াকে দিয়ে অনুমোদন করিয়ে নেন খন্দকার মাহবুব। তবে বর্তমান নেতাদের অভিযোগ, খালেদা জিয়ার কারাবাস হতে পারে এমন আঁচ পেয়েই যে কোনোভাবে দলীয় চেয়ারপারসনের কাছ থেকে কৌশলে খন্দকার মাহবুব কমিটি অনুমোদন করিয়ে নেন। তবে সেই কমিটিও পরে স্থগিত হয়ে যায়। আগামী ৩-৪ দিনের মধ্যে এই জেলারই কমিটি ভেঙে নতুন কমিটি নিয়ে কাজ শুরু করা হবে বলে জানান নেতারা।
কমিটিতে নতুনদের জায়গা দিতে ঐক্যবদ্ধ সংশ্লিষ্ট নেতারা : ১৯৯৬ থেকে ২০২১ টানা ৩০ বছর বরিশালে বিএনপির রাজনীতিতে আধিপত্য ছিল মজিবর রহমান সরোয়ারের। দলীয় পদ-পদবি থেকে শুরু করে নির্বাচনী রাজনীতিতে সরোয়ার-প্রভাব ছিল একচ্ছত্র। তিনি একাধারে বরিশালের জেলা মন্ত্রী, জাতীয় সংসদের হুইপ, বরিশালের সিটি মেয়র ও এমপি। সে সময় সিটি মেয়র হিসেবে বরিশালের বাইরে প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদাও পেতেন তিনি। স্থানীয় কিংবা জাতীয় রাজনীতি প্রশ্নে একই সঙ্গে এতগুলো সাংবিধানিক পদে থাকার এই রেকর্ড এখন পর্যন্ত সরোয়ার ছাড়া দেশের আর কোনো রাজনীতিবিদের নেই। গত কয়েক বছরে তার নেতৃত্বকে চ্যালেঞ্জ জানাতে একাট্টা হয়ে মাঠে নামেন সরোয়ারের বিরোধী বলয়ের নেতারা। এমন অভিযোগ থাকলে কমিটি গঠনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নেতারা বলেছেন, এখানে কারো প্রতি কোনো ক্ষোভ নেই। বছরের পর বছর এক নেতা যদি পদে থাকেন তাহলে নতুনদের জায়গা হবে কোথায়? নতুন নেতৃত্ব তৈরি করতেই পরিবর্তন আনা হয়েছে।
মজিবর রহমান সরোয়ারকে বাদ দিয়ে বরিশাল মহানগর বিএনপির কথা চিন্তা করা যায় না বলে মনে করেন বর্তমান মহানগর বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক সৈয়দ আকবর। তিনি বলেন, মজিবর রহমান সরোয়ারের বিকল্প এখনো তৈরি হয়নি। যারা সরোয়ারের বিপক্ষে গিয়ে কথা বলেন, তারা হামলা-মামলা থেকে নিজেদের বাঁচাতে এ ধরনের কৌশল নিয়েছেন। তারা চলেন আওয়ামী লীগের সঙ্গে লিয়াজোঁ করে।
নতুন কমিটিতে ফিরেছে স্বস্তি : ৮ বছর পরে গত ৩ নভেম্বর বরিশাল মহানগরসহ চার জেলা ও মহানগরে নতুন কমিটি দিয়েছে বিএনপি। এসব জেলা শাখায় আহ্বায়ক কমিটির অনুমোদন দিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সামান্য ক্ষোভ-বিক্ষোভ থাকলেও এ কমিটি দিয়ে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে নগর বিএনপিতে। কেন্দ্রীয় নেতাদের দাবি- নতুন নেতৃত্বে দল চাঙা হচ্ছে। অনেক দিন ঝিমিয়ে থাকা নেতাকর্মীরা স্বঃতস্ফূতভাবে কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন।
কমিটিতে বরিশাল মহানগরে আহ্বায়ক করা হয়েছে মনিরুজ্জামান ফারুককে। ১নং যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়েছে আলী হায়দার বাবুল ও সদস্য সচিব করা হয়েছে মীর জাহিদুল কবির জাহিদকে। বরিশাল মহানগরে দীর্ঘদিন ধরে সভাপতি পদে ছিলেন কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মজিবর রহমান সরোয়ার। বরিশাল দক্ষিণ জেলায় আহ্বায়ক মজিবর রহমান নান্টু ও সদস্য সচিব করা হয়েছে আকতার হোসেন মেবুলকে। বরিশাল উত্তরের আহ্বায়ক দেওয়ান মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ ও সদস্য সচিব করা হয়েছে মিজানুর রহমান মুকুলকে।
২০১৩ সালের অক্টোবরে মজিবর রহমান সরোয়ারকে সভাপতি ও কামরুল আহসান শাহিনকে সাধারণ সম্পাদক করে ১৭১ সদস্যবিশিষ্ট মহানগর বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়। ২০১৪ সালে মারা যান তুখোড় রাজনীতিবিদ সাধারণ সম্পাদক কামরুল আহসান শাহিন। এরপর দলের ১নং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জিয়া উদ্দিন সিকদারকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেয়া হয়।
জানতে চাইলে সরোয়ার বলেন, আগের কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে। তাই কমিটি পরিবর্তন হয়েছে। ভেবেছিলাম সম্মেলন করা যাবে, না হলে নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয় না। কিছুটা আক্ষেপ প্রকাশ করে সদ্যবিলুপ্ত বরিশাল মহানগর বিএনপির এই সভাপতি বলেন, অন্যান্য জায়গায় যেভাবে কমিটি করেছে, সেভাবেই কাগজে লিখে কমিটি পাঠিয়ে দিয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়