চকবাজারে প্লাস্টিক গোডাউনে আগুন

আগের সংবাদ

তথ্যপ্রযুক্তি সম্মেলনে রাষ্ট্রপতি : বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তর ফ্রিল্যান্সার দেশ

পরের সংবাদ

ঘরে ঘরে পাহারা দেয়া সম্ভব নয় : সিইসি > সহিংসতা-উদ্বেগের মধ্যেই আজ ৮৩৮ ইউপিতে ভোট

প্রকাশিত: নভেম্বর ১১, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ১১, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : ব্যাপক সহিংসতা, মারামারি ও হতাহতের মধ্যেই আজ বৃহস্পতিবার দেশের বিভিন্ন জেলায় ৮৩৮টি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলবে এ ভোটগ্রহণ। ইউপি নির্বাচনের প্রথম ধাপে তিনজনের মৃত্যু এবং অর্ধশতাধিক প্রার্থী-সমর্থকের আহত হওয়ার ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই দ্বিতীয় ধাপের ভোট ঘিরে বেশ কিছুদিন ধরে প্রার্থী-বিরোধী প্রার্থীদের মধ্যে ব্যাপক সহিংসতার ঘটনা ঘটে চলেছে। এরই মধ্যে এসব সহিংসতায় ১০-১১ জনের মৃত্যু এবং শতাধিক আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। স্থানীয় সরকার নির্বাচন ঘিরে ভোটারদের মধ্যে যে উৎসাহের আমেজ বিরাজ করার কথা, এই নির্বাচনে তা নেই।
গতকাল বুধবার সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রে কেন্দ্রে ব্যালট বাক্সসহ ভোটগ্রহণের সরঞ্জাম পৌঁছে গেছে। নির্বাচন সুষ্ঠু করতে এরই মধ্যে মাঠে নেমেছেন ৩৩৯ জন নির্বাহী হাকিম এবং ৩৩১ জন বিচারিক হাকিম। মোট ৬৭০ জন ম্যাজিস্ট্রেট বিশাল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়ে মাঠে রয়েছেন। কোথাও কোনো গণ্ডগোল বা অনিয়মের খবর পাওয়া গেলে তারা তাৎক্ষণিক শাস্তির ব্যবস্থা নেবেন। পুলিশ, আনসার, র‌্যাব, বিজিবি, কোস্ট গার্ড টহল দিচ্ছে। সহিংসতাপ্রবণ এলাকায় অতিরিক্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ইসি।
এদিকে গতকাল সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি কে এম নূরুল হুদা বলেছেন, প্রায়ই সংঘর্ষের খবর পাচ্ছি, এটা সত্য। তবে ঘরে ঘরে পাহারা দিয়ে নির্বাচনী সহিংসতা ঠেকানো সম্ভব নয়। প্রার্থীদের নমনীয় হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
নরসিংদীসহ কয়েকটি ঘটনার সংঘাতের প্রসঙ্গ টেনে নূরুল হুদা বলেন, এ ধরনের ঘটনা এভাবে পাহারা দিয়ে ঠেকানো যায় না, বাস্তবতা হলো এটা। এর একমাত্র উপায় হলো নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সহনশীলতা। নির্বাচনসুলভ আচরণ করতে হবে।
সিইসি বলেন, সহিংসতার দায় এককভাবে কাউকে দেয়া যাবে না। নির্বাচনী সহিংসতা থামাতে দরকার সহনশীলতা। এজন্য রাজনৈতিক দল, প্রার্থী সমর্থক- সবার সহযোগিতা দরকার।
গতকাল নির্বাচনী সহিংসতায় সারা দেশে ১০-১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে মেহেরপুরে তিনজনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া মাদারীপুরে সংঘর্ষে আহত হয়েছেন ২০-২৫ জন সমর্থক। অক্টোবরের শেষ থেকে নভেম্বরের শুরুতে নরসিংদীর আলোকবালী এবং পাড়াতলী ইউনিয়নে এক সপ্তাহের ব্যবধানে সহিংসতায় পাঁচজনের প্রাণ যায়। ২৫ অক্টোবর বাঁশগাড়ী ইউনিয়নে দুই প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষে ২০ জন আহত হন। এছাড়া গত ৬ নভেম্বর কক্সবাজার সদরের ঝিলংজায় দুর্বৃত্তের হামলায় জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি জহিরুল ইসলাম সিকদার ও তার ভাই ইউপি নির্বাচনের সদস্য প্রার্থী কুদরত উল্লাহ সিকদারসহ তিনজন গুলিবিদ্ধ হন। এদের একজন পরে মারা গেছেন। পাবনার সুজানগরের ভায়না ইউনিয়নে গত ৯ নভেম্বর সংঘর্ষে ১০ জন আহত হন, ভাঙচুর করা হয় ১১টি মোটরসাইকেল। এছাড়া ২৯ অক্টোবর একই উপজেলার হাটখালী ইউনিয়নে সংঘর্ষ, গোলাগুলি ও ভাঙচুরের ঘটনায় ১৫ জন আহত হন।
এ নির্বাচনে সরাসরি বিএনপি অংশ না নিলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বিএনপি চেয়ারম্যান-মেম্বার পদে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন। এছাড়া আছে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীও। সব মিলিয়ে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ও দলীয় বিদ্রোহী প্রার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা বেশি ঘটছে। তাছাড়া বিএনপির স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণায় বাধা সৃষ্টি করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
তবে চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রতীকের এই নির্বাচনে সহিংসতার ঘটনায় ‘অস্বস্তি’ ও ‘উদ্বেগ’ প্রকাশ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সিইসি বলেছেন, প্রয়োজনে সহিংসতাকারী প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল করা হবে। গণ্ডগোল হলেই ভোটগ্রহণ বন্ধ করারও নির্দেশনা দেন তিনি। একই সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা বাহিনীকে তাদের তৎপরতা বাড়ানোর নির্দেশনা দেন সিইসি।
এদিকে ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, গত মঙ্গলবার মধ্যরাতে প্রচার-প্রচারণা শেষ করেছেন প্রার্থীরা। এখন ভোটের অপেক্ষা। গতকাল কেন্দ্রে কেন্দ্রে নির্বাচনী সামগ্রী পৌঁছে গেছে, ভোটের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। দু-এক জায়গায় সংঘর্ষের কিছু ঘটনা থাকলেও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে মাঠপর্যায়ে তৎপরতা বাড়ানোসহ আচরণবিধি প্রতিপালনের বিষয়ে তদারকি বাড়াতে মাঠপর্যায়ে নির্বাহী হাকিমের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে বেশি রাখা হয়েছে।
তিনি বলেন, সর্বশেষ আইনশৃঙ্খলা বৈঠকে লোকবল সংকটের কথা বলেছিলেন অনেকে, তাই চাহিদা অনুযায়ী ম্যাজিস্ট্রেট বাড়ানো হয়েছে। কোথাও কোথাও পরিস্থিতি বিবেচনায় বিজিবির সংখ্যাও বাড়ানো হয়েছে। ইসির পক্ষ থেকে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। আশা করি, ভোটের দিন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
এদিকে দ্বিতীয় ধাপে বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় চেয়ারম্যান পদে ৮১ জন, সংরক্ষিত সদস্য পদে ৭৬ জন এবং সাধারণ সদস্য পদে ২০৩ জন নির্বাচিত হয়েছেন।
এ ধাপে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্ব›িদ্বতায় রয়েছেন ৩ হাজার ৩১০ জন। সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে ৯ হাজার ১৬১ জন। সাধারণ সদস্য পদে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন ২৮ হাজার ৭৪৭ জন। এ ধাপে ২০টি ইউনিয়ন পরিষদে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) এবং বাকিগুলোয় প্রচলিত ব্যালট পেপারে ভোট হবে। দ্বিতীয় দফায় যে ৮৪৮টি ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচনের জন্য তফসিল হয়েছিল, নানা কারণে চারটি ইউপির ভোট স্থগিত, একটির ভোট বাতিল হয়েছে এবং পাঁচটি ইউপিতে সব পদে প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় নির্বাচিত হয়েছেন। সে কারণে মোট ১০টি ইউপিতে ভোট স্থগিত হওয়ায় আজ ৮৩৮টিতে ভোট হচ্ছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়